০৯:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

দুদকে আবেদন করলেন বেনজীর

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেছেন পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। এক আইনজীবীর মাধ্যমে ১৫ দিনের সময় চেয়েছেন তিনি।

বুধবার (৫ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক।

বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ দুদকে হাজির হচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জহুরুল হক বলেন, “আমি সঠিক জানি না। তবে শুনতে পেরেছি, তিনি (বেনজীর) সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। যদিও এটা অনুসন্ধান টিমের বিষয় নয়, এটা তাদের বিষয়। তারা ভালো জানবেন। কারণ এ বিষয়টি কমিশন পর্যন্ত আসে না।”

সময় চাওয়ার বিষয়ে জহুরুল হক বলেন, “আইনে সময় চাওয়ার সুযোগ আছে। সময় চাইলে দুদক ১৫ দিন সময় দিতে পারবে।”

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তিকে যদি দুদক তলব করে সেক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হতে হবে। যদি কোনো কারণে তিনি হাজির হতে না পারেন, তাহলে তিনি সময়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বেনজীরকে তলব করে দুদক। এছাড়া তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে আগামী ৯ জুন দুদকে তলব করা হয়েছে।

বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তা, ভূমি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ অন্যদের তালিকা করছে দুদক। তালিকা তৈরির পর তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করবে সংস্থাটি। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। ঢাকা, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বিপুল সম্পদ গড়েছেন বেনজীর আহমেদ। এসব এলাকার ভূমি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রারদের নাম তালিকায় থাকতে পারে বলে জানা গেছে।

দুদকের কমিশনার জহুরুল হক জানান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ যদি ৬ জুন দুদকে হাজির না হন, তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ধরে নেবে তার কোনো বক্তব্য নেই। তবে তিনি চাইলে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ১৫ দিন সময় দিতে পারবেন।

গত ২৩ মে বেনজীর আহমেদের সম্পত্তির ৮৩টি দলিল জব্দের ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। এরপর ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ১১৯টি স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক, রাজধানীর গুলশানের আলিশান চারটি ফ্ল্যাট, শতভাগ এবং আংশিক মালিকানাধীন ২৩ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশও দেন আদালত।

এদিকে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, গত ৬ মাসে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ তার অ্যাকাউন্ট থেকে কত টাকা তুলেছেন, সেই টাকা কোথায় নিয়েছেন—সে বিষয়ে খোঁজ চলছে। ভুক্তভোগীরা চাইলে তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ এবং থানায় মামলা করতে পারবেন।

এর আগে বেনজীরের বিশাল বিত্তবৈভব নিয়ে গত ৩১ মার্চ ও ৩ এপ্রিল প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এতে সাবেক এই আইজিপি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি রিসোর্ট গড়ে তুলেছে বেনজীর পরিবার। এ ছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে। তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ছয়টি কোম্পানি। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বেনজীরের বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকারও বেশি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। পরবর্তীতে অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে গত ১৮ এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মীর্জা ও তিন মেয়ের নামে ১৯৬টি দলিলে থাকা ৬২৭ বিঘা জমি (২০ হাজার ৭০৩ শতক), ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ২৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগের সন্ধান পায় দুদক। এরপর সংস্থাটির আবেদনের প্রেক্ষিতে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।

আদালতের নথি থেকে জানা যায়, বেনজীরের সম্পত্তির একটি বড় অংশ রয়েছে তার নিজ জেলা গোপালগঞ্জের তিন উপজেলায়। গোপালগঞ্জ সদরে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬৫টি দলিলে ২৪০ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। টুঙ্গিপাড়ায় তিনটি দলিলে ৪৭ শতাংশ, কোটালীপাড়ায় ৩৫ বিঘা জমি কিনেছেন। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা মাদারীপুরের রাজৈরে ২০২১ ও ২০২২ সালে তার স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে প্রায় ২৮০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/BH

ট্যাগ :

দুদকে আবেদন করলেন বেনজীর

প্রকাশিত : ০৬:৪৩:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেছেন পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। এক আইনজীবীর মাধ্যমে ১৫ দিনের সময় চেয়েছেন তিনি।

বুধবার (৫ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক।

বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ দুদকে হাজির হচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জহুরুল হক বলেন, “আমি সঠিক জানি না। তবে শুনতে পেরেছি, তিনি (বেনজীর) সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। যদিও এটা অনুসন্ধান টিমের বিষয় নয়, এটা তাদের বিষয়। তারা ভালো জানবেন। কারণ এ বিষয়টি কমিশন পর্যন্ত আসে না।”

সময় চাওয়ার বিষয়ে জহুরুল হক বলেন, “আইনে সময় চাওয়ার সুযোগ আছে। সময় চাইলে দুদক ১৫ দিন সময় দিতে পারবে।”

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তিকে যদি দুদক তলব করে সেক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হতে হবে। যদি কোনো কারণে তিনি হাজির হতে না পারেন, তাহলে তিনি সময়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বেনজীরকে তলব করে দুদক। এছাড়া তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে আগামী ৯ জুন দুদকে তলব করা হয়েছে।

বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তা, ভূমি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ অন্যদের তালিকা করছে দুদক। তালিকা তৈরির পর তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করবে সংস্থাটি। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। ঢাকা, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বিপুল সম্পদ গড়েছেন বেনজীর আহমেদ। এসব এলাকার ভূমি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রারদের নাম তালিকায় থাকতে পারে বলে জানা গেছে।

দুদকের কমিশনার জহুরুল হক জানান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ যদি ৬ জুন দুদকে হাজির না হন, তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ধরে নেবে তার কোনো বক্তব্য নেই। তবে তিনি চাইলে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ১৫ দিন সময় দিতে পারবেন।

গত ২৩ মে বেনজীর আহমেদের সম্পত্তির ৮৩টি দলিল জব্দের ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। এরপর ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ১১৯টি স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক, রাজধানীর গুলশানের আলিশান চারটি ফ্ল্যাট, শতভাগ এবং আংশিক মালিকানাধীন ২৩ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশও দেন আদালত।

এদিকে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, গত ৬ মাসে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ তার অ্যাকাউন্ট থেকে কত টাকা তুলেছেন, সেই টাকা কোথায় নিয়েছেন—সে বিষয়ে খোঁজ চলছে। ভুক্তভোগীরা চাইলে তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ এবং থানায় মামলা করতে পারবেন।

এর আগে বেনজীরের বিশাল বিত্তবৈভব নিয়ে গত ৩১ মার্চ ও ৩ এপ্রিল প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এতে সাবেক এই আইজিপি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি রিসোর্ট গড়ে তুলেছে বেনজীর পরিবার। এ ছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে। তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ছয়টি কোম্পানি। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বেনজীরের বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকারও বেশি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। পরবর্তীতে অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে গত ১৮ এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মীর্জা ও তিন মেয়ের নামে ১৯৬টি দলিলে থাকা ৬২৭ বিঘা জমি (২০ হাজার ৭০৩ শতক), ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ২৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগের সন্ধান পায় দুদক। এরপর সংস্থাটির আবেদনের প্রেক্ষিতে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।

আদালতের নথি থেকে জানা যায়, বেনজীরের সম্পত্তির একটি বড় অংশ রয়েছে তার নিজ জেলা গোপালগঞ্জের তিন উপজেলায়। গোপালগঞ্জ সদরে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬৫টি দলিলে ২৪০ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। টুঙ্গিপাড়ায় তিনটি দলিলে ৪৭ শতাংশ, কোটালীপাড়ায় ৩৫ বিঘা জমি কিনেছেন। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা মাদারীপুরের রাজৈরে ২০২১ ও ২০২২ সালে তার স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে প্রায় ২৮০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/BH