০৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

রোহিঙ্গাদের জন্য বছরে লাগবে ৭ হাজার কোটি টাকা

মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমের পেছনে বাংলাদেশের চলতি অর্থ বছরে সাত হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হবে বলে জানিয়েছে এটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা (সিপিডি) শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনায় ছিলেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

মুল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। এটা আমাদের চলতি বাজেটের প্রায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশের মোট রাজস্ব আয়ের ২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ১৩ শতাংশেরও বেশি।

রোহিঙ্গা সংকটের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সমস্যায় পড়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের ওপর। এই তিন খাতে বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ায় জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জনসংখ্য বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সমস্যা, স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারে মোট বনভূমির পরিমাণ ২০ লাখ ৯২ হাজার ১৬ একর। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে এরইমধ্যে ৩ হাজার ৫০০ একর বনভূমির ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী অধ্যুষিত এলাকায় বায়ু দূষণ, ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সিপিডির পক্ষ থেকে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ডেবিট এসলে, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার শাখাওয়াত হোসেন, বিশ্ব বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি ড. সুকমল বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহাম্মেদ প্রমুখ।

রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘমেয়াদি হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে। তাই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।

প্রস্তাবগুলো হচ্ছে, বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল এন্ড ইকনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক) ও বাংলাদেশ, চায়না, ইন্ডিয়া এ্যান্ড মিয়ানমার ইকোনোমিক করিডর (বিসিআইএম)এর মতো আঞ্চলিক জোটের মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। আরও আঞ্চলিক জোট যেমন, অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান)এর মতো জোটকে সম্পৃক্ত করে সমস্যা সমাধানে কাজ করা।

রোহিঙ্গাদের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সম্পদের যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে। জেনেভা বৈঠক পরবর্তী ফলো-আপ মিটিং করে অর্থ সংগ্রহে এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের মতো দাতা সংস্থার কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য শুধুমাত্র অনুদান হিসেবে সহায়তা সংগ্রহ এবং রোহিঙ্গা ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

ট্যাগ :

রোহিঙ্গাদের জন্য বছরে লাগবে ৭ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত : ০১:১৬:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমের পেছনে বাংলাদেশের চলতি অর্থ বছরে সাত হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হবে বলে জানিয়েছে এটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা (সিপিডি) শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনায় ছিলেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

মুল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। এটা আমাদের চলতি বাজেটের প্রায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশের মোট রাজস্ব আয়ের ২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ১৩ শতাংশেরও বেশি।

রোহিঙ্গা সংকটের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সমস্যায় পড়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের ওপর। এই তিন খাতে বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ায় জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জনসংখ্য বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সমস্যা, স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারে মোট বনভূমির পরিমাণ ২০ লাখ ৯২ হাজার ১৬ একর। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে এরইমধ্যে ৩ হাজার ৫০০ একর বনভূমির ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী অধ্যুষিত এলাকায় বায়ু দূষণ, ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সিপিডির পক্ষ থেকে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ডেবিট এসলে, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার শাখাওয়াত হোসেন, বিশ্ব বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি ড. সুকমল বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহাম্মেদ প্রমুখ।

রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘমেয়াদি হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে। তাই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।

প্রস্তাবগুলো হচ্ছে, বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল এন্ড ইকনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক) ও বাংলাদেশ, চায়না, ইন্ডিয়া এ্যান্ড মিয়ানমার ইকোনোমিক করিডর (বিসিআইএম)এর মতো আঞ্চলিক জোটের মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। আরও আঞ্চলিক জোট যেমন, অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান)এর মতো জোটকে সম্পৃক্ত করে সমস্যা সমাধানে কাজ করা।

রোহিঙ্গাদের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সম্পদের যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে। জেনেভা বৈঠক পরবর্তী ফলো-আপ মিটিং করে অর্থ সংগ্রহে এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের মতো দাতা সংস্থার কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য শুধুমাত্র অনুদান হিসেবে সহায়তা সংগ্রহ এবং রোহিঙ্গা ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।