০১:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর প্রথম মন্ত্রিসভায় কারা কোন পদে ছিলেন

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে আজকের বিজনেস বাংলাদেশ। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৬ মার্চের ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের নয়া মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। বিগত মন্ত্রীসভার মাত্র তিনজন ছাড়া সব সদস্যই এই মন্ত্রিসভায় ছিল এবং নতুন এসেছেন মাত্র একজন শ্রী মনোরঞ্জন ধর। যে তিনজন বাদ পড়েছিলেন তারা হলেন বিগত মন্ত্রীসভার সমবায় ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন মন্ত্রীর শামসুল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকি এবং যোগাযোগমন্ত্রী মোল্লা জালাল উদ্দিন। নবগঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথগ্রহণ করেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, মনসুর আলী, খোন্দকার মোশতাক আহমদ, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, আব্দুস সামাদ, শেখ আব্দুল আজিজ, ইউসুফ আলী, জহুর আহমেদ চৌধুরী।

বঙ্গবন্ধু যখন শপথ নিতে ওঠেন তখন উপস্থিত সবাই বিপুল করতালিতে তাকে অভিনন্দিত করেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই ঐতিহ্যবাহী পাজামা-পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট পরা। শপথ গ্রহণের শুরুতে ও শেষে অন্যান্য মন্ত্রীদেরকেও করতালিতে অভিনন্দিত করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হবে মাত্র ৯ দিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভা গঠন করেন।

অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন বিরাট আশা নিয়ে তিনি ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আছেন। জনগণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লাভের পর মন্ত্রিসভা গঠন করতে পেরে তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন জাতি তার এবং তার দলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে তা ৭ মার্চের নির্বাচনে ফলেই সুস্পষ্ট।

বিকেলের রোদ্দুরে সবুজ লনে বঙ্গবন্ধু

নয়া মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে সবাই বঙ্গভবনের দরবার কক্ষের উত্তর দিকে সবুজ লনে বিকেলের পড়ন্ত রোদ্দুরে চাখাচ্ছিলেন আর নানারকম গাল গল্পে মেতে উঠেছিলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু এসে প্রবেশ করলেন জনতার ভিড়ে। ১৯৭৩ সালের এইদিনে শপথ গ্রহণের পরের সময়ের পরিবেশের বর্ণনা দিয়ে লেখা প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।

সেসময় তার পাশে ছিলেন পূর্বতন মন্ত্রিসভার সদস্য শামসুল হক। জনাব হকের কাঁধে হাত রেখে বঙ্গবন্ধু আস্তে আস্তে এগোচ্ছেন। এগিয়ে চলেছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। দলীয়কর্মী, সরকারি কর্মচারী, সেনাবাহিনীর লোক সবাইকে কুশল জিজ্ঞেস করছেন। কেউ এগিয়ে এসে পা ছুঁয়ে সালাম করছে, কেউ করমর্দন করছেন। বঙ্গবন্ধু কারও পিঠে স্নেহের পরশ বুলিয়ে, কারও মাথায় হাত দিয়ে, কারো গালে মৃদু করস্পর্শে আদর করে কুশল ও ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করছেন। সবাই তার অতি পরিচিত। সবাই যেন তার পরিবারের সদস্য। এক পর্যায়ে জনৈক সংসদ সদস্য এগিয়ে এসে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আজ খুব নবীন দেখাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হেসে বলেন, তুমি দিনদিন নবীন না প্রবীন হচ্ছো তা দেখে বোঝার উপায় নেই। লনে সেসময় হাসির রোল ওঠে।

পররাষ্ট্র নীতি অপরিবর্তিত থাকবে

বাংলাদেশ সরকারের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কোনেও পরিবর্তন হবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদল এর অর্থ এই নয় যে সরকারের ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন হতে হবে। পররাষ্ট্রনীতি যা রয়েছে তাই থাকবে। মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করে পত্রিকাগুলো। বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিই অনুসরণ করবে।

তোফায়েলই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় জনাব তোফায়েল আহমেদকে তার রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ করেছেন বলে এই দিন একসরকারি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। তাদের বাহ্যিক দিক থেকে তোফায়েল আহমেদ হবেন একজন প্রতিমন্ত্রী।

পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ের হিসাব পেশ করার নির্দেশ শিশুখাদ্য, সাবান, নারিকেল তেল, পাওয়ার টিলার রেডিও ট্রানজিস্টার সুতা সরকারের সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য নির্ধারণের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সরাসরি পণ্য উৎপাদনকারীদের ৭ দিনের মধ্যে উৎপাদন ব্যয়ের হিসাব রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এই দিন প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় ব্যবসা-বাণিজ্য দফতর কর্তৃক মূল্যনির্ধারণ, অত্যাবশ্যক পণ্য বিক্রয় ও হস্তান্তরের বিধি ও তার আদেশ এর আওতাভুক্ত অপরাধ করলে, বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত

জনপ্রিয়

মুরাদনগরের সাবেক ৫বারের এমপি কায়কোবাদের অপেক্ষায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ

বঙ্গবন্ধুর প্রথম মন্ত্রিসভায় কারা কোন পদে ছিলেন

প্রকাশিত : ১২:৫৩:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ ২০২১

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে আজকের বিজনেস বাংলাদেশ। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৬ মার্চের ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের নয়া মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। বিগত মন্ত্রীসভার মাত্র তিনজন ছাড়া সব সদস্যই এই মন্ত্রিসভায় ছিল এবং নতুন এসেছেন মাত্র একজন শ্রী মনোরঞ্জন ধর। যে তিনজন বাদ পড়েছিলেন তারা হলেন বিগত মন্ত্রীসভার সমবায় ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন মন্ত্রীর শামসুল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকি এবং যোগাযোগমন্ত্রী মোল্লা জালাল উদ্দিন। নবগঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথগ্রহণ করেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, মনসুর আলী, খোন্দকার মোশতাক আহমদ, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, আব্দুস সামাদ, শেখ আব্দুল আজিজ, ইউসুফ আলী, জহুর আহমেদ চৌধুরী।

বঙ্গবন্ধু যখন শপথ নিতে ওঠেন তখন উপস্থিত সবাই বিপুল করতালিতে তাকে অভিনন্দিত করেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই ঐতিহ্যবাহী পাজামা-পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট পরা। শপথ গ্রহণের শুরুতে ও শেষে অন্যান্য মন্ত্রীদেরকেও করতালিতে অভিনন্দিত করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হবে মাত্র ৯ দিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভা গঠন করেন।

অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন বিরাট আশা নিয়ে তিনি ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আছেন। জনগণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লাভের পর মন্ত্রিসভা গঠন করতে পেরে তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন জাতি তার এবং তার দলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে তা ৭ মার্চের নির্বাচনে ফলেই সুস্পষ্ট।

বিকেলের রোদ্দুরে সবুজ লনে বঙ্গবন্ধু

নয়া মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে সবাই বঙ্গভবনের দরবার কক্ষের উত্তর দিকে সবুজ লনে বিকেলের পড়ন্ত রোদ্দুরে চাখাচ্ছিলেন আর নানারকম গাল গল্পে মেতে উঠেছিলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু এসে প্রবেশ করলেন জনতার ভিড়ে। ১৯৭৩ সালের এইদিনে শপথ গ্রহণের পরের সময়ের পরিবেশের বর্ণনা দিয়ে লেখা প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।

সেসময় তার পাশে ছিলেন পূর্বতন মন্ত্রিসভার সদস্য শামসুল হক। জনাব হকের কাঁধে হাত রেখে বঙ্গবন্ধু আস্তে আস্তে এগোচ্ছেন। এগিয়ে চলেছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। দলীয়কর্মী, সরকারি কর্মচারী, সেনাবাহিনীর লোক সবাইকে কুশল জিজ্ঞেস করছেন। কেউ এগিয়ে এসে পা ছুঁয়ে সালাম করছে, কেউ করমর্দন করছেন। বঙ্গবন্ধু কারও পিঠে স্নেহের পরশ বুলিয়ে, কারও মাথায় হাত দিয়ে, কারো গালে মৃদু করস্পর্শে আদর করে কুশল ও ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করছেন। সবাই তার অতি পরিচিত। সবাই যেন তার পরিবারের সদস্য। এক পর্যায়ে জনৈক সংসদ সদস্য এগিয়ে এসে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আজ খুব নবীন দেখাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হেসে বলেন, তুমি দিনদিন নবীন না প্রবীন হচ্ছো তা দেখে বোঝার উপায় নেই। লনে সেসময় হাসির রোল ওঠে।

পররাষ্ট্র নীতি অপরিবর্তিত থাকবে

বাংলাদেশ সরকারের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কোনেও পরিবর্তন হবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদল এর অর্থ এই নয় যে সরকারের ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন হতে হবে। পররাষ্ট্রনীতি যা রয়েছে তাই থাকবে। মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করে পত্রিকাগুলো। বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিই অনুসরণ করবে।

তোফায়েলই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় জনাব তোফায়েল আহমেদকে তার রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ করেছেন বলে এই দিন একসরকারি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। তাদের বাহ্যিক দিক থেকে তোফায়েল আহমেদ হবেন একজন প্রতিমন্ত্রী।

পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ের হিসাব পেশ করার নির্দেশ শিশুখাদ্য, সাবান, নারিকেল তেল, পাওয়ার টিলার রেডিও ট্রানজিস্টার সুতা সরকারের সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য নির্ধারণের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সরাসরি পণ্য উৎপাদনকারীদের ৭ দিনের মধ্যে উৎপাদন ব্যয়ের হিসাব রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এই দিন প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় ব্যবসা-বাণিজ্য দফতর কর্তৃক মূল্যনির্ধারণ, অত্যাবশ্যক পণ্য বিক্রয় ও হস্তান্তরের বিধি ও তার আদেশ এর আওতাভুক্ত অপরাধ করলে, বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত