বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য জাতিসংঘের গঠিত তহবিলে টান পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা থেকে প্রত্যাশিত সহায়তা না আসায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ সেখানে তারা নাগরিকত্ব এবং অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। রাষ্ট্রহীন এসব রোহিঙ্গা শরণার্থী বেঁচে থাকার জন্য পুরোপুরি মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
ইউএনএইচসিআরের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গাদের সর্বাধিক অপূর্ণ চাহিদাগুলোর মধ্যে রয়েছে সঠিক পুষ্টি, আশ্রয়ের উপকরণ, স্যানিটেশন সুবিধা এবং জীবিকার সুযোগ।
সংস্থাটি বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার ভরসায় ২০২২ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৮১ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই তহবিলে জাতিসংঘের প্রস্তাবিত অর্থের মাত্র ৪৯ শতাংশ বা ৪২৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার জমা পড়েছে।
ইউএনএইচসিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে, যার অর্থ বিপুল সংখ্যক অসহায় মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া।
মোহাম্মদ তাহের নামে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এক রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়টার্সকে বলেন, আমাদের দুর্দশার কথা বিশ্ব সম্প্রদাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তাদের উচিত যতটা সম্ভব আমাদের সাহায্য করা। আমাদের এখানে কাজ করার অনুমতি নেই। খাদ্যের জন্য আমাদের বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার ওপরই নির্ভর করতে হবে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭২ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছিল। আর এ বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৩ জন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলার মুখে ২০১৬ সালের অক্টোবরে রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে অন্তত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকে বাংলাদেশে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলিয়ে প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতি ছিল।
রোববার (২১ আগস্ট) বিকেলে রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করছে। সেই হিসাবে চার বছরে দেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ