০৮:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

দখল ও দুষণ দাগনভুঞার অধিকাংশ খাল

ফেনী জেলার দাগনভুঞা উপজেলার বাণিজ্যিক যোগাযোগের সহজ মাধ্যম ছিল ভিবিন্ন খাল সম‚হ। কিছু কিছু খাল অনেক পুরনো। এই সব পুরনো এ খাল দিয়ে নোয়াখালী খাল হয়ে ছোট ট্রলারে পণ্যসামগ্রী আনা নেয়া করতো ব্যাবসায়ীরা। প্রবাহমান পানি এলাকার কৃষিকাজের সেচের মাধ্যম ছিল খাল সম‚হ। দাগনভ‚ঞা পৌর শহর ঘেঁষে দাদনার খাল। এটি প্রায় দুইশ বছরের পুরনো খালটির প‚র্ব অংশ ফেনী ছোট নদীর সাথে সংযুক্ত হয়ে পশ্চিম অংশ মিলিত হয়েছে নোয়াখালী খালের সাথে। এখন ভরাট ও দখল হতে হতে এর অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। বসুরহাট রোডের খালের প্রায় অনেকাংশই দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।

এ খালের প্রবাহমান পানি আশপাশের এলাকার কৃষি জমির সেচের কাজে ব্যবহার হতো। পরবর্তী সময় অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। সংস্কারের অভাবে দাগনভ‚ঞা বাজার ও নামার বাজারে ফেলানো বর্জ্য আবাসিক এলাকার পতিত আবর্জনায় বন্ধ হয়ে আছে খালটির প্রবাহমান স্রোতধারা। এসব আবর্জনা পচে নষ্ট হয়ে গেছে পানি, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ ও রোগবালাই। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ফেনী-নোয়াখালী ফোরলেন মহাসড়কের পাশ দিয়ে গেছে নয়ন জলা নামে খাল। মহাসড়ক স¤প্রসারনে খালের অর্ধেকের বেশি অংশ ভরাট করা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় দুই পাশের খাল নালা পুরোটাই গেছে মহাসড়কের পেটে। ফলে পানি প্রবাহের বন্ধ হয়ে বর্ষার মৌসুমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে করে কৃষি, মৎস্য এবং গ্রামীণ অবকাঠামো। বিশেষ করে রাস্তাঘাট, পুলকালবাট,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে হয়ে থাকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।

মাতুভুঞা ছোট ফেনী নদীর সাথে দাগনভ‚ঞা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ দিয়ে সংযোগস্থলের আগেই অনেক জায়গায় খালের উপর ব্রিজ নির্মাণ, অবৈধ দখল, পলিথিন বর্জ্য ফেলানো, দোকানপাট নির্মাণসহ স্রোতধারা পুরোটাই থমকে গেছে। সা¤প্রতিককালে বৃষ্টির পানির কারণে পৌর এলাকায় ৪,৫,৬,৭ নং ওয়ার্ডসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের পানি যাচ্ছেনা কোনদিকে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা, ফসল, মৎস খামার, সবজিক্ষেতসহ ঘরবাড়ি। অত্র অঞ্চলে খাদ্যর লক্ষমাত্রা প‚রণে হিমশিম খেতে হবে কৃষকদের।

দাগনভুঞা ছোট ফেনী নদীর সংযোগস্থল রাজাপুর বাজারে প্রবাহমান খালে নিষিদ্ধ পলিথিন ও আবর্জনা ফেলার কারণে ভরাট হচ্ছে খাল। অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে কৃষি চাষাবাদ। পলিথিনের কারণে পানির স্রোতধারা মারাতœক হুমকির মুখে পডবে বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা যায়, দাগনভ‚ঞা ২ নং রাজাপুর ইউনিয়ন বাজারে ব্যাবসা করেন প্রায় ৬ শত দোকানী। গরু জবাইয়ের বর্জ্য ও বাজারের প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ টন পলিথিন ফেলা হচ্ছে খালে। রাজাপুর বাজার পশ্চিমে অবস্থিত খালের ব্রিজের নিচে ৮০ শতাংশ ভরাট হয়ে গেছে। শীত মৌসুমে খালে পানি না থাকায় অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্বির আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় মুনির হোসাইন বলেন আগে খালে মাছ পাওয়া যেতো এখন পাই শুধু পলিথিন। ইরি চাষাবাদ ও বিভিন্ন মৌসুমে পানির কারণে কৃষি উৎপাদিত চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাপক হ্রাস পাচ্ছে। আর খালের অধিকাংশ অংশই দখল করে প্রভাবশালীরা দোকান ঘর তৈরি করে নিয়েছে।

এই বছরের প্রথমে দৈনিক গনমুক্তির রিপোর্টের পরে ফেনী পরিবেশ আদালত স্বপনোদিত সংস্কারের আদেশ জারি করে। তখন উপজেলা নির্বাহি অফিসার নাহিদা আক্তার তানিয়া রাজাপুর খাল সংস্কার করে। কিন্তু এখন আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
দাগনভুঞা পূর্বচন্দপুর খালের ও একই অবস্থা। এটিও দখল ও দুষণে অস্থিস্ত বিলিনের পথে ছিল। গত বছর দাগনভুঞা উপজেলা নির্বাহি অফিসার নাহিদা আক্তার তানিয়া সংস্কার করে কিছুটা প্রবাহমান করে। এখন আবার প্রায় বর্জ্য আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।

জানা যায়, দাদনার খালটি সর্বশেষ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রভাব মোকাবেলার জন্য দাগনভুঞার পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ( পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের) ৪ কোটি টাকা অর্থায়নে সংস্কার করে এবং বাজার থেকে প‚র্ব অংশের একপাশ নান্দনিক ব্রিজ করা হয়। আর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন দাগনভ‚ঞা পৌরসভা। এরপর আর কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। খালের অধিকাংশই দাগনভ‚ঞা পৌরসভার বাজার ও আবাসিক এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। এ খালটি বর্তমানে দাগনভ‚ঞা পৌরসভার অধীনে। পৌর বাজারের পানি নিষ্কাসনের ও পৌরসভার আশপাশ আবাসিক এলাকার পয়ঃনিষ্কাসনের একমাত্র মাধ্যম হল এ খাল। খালে স্থির হযে থাকা জমাকৃত পানি বিষাক্ত ও দ‚র্ঘন্ধে পরিণত হয়েছে। মাতুভ‚ঞা থেকে দাগনভ‚ঞা উপজেলার সম্মুখ দিয়ে বয়ে আসা খাল বেশীরভাগই দখলে নিয়েছে স্থানীয়রা।

স্মৃতিচারণে কয়েকজন স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ জানান, কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের কৃষকরা এই খালের পানি দিয়ে সোনার ফসল ফলাতেন। নান্দনিক সৌন্দর্যের সে খালটি এখন অবহেলা অনাদরে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়ে বিষাক্ত পানিতে রুপান্তর হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, খালের অধিকাংশই দখল করে নির্মাণ করেছে স্থায়ী ভবন ও দোকানপাট। এতে খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা কমে পরিণত হয়েছে সরু ড্রেনে। যতটুকু খাল আছে তার মধ্যে কচুরিপানা ও বনজঙ্গল দিয়ে ভরা। অপরদিকে পৌর এলাকাসহ দাগনভ‚ঞা বাজার ও আাবাসিক ভবণগুলোর ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় খালে। যার ফলে ময়লা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে খালে পানির স্রোত বন্ধ হয়ে যায়। বাজারে দৈনিক ১০/১২ টি গরু জবাই করে সেগুলোর ময়লা ও খালে ফেলা হয়। আবর্জনা পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, সৃষ্টি হচ্ছে ডেঙ্গুসহ মশার উপদ্রপ। এতে একদিকে বাড়ছে রোগবালাই, হুমকিতে রয়েছে পরিবেশ। সংস্কার আর খননের অভাবে বর্ষাকালেও আগের মতো পানি যায়না। থমকে রয়েছে পানির স্রোত। এতে করে বর্ষাকালে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
গত বছর দাদনার খাল নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে নিউজের পর ফেনীর পরিবেশ আদালত থেকে আদেশ জারি হবার পরও খালের কোন সংস্কার কাজ এই পর্যন্ত করা হয়নি।

দাগনভুঞা পৌরসভার মেয়র ওমর ফারুক খাঁন জানান, দাদনার খালটি জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের। অবৈধ দখল উচ্ছেদের বিষয়ে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে । এটি গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডার হয়েছে এখনও তারা কাজ শুরু করতে পারেনি। তাছাড়া খালের যে পরিস্থিতি একা সংস্কার করা সম্ভব নয়। আমরা প্রতি বছর খালটি পরিষ্কার করে থাকি। তবে মানুষকে সচেতন হতে হবে তারা যেন খালে ময়লা না পেলে। আর খালটি পরিপ‚র্ণ সংস্কার ও দখলমুক্ত করার জন্য উপজেলা প্রশাসন, খাল সংস্কারকারি সংস্থা বিআরডি ও ওয়াবদা বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় খালটি পুনঃজীবিত করা সম্ভব। তাই সকলের সহযোগীতার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে দাগনভুঞা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ( ভারপ্রাপ্ত) গাজালা পারভীন রুহী বলেন, দাদনার খালের বিষয়টি শুনেছি, নান্দনিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই খাল। স্থানীয়রা অনেক কষ্টে রয়েছেন। দাগনভ‚ঞা উপজেলাতে বিএডিসি এর মাধ্যমে খালগুলো সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই বছর মাননীয় আদালতের আদেশের পর রাজাপুরে খাল সংস্কার করা হয়েছে। প‚র্বচন্দ্রপুরে খাল সংস্কার করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দাদনার খালটিও পুনরুদ্ধার করে সংস্কার করা হবে। এরই অংশ হিসেবে উপজেলা ভ‚মি অফিসের মাধ্যমে খালটি নকশা অনুযায়ী চিহ্নিত করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। খালের কোন অংশ অবৈধ থাকলে তা উদ্ধার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে। জনগন কোন আবর্জনা, পলিথিন যেন খালে না ফেলে এদিক দিয়ে তাদের সচেতন হতে হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/হাবিব

জনপ্রিয়

মুরাদনগরের সাবেক ৫বারের এমপি কায়কোবাদের অপেক্ষায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ

দখল ও দুষণ দাগনভুঞার অধিকাংশ খাল

প্রকাশিত : ০৪:৩৬:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২২

ফেনী জেলার দাগনভুঞা উপজেলার বাণিজ্যিক যোগাযোগের সহজ মাধ্যম ছিল ভিবিন্ন খাল সম‚হ। কিছু কিছু খাল অনেক পুরনো। এই সব পুরনো এ খাল দিয়ে নোয়াখালী খাল হয়ে ছোট ট্রলারে পণ্যসামগ্রী আনা নেয়া করতো ব্যাবসায়ীরা। প্রবাহমান পানি এলাকার কৃষিকাজের সেচের মাধ্যম ছিল খাল সম‚হ। দাগনভ‚ঞা পৌর শহর ঘেঁষে দাদনার খাল। এটি প্রায় দুইশ বছরের পুরনো খালটির প‚র্ব অংশ ফেনী ছোট নদীর সাথে সংযুক্ত হয়ে পশ্চিম অংশ মিলিত হয়েছে নোয়াখালী খালের সাথে। এখন ভরাট ও দখল হতে হতে এর অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। বসুরহাট রোডের খালের প্রায় অনেকাংশই দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।

এ খালের প্রবাহমান পানি আশপাশের এলাকার কৃষি জমির সেচের কাজে ব্যবহার হতো। পরবর্তী সময় অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। সংস্কারের অভাবে দাগনভ‚ঞা বাজার ও নামার বাজারে ফেলানো বর্জ্য আবাসিক এলাকার পতিত আবর্জনায় বন্ধ হয়ে আছে খালটির প্রবাহমান স্রোতধারা। এসব আবর্জনা পচে নষ্ট হয়ে গেছে পানি, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ ও রোগবালাই। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ফেনী-নোয়াখালী ফোরলেন মহাসড়কের পাশ দিয়ে গেছে নয়ন জলা নামে খাল। মহাসড়ক স¤প্রসারনে খালের অর্ধেকের বেশি অংশ ভরাট করা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় দুই পাশের খাল নালা পুরোটাই গেছে মহাসড়কের পেটে। ফলে পানি প্রবাহের বন্ধ হয়ে বর্ষার মৌসুমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে করে কৃষি, মৎস্য এবং গ্রামীণ অবকাঠামো। বিশেষ করে রাস্তাঘাট, পুলকালবাট,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে হয়ে থাকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।

মাতুভুঞা ছোট ফেনী নদীর সাথে দাগনভ‚ঞা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ দিয়ে সংযোগস্থলের আগেই অনেক জায়গায় খালের উপর ব্রিজ নির্মাণ, অবৈধ দখল, পলিথিন বর্জ্য ফেলানো, দোকানপাট নির্মাণসহ স্রোতধারা পুরোটাই থমকে গেছে। সা¤প্রতিককালে বৃষ্টির পানির কারণে পৌর এলাকায় ৪,৫,৬,৭ নং ওয়ার্ডসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের পানি যাচ্ছেনা কোনদিকে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা, ফসল, মৎস খামার, সবজিক্ষেতসহ ঘরবাড়ি। অত্র অঞ্চলে খাদ্যর লক্ষমাত্রা প‚রণে হিমশিম খেতে হবে কৃষকদের।

দাগনভুঞা ছোট ফেনী নদীর সংযোগস্থল রাজাপুর বাজারে প্রবাহমান খালে নিষিদ্ধ পলিথিন ও আবর্জনা ফেলার কারণে ভরাট হচ্ছে খাল। অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে কৃষি চাষাবাদ। পলিথিনের কারণে পানির স্রোতধারা মারাতœক হুমকির মুখে পডবে বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা যায়, দাগনভ‚ঞা ২ নং রাজাপুর ইউনিয়ন বাজারে ব্যাবসা করেন প্রায় ৬ শত দোকানী। গরু জবাইয়ের বর্জ্য ও বাজারের প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ টন পলিথিন ফেলা হচ্ছে খালে। রাজাপুর বাজার পশ্চিমে অবস্থিত খালের ব্রিজের নিচে ৮০ শতাংশ ভরাট হয়ে গেছে। শীত মৌসুমে খালে পানি না থাকায় অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্বির আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় মুনির হোসাইন বলেন আগে খালে মাছ পাওয়া যেতো এখন পাই শুধু পলিথিন। ইরি চাষাবাদ ও বিভিন্ন মৌসুমে পানির কারণে কৃষি উৎপাদিত চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাপক হ্রাস পাচ্ছে। আর খালের অধিকাংশ অংশই দখল করে প্রভাবশালীরা দোকান ঘর তৈরি করে নিয়েছে।

এই বছরের প্রথমে দৈনিক গনমুক্তির রিপোর্টের পরে ফেনী পরিবেশ আদালত স্বপনোদিত সংস্কারের আদেশ জারি করে। তখন উপজেলা নির্বাহি অফিসার নাহিদা আক্তার তানিয়া রাজাপুর খাল সংস্কার করে। কিন্তু এখন আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
দাগনভুঞা পূর্বচন্দপুর খালের ও একই অবস্থা। এটিও দখল ও দুষণে অস্থিস্ত বিলিনের পথে ছিল। গত বছর দাগনভুঞা উপজেলা নির্বাহি অফিসার নাহিদা আক্তার তানিয়া সংস্কার করে কিছুটা প্রবাহমান করে। এখন আবার প্রায় বর্জ্য আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।

জানা যায়, দাদনার খালটি সর্বশেষ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রভাব মোকাবেলার জন্য দাগনভুঞার পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ( পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের) ৪ কোটি টাকা অর্থায়নে সংস্কার করে এবং বাজার থেকে প‚র্ব অংশের একপাশ নান্দনিক ব্রিজ করা হয়। আর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন দাগনভ‚ঞা পৌরসভা। এরপর আর কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। খালের অধিকাংশই দাগনভ‚ঞা পৌরসভার বাজার ও আবাসিক এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। এ খালটি বর্তমানে দাগনভ‚ঞা পৌরসভার অধীনে। পৌর বাজারের পানি নিষ্কাসনের ও পৌরসভার আশপাশ আবাসিক এলাকার পয়ঃনিষ্কাসনের একমাত্র মাধ্যম হল এ খাল। খালে স্থির হযে থাকা জমাকৃত পানি বিষাক্ত ও দ‚র্ঘন্ধে পরিণত হয়েছে। মাতুভ‚ঞা থেকে দাগনভ‚ঞা উপজেলার সম্মুখ দিয়ে বয়ে আসা খাল বেশীরভাগই দখলে নিয়েছে স্থানীয়রা।

স্মৃতিচারণে কয়েকজন স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ জানান, কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের কৃষকরা এই খালের পানি দিয়ে সোনার ফসল ফলাতেন। নান্দনিক সৌন্দর্যের সে খালটি এখন অবহেলা অনাদরে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়ে বিষাক্ত পানিতে রুপান্তর হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, খালের অধিকাংশই দখল করে নির্মাণ করেছে স্থায়ী ভবন ও দোকানপাট। এতে খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা কমে পরিণত হয়েছে সরু ড্রেনে। যতটুকু খাল আছে তার মধ্যে কচুরিপানা ও বনজঙ্গল দিয়ে ভরা। অপরদিকে পৌর এলাকাসহ দাগনভ‚ঞা বাজার ও আাবাসিক ভবণগুলোর ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় খালে। যার ফলে ময়লা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে খালে পানির স্রোত বন্ধ হয়ে যায়। বাজারে দৈনিক ১০/১২ টি গরু জবাই করে সেগুলোর ময়লা ও খালে ফেলা হয়। আবর্জনা পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, সৃষ্টি হচ্ছে ডেঙ্গুসহ মশার উপদ্রপ। এতে একদিকে বাড়ছে রোগবালাই, হুমকিতে রয়েছে পরিবেশ। সংস্কার আর খননের অভাবে বর্ষাকালেও আগের মতো পানি যায়না। থমকে রয়েছে পানির স্রোত। এতে করে বর্ষাকালে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
গত বছর দাদনার খাল নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে নিউজের পর ফেনীর পরিবেশ আদালত থেকে আদেশ জারি হবার পরও খালের কোন সংস্কার কাজ এই পর্যন্ত করা হয়নি।

দাগনভুঞা পৌরসভার মেয়র ওমর ফারুক খাঁন জানান, দাদনার খালটি জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের। অবৈধ দখল উচ্ছেদের বিষয়ে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে । এটি গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডার হয়েছে এখনও তারা কাজ শুরু করতে পারেনি। তাছাড়া খালের যে পরিস্থিতি একা সংস্কার করা সম্ভব নয়। আমরা প্রতি বছর খালটি পরিষ্কার করে থাকি। তবে মানুষকে সচেতন হতে হবে তারা যেন খালে ময়লা না পেলে। আর খালটি পরিপ‚র্ণ সংস্কার ও দখলমুক্ত করার জন্য উপজেলা প্রশাসন, খাল সংস্কারকারি সংস্থা বিআরডি ও ওয়াবদা বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় খালটি পুনঃজীবিত করা সম্ভব। তাই সকলের সহযোগীতার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে দাগনভুঞা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ( ভারপ্রাপ্ত) গাজালা পারভীন রুহী বলেন, দাদনার খালের বিষয়টি শুনেছি, নান্দনিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই খাল। স্থানীয়রা অনেক কষ্টে রয়েছেন। দাগনভ‚ঞা উপজেলাতে বিএডিসি এর মাধ্যমে খালগুলো সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই বছর মাননীয় আদালতের আদেশের পর রাজাপুরে খাল সংস্কার করা হয়েছে। প‚র্বচন্দ্রপুরে খাল সংস্কার করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দাদনার খালটিও পুনরুদ্ধার করে সংস্কার করা হবে। এরই অংশ হিসেবে উপজেলা ভ‚মি অফিসের মাধ্যমে খালটি নকশা অনুযায়ী চিহ্নিত করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। খালের কোন অংশ অবৈধ থাকলে তা উদ্ধার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে। জনগন কোন আবর্জনা, পলিথিন যেন খালে না ফেলে এদিক দিয়ে তাদের সচেতন হতে হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/হাবিব