০৩:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

পরবর্তী প্রধান বিচারপতি গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন: প্রধান বিচারপতি

দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বিচার বিভাগের গুরুত্ব ও সম্ভাব্য করণীয় বিষয়ে তিনি দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া বিদায় সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি এসব বলেন।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার মনে হয় আমার উত্তরাধিকারী গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন এবং আমি এটাও মনে করি মহান আল্লাহতায়ালা তাকে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার অধিকারী করবেন এবং বিচার বিভাগকে আরো গতিশীল বিচার বিভাগে পরিণত করবেন । আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি আমার বিচার বিভাগ তার কাছেই হস্তান্তর করতে যাচ্ছি যিনি এই বিভাগকে আরো গতিশীল করার জন্য ক্ষমতাবান এবং মনোযোগী হবেন। আমি অপেক্ষা করব আপনাদের ভবিষ্যতের সাফল্যের গল্প শোনার জন্য।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটি জাতির জনগণ শাসন বিভাগ বা আইন বিভাগের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে সে জাতিকে খারাপ দিনটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আইনের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বা প্রাধান্য কার্যকর করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। বিচার বিভাগ যদি আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ বা পিছপা হয় তাহলে রাষ্ট্র এবং নাগরিক ক্ষতিগ্রস্থ হতে বাধ্য। বিচার বিভাগ সংবিধানের আধিপত্য রক্ষার পাশাপাশি জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক। সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন সংরক্ষণ এবং সমাজের দুর্বল অংশের অধিকার এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য্য।’

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বিচার প্রশাসনের সর্বোচ্চ আদালত।আর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এর সার্বভৌমত্বের উপর নির্ভর করে। সাংবিধানিক বিধান দিয়ে সর্ব প্রকার সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে বিচার বিভাগকে মজবুত দেওয়াল দিয়ে রক্ষা করার দায়িত্ব বিচারকদের, আইনজীবীদের এবং রাষ্ট্রের প্রত্যেক দায়িত্বশীল নাগরিকের। আমরা, আপনারা, সবাই সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সর্বনাশা দিনের জন্য প্রতিটি নাগরিকের অপেক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক বিভক্তি রাজপথ অতিক্রম করে বিচারালয় অভিমুখে ধাবিত হলে সেটা বিচারলয়ের জন্য মঙ্গলজনক হয়না।’

আইনজীবীদের বিভক্তি’র প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আইনজীবীদের বিভক্তি ও মতভেদ এবং তার প্রতিক্রিয়া বিচারালয়কে ক্ষতিগ্রস্থ করে। রাজনৈতিক মতাদর্শ রাজনৈতিকভাবে বাস্তবায়ন করলে এবং বিচারলয়কে নিরাপদ দুরত্বে রাখলে বিচার বিভাগ স্বাচ্ছন্ধ্য বোধ করে।’

রাজনীতিবিদ আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদ আইনজীবীগণকে অনুরোধ করবো বিচারালয়ের ভাবমুর্তি নষ্ট করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাষ্ট্র সৃষ্টিতে ত্যাগের কথা অন্তত ১০ বার ভাববেন। কারণ, আপনাদের সিদ্ধান্তে ভুল হলে শেষ বিচারে তাতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়। ক্ষতি হয় বিচার বিভাগের। আইনজীবীদের সেই শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে, যে শক্তি বিচারালয়কে দূর্বল করে, যে শক্তি গণতান্ত্রিক জীবন-যাপন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।’

মানবিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি আইনে মানবিকতার স্পর্শ থাকতে হবে। আইন যদি দরিদ্রকে পিষে দেয় আর ধনী ব্যক্তি যদি আইনকে পিষে দেয় তাহলে রাষ্ট্র এবং বিচার বিভাগ সঠিকভাবে চলছে এটা
কোনভাবেই বলা যাবে না। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচার বিভাগ অপরিহার্য।’

বিচারকদের নৈতিকতার প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা আর বিচারকদের রাজনৈতিকভাবে বয়ে যাওয়া হাওয়া থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে, সংবিধান, আইন নিজেদের বিচারিক বিবেকের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে বিচার কার্য সমাধান করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় জনগণের অগাধ আস্থা স্থাপন করতে হবে এবং থাকতে হবে নইলে জনগণের অধিকার রক্ষা হবেনা এবং স্বাধীনতাও বিপন্ন হবে। সব বিচারককে অসামান্য নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে, নইলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা শুধুমাত্র সংবিধানের ভিতরই আবদ্ধ থাকবে। ধন্য তারাই, যারা অন্তরে শুদ্ধ।’

বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদালত কক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনায় উভয় বিভাগের বিচারপতি, আ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও প্রধান বিচারপতির পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন ফকির বিদায়ী সম্ভাষণ জানান।

বয়সসীমা অনুযায়ী হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করবেন ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি থাকায় আদালতের শেষ কর্মদিবসে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুল গোফুর মোল্লা ও মাতার নাম নূরজাহান বেগম। ৯ ভাইবোনের মধ্যে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী চতুর্থ। এদের মধ্যে বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। যিনি ২০২১ সালের ১৬ জুলাই অবসরে যান।

শিক্ষা জীবনে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী খোকসা জানিপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৪ সালে সরকারি পি.সি. কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন।সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাস করেন। পরে তিনি ধানমন্ডি ল’ কলেজ থেকে আইনে স্নাতক পাস করেন। এরপর ১৯৮১ সালে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আইন পেশায় যোগ দেন। এরপর ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

একপর্যায়ে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ ১১ জন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ওইসময়ের ১৬ জন অতিরিক্ত বিচারক স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ বঞ্চিত হন। পরবর্তীতে নিয়োগ বঞ্চিত ১০ বিচারপতি রিট করলে সে রিটের চুড়ান্ত রায়ের পর ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এরপর তিনি ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হন।দেশের ২২ তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যাওয়ার পর ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর দেশের ২৩ তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

বিজনেস বাংলাদেশ/bh

জনপ্রিয়

মুরাদনগরের সাবেক ৫বারের এমপি কায়কোবাদের অপেক্ষায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ

পরবর্তী প্রধান বিচারপতি গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন: প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত : ০৩:৫৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩

দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বিচার বিভাগের গুরুত্ব ও সম্ভাব্য করণীয় বিষয়ে তিনি দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া বিদায় সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি এসব বলেন।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার মনে হয় আমার উত্তরাধিকারী গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন এবং আমি এটাও মনে করি মহান আল্লাহতায়ালা তাকে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার অধিকারী করবেন এবং বিচার বিভাগকে আরো গতিশীল বিচার বিভাগে পরিণত করবেন । আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি আমার বিচার বিভাগ তার কাছেই হস্তান্তর করতে যাচ্ছি যিনি এই বিভাগকে আরো গতিশীল করার জন্য ক্ষমতাবান এবং মনোযোগী হবেন। আমি অপেক্ষা করব আপনাদের ভবিষ্যতের সাফল্যের গল্প শোনার জন্য।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটি জাতির জনগণ শাসন বিভাগ বা আইন বিভাগের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে সে জাতিকে খারাপ দিনটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আইনের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বা প্রাধান্য কার্যকর করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। বিচার বিভাগ যদি আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ বা পিছপা হয় তাহলে রাষ্ট্র এবং নাগরিক ক্ষতিগ্রস্থ হতে বাধ্য। বিচার বিভাগ সংবিধানের আধিপত্য রক্ষার পাশাপাশি জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক। সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন সংরক্ষণ এবং সমাজের দুর্বল অংশের অধিকার এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য্য।’

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বিচার প্রশাসনের সর্বোচ্চ আদালত।আর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এর সার্বভৌমত্বের উপর নির্ভর করে। সাংবিধানিক বিধান দিয়ে সর্ব প্রকার সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে বিচার বিভাগকে মজবুত দেওয়াল দিয়ে রক্ষা করার দায়িত্ব বিচারকদের, আইনজীবীদের এবং রাষ্ট্রের প্রত্যেক দায়িত্বশীল নাগরিকের। আমরা, আপনারা, সবাই সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সর্বনাশা দিনের জন্য প্রতিটি নাগরিকের অপেক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক বিভক্তি রাজপথ অতিক্রম করে বিচারালয় অভিমুখে ধাবিত হলে সেটা বিচারলয়ের জন্য মঙ্গলজনক হয়না।’

আইনজীবীদের বিভক্তি’র প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আইনজীবীদের বিভক্তি ও মতভেদ এবং তার প্রতিক্রিয়া বিচারালয়কে ক্ষতিগ্রস্থ করে। রাজনৈতিক মতাদর্শ রাজনৈতিকভাবে বাস্তবায়ন করলে এবং বিচারলয়কে নিরাপদ দুরত্বে রাখলে বিচার বিভাগ স্বাচ্ছন্ধ্য বোধ করে।’

রাজনীতিবিদ আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদ আইনজীবীগণকে অনুরোধ করবো বিচারালয়ের ভাবমুর্তি নষ্ট করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাষ্ট্র সৃষ্টিতে ত্যাগের কথা অন্তত ১০ বার ভাববেন। কারণ, আপনাদের সিদ্ধান্তে ভুল হলে শেষ বিচারে তাতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়। ক্ষতি হয় বিচার বিভাগের। আইনজীবীদের সেই শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে, যে শক্তি বিচারালয়কে দূর্বল করে, যে শক্তি গণতান্ত্রিক জীবন-যাপন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।’

মানবিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি আইনে মানবিকতার স্পর্শ থাকতে হবে। আইন যদি দরিদ্রকে পিষে দেয় আর ধনী ব্যক্তি যদি আইনকে পিষে দেয় তাহলে রাষ্ট্র এবং বিচার বিভাগ সঠিকভাবে চলছে এটা
কোনভাবেই বলা যাবে না। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচার বিভাগ অপরিহার্য।’

বিচারকদের নৈতিকতার প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা আর বিচারকদের রাজনৈতিকভাবে বয়ে যাওয়া হাওয়া থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে, সংবিধান, আইন নিজেদের বিচারিক বিবেকের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে বিচার কার্য সমাধান করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় জনগণের অগাধ আস্থা স্থাপন করতে হবে এবং থাকতে হবে নইলে জনগণের অধিকার রক্ষা হবেনা এবং স্বাধীনতাও বিপন্ন হবে। সব বিচারককে অসামান্য নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে, নইলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা শুধুমাত্র সংবিধানের ভিতরই আবদ্ধ থাকবে। ধন্য তারাই, যারা অন্তরে শুদ্ধ।’

বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদালত কক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনায় উভয় বিভাগের বিচারপতি, আ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও প্রধান বিচারপতির পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন ফকির বিদায়ী সম্ভাষণ জানান।

বয়সসীমা অনুযায়ী হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করবেন ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি থাকায় আদালতের শেষ কর্মদিবসে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুল গোফুর মোল্লা ও মাতার নাম নূরজাহান বেগম। ৯ ভাইবোনের মধ্যে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী চতুর্থ। এদের মধ্যে বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। যিনি ২০২১ সালের ১৬ জুলাই অবসরে যান।

শিক্ষা জীবনে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী খোকসা জানিপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৪ সালে সরকারি পি.সি. কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন।সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাস করেন। পরে তিনি ধানমন্ডি ল’ কলেজ থেকে আইনে স্নাতক পাস করেন। এরপর ১৯৮১ সালে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আইন পেশায় যোগ দেন। এরপর ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

একপর্যায়ে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ ১১ জন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ওইসময়ের ১৬ জন অতিরিক্ত বিচারক স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ বঞ্চিত হন। পরবর্তীতে নিয়োগ বঞ্চিত ১০ বিচারপতি রিট করলে সে রিটের চুড়ান্ত রায়ের পর ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এরপর তিনি ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হন।দেশের ২২ তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যাওয়ার পর ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর দেশের ২৩ তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

বিজনেস বাংলাদেশ/bh