বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তৃতীয় দফার প্রথম দিনের অবরোধের দিনে সকাল থেকেই রাজধানীতে বেড়েছে যান চলাচল। শুরু হয়েছে আন্তজেলা বাস চলাচল। বিগত হরতাল অবরোধের দিনের তুলনায় বেড়েছে লোকাল বাস সার্ভিস।
সেই সঙ্গে লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন ছিল চোখে পড়ার মতো। রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়িও। অন্যদিকে বরাবরের মতো কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ লাইনের ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
বুধবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চোখে পড়ে এমন চিত্র।
সরেজমিনে জুরাইন রেলগেট এলাকায় দেখা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডের আনন্দ, বোরাক ও রাইদা পরিবহনসহ এ রুটে চলাচলকারী বাসগুলো চললে। দেখা গেছে বিভিন্ন দপ্তরের স্টাফ বাসও। ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্রাক, লড়ি, কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য পণ্যবাহী পরিবহন চলতে দেখা গেছে। কিন্তু দক্ষিণ অঞ্চলের দূরপাল্লার বাস চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক।
এ ছাড়া কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ লাইনের ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। কোনো শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। এ ব্যাপারে জুরাইন রেলগেটের দায়িত্বরত গেটম্যান সোহেল জানান, হরতাল ও অবরোধেও ট্রেন চলাচল ছিল অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক।
বোরাক পরিবহনের চালকের সহকারী (হেলপার) জসিম গণমাধ্যমকে জানান, অবরোধের অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ অনেক গাড়ি রাস্তায় বের হয়েছে। যদিও বিভিন্ন জায়গায় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য গাড়ি জ্বালিয়ে দেয় অবরোধকারীরা। তবুও তারা আতঙ্কের মধ্যে গাড়ি বের করেছেন। সেই সঙ্গে সকাল থেকেই যাত্রীর চাপও বেশি।
মতিঝিলগামী একজন বাসযাত্রী খোরশেদ গণমাধ্যমকে জানান, গত হরতাল অবরোধের তুলনায় আজ যানবাহন বেশি থাকায় দুর্ভোগ কম হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাবেন যাত্রী নাসিমা আক্তার। তিনি জানান, গাড়ির সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও রিকশা চালকেরা তাদের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ দিকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় দেখা যায়, লোকাল বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল বিগত হরতাল-অবরোধের দিনগুলোর তুলনায় বেড়েছে অনেক বেশি। এমনকি বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে যানজটেরও।
এই রুটে চলাচলরত শিকড় পরিবহনের চালক শাহ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভাই কত দিন বসে থাকব! পেট আছে, সংসার আছে। তাই বাধ্য হয়ে গাড়ি নিয়ে বের হইছি। যদিও কিছু বাস জ্বালায়ে দেওয়ায় আমরা আতঙ্কে আছি।’
এ দিকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে দক্ষিণ অঞ্চলে চলাচল করে শরীয়তপুর পরিবহন। ওই পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের সহকারী জুবায়ের জানায়, সকাল থেকে এখান থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। সকাল থেকেই যাত্রী চাপ বেশ। তাই গাড়িগুলো ছেড়ে যাচ্ছে।
অন্য দিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে পূর্বাঞ্চলের আন্তজেলার অনেক বাস ছেড়ে গেছে। অনেক বাস আবার ঢাকায়ও প্রবেশ করেছে। তবে যাত্রী কিছুটা কম হওয়ার কারণে বাসগুলো যথাসময়ে যেতে পারছে না বলে জানান বাসচালকসহ টিকিট কাউন্টারের লোকজন।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাজী সেলিম সারোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত হরতাল অবরোধের তুলনায় আজকে সকাল থেকে অনেক বাস চলাচল করছে। পরিবহন শ্রমিকেরা তো গরিব মানুষ, কত দিন গাড়ি না চালিয়ে বসে থাকবে। তাদের তো সংসার আছে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা রাস্তায় নেমে পড়েছে।’
সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আন্তজেলা বাস চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তবে বিএনপির দ্বিতীয় দফার অবরোধের শেষ দিনে থেকে বাস চলাচল অনেকটাই বেড়েছে।’
এ বিষয়ে ওয়ারী বিভাগের যাত্রাবাড়ী জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মাহবুব শাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত অবরোধের তুলনায় আজকে গাড়ির চাপ অনেক বেশি। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় স্বাভাবিক দিনের মতো যানজট দেখা দিয়েছে। তবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছ।’
উল্লেখ্য, বিএনপি জামায়াতের ডাকা তৃতীয় দফার অবরোধের প্রথম দিনেও রাস্তায় দেখা যায়নি অবরোধের সমর্থনকারীদের। অন্যদিকে প্রতিদিনের মতোই রাজপথ ছিল আওয়ামী লীগের দখলে।
বিজনেস বাংলাদেশ/একে