০২:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

প্রেমিকার হাতে প্রেমিক খুন, দুই বছর পর লাশ উদ্ধার

ঘটনার দুই বছর পর প্রেমিকার হাতে খুন হওয়া প্রেমিকের লাশ উদ্ধার হয়েছে । আজ ৩ মার্চ রোববার সকাল ১১টা থেকে শুরু করে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে লাশ উত্তোলনের কাজ। ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল মাসে উপজেলার চাঁচকৈড় পুরান পাড়া মহল্লায় ওই ঘটনা ঘটে।

উদ্ধার কাজ পরিচালনা করেন নাটোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ.টি.এম. মাইনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শরিফুল ইসলাম, গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী মেজিট্রেট মেহেদী হাসান শাকিল, সিংড়া সার্কেল মোঃ আক্তারুজ্জামান, গুরুদাসপুর থানার ওসি মোঃ উজ¦ল হোসেন, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলামসহ থানা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।

তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ হন নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার খলিফাপাড়া মহল্লার মোঃ আজাদ প্রামানিকের ছেলে মফিজুল ইসলাম (২৫)। ঘটনার দীর্ঘ দুই বছরে ছেলে হারানোর শোক প্রায় ভুলতেই বসেছিলেন তার বাবা-মা। ঘটনার ২২ মাস পর নাটকীয় ভাবে জানতে পারেন তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

মফিজুলের পুঁতে রাখা লাশের অনুসন্ধানে পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে একে একে হাজির করেন হত্যাকান্ডে জরিত তিন আসামীকে। গুরুদাসপুর শহরের চাঁচকৈড় পুরানপাড়া মহল্লার একটি বালিকা মাদ্রাসার ওয়াস রুমের সেপটিক ট্যাংকের ভিতরে নিহত মফিজুলের লাশটি রেখে উপরের পাকা করে স্টাইলস লাগিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিলো। সকাল ১১টা থেকে শুরু করে প্রায় ৩ ঘন্টা চেষ্টার পর মরদেহটির বস্তাবন্ধি কংকাল উদ্ধার করতে সক্ষম হন পুলিশ প্রশাসন ও গুরুদাসপুরের ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট।

ঘটনার সত্যত্যা নিশ্চিত করে নাটোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ.টি.এম. মাইনুল ইসলাম বলেন, মফিজুল ইসলাম ও তানজিলা খাতুন খলিফাপাড়া মহল্লার মাহী বেকারীতে শ্রমিকের কাজ করতেন। এক পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে তানজিলা-আল হাবিব দম্পতির মাঝে কলহ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে তানজিলার বাবার কাছে অভিযোগ করেন জামাতা। তানজিলা মোবাইল ফোন দিয়ে মফিজুলকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টার দিকে। মফিজুল বাসায় আসা মাত্রাই হাত-পা বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ দিয়ে আসামিরা মফিজুল ইসলামকে হত্যা করে। পরে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে জামাতা আল হাবীব ও শশুড় আবু তাহের খলিফা তাঁর কর্মস্থল চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ভেতর নিয়ে নব নির্মিত ওয়াস রুমের সেফটি ট্রাঙ্কের পাশেই মাটি খুরে খাঁরা করে পুঁতে রাখেন। সে সময় ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় মফিজুলের মা গুরুদাসপুর থানায় ২০২২ সালের ৭ মে একটি জিডি জিডি করেছিলেন। পুলিশ ও ময়না তদন্ত প্রাপ্তি সাপেক্ষে অন্য কেউ জরিত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী আবু তাহের খলিফা (৫৫) তাঁর মেয়ে তানজিলা খাতুন (২৮), জামাতা আল হাবিব সরকার (৩৫) ও তাঁদের আত্মীয় আশরাফুল ইসলামকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। এর আগে শুক্রবার রাতে মফিজুলের মা মাইনুর বেগম গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ওই ৩ জনসহ ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে হত্যাকান্ডের পর তানজিলা-হাবিব দম্পতির মধ্যে কলহ বেড়ে যায়। এ কারণে ২০২২ সালের মে মাসে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেন তানজিলা। এ মামলায় কারাগারে আছেন আল হাবিব। কারাগারে গুরুদাসপুরের খলিফাপাড়া মহল্লার জাকির মুন্সির (৪০) সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে আল হাবিবের। আলাপচারিতায় হত্যাকান্ডের বিষয়টি আল হাবিব জানান জাকির মুন্সিকে। জাকির মুন্সি জামিনে মুক্তি পেয়ে মফিজুল ইসলামের পরিবারকে ঘটনাটি খুলে বলেন। বিষয়টি নিয়ে থানা-পুলিশের আশ্রয় নেয় পরিবারটি। থানা-পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত তানজিলা খাতুন ও তাঁর বাবা আবু তাহের খলিফাকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

জনপ্রিয়

মুরাদনগরের সাবেক ৫বারের এমপি কায়কোবাদের অপেক্ষায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ

প্রেমিকার হাতে প্রেমিক খুন, দুই বছর পর লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত : ০৫:৪৩:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ মার্চ ২০২৪

ঘটনার দুই বছর পর প্রেমিকার হাতে খুন হওয়া প্রেমিকের লাশ উদ্ধার হয়েছে । আজ ৩ মার্চ রোববার সকাল ১১টা থেকে শুরু করে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে লাশ উত্তোলনের কাজ। ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল মাসে উপজেলার চাঁচকৈড় পুরান পাড়া মহল্লায় ওই ঘটনা ঘটে।

উদ্ধার কাজ পরিচালনা করেন নাটোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ.টি.এম. মাইনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শরিফুল ইসলাম, গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী মেজিট্রেট মেহেদী হাসান শাকিল, সিংড়া সার্কেল মোঃ আক্তারুজ্জামান, গুরুদাসপুর থানার ওসি মোঃ উজ¦ল হোসেন, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলামসহ থানা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।

তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ হন নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার খলিফাপাড়া মহল্লার মোঃ আজাদ প্রামানিকের ছেলে মফিজুল ইসলাম (২৫)। ঘটনার দীর্ঘ দুই বছরে ছেলে হারানোর শোক প্রায় ভুলতেই বসেছিলেন তার বাবা-মা। ঘটনার ২২ মাস পর নাটকীয় ভাবে জানতে পারেন তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

মফিজুলের পুঁতে রাখা লাশের অনুসন্ধানে পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে একে একে হাজির করেন হত্যাকান্ডে জরিত তিন আসামীকে। গুরুদাসপুর শহরের চাঁচকৈড় পুরানপাড়া মহল্লার একটি বালিকা মাদ্রাসার ওয়াস রুমের সেপটিক ট্যাংকের ভিতরে নিহত মফিজুলের লাশটি রেখে উপরের পাকা করে স্টাইলস লাগিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিলো। সকাল ১১টা থেকে শুরু করে প্রায় ৩ ঘন্টা চেষ্টার পর মরদেহটির বস্তাবন্ধি কংকাল উদ্ধার করতে সক্ষম হন পুলিশ প্রশাসন ও গুরুদাসপুরের ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট।

ঘটনার সত্যত্যা নিশ্চিত করে নাটোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ.টি.এম. মাইনুল ইসলাম বলেন, মফিজুল ইসলাম ও তানজিলা খাতুন খলিফাপাড়া মহল্লার মাহী বেকারীতে শ্রমিকের কাজ করতেন। এক পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে তানজিলা-আল হাবিব দম্পতির মাঝে কলহ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে তানজিলার বাবার কাছে অভিযোগ করেন জামাতা। তানজিলা মোবাইল ফোন দিয়ে মফিজুলকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টার দিকে। মফিজুল বাসায় আসা মাত্রাই হাত-পা বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ দিয়ে আসামিরা মফিজুল ইসলামকে হত্যা করে। পরে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে জামাতা আল হাবীব ও শশুড় আবু তাহের খলিফা তাঁর কর্মস্থল চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ভেতর নিয়ে নব নির্মিত ওয়াস রুমের সেফটি ট্রাঙ্কের পাশেই মাটি খুরে খাঁরা করে পুঁতে রাখেন। সে সময় ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় মফিজুলের মা গুরুদাসপুর থানায় ২০২২ সালের ৭ মে একটি জিডি জিডি করেছিলেন। পুলিশ ও ময়না তদন্ত প্রাপ্তি সাপেক্ষে অন্য কেউ জরিত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী আবু তাহের খলিফা (৫৫) তাঁর মেয়ে তানজিলা খাতুন (২৮), জামাতা আল হাবিব সরকার (৩৫) ও তাঁদের আত্মীয় আশরাফুল ইসলামকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। এর আগে শুক্রবার রাতে মফিজুলের মা মাইনুর বেগম গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ওই ৩ জনসহ ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে হত্যাকান্ডের পর তানজিলা-হাবিব দম্পতির মধ্যে কলহ বেড়ে যায়। এ কারণে ২০২২ সালের মে মাসে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেন তানজিলা। এ মামলায় কারাগারে আছেন আল হাবিব। কারাগারে গুরুদাসপুরের খলিফাপাড়া মহল্লার জাকির মুন্সির (৪০) সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে আল হাবিবের। আলাপচারিতায় হত্যাকান্ডের বিষয়টি আল হাবিব জানান জাকির মুন্সিকে। জাকির মুন্সি জামিনে মুক্তি পেয়ে মফিজুল ইসলামের পরিবারকে ঘটনাটি খুলে বলেন। বিষয়টি নিয়ে থানা-পুলিশের আশ্রয় নেয় পরিবারটি। থানা-পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত তানজিলা খাতুন ও তাঁর বাবা আবু তাহের খলিফাকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ