মহেঞ্জদারো সভ্যতার আবিষ্কর্তা তিনিই। বাঙালির ইতিহাস খোঁজের মূর্ত প্রতীক। কিন্তু পদে পদে হয়ে হয়েছে অপমানিত, অপদস্থ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সব জেনেও মুখ ফিরিয়েছেন। মিলেছে চোরের অপবাদ। তিনি রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। এক বিস্মৃত বাঙালি বললেও ভুল হয় না। সাধারণ জ্ঞানের পাতায় নাম থেকেও এক যার মূল্যবান আবিষ্কারকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ইংরেজ রাজত্বের শিকার হয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনটাও বলা যেতেই পারে। ইতিহাস বলছে সেই কথাই।
এমএ পাশ করেই ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের আর্কিওলজিক্যাল বিভাগে চাকরি পেয়ে যান রাখালদাস। চাকরির শুরু সামান্য একজন সহকারি হিসাবে। তারপর চাকরির গ্রাফ হু হু করে উঠতে শুরু করে। নজরে এসে যান আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের ডিরেক্টর জেনারেল স্যর জন মার্শালের। এই জন মার্শালই তাঁর কৃতিত্বে ভাগ বসিয়েছিলেন, যা ব্রিটিশ অধিনস্থ ভারতে বার বার হয়ে এসেছে। চাকরির দ্বিতীয় বছরেই সার্ভের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেন্ডেন্ট পদে আসিন। ১৯০৭ সালে ওয়েস্টার্ন সার্কেলের সুপার। কাজ শুরু পুনেতে। এখানেই তাঁর আবিষ্কার সিন্ধু সভ্যতার। কিন্তু এতেই ভাগ বসিয়েছিলেন তাঁর ‘বস’ জন মার্শাল। পিকে মিশ্র তাঁর ‘Rakhal Das Banerji: The Forgotten Archaeologist’ বইয়ে স্পষ্ট লিখেছেন, ১৯২৪ সালের আগে মার্শাল সে ভাবে মহেঞ্জাদারোর কথা জানতেনই না। তাঁর দাবি অনুযায়ী, ‘Marshall took direct charge of the excavation from winter 1925-26. By that time Banerjee had done all the work a discoverer should have done।’ ঘটনা হল, দেশের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তাঁর ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া বইতে মহেঞ্জোদরোর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের কৃতিত্ব পুরোটাই দিয়েছেন জন মার্শালকে। নামই নেই রাখালদাসবাবুর।
আর কষ্টকর নিজের দুরন্ত সব খোঁজের ফল ভুগতে হয়েছিল। অফিস রাজনীতির কোপে পড়ে চাকরি যায় তাঁর। অভিযোগ , তিনি নাকি মূর্তি চুরি করেছেন। এমনই মিথ্যা অভিযোগে রাখালদাসবাবুকে চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হয়। তখন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে উড়িষ্যার হিরাপুরের চৌষট্টি যোগিনীর মন্দিরে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলছিল। দায়িত্বে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। সেই সময় সেখান থেকে মূল্যবান একটি মূর্তি চুরি যায়। সেই বড়কর্তা জন মার্শাল যিনি তাঁকে খুব পছন্দ করতেন, পদন্নোতিতে সাহায্য করেছিলেন, খুব কাছের মানুষ সেই তিনিই রাখালদাসের আবিস্কারে ভাগ বসানোর পাশাপাশি চাকরিটিও খেয়ে নিয়েছিলেন। কোন প্রমাণ ছাড়াই দোষী সাব্যস্ত করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেটা ১৯২৬ সাল। এসব আর নিতে পারেননি। পয়সার অভাবে জর্জরিত হয়ে পড়েন আরও কষ্ট দেয় পুত্রের অকাল মৃত্যু। ১৯৩০ সালে ৪৫ বছর বয়সে অকাল প্রয়াণ ঘটে বাঙালির বিখ্যাত প্রত্নতত্ববিদের। আর জন্মদিন? এই তো আজকের ১২ এপ্রিলে ১৮৮৫ সালে বহরমপুরে। কেউ মনে রেখেছে। উত্তর নেতিবাচক ছাড়া কিছু মেলে না।
বিজনেস বাংলাদেশ/ ই করিম