০৬:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

যবিপ্রবির “জিনোম সেন্টার” দেশের অন্যতম সেরা গবেষণাগার

দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গত ১৭ এপ্রিল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে শুরু হয় কোভিড-১৯ পরীক্ষার কাজ ।
দেশের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বাইরে এটিই প্রথম কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ল্যাব।
যশোর ও আশেপাশের জেলাগুলোর করোনা পরীক্ষার একমাত্র নির্ভরযোগ্য ল্যাব হচ্ছে এই জিনোম সেন্টার।
এই পর্যন্ত যশোর সহ আশেপাশের জেলার প্রায় ১৭০০ বেশি রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে ২৫০ বেশি করোনা রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে।
২০১৭ সালের জুনে , যবিপ্রবিতে “জিনোম সেন্টার” নামে একটি ল্যাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (NSU); আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষনা কেন্দ্র বাংলাদেশ (ICDDR,b); বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (BCSIR) এবং অন্যান্য জায়গায় যেখানে জিনোম সেন্টার আছে তা পরিদর্শন করা হয়।
পরিদর্শনে দেখা যায়, যে এই জায়গাগুলোতে Genome Library Preparation, PCR, Real Time PCR এর প্রয়োজন রয়েছে। এসব যন্ত্রপাতির কথা মাথায় রেখেই শুরু হয় যবিপ্রবি জিনোম সেন্টার তৈরীর কাজ।
ল্যাবরেটরিটি যবিপ্রবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনে নীচতলার ১১৩ নম্বর কক্ষে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
কক্ষটি সকল প্রকার বায়োসেফটি এবং আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেনেই তৈরি করা হয়েছে।
বর্তমানে 16S ribosomal RNA (rRNA) sequencing এর জন্য SeqStudio™ Genetic Analyzer নামক ৪ কেপেলারির মেশিন, Next-generation sequencing (NGS) এর জন্য Ion GeneStudio S5 Semiconductor Sequencer মেশিন, Real Time PCR এর জন্য QuantStudio™ 3 Real-Time PCR Systems মেশিন সেটআপ সম্পন্ন করা হইছে। এছাড়াও পরবর্তীতে Field emission scanning electron microscope ক্রয় করা হয় ।
সুতরাং এই জিনোম সেন্টারটিতে একই সাথে যেকোন কিছুর Whole Genome Sequence এবং 16S ribosomal RNA (rRNA) sequence করা যাবে।
ভবিষ্যতে এই সেন্টারটিকে বানিজ্যকরন করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
বানিজ্যকরনের সাথে সাথে জিনোম সেন্টারের অন্য আর একটি উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশে বায়োইনফরমেটিক্সের জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া। এর জন্য এখানে বিভিন্ন সময়ে বেসিক বায়োইনফরমেটিক্সের উপর ট্রেনিং প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গাতে Next-generation sequencing (NGS) সুবিধা থাকলেও কোনটিতেই বাণিজ্যিকভাবে NGS সুবিধা দেওয়া হয় না। বাণিজ্যিক ভাবে 16S ribosomal RNA (rRNA) sequencing, Next-generation sequencing (NGS) এবং NGS data analysis সহ বেনাপোল স্থলনন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানিকৃত পন্যের গুনাগুণ পরীক্ষানিরীক্ষা করার কথা মাথায় রেখে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই জিনোম সেন্টারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এছাড়া ভবিষ্যতে NGS Data কে ব্যাবহার করে ক্যানসার ও জেনেটিক ডিসঅর্ডার সনাক্তকরণ এবং পারসোনালাইজড ঔষধ তৈরিতে এই জিনোম সেন্টার বড় ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও যবিপ্রবি জিনোম সেন্টার ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণ, বিভিন্ন অণুজীবের DNA সিকুএঞ্চিং ,ব্যাকটেরিয়ার জীবন রহস্য উন্মোচন ইত্যাদি কাজ করতে সক্ষম ।
ভবিষ্যতে আরো একটি উন্নতমানের NGS মেশিন ক্রয় করা এবং জিনোম সেন্টারকে একটি বায়োইনফরমেটিক্স ট্রেনিং সেন্টার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ডঃ মোঃ ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার দেশের অন্যতম এক অত্যাধুনিক গবেষণাগার ।
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি থাকার সুবাদে আমরা দেশের অন্যান্য গবেষণাগার থেকে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছি। বর্তমানে আমাদের ল্যাবরেটরীতে Field emission scanning electron microscope এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধাতু , খনিজ পদার্থ ও কেমিল্যালের গুণগতমান সহ টেক্সটাইল ফেব্রিকেরও গুণগত মান যাচাই করা সম্ভব ।
এছাড়াও আমরা বিভিন্ন কেমিক্যালের আনবিক আকার ,ঘনত্ব এবং এর উপাদান নির্ণয় করতে সক্ষম । এর পাশাপাশি আমাদের জিনোম সেন্টারে মাছের জিনোমিক রিসার্চ, জিন সিকোয়েন্সিং সহ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা সম্ভব।
বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই বিষয়গুলো নিয়ে ল্যাবে তাদের গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ভবিষ্যতে আমারা আমাদের এই জিনোম সেন্টারে ক্যান্সারের জন্য দায়ী জিন শনাক্তকরণ ও এর ঔষধ তৈরীতে নিজেরাই কাজ করব।
এর জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি ও লোকবল দুইটাই আমাদের আছে। সাধারণত পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে এই ধরনের কাজ করা হয় এবং বাংলাদেশ থেকে প্রচুর নমুনা সেখানে পাঠানো হয়।
আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে খুব দ্রুত এই বিষয়ে কাজ শুরু করার। যেহেতু এটা আমাদের দেশের জন্য নতুন একটি বিষয় তাই আমাদের কাজ শুরু করতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।

 

বিজনেস বাংলাদেশ / আতিক

জনপ্রিয়

রংপুরে রেল স্টেশনে বৈষম্য উন্নয়ন হয়নি,প্রতিবাদে অবরোধ

যবিপ্রবির “জিনোম সেন্টার” দেশের অন্যতম সেরা গবেষণাগার

প্রকাশিত : ০৫:১০:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জুন ২০২০
দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গত ১৭ এপ্রিল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে শুরু হয় কোভিড-১৯ পরীক্ষার কাজ ।
দেশের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বাইরে এটিই প্রথম কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ল্যাব।
যশোর ও আশেপাশের জেলাগুলোর করোনা পরীক্ষার একমাত্র নির্ভরযোগ্য ল্যাব হচ্ছে এই জিনোম সেন্টার।
এই পর্যন্ত যশোর সহ আশেপাশের জেলার প্রায় ১৭০০ বেশি রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে ২৫০ বেশি করোনা রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে।
২০১৭ সালের জুনে , যবিপ্রবিতে “জিনোম সেন্টার” নামে একটি ল্যাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (NSU); আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষনা কেন্দ্র বাংলাদেশ (ICDDR,b); বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (BCSIR) এবং অন্যান্য জায়গায় যেখানে জিনোম সেন্টার আছে তা পরিদর্শন করা হয়।
পরিদর্শনে দেখা যায়, যে এই জায়গাগুলোতে Genome Library Preparation, PCR, Real Time PCR এর প্রয়োজন রয়েছে। এসব যন্ত্রপাতির কথা মাথায় রেখেই শুরু হয় যবিপ্রবি জিনোম সেন্টার তৈরীর কাজ।
ল্যাবরেটরিটি যবিপ্রবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনে নীচতলার ১১৩ নম্বর কক্ষে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
কক্ষটি সকল প্রকার বায়োসেফটি এবং আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেনেই তৈরি করা হয়েছে।
বর্তমানে 16S ribosomal RNA (rRNA) sequencing এর জন্য SeqStudio™ Genetic Analyzer নামক ৪ কেপেলারির মেশিন, Next-generation sequencing (NGS) এর জন্য Ion GeneStudio S5 Semiconductor Sequencer মেশিন, Real Time PCR এর জন্য QuantStudio™ 3 Real-Time PCR Systems মেশিন সেটআপ সম্পন্ন করা হইছে। এছাড়াও পরবর্তীতে Field emission scanning electron microscope ক্রয় করা হয় ।
সুতরাং এই জিনোম সেন্টারটিতে একই সাথে যেকোন কিছুর Whole Genome Sequence এবং 16S ribosomal RNA (rRNA) sequence করা যাবে।
ভবিষ্যতে এই সেন্টারটিকে বানিজ্যকরন করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
বানিজ্যকরনের সাথে সাথে জিনোম সেন্টারের অন্য আর একটি উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশে বায়োইনফরমেটিক্সের জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া। এর জন্য এখানে বিভিন্ন সময়ে বেসিক বায়োইনফরমেটিক্সের উপর ট্রেনিং প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গাতে Next-generation sequencing (NGS) সুবিধা থাকলেও কোনটিতেই বাণিজ্যিকভাবে NGS সুবিধা দেওয়া হয় না। বাণিজ্যিক ভাবে 16S ribosomal RNA (rRNA) sequencing, Next-generation sequencing (NGS) এবং NGS data analysis সহ বেনাপোল স্থলনন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানিকৃত পন্যের গুনাগুণ পরীক্ষানিরীক্ষা করার কথা মাথায় রেখে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই জিনোম সেন্টারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এছাড়া ভবিষ্যতে NGS Data কে ব্যাবহার করে ক্যানসার ও জেনেটিক ডিসঅর্ডার সনাক্তকরণ এবং পারসোনালাইজড ঔষধ তৈরিতে এই জিনোম সেন্টার বড় ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও যবিপ্রবি জিনোম সেন্টার ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণ, বিভিন্ন অণুজীবের DNA সিকুএঞ্চিং ,ব্যাকটেরিয়ার জীবন রহস্য উন্মোচন ইত্যাদি কাজ করতে সক্ষম ।
ভবিষ্যতে আরো একটি উন্নতমানের NGS মেশিন ক্রয় করা এবং জিনোম সেন্টারকে একটি বায়োইনফরমেটিক্স ট্রেনিং সেন্টার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ডঃ মোঃ ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার দেশের অন্যতম এক অত্যাধুনিক গবেষণাগার ।
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি থাকার সুবাদে আমরা দেশের অন্যান্য গবেষণাগার থেকে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছি। বর্তমানে আমাদের ল্যাবরেটরীতে Field emission scanning electron microscope এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধাতু , খনিজ পদার্থ ও কেমিল্যালের গুণগতমান সহ টেক্সটাইল ফেব্রিকেরও গুণগত মান যাচাই করা সম্ভব ।
এছাড়াও আমরা বিভিন্ন কেমিক্যালের আনবিক আকার ,ঘনত্ব এবং এর উপাদান নির্ণয় করতে সক্ষম । এর পাশাপাশি আমাদের জিনোম সেন্টারে মাছের জিনোমিক রিসার্চ, জিন সিকোয়েন্সিং সহ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা সম্ভব।
বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই বিষয়গুলো নিয়ে ল্যাবে তাদের গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ভবিষ্যতে আমারা আমাদের এই জিনোম সেন্টারে ক্যান্সারের জন্য দায়ী জিন শনাক্তকরণ ও এর ঔষধ তৈরীতে নিজেরাই কাজ করব।
এর জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি ও লোকবল দুইটাই আমাদের আছে। সাধারণত পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে এই ধরনের কাজ করা হয় এবং বাংলাদেশ থেকে প্রচুর নমুনা সেখানে পাঠানো হয়।
আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে খুব দ্রুত এই বিষয়ে কাজ শুরু করার। যেহেতু এটা আমাদের দেশের জন্য নতুন একটি বিষয় তাই আমাদের কাজ শুরু করতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।

 

বিজনেস বাংলাদেশ / আতিক