০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেটে সরকার এই খাতের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে। আগামী ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট পেশ করবেন।

কোভিড- ১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। গত ২৬ মার্চ সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর লাখ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, তারা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে দারিদ্র সীমার উপরে থাকা বিপুল সংখ্যক মানুষ আবারও দারিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে বলে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন। ব্র্যাক ও পিপিআরসির এক গবেষণায় দেখা গেছে, দারিদ্র্য সীমার ওপরে বসবাসকারী অরক্ষিত মানুষদের মধ্যে ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গেছে।

২০১৯ সালের হিসাব অনুসারে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। করোনাভাইরাসের ধাক্কায় সেই হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এই অবস্থায় দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই অর্থনীতিবিদেরা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। সরকারও সেই অনুযায়ী কাজ করছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে ৮১ লাখ মানুষ বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও সহায়তা পাচ্ছেন। এবার তা ১১ লাখ বাড়ানো হবে। চলতি অর্থ বছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা, যা ছিল জিডিপির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এবার তা ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা করা হলে তা দাঁড়াবে জিডিপির ৩ শতাংশ।

এই প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, এবারের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ অনেক বাড়ানো প্রয়োজন। প্রাথমিক যে হিসাব দেখছি, তাতে যে পরিমাণ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব আছে, আমার মনে হচ্ছে সেটি যথেষ্ট নয়। কারণ যে ধরনের একটি সংকটকাল চলছে এবং বিভিন্ন গবেষণায়, বিশেষ করে সানেমের গবেষণায়ও এটি ওঠে এসেছে যে এই দুর্যোগের কারণে একটি বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। যারা প্রকৃত অর্থে দরিদ্র ছিল না, তারা নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার ভাতার অংক না বাড়িয়ে ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়াতে যাচ্ছে। দুর্যোগে নারীরা যেহেতু পুরুষের তুলনায় বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়ে, সে কারণে বিধবা, হতদরিদ্র ও নিঃসঙ্গ নারী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ৫০ হাজার বাড়তে যাচ্ছে। পাশাপাশি শারীরিকভাবে অক্ষম ও অসচ্ছল প্রকৃতির ভাতাভোগীর সংখ্যাও আড়াই লাখ বাড়বে।

সেলিম রায়হান আরো বলেন, এই দুর্যোগের সময়ে এরকম একটি বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে দুই ধরনের সহযোগিতা অবশ্যই দিতে হবে। নগদ সহযোগিতা যেমন দিতে হবে, পাশাপাশি খাদ্য সহযোগিতাও দিতে হবে। অনেক জায়গায় এখনো বাজারব্যবস্থা পুরোপুরি চালু করা যায়নি এবং অনেক পরিবার খাদ্য সংকটেরও সম্মুখীন। সুতরাং সামাজিক সুরক্ষা খাতে আগামী বাজেটে বরাদ্দ যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো দরকার এবং নিশ্চিত করা দরকার যাতে এই বরাদ্দের প্রকৃত বাস্তবায়ন হয়।

সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব কথা এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আমরা শুনেছি, অনেক লিকেজ আছে, টার্গেটিংয়ে সমস্যা আছে, সেই দুর্বলতা যেন সঠিকভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়। যতটুকু সম্ভব দুর্নীতিমুক্ত হয়ে এবং অনিয়ম থেকে বের হয়ে এই বিপদের সময়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে এবং নতুন করে যারা দরিদ্র হয়েছে, তাদের সহায়তা করতে হবে।

তবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের যে বরাদ্দ তার সিংহভাগ পেনশন ও উপবৃত্তিতে চলে যায়। চলতি অর্থ বছরে জিডিপির যে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, এই পেনশন ও উপবৃত্তি বাদ দিলে সেই পরিমাণটা দাঁড়ায় ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। সে জন্য বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই বরাদ্দ জিডিপির ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ হওয়া উচিত। কারণ, আজকের দিনে মাসে ৫০০ বা ৭৫০ টাকার ভাতা টাকার অংকে তেমন কিছুই নয়। পাশাপাশি নগরকেন্দ্রিক দরিদ্রদের জন্যও বিশেষ স্কিম করা উচিত বলে তারা মনে করেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/ শেখ

জনপ্রিয়

মুরাদনগরের সাবেক ৫বারের এমপি কায়কোবাদের অপেক্ষায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে

প্রকাশিত : ০৯:৩৫:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জুন ২০২০

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেটে সরকার এই খাতের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে। আগামী ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট পেশ করবেন।

কোভিড- ১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। গত ২৬ মার্চ সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর লাখ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, তারা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে দারিদ্র সীমার উপরে থাকা বিপুল সংখ্যক মানুষ আবারও দারিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে বলে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন। ব্র্যাক ও পিপিআরসির এক গবেষণায় দেখা গেছে, দারিদ্র্য সীমার ওপরে বসবাসকারী অরক্ষিত মানুষদের মধ্যে ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গেছে।

২০১৯ সালের হিসাব অনুসারে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। করোনাভাইরাসের ধাক্কায় সেই হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এই অবস্থায় দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই অর্থনীতিবিদেরা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। সরকারও সেই অনুযায়ী কাজ করছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে ৮১ লাখ মানুষ বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও সহায়তা পাচ্ছেন। এবার তা ১১ লাখ বাড়ানো হবে। চলতি অর্থ বছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা, যা ছিল জিডিপির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এবার তা ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা করা হলে তা দাঁড়াবে জিডিপির ৩ শতাংশ।

এই প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, এবারের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ অনেক বাড়ানো প্রয়োজন। প্রাথমিক যে হিসাব দেখছি, তাতে যে পরিমাণ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব আছে, আমার মনে হচ্ছে সেটি যথেষ্ট নয়। কারণ যে ধরনের একটি সংকটকাল চলছে এবং বিভিন্ন গবেষণায়, বিশেষ করে সানেমের গবেষণায়ও এটি ওঠে এসেছে যে এই দুর্যোগের কারণে একটি বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। যারা প্রকৃত অর্থে দরিদ্র ছিল না, তারা নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার ভাতার অংক না বাড়িয়ে ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়াতে যাচ্ছে। দুর্যোগে নারীরা যেহেতু পুরুষের তুলনায় বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়ে, সে কারণে বিধবা, হতদরিদ্র ও নিঃসঙ্গ নারী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ৫০ হাজার বাড়তে যাচ্ছে। পাশাপাশি শারীরিকভাবে অক্ষম ও অসচ্ছল প্রকৃতির ভাতাভোগীর সংখ্যাও আড়াই লাখ বাড়বে।

সেলিম রায়হান আরো বলেন, এই দুর্যোগের সময়ে এরকম একটি বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে দুই ধরনের সহযোগিতা অবশ্যই দিতে হবে। নগদ সহযোগিতা যেমন দিতে হবে, পাশাপাশি খাদ্য সহযোগিতাও দিতে হবে। অনেক জায়গায় এখনো বাজারব্যবস্থা পুরোপুরি চালু করা যায়নি এবং অনেক পরিবার খাদ্য সংকটেরও সম্মুখীন। সুতরাং সামাজিক সুরক্ষা খাতে আগামী বাজেটে বরাদ্দ যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো দরকার এবং নিশ্চিত করা দরকার যাতে এই বরাদ্দের প্রকৃত বাস্তবায়ন হয়।

সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব কথা এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আমরা শুনেছি, অনেক লিকেজ আছে, টার্গেটিংয়ে সমস্যা আছে, সেই দুর্বলতা যেন সঠিকভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়। যতটুকু সম্ভব দুর্নীতিমুক্ত হয়ে এবং অনিয়ম থেকে বের হয়ে এই বিপদের সময়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে এবং নতুন করে যারা দরিদ্র হয়েছে, তাদের সহায়তা করতে হবে।

তবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের যে বরাদ্দ তার সিংহভাগ পেনশন ও উপবৃত্তিতে চলে যায়। চলতি অর্থ বছরে জিডিপির যে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, এই পেনশন ও উপবৃত্তি বাদ দিলে সেই পরিমাণটা দাঁড়ায় ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। সে জন্য বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই বরাদ্দ জিডিপির ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ হওয়া উচিত। কারণ, আজকের দিনে মাসে ৫০০ বা ৭৫০ টাকার ভাতা টাকার অংকে তেমন কিছুই নয়। পাশাপাশি নগরকেন্দ্রিক দরিদ্রদের জন্যও বিশেষ স্কিম করা উচিত বলে তারা মনে করেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/ শেখ