১০:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

কুমিল্লার চিত্র শিল্পী রিপনের তুলিতে ফুটে উঠে বাংলার মানুষের ছবি

খুব ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে ভীষণ পছন্দ তার। ছোট থেকেই রঙে রঙে নির্মাণ করতেন নিজের জগত। পাখি, পাখির বাসা, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফল এঁকে মাকে দেখাতেন। তার রঙের খেলায় প্রাণ পেতো নানান দৃশ্য। দেশীয় চিত্রকলা, এদেশের মাটি, মানুষ, আকাশ, সব কিছুই ফুটে উঠতো তার চিত্রকর্মে। সেই ছোট ছেলেটি এক সময় বড় হলেন। তার রঙের তুলি আর চিন্তার জগতও বেশ প্রসারিত হলো। বাংলার গ্রামীণ জীবন যেমন তার ছবিতে প্রাণ পেল তেমনি শহরে জীবনের জরা আর যৌবনও ফুলে উঠলো নীবিরভাবে।

রিপনের ছবিতে আবহমান বাংলার মানুষের যাপিত জীবন, শৈশব, সংস্কৃতি, পেশা, উৎসব, গ্রামীণ জনপদ, গ্রামের বধূ, সারল্য, শ্রমজীবি ও মেহনতি মানুষ, বাংলার প্রকৃতি, ঋতু ফুটে ওঠে। এক কথায় বলতে গেলে কী নেই যা তার তুলিতে ফুটে ওঠেনি। তার জীবনের থরে থরে কেবল রঙ আর রঙ। শিল্পের দুনিয়ায় তিনি এক স্বাতন্ত্র মানুষ।
বলছিলাম চিত্রশিল্পী মুজিবুর রহমান রিপনের কথা। তিনি বেড়ে উঠেছেন কুমিল্লা শহরের মোগলটুলিতে। বর্তমানে চারুপাঠশালা নামে একটি আর্ট একাডেমিতে শিল্প শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কিছু যৌথ প্রদর্শনীও রয়েছে গুণী এই শিল্পীর।

চিত্রশিল্পী মুজিবুর রহমান রিপন বলেন, ‘১৯৭২ সালে আওয়ার লেডী ফাতেমা গার্লস স্কুলে প্রথম শ্রেণি ভর্তি হই। ওই স্কুলের ব্রিটিশ শিক্ষিকা বারবারা খুব ভাল ছবি আঁকতেন। সেটা দেখে ছবি আকার প্রতি আগ্রহ জন্মায় আমার। ভাল ছবি আঁকার কারণে তিনি আমাকে পুরস্কার দিতেন। ইংল্যান্ডে গেলেই আমার জন্য রঙ-তুলি নিয়ে আসতেন। তার অনুপ্রেরণায় ছবি আকাঁর প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে যায়।’

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, এমনকি পাশের দেশ ভারতেও প্রতি ঘরে একটি করে চিত্রশিল্প থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে থাকে না। এর পেছনে ধর্মীয় চেতনা কাজ করে। চিত্র শিল্প বিকাশে এমন চেতনা বড় বাধা। এছাড়া দেশের বড় জেলাগুলোতে এখনো চিত্র শিল্প এক্সিভিশন গ্যালারি নেই। এসব কারণে এদেশে চিত্র শিল্পকর্ম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অনেকে আগ্রহ নিয়ে ছবি আঁকা শেখেন। কিন্তু ভবিষৎ নিশ্চয়তা নেই এজন্য অনেকে এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।

আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বেশ কিছু যৌথ প্রদর্শনী করেছেন। এর মধ্যে ফ্যাব্রিয়াানো অ্যাকুয়ারেলো আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে, ইতালি ২০১৮, অ্যাকুয়েরেলো আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে উরবিনো, ইতালি ২০১৯, প্রথম অলিম্পিয়াার্ট, ওডঝ প্রদর্শনী ভারত ২০১৯। ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার কালার সোসাইটি আর্ট এক্সিবিশন ইন্দোনেশিয়া, ২০১৯ অন্যতম। এছাড়াও তার একাধিক প্রদর্শনী হয়েছে।

কুমিল্লা আর্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শিল্পী সুলতান শাহরিয়ার জানান, রিপন একজন দক্ষ রঙতুলির কারিগর। তার আঁকা জলরঙয়ের ছবি যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। বাংলাদেশের মানুষের কৃষ্টি কালচার এদেশের সংস্কৃতি তার আঁকার মাধ্যমে বিদেশে এই দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে। মুজিবুর রহমান রিপন একজন গুণী চিত্র শিল্পী।

রিপনের চিত্রকর্ম সম্পর্কে বাংলাদেশ চলচিত্র শিল্প নির্দেশক উত্তম গুহ জানান, মজিবুর রহমান রিপন খুব ভাল ছবি আঁকেন। বিশেষ করে তার আঁকা জলরঙের ছবিগুলো অসাধারণ। বাংলার মানুষের জীবন তার তুলিতে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে ওঠে। এছাড়া তার ছবিগুলো নিয়মিত আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শিত হয়। আমাদের দেশের সংস্কৃতি খুব সহজের তার ছবির মাধ্যমে বিদেশে পরিচিতি পায়। এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। রিপন শুধু কুমিল্লার গর্ব না, তিনি সারা দেশের গর্ব।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

 

জনপ্রিয়

রংপুরে রেল স্টেশনে বৈষম্য উন্নয়ন হয়নি,প্রতিবাদে অবরোধ

কুমিল্লার চিত্র শিল্পী রিপনের তুলিতে ফুটে উঠে বাংলার মানুষের ছবি

প্রকাশিত : ০১:৫৫:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২

খুব ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে ভীষণ পছন্দ তার। ছোট থেকেই রঙে রঙে নির্মাণ করতেন নিজের জগত। পাখি, পাখির বাসা, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফল এঁকে মাকে দেখাতেন। তার রঙের খেলায় প্রাণ পেতো নানান দৃশ্য। দেশীয় চিত্রকলা, এদেশের মাটি, মানুষ, আকাশ, সব কিছুই ফুটে উঠতো তার চিত্রকর্মে। সেই ছোট ছেলেটি এক সময় বড় হলেন। তার রঙের তুলি আর চিন্তার জগতও বেশ প্রসারিত হলো। বাংলার গ্রামীণ জীবন যেমন তার ছবিতে প্রাণ পেল তেমনি শহরে জীবনের জরা আর যৌবনও ফুলে উঠলো নীবিরভাবে।

রিপনের ছবিতে আবহমান বাংলার মানুষের যাপিত জীবন, শৈশব, সংস্কৃতি, পেশা, উৎসব, গ্রামীণ জনপদ, গ্রামের বধূ, সারল্য, শ্রমজীবি ও মেহনতি মানুষ, বাংলার প্রকৃতি, ঋতু ফুটে ওঠে। এক কথায় বলতে গেলে কী নেই যা তার তুলিতে ফুটে ওঠেনি। তার জীবনের থরে থরে কেবল রঙ আর রঙ। শিল্পের দুনিয়ায় তিনি এক স্বাতন্ত্র মানুষ।
বলছিলাম চিত্রশিল্পী মুজিবুর রহমান রিপনের কথা। তিনি বেড়ে উঠেছেন কুমিল্লা শহরের মোগলটুলিতে। বর্তমানে চারুপাঠশালা নামে একটি আর্ট একাডেমিতে শিল্প শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কিছু যৌথ প্রদর্শনীও রয়েছে গুণী এই শিল্পীর।

চিত্রশিল্পী মুজিবুর রহমান রিপন বলেন, ‘১৯৭২ সালে আওয়ার লেডী ফাতেমা গার্লস স্কুলে প্রথম শ্রেণি ভর্তি হই। ওই স্কুলের ব্রিটিশ শিক্ষিকা বারবারা খুব ভাল ছবি আঁকতেন। সেটা দেখে ছবি আকার প্রতি আগ্রহ জন্মায় আমার। ভাল ছবি আঁকার কারণে তিনি আমাকে পুরস্কার দিতেন। ইংল্যান্ডে গেলেই আমার জন্য রঙ-তুলি নিয়ে আসতেন। তার অনুপ্রেরণায় ছবি আকাঁর প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে যায়।’

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, এমনকি পাশের দেশ ভারতেও প্রতি ঘরে একটি করে চিত্রশিল্প থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে থাকে না। এর পেছনে ধর্মীয় চেতনা কাজ করে। চিত্র শিল্প বিকাশে এমন চেতনা বড় বাধা। এছাড়া দেশের বড় জেলাগুলোতে এখনো চিত্র শিল্প এক্সিভিশন গ্যালারি নেই। এসব কারণে এদেশে চিত্র শিল্পকর্ম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অনেকে আগ্রহ নিয়ে ছবি আঁকা শেখেন। কিন্তু ভবিষৎ নিশ্চয়তা নেই এজন্য অনেকে এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।

আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বেশ কিছু যৌথ প্রদর্শনী করেছেন। এর মধ্যে ফ্যাব্রিয়াানো অ্যাকুয়ারেলো আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে, ইতালি ২০১৮, অ্যাকুয়েরেলো আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে উরবিনো, ইতালি ২০১৯, প্রথম অলিম্পিয়াার্ট, ওডঝ প্রদর্শনী ভারত ২০১৯। ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার কালার সোসাইটি আর্ট এক্সিবিশন ইন্দোনেশিয়া, ২০১৯ অন্যতম। এছাড়াও তার একাধিক প্রদর্শনী হয়েছে।

কুমিল্লা আর্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শিল্পী সুলতান শাহরিয়ার জানান, রিপন একজন দক্ষ রঙতুলির কারিগর। তার আঁকা জলরঙয়ের ছবি যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। বাংলাদেশের মানুষের কৃষ্টি কালচার এদেশের সংস্কৃতি তার আঁকার মাধ্যমে বিদেশে এই দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে। মুজিবুর রহমান রিপন একজন গুণী চিত্র শিল্পী।

রিপনের চিত্রকর্ম সম্পর্কে বাংলাদেশ চলচিত্র শিল্প নির্দেশক উত্তম গুহ জানান, মজিবুর রহমান রিপন খুব ভাল ছবি আঁকেন। বিশেষ করে তার আঁকা জলরঙের ছবিগুলো অসাধারণ। বাংলার মানুষের জীবন তার তুলিতে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে ওঠে। এছাড়া তার ছবিগুলো নিয়মিত আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শিত হয়। আমাদের দেশের সংস্কৃতি খুব সহজের তার ছবির মাধ্যমে বিদেশে পরিচিতি পায়। এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। রিপন শুধু কুমিল্লার গর্ব না, তিনি সারা দেশের গর্ব।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব