১০:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

চট্টগ্রাম নগরীর খাল ও নালায় মৃত্যুফাঁদ,উদ্ধার করা হয়েছে নালায় পড়ে যাওয়া শিশুটির মরদেহ

নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর নালায় পড়ে মারা যাওয়া শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে নগরের চকবাজার কাপাসগোলা সড়কে প্যাডেলচালিত রিকশা থেকে খালের পানিতে পড়ে যায় মা, দাদি ও শিশুটি। স্থানীয়দের চেষ্টায় মা ও দাদিকে উদ্ধার করা গেলেও নিখোঁজ শিশুটিকে তখন খুঁজে পাওয়া যায়নি। শনিবার সকাল ১০টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

শিশুটির মামা মারূফ জানান, আসাদগঞ্জ থেকে সেহেরিজকে নিয়ে তার মা ও দাদি মামার (মারূফ) বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিল। বাড়ির কাছে এসে রাস্তায় পানি থাকায় রিকশা নেয় তারা। কিন্তু নালার পাশে থাকা বাঁশের বেষ্টনী খুলে ফেলার কারণে তারা রিকশা নিয়ে নালায় পড়ে যান। পরে সেহেরিজের মা সালমা ও দাদি আয়েশাকে উদ্ধার করা গেলেও শিশুটি রাতভর নিখোঁজ থাকে। তাকে উদ্ধারে রাতভর চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। সকালে পাওয়া যায় সেহেরিজের নিথর দেহ।স্থানীয়দের দাবি, নালার পাশে বাঁশের একটি ব্যারিকেড ছিল, যা কিছুদিন আগে খাল পরিষ্কারের অজুহাতে তুলে ফেলা হয়। আজকের হালকা বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে খালের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়, আর তাতেই ঘটে এই দুর্ঘটনা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলছে, এই মৃত্যুর জন্য দায়ী- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতা।ঘটনার পরপরই সেখানে যান চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত। তিনি ডুবুরি দলের তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেন।

শিশুর পরিবারকে সান্ত্বনা জানান এবং উদ্ধারকারী দলের জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, অরক্ষিত নালার পাশে দ্রুতই নিরাপত্তা ব্যারিকেড বসানো হবে।চট্টগ্রামে নালায় পড়ে নিখোঁজ ও মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত বছরের জুনেও নালায় পড়ে স্রোতে তলিয়ে যায় সাত বছরের এক শিশু। এ ধরনের ঘটনা প্রতিবছরই ঘটে। বর্ষা এলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়। নগরের অরক্ষিত নালা আর অদক্ষ ব্যবস্থাপনার মাঝে হারিয়ে যায় অমূল্য প্রাণ।চট্টগ্রাম নগরে মোট খালের সংখ্যা ৫৭টি, যার মোট দৈর্ঘ্য ১৬৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৩৬টি খাল ও ৩০২ কিলোমিটার নালা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আওতায় বাকি ২১টি খাল ও ৬৪৮ কিলোমিটার নালা।

এত এত মৃত্যুর পরেও নিরাপদ হয়নি চট্টগ্রাম নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ নালা ও খালের পাড়। বদলায়নি পুরনো চিত্র। কেবল কাগজে-কলমে ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ আর বাঁশ-দড়ি দিয়ে বেষ্টনী দিয়ে দায় সেরেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কোথাও কোথাও সেই বাঁশ আর দড়িও নেই। উন্মুক্ত এ সব খাল ও নালার পাশ দিয়ে যেন মৃত্যু হাতে নিয়ে চলাচল করছে মানুষজন, যেখানে যেকোনো সময় ঘটতে পারে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।ইতিমধ্যে খালে ও নালায় পড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর পর উন্মুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ নালা-নর্দমা, ফুটপাত ও খালের তালিকা করতে তৎপর হয় সিটি করপোরেশন। চিহ্নিত করা হয় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার ৫ হাজার ৫২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। যার মোট দৈর্ঘ্য ১৯ কিলোমিটার। তালিকা করলেও এ সব স্থান নিরাপদ করার কাজ চলছে ঢিমেতালে।নগরীর খালে ও নালার মৃত্যুফাঁদে পড়ে মৃত্যুর মিছিল বাড়লেও, বলদায়নি পুরনো চিত্র।

ডিএস..

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সাঁতার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্থানীয় ক্রীড়াচর্চা আরও গতিশীল হবে : জেলা প্রশাসক

চট্টগ্রাম নগরীর খাল ও নালায় মৃত্যুফাঁদ,উদ্ধার করা হয়েছে নালায় পড়ে যাওয়া শিশুটির মরদেহ

প্রকাশিত : ০৪:৫৪:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর নালায় পড়ে মারা যাওয়া শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে নগরের চকবাজার কাপাসগোলা সড়কে প্যাডেলচালিত রিকশা থেকে খালের পানিতে পড়ে যায় মা, দাদি ও শিশুটি। স্থানীয়দের চেষ্টায় মা ও দাদিকে উদ্ধার করা গেলেও নিখোঁজ শিশুটিকে তখন খুঁজে পাওয়া যায়নি। শনিবার সকাল ১০টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

শিশুটির মামা মারূফ জানান, আসাদগঞ্জ থেকে সেহেরিজকে নিয়ে তার মা ও দাদি মামার (মারূফ) বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিল। বাড়ির কাছে এসে রাস্তায় পানি থাকায় রিকশা নেয় তারা। কিন্তু নালার পাশে থাকা বাঁশের বেষ্টনী খুলে ফেলার কারণে তারা রিকশা নিয়ে নালায় পড়ে যান। পরে সেহেরিজের মা সালমা ও দাদি আয়েশাকে উদ্ধার করা গেলেও শিশুটি রাতভর নিখোঁজ থাকে। তাকে উদ্ধারে রাতভর চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। সকালে পাওয়া যায় সেহেরিজের নিথর দেহ।স্থানীয়দের দাবি, নালার পাশে বাঁশের একটি ব্যারিকেড ছিল, যা কিছুদিন আগে খাল পরিষ্কারের অজুহাতে তুলে ফেলা হয়। আজকের হালকা বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে খালের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়, আর তাতেই ঘটে এই দুর্ঘটনা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলছে, এই মৃত্যুর জন্য দায়ী- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতা।ঘটনার পরপরই সেখানে যান চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত। তিনি ডুবুরি দলের তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেন।

শিশুর পরিবারকে সান্ত্বনা জানান এবং উদ্ধারকারী দলের জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, অরক্ষিত নালার পাশে দ্রুতই নিরাপত্তা ব্যারিকেড বসানো হবে।চট্টগ্রামে নালায় পড়ে নিখোঁজ ও মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত বছরের জুনেও নালায় পড়ে স্রোতে তলিয়ে যায় সাত বছরের এক শিশু। এ ধরনের ঘটনা প্রতিবছরই ঘটে। বর্ষা এলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়। নগরের অরক্ষিত নালা আর অদক্ষ ব্যবস্থাপনার মাঝে হারিয়ে যায় অমূল্য প্রাণ।চট্টগ্রাম নগরে মোট খালের সংখ্যা ৫৭টি, যার মোট দৈর্ঘ্য ১৬৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৩৬টি খাল ও ৩০২ কিলোমিটার নালা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আওতায় বাকি ২১টি খাল ও ৬৪৮ কিলোমিটার নালা।

এত এত মৃত্যুর পরেও নিরাপদ হয়নি চট্টগ্রাম নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ নালা ও খালের পাড়। বদলায়নি পুরনো চিত্র। কেবল কাগজে-কলমে ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ আর বাঁশ-দড়ি দিয়ে বেষ্টনী দিয়ে দায় সেরেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কোথাও কোথাও সেই বাঁশ আর দড়িও নেই। উন্মুক্ত এ সব খাল ও নালার পাশ দিয়ে যেন মৃত্যু হাতে নিয়ে চলাচল করছে মানুষজন, যেখানে যেকোনো সময় ঘটতে পারে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।ইতিমধ্যে খালে ও নালায় পড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর পর উন্মুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ নালা-নর্দমা, ফুটপাত ও খালের তালিকা করতে তৎপর হয় সিটি করপোরেশন। চিহ্নিত করা হয় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার ৫ হাজার ৫২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। যার মোট দৈর্ঘ্য ১৯ কিলোমিটার। তালিকা করলেও এ সব স্থান নিরাপদ করার কাজ চলছে ঢিমেতালে।নগরীর খালে ও নালার মৃত্যুফাঁদে পড়ে মৃত্যুর মিছিল বাড়লেও, বলদায়নি পুরনো চিত্র।

ডিএস..