০৯:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

রুশ সেনাবাহিনীর হয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন যুদ্ধে, নিহত হলেন আশুগঞ্জের যুবক

তুশ সেনাবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে প্রাণ হারিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদ আকরাম  হোসেন (২৫) নামের এক যুবক।নিহত আকরাম হোসেন
রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে চাকরির প্রলোভনে রুশ সেনাবাহিনীর হয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) আচমকাই এক সহযোদ্ধার ফোনে মৃত্যুর খবর তার বাড়িতে পৌঁছালে তার বাড়িসহ পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
জানা যায়, ওয়েল্ডিং-এর কাজ শেখার পর সংসারের সচ্ছলতা ও নিজের ভবিষ্যতের আশায় প্রায় ১১ মাস আগে রাশিয়ায় যান উপজেলার লালপুর হোসেনপুর গ্রামের মোরশেদ মিয়ার ছেলে আকরাম। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আকরাম ছিলেন সবার বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার পিতা, যিনি দিনমজুর হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এক মেয়ের বিয়েতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় পরিবারে আর্থিক চাপ আরও বাড়ে। সেই চাপ কমাতেই স্বজনদের সহায়তায় সংসারে একটু সচ্ছলতার আশায় রাশিয়ায় পাঠানো হয় আকরামকে।
সেখানে গিয়ে প্রথম ৮ মাস একটি চায়না কোম্পানিতে ওয়েল্ডার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। যদিও বেতন বেশি ছিল না, তবে তার উপার্জনে পরিবারে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করে। আকরামের আয়ে তার দরিদ্র পরিবার একটু একটু করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
তবে প্রায় আড়াই মাস আগে আকরাম এক দালালের প্রলোভনে পড়ে চুক্তিভিত্তিকভাবে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। শর্ত ছিল— ইউক্রেন যুদ্ধের সম্মুখসারিতে অংশ নিতে হবে। পরিবার থেকে নিষেধ করা হলেও আকরাম জানিয়েছিলেন, ফিরে আসার আর কোনো উপায় নেই। তিনি তার বাবাকে জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইতোমধ্যে চার লাখ টাকা জমা হয়ে গেছে।
আকরামের মা মোবিনা বেগম জানান, যুদ্ধ চলাকালীন ছেলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। তবে গত ১৩ এপ্রিল থেকে হঠাৎ ই তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাশিয়ায় অবস্থানরত পরিচিতরাও তার কোন খোঁজ-খবর পাচ্ছিলো না। শুক্রবার এক সহযোদ্ধা আকরামের বাড়িতে ফোন করে জানান, ইউক্রেন সেনাবাহিনীর মিসাইল হামলায় আকরাম নিহত হয়েছেন। তার ইউনিটের আরও কয়েকজন ওই হামলায় মারা যান বলে তারা জানান। এরপর থেকেই মূলত আকরামের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ছেলের এমন মৃত্যুর খবরে আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর গ্রামসহ পুরো এলাকায় সবার মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। আকরামের মা বারবার ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে যাচ্ছেন মোর্ছা। পরিবারের অন্য সদস্যরাও শোকে হতবিহ্বল। এমতাবস্হায় আকরামের পরিবার নিহতের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনাসহ ক্ষতিপূরণ পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সাঁতার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্থানীয় ক্রীড়াচর্চা আরও গতিশীল হবে : জেলা প্রশাসক

রুশ সেনাবাহিনীর হয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন যুদ্ধে, নিহত হলেন আশুগঞ্জের যুবক

প্রকাশিত : ০৯:২৯:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
তুশ সেনাবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে প্রাণ হারিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদ আকরাম  হোসেন (২৫) নামের এক যুবক।নিহত আকরাম হোসেন
রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে চাকরির প্রলোভনে রুশ সেনাবাহিনীর হয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) আচমকাই এক সহযোদ্ধার ফোনে মৃত্যুর খবর তার বাড়িতে পৌঁছালে তার বাড়িসহ পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
জানা যায়, ওয়েল্ডিং-এর কাজ শেখার পর সংসারের সচ্ছলতা ও নিজের ভবিষ্যতের আশায় প্রায় ১১ মাস আগে রাশিয়ায় যান উপজেলার লালপুর হোসেনপুর গ্রামের মোরশেদ মিয়ার ছেলে আকরাম। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আকরাম ছিলেন সবার বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার পিতা, যিনি দিনমজুর হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এক মেয়ের বিয়েতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় পরিবারে আর্থিক চাপ আরও বাড়ে। সেই চাপ কমাতেই স্বজনদের সহায়তায় সংসারে একটু সচ্ছলতার আশায় রাশিয়ায় পাঠানো হয় আকরামকে।
সেখানে গিয়ে প্রথম ৮ মাস একটি চায়না কোম্পানিতে ওয়েল্ডার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। যদিও বেতন বেশি ছিল না, তবে তার উপার্জনে পরিবারে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করে। আকরামের আয়ে তার দরিদ্র পরিবার একটু একটু করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
তবে প্রায় আড়াই মাস আগে আকরাম এক দালালের প্রলোভনে পড়ে চুক্তিভিত্তিকভাবে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। শর্ত ছিল— ইউক্রেন যুদ্ধের সম্মুখসারিতে অংশ নিতে হবে। পরিবার থেকে নিষেধ করা হলেও আকরাম জানিয়েছিলেন, ফিরে আসার আর কোনো উপায় নেই। তিনি তার বাবাকে জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইতোমধ্যে চার লাখ টাকা জমা হয়ে গেছে।
আকরামের মা মোবিনা বেগম জানান, যুদ্ধ চলাকালীন ছেলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। তবে গত ১৩ এপ্রিল থেকে হঠাৎ ই তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাশিয়ায় অবস্থানরত পরিচিতরাও তার কোন খোঁজ-খবর পাচ্ছিলো না। শুক্রবার এক সহযোদ্ধা আকরামের বাড়িতে ফোন করে জানান, ইউক্রেন সেনাবাহিনীর মিসাইল হামলায় আকরাম নিহত হয়েছেন। তার ইউনিটের আরও কয়েকজন ওই হামলায় মারা যান বলে তারা জানান। এরপর থেকেই মূলত আকরামের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ছেলের এমন মৃত্যুর খবরে আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর গ্রামসহ পুরো এলাকায় সবার মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। আকরামের মা বারবার ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে যাচ্ছেন মোর্ছা। পরিবারের অন্য সদস্যরাও শোকে হতবিহ্বল। এমতাবস্হায় আকরামের পরিবার নিহতের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনাসহ ক্ষতিপূরণ পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।