০১:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪
নিয়ন্ত্রণহীন বাজার, দুর্ভোগে জনগণ

দুই মাসে পিয়াজের দাম বেড়েছে ৮০  শতাংশ , আলু ৫৫ শতাংশ

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে অসহনীয়। এবছর মে মাসেও পিয়াজের কেজি ছিল ৬৫ টাকা যা এখন ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আলুর কেজি ছিল ৪৫ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা করে। শুধু আলু আর পিয়াজের বাজারেই অস্থিতিশীলতা এমনটা নয়, প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামই আকাশচুম্বী।

কাচা মরিচের দাম ১ সপ্তাহের ব্যবধানে ১৮০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা হয়েছে। ব্রয়লার মুরগীর ডিমের হলি ৬০ টাকায় ঠেকেছে। এই দাম বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না মানুষের আয়। এমনকি এই দাম কোথায় গিয়ে থামবে, তাও কেউ জানেনা। এদিকে দাম বেড়েছে সয়াবিন তেলেরও। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে গতকাল তা ১৬৫ থেকে ১৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে খোলা সয়াবিন তেলে দুই টাকা বেড়ে তা ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এমন দামের ঝাঁজে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস বাণী শোনাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ভারতের বিকল্প হিসেবে কয়েকটি দেশ থেকে আমদানির জন্য খোলা হয়েছে ঋণপত্র (এলসি)। এ মাসের শেষ নাগাদ আমদানি করা পেঁয়াজ ঢুকতে পারে বাজারে। তখন দাম অনেকটাই কমতে পারে।

পেঁয়াজ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা আশার কথা শোনালেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বক্তব্যে বাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে ইতিবাচক কোনো ইঙ্গিত নেই। বরং একে অন্যকে কথা বলার পরামর্শ ও কেউ ছুটিতে আছেন বলে এড়িয়ে যান।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। বাজারভেদে বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। দিন দশেক আগেও এর দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁকরোলের দাম ৩০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা এবং করলা ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ২০ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়েছে বরবটি, টমেটো ও গাজরের।

ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার জন্য সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টি ও মৌসুমি বন্যার দোহাই দিচ্ছেন। কিন্তু বন্যা তো সারা দেশে হয়নি। সিলেট অঞ্চলের বন্যার কারণে সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এতটা বেড়ে যাওয়ার যুক্তিসংগত কারণ নেই। এর পেছনে মহলবিশেষের কারসাজি আছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, উৎপাদনসহ অন্য খরচ হিসাব করে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের যৌক্তিক দর ৬৫ টাকা হওয়ার কথা। তবে সংস্থাটিরই তথ্য, গত বৃহস্পতিবার খুচরায় পেঁয়াজের দর ছিল ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা। তবে বাজারের প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। শনিবার রাজধানীর শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে একটার পর একটা সমস্যা লেগেই থাকে। এখন সমস্যা পেঁয়াজ-আলুর বাজারে। তবে ডিম আমদানির প্রয়োজন না হলেও পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। পেঁয়াজের বিষয়ে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলতে পারবে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়বে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের অজানা নয় যে নিত্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষেরা খুবই কষ্টে আছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের উচিত বাজার তদারকির পাশাপাশি টিসিবির মাধ্যমে কম দামে চাল-ডাল-ভোজ্যতেলের মতো পণ্যগুলোর সরবরাহ বাড়ানো। এতে হতদরিদ্র মানুষগুলোর জীবনযাপনের কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে।

জনপ্রিয়

মুরাদনগরের সাবেক ৫বারের এমপি কায়কোবাদের অপেক্ষায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ

নিয়ন্ত্রণহীন বাজার, দুর্ভোগে জনগণ

দুই মাসে পিয়াজের দাম বেড়েছে ৮০  শতাংশ , আলু ৫৫ শতাংশ

প্রকাশিত : ০৪:৫৯:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে অসহনীয়। এবছর মে মাসেও পিয়াজের কেজি ছিল ৬৫ টাকা যা এখন ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আলুর কেজি ছিল ৪৫ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা করে। শুধু আলু আর পিয়াজের বাজারেই অস্থিতিশীলতা এমনটা নয়, প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামই আকাশচুম্বী।

কাচা মরিচের দাম ১ সপ্তাহের ব্যবধানে ১৮০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা হয়েছে। ব্রয়লার মুরগীর ডিমের হলি ৬০ টাকায় ঠেকেছে। এই দাম বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না মানুষের আয়। এমনকি এই দাম কোথায় গিয়ে থামবে, তাও কেউ জানেনা। এদিকে দাম বেড়েছে সয়াবিন তেলেরও। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে গতকাল তা ১৬৫ থেকে ১৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে খোলা সয়াবিন তেলে দুই টাকা বেড়ে তা ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এমন দামের ঝাঁজে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস বাণী শোনাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ভারতের বিকল্প হিসেবে কয়েকটি দেশ থেকে আমদানির জন্য খোলা হয়েছে ঋণপত্র (এলসি)। এ মাসের শেষ নাগাদ আমদানি করা পেঁয়াজ ঢুকতে পারে বাজারে। তখন দাম অনেকটাই কমতে পারে।

পেঁয়াজ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা আশার কথা শোনালেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বক্তব্যে বাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে ইতিবাচক কোনো ইঙ্গিত নেই। বরং একে অন্যকে কথা বলার পরামর্শ ও কেউ ছুটিতে আছেন বলে এড়িয়ে যান।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। বাজারভেদে বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। দিন দশেক আগেও এর দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁকরোলের দাম ৩০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা এবং করলা ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ২০ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়েছে বরবটি, টমেটো ও গাজরের।

ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার জন্য সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টি ও মৌসুমি বন্যার দোহাই দিচ্ছেন। কিন্তু বন্যা তো সারা দেশে হয়নি। সিলেট অঞ্চলের বন্যার কারণে সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এতটা বেড়ে যাওয়ার যুক্তিসংগত কারণ নেই। এর পেছনে মহলবিশেষের কারসাজি আছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, উৎপাদনসহ অন্য খরচ হিসাব করে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের যৌক্তিক দর ৬৫ টাকা হওয়ার কথা। তবে সংস্থাটিরই তথ্য, গত বৃহস্পতিবার খুচরায় পেঁয়াজের দর ছিল ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা। তবে বাজারের প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। শনিবার রাজধানীর শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে একটার পর একটা সমস্যা লেগেই থাকে। এখন সমস্যা পেঁয়াজ-আলুর বাজারে। তবে ডিম আমদানির প্রয়োজন না হলেও পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। পেঁয়াজের বিষয়ে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলতে পারবে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়বে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের অজানা নয় যে নিত্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষেরা খুবই কষ্টে আছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের উচিত বাজার তদারকির পাশাপাশি টিসিবির মাধ্যমে কম দামে চাল-ডাল-ভোজ্যতেলের মতো পণ্যগুলোর সরবরাহ বাড়ানো। এতে হতদরিদ্র মানুষগুলোর জীবনযাপনের কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে।