০৫:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫

চসিকের সিইও’র বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

৫ আগষ্ট খুনি হাসিনা ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পর সরকারী কর্মকর্তারা সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্টানে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে। এখানে দায়িত্ব পালন করছেন একমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ডাক্তার শাহাদাত হোসেন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ডা. শাহাদাত হোসেন । তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভোট চুরি করে নির্বাচনে জয়ী হন। ওই সময় ডাক্তার শাহাদাত ভোট চুরির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন নির্বাচনের ট্রাইব্যুনালে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডাক্তার শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করেন আদালত। পরে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন সিটি কর্পোরেশনের। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি নগরীকে সুন্দর ভাবে সাজাতে রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু ৩৫ বছরের জঞ্জাল মাত্র ৬ মাসে ঠিক করা যায় কি?।

১৯৯৪ সাল থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ছিল আওয়ামী মেয়রদের দখলে। সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেকটা সিনিয়র কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত। তার মধ্যে প্রধান নির্বাহী,সচিব, প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সবাই ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগ করে কর্পোরেশনের বড় কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

মেয়রের রাত দিন পরিশ্রম করে গেলেও তিনি পদে পদে বাধা সম্মুখীন হচ্ছেন এসব আওয়ামী দোসর কর্মকর্তাদের কারনে। দীর্ঘ দিন আওয়ামী মেয়রদের সাথে মিলেমিশে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে পঙ্গু প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছেন।

সিটি কর্পোরেশন মানে নগরজীবনের শৃঙ্খলা ও জনসেবার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান যখন আমলাতান্ত্রিক স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়, তখন নাগরিকদের ভাগ্যে জোটে হয়রানি, দুর্নীতি আর অগণিত অভিযোগ। এমনই এক অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তিনি ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন। বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে, যা ইতোমধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে নগরবাসীর মধ্যে। অভিযোগ পত্রে লেখা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম একসময় ছিলেন এক সাধারণ পরিবারের সন্তান। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার বলয়ে ঢুকে, তিনি এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। কীভাবে সম্ভব হলো এই অভাবনীয় সম্পদ-সঞ্চয়?

নগরীর অভিজাত এলাকায় একের পর এক জমি, দালান, ফ্ল্যাট এবং বিলাসবহুল গাড়ি কেনার পেছনের রহস্য কী? তার স্ত্রী-সন্তানের নামে বার্জ, কার্গো জাহাজ, ট্রলার থাকার তথ্যই বা কীভাবে এল? এসব প্রশ্নই এখন তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু।

সাধারণ নাগরিকদের জন্য সিটি কর্পোরেশনের সেবা গ্রহণ এখন এক বিভীষিকা। অভিযোগ আছে, প্রতিটি ফাইল প্রসেসের জন্য ঘুষ না দিলে কোনো কাজ হয় না। হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকরাও।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করে, ফাইল আটকে রেখে, বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের হাত করে তিনি বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করছেন। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, সরকারি প্রকল্পের নামে অর্থ বাণিজ্য, অবৈধ নিয়োগ এবং আত্মীয়স্বজনকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মতো অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তৌহিদুল ইসলামের বৈধ আয়ের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, তার স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের নামে যে বিপুল সম্পদ পাওয়া গেছে, তা বিস্ময়কর।তার স্ত্রীর নামে রয়েছে, ২টি বার্জ, ৩টি ট্রলার, ১টি কার্গো জাহাজ, ৫ কাঠার জমি (৩৫৯৮.৫৬ বর্গফুট) অনন্যা আবাসিক এলাকায় এবং নগরীর ডবলমুরিং থানায় ১০ শতক জায়গা, যেখানে এখন দাঁড়িয়ে আছে ১০ তলা ভবন।

তার নিজের নামে রয়েছে, ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা মূল্যের ‘ফজুন ভিস্তা’ অ্যাপার্টমেন্টের ২৩৫০ বর্গফুট ফ্ল্যাট, একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি (জিপ, প্রাইভেট কার, টয়োটা প্রিমিও) এবং গ্রামের বাড়িতে ভাইয়ের নামে ২০ বিঘা জমি (মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা)।এত সম্পদ কীভাবে এলো? এসব কি শুধুই কাকতালীয়, নাকি আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার অপব্যবহারের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ?

এই ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদক ইতোমধ্যেই মাঠে নামে। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-কে দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তাও। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় বাংলাদেশে এমন বহু দুর্নীতির তদন্ত হয়েছে, অনেক মামলাও হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কতজনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কি আদৌ কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, নাকি আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাবেন আরও অনেকের মতো?

চসিকের একাধিক বিশ্বস্ত সুত্র জানায়, সিইও যোগদানে পর থেকে চালিয়েছে একের পর এক অপকর্ম। ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন আদায় করতেন, কেউ কমিশন না দিলে তার ফাইল আটকে রাখতেন। টেন্ডারের ফাইল গুলো খুললে দেখা যায়, টেন্ডারের সময় সময়সীমা শেষ হলেও এনওএ ধরে রেখেছেন অনেকদিন ধরে। সম্প্রতি ৫টি টেন্ডার বাবদ ২ কোটি টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়াও অবৈধভাবে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এক পদ থেকে অন্য পদে স্থায়ী করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। অতিসম্প্রতি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগের প্রায় ৫০ পার্সেন্টই তিনি নিয়োগ দেন। আর জনপ্রতি নিয়োগের ক্ষেতে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন। সাবেক মেয়র রেজাউল করিম ও পিএসসহ আর এই ঘুষের টাকার ভাগ পেতেন। আগেও অনেকবার বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসলেও স্বৈরাচারের দোসর এ কর্তা সরকারের লোক হওয়ায় ক্ষমতা বলে ধামাচাপা দিয়েছিল এসব অভিযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি টেন্ডারে থাকতো তার জন্য একটা নির্দিষ্ট এমাউন্ট এর ঘুষ, হিসাববিভাগ এর মাধ্যমে প্রত্যেকটা বিলে ১০% ঘুষ আদায় করেন এই কর্মকর্তা। বিগত ছাত্র আন্দোলনের সময়ও সড়ক বাতি অফ করার সাথে জড়িত এই কর্মকর্তা। ৩ থেকে ৫ আগস্ট এই কর্মকর্তার নির্দেশনায় ঝুলন কুমার দাশের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে সড়ক বাতি নেভানো ছিল, যার ফলে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা নিরাপত্তাহীনতার শিকার হন এবং ছাত্রলীগ এ সুযোগে হামলা করার সুযোগ পায়। পরবর্তীতে ঝুলন কুমার দাশকে চাপের মুখে বরখাস্ত করলেও এই কর্মকর্তা এখনও চেয়ারে বিরাজমান।

বিগত মেয়রের সময়ে তথ্য পাচারের দায়ে ইকবাল হাসান নামক এক ব্যাক্তিকে ট্রান্সফার করা হলেও, তাকে বিভিন্ন পাঁয়তারায় ফিরিয়ে আনতে উঠে পরে লাগে এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। অবশেষে ৫ আগষ্ট তারিখের পর কিছু সময়ের জন্য প্রসাশন না থাকায় অবৈধ অফিস আদেশ করে তাকে “আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে” সচিবালয়ে সংযুক্ত করে, যেখানে চসিকের অর্গানোগ্রামে আইটি বিশেষজ্ঞ বলে কোন পদবী নেই। পরবর্তীতে আরেকটি অফিস আদেশ করে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাকে বানিয়ে দেওয়া হয় “প্রোগ্রামার“। বিগত সময়ে এই ইকবাল হাসানের নামেও উঠে এসেছিল দুদকের অনেক অভিযোগ। এ যেন এক দুর্নীতির সিন্ডিকেট। এব্যপারে জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

 

ডিএস./

ট্যাগ :

বাগেরহাটে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত 

চসিকের সিইও’র বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

প্রকাশিত : ১১:৪০:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

৫ আগষ্ট খুনি হাসিনা ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পর সরকারী কর্মকর্তারা সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্টানে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে। এখানে দায়িত্ব পালন করছেন একমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ডাক্তার শাহাদাত হোসেন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ডা. শাহাদাত হোসেন । তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভোট চুরি করে নির্বাচনে জয়ী হন। ওই সময় ডাক্তার শাহাদাত ভোট চুরির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন নির্বাচনের ট্রাইব্যুনালে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডাক্তার শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করেন আদালত। পরে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন সিটি কর্পোরেশনের। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি নগরীকে সুন্দর ভাবে সাজাতে রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু ৩৫ বছরের জঞ্জাল মাত্র ৬ মাসে ঠিক করা যায় কি?।

১৯৯৪ সাল থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ছিল আওয়ামী মেয়রদের দখলে। সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেকটা সিনিয়র কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত। তার মধ্যে প্রধান নির্বাহী,সচিব, প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সবাই ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগ করে কর্পোরেশনের বড় কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

মেয়রের রাত দিন পরিশ্রম করে গেলেও তিনি পদে পদে বাধা সম্মুখীন হচ্ছেন এসব আওয়ামী দোসর কর্মকর্তাদের কারনে। দীর্ঘ দিন আওয়ামী মেয়রদের সাথে মিলেমিশে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে পঙ্গু প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছেন।

সিটি কর্পোরেশন মানে নগরজীবনের শৃঙ্খলা ও জনসেবার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান যখন আমলাতান্ত্রিক স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়, তখন নাগরিকদের ভাগ্যে জোটে হয়রানি, দুর্নীতি আর অগণিত অভিযোগ। এমনই এক অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তিনি ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন। বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে, যা ইতোমধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে নগরবাসীর মধ্যে। অভিযোগ পত্রে লেখা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম একসময় ছিলেন এক সাধারণ পরিবারের সন্তান। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার বলয়ে ঢুকে, তিনি এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। কীভাবে সম্ভব হলো এই অভাবনীয় সম্পদ-সঞ্চয়?

নগরীর অভিজাত এলাকায় একের পর এক জমি, দালান, ফ্ল্যাট এবং বিলাসবহুল গাড়ি কেনার পেছনের রহস্য কী? তার স্ত্রী-সন্তানের নামে বার্জ, কার্গো জাহাজ, ট্রলার থাকার তথ্যই বা কীভাবে এল? এসব প্রশ্নই এখন তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু।

সাধারণ নাগরিকদের জন্য সিটি কর্পোরেশনের সেবা গ্রহণ এখন এক বিভীষিকা। অভিযোগ আছে, প্রতিটি ফাইল প্রসেসের জন্য ঘুষ না দিলে কোনো কাজ হয় না। হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকরাও।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করে, ফাইল আটকে রেখে, বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের হাত করে তিনি বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করছেন। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, সরকারি প্রকল্পের নামে অর্থ বাণিজ্য, অবৈধ নিয়োগ এবং আত্মীয়স্বজনকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মতো অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তৌহিদুল ইসলামের বৈধ আয়ের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, তার স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের নামে যে বিপুল সম্পদ পাওয়া গেছে, তা বিস্ময়কর।তার স্ত্রীর নামে রয়েছে, ২টি বার্জ, ৩টি ট্রলার, ১টি কার্গো জাহাজ, ৫ কাঠার জমি (৩৫৯৮.৫৬ বর্গফুট) অনন্যা আবাসিক এলাকায় এবং নগরীর ডবলমুরিং থানায় ১০ শতক জায়গা, যেখানে এখন দাঁড়িয়ে আছে ১০ তলা ভবন।

তার নিজের নামে রয়েছে, ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা মূল্যের ‘ফজুন ভিস্তা’ অ্যাপার্টমেন্টের ২৩৫০ বর্গফুট ফ্ল্যাট, একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি (জিপ, প্রাইভেট কার, টয়োটা প্রিমিও) এবং গ্রামের বাড়িতে ভাইয়ের নামে ২০ বিঘা জমি (মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা)।এত সম্পদ কীভাবে এলো? এসব কি শুধুই কাকতালীয়, নাকি আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার অপব্যবহারের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ?

এই ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদক ইতোমধ্যেই মাঠে নামে। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-কে দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তাও। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় বাংলাদেশে এমন বহু দুর্নীতির তদন্ত হয়েছে, অনেক মামলাও হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কতজনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কি আদৌ কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, নাকি আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাবেন আরও অনেকের মতো?

চসিকের একাধিক বিশ্বস্ত সুত্র জানায়, সিইও যোগদানে পর থেকে চালিয়েছে একের পর এক অপকর্ম। ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন আদায় করতেন, কেউ কমিশন না দিলে তার ফাইল আটকে রাখতেন। টেন্ডারের ফাইল গুলো খুললে দেখা যায়, টেন্ডারের সময় সময়সীমা শেষ হলেও এনওএ ধরে রেখেছেন অনেকদিন ধরে। সম্প্রতি ৫টি টেন্ডার বাবদ ২ কোটি টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়াও অবৈধভাবে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এক পদ থেকে অন্য পদে স্থায়ী করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। অতিসম্প্রতি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগের প্রায় ৫০ পার্সেন্টই তিনি নিয়োগ দেন। আর জনপ্রতি নিয়োগের ক্ষেতে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন। সাবেক মেয়র রেজাউল করিম ও পিএসসহ আর এই ঘুষের টাকার ভাগ পেতেন। আগেও অনেকবার বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসলেও স্বৈরাচারের দোসর এ কর্তা সরকারের লোক হওয়ায় ক্ষমতা বলে ধামাচাপা দিয়েছিল এসব অভিযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি টেন্ডারে থাকতো তার জন্য একটা নির্দিষ্ট এমাউন্ট এর ঘুষ, হিসাববিভাগ এর মাধ্যমে প্রত্যেকটা বিলে ১০% ঘুষ আদায় করেন এই কর্মকর্তা। বিগত ছাত্র আন্দোলনের সময়ও সড়ক বাতি অফ করার সাথে জড়িত এই কর্মকর্তা। ৩ থেকে ৫ আগস্ট এই কর্মকর্তার নির্দেশনায় ঝুলন কুমার দাশের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে সড়ক বাতি নেভানো ছিল, যার ফলে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা নিরাপত্তাহীনতার শিকার হন এবং ছাত্রলীগ এ সুযোগে হামলা করার সুযোগ পায়। পরবর্তীতে ঝুলন কুমার দাশকে চাপের মুখে বরখাস্ত করলেও এই কর্মকর্তা এখনও চেয়ারে বিরাজমান।

বিগত মেয়রের সময়ে তথ্য পাচারের দায়ে ইকবাল হাসান নামক এক ব্যাক্তিকে ট্রান্সফার করা হলেও, তাকে বিভিন্ন পাঁয়তারায় ফিরিয়ে আনতে উঠে পরে লাগে এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। অবশেষে ৫ আগষ্ট তারিখের পর কিছু সময়ের জন্য প্রসাশন না থাকায় অবৈধ অফিস আদেশ করে তাকে “আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে” সচিবালয়ে সংযুক্ত করে, যেখানে চসিকের অর্গানোগ্রামে আইটি বিশেষজ্ঞ বলে কোন পদবী নেই। পরবর্তীতে আরেকটি অফিস আদেশ করে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাকে বানিয়ে দেওয়া হয় “প্রোগ্রামার“। বিগত সময়ে এই ইকবাল হাসানের নামেও উঠে এসেছিল দুদকের অনেক অভিযোগ। এ যেন এক দুর্নীতির সিন্ডিকেট। এব্যপারে জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

 

ডিএস./