১০:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

১১৮ গ্রামের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পথে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০২:০০:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৭
  • 261

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ১১৮টি গ্রামে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ থাকার পর ওই এলাকার রোহিঙ্গারা এখন রাতের আঁধারে বাংলাদেশের পথ ধরছেন। উত্তর রাখাইনের ৪৭৯ গ্রাম যখন সেনাবাহিনী ও রাখাইন মগদের সহিংসতার আগুনে পুড়ছিলো এবং জাতিগত নিধন ও গণহত্যার শিকার হচ্ছিলো, তখনও দক্ষিণ রাখাইনের এ ১১৮ গ্রাম ছিলো তুলনামূলক শান্ত ও কম ক্ষতিগ্রস্ত। এসব গ্রামের ধনী রোহিঙ্গারা তাদের গ্রামগুলো রক্ষা করতে কোটি কোটি টাকা সেনাবাহিনীর পেছনে ব্যয় করেও শেষ রক্ষা করতে পারছেন না। মাসাধিক সময় ধরে উগ্র বৌদ্ধদের হাতে অবরুদ্ধ থেকে এখন তারা রাতের আঁধারে বাংলাদেশের পথ ধরছেন। ওই এলাকা থেকে গত
এক সপ্তাহে ৫০ হাজারের মতো মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা বলছে, এসব এলাকার প্রায় তিন লাখ মানুষ এখন বাংলাদেশে পালিয়ে আসার অপেক্ষায় আছেন। অনেকেই ১২ থেকে ১৪ দিন টানা হেঁটে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে সীতা পাহাড়, নাইক্ষ্যংদিয়ার দ্বীপ ও পাশের অন্যান্য সমুদ্র পাড়ে জমায়েত হচ্ছেন। কিন্তু নৌযানের অভাবে তারা বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। দক্ষিণ রাখাইনের সেন্ডওয়ে, রাথেডং ও বুথেডংসহ ১২টি টাউনশিপ এলাকায় অক্টোবরের শুরু থেকে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপ। এ অঞ্চলের ৩ লাখের মতো মানুষ এক মাস ধরে নিজ বাড়িতে বন্দি অবস্থায় আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বাড়িতেথাকা নিত্যপণ্যের মজুদ শেষ হওয়ায় অমানবিক জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন। জাতিসংঘ বলছে, এসব এলাকায় বড় ধরনের সহিংসতার খবর না থাকলেও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা থেমে নেই। রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা থামছে না। এ পরিস্থিতিতে মায়ানমারের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া রাজ্যটি থেকে বাংলাদেশে আরো বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ঢল নামতে পারে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তরের (ওসিএইচএ) আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মুখপাত্র জোয়েল মিলম্যান জানিয়েছেন, রাখাইন থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে কোনোকেনো দিন এ সংখ্যা ১০ হাজারও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার মায়ানমারের মংডু নুরুল্যাপাড়া থেকে বাংলাদেশে আসা কেফায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা এখন আর মায়ানমারে থাকতে পারছিনা। মাসেরও বেশি সময় ধরে আমাদের গ্রামগুলো মগরা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। দিনের বেলায় তারাই অস্ত্র হাতে গ্রামে টহল দিচ্ছে। এদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপ বলছে, ২০১২ সাল থেকে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের নামে রাখাইন যুবকদের সশস্ত্র করার যে পরিকল্পনা মায়ানমার সরকার করেছিল তা ছিলো দীর্ঘ পরিকল্পনার ফল। এবারের সহিংসতায় সেটাকে কাজে লাগিয়েছে মায়ানমার সেনাবাহিনী। প্রতিটি গ্রামে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, গণহত্যা ও গণধর্ষণে নেতৃত্ব দিয়েছে মগ যুবকদের নিয়ে গঠন করা এ কমিউনটি পুলিশের সশস্ত্র মগ যুবকরা। মায়ানমারের একজন রাজনৈতিক নেতা জাফর আলম বলেন, দক্ষিণ রাখাইনের মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় না খেয়ে মরছে। আবার বাংলাদেশে আসার সময় তারা মরছে সাগরে ডুবে। এটাই এখন রোহিঙ্গাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ট্যাগ :

১১৮ গ্রামের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পথে

প্রকাশিত : ০২:০০:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৭

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ১১৮টি গ্রামে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ থাকার পর ওই এলাকার রোহিঙ্গারা এখন রাতের আঁধারে বাংলাদেশের পথ ধরছেন। উত্তর রাখাইনের ৪৭৯ গ্রাম যখন সেনাবাহিনী ও রাখাইন মগদের সহিংসতার আগুনে পুড়ছিলো এবং জাতিগত নিধন ও গণহত্যার শিকার হচ্ছিলো, তখনও দক্ষিণ রাখাইনের এ ১১৮ গ্রাম ছিলো তুলনামূলক শান্ত ও কম ক্ষতিগ্রস্ত। এসব গ্রামের ধনী রোহিঙ্গারা তাদের গ্রামগুলো রক্ষা করতে কোটি কোটি টাকা সেনাবাহিনীর পেছনে ব্যয় করেও শেষ রক্ষা করতে পারছেন না। মাসাধিক সময় ধরে উগ্র বৌদ্ধদের হাতে অবরুদ্ধ থেকে এখন তারা রাতের আঁধারে বাংলাদেশের পথ ধরছেন। ওই এলাকা থেকে গত
এক সপ্তাহে ৫০ হাজারের মতো মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা বলছে, এসব এলাকার প্রায় তিন লাখ মানুষ এখন বাংলাদেশে পালিয়ে আসার অপেক্ষায় আছেন। অনেকেই ১২ থেকে ১৪ দিন টানা হেঁটে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে সীতা পাহাড়, নাইক্ষ্যংদিয়ার দ্বীপ ও পাশের অন্যান্য সমুদ্র পাড়ে জমায়েত হচ্ছেন। কিন্তু নৌযানের অভাবে তারা বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। দক্ষিণ রাখাইনের সেন্ডওয়ে, রাথেডং ও বুথেডংসহ ১২টি টাউনশিপ এলাকায় অক্টোবরের শুরু থেকে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপ। এ অঞ্চলের ৩ লাখের মতো মানুষ এক মাস ধরে নিজ বাড়িতে বন্দি অবস্থায় আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বাড়িতেথাকা নিত্যপণ্যের মজুদ শেষ হওয়ায় অমানবিক জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন। জাতিসংঘ বলছে, এসব এলাকায় বড় ধরনের সহিংসতার খবর না থাকলেও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা থেমে নেই। রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা থামছে না। এ পরিস্থিতিতে মায়ানমারের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া রাজ্যটি থেকে বাংলাদেশে আরো বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ঢল নামতে পারে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তরের (ওসিএইচএ) আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মুখপাত্র জোয়েল মিলম্যান জানিয়েছেন, রাখাইন থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে কোনোকেনো দিন এ সংখ্যা ১০ হাজারও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার মায়ানমারের মংডু নুরুল্যাপাড়া থেকে বাংলাদেশে আসা কেফায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা এখন আর মায়ানমারে থাকতে পারছিনা। মাসেরও বেশি সময় ধরে আমাদের গ্রামগুলো মগরা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। দিনের বেলায় তারাই অস্ত্র হাতে গ্রামে টহল দিচ্ছে। এদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপ বলছে, ২০১২ সাল থেকে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের নামে রাখাইন যুবকদের সশস্ত্র করার যে পরিকল্পনা মায়ানমার সরকার করেছিল তা ছিলো দীর্ঘ পরিকল্পনার ফল। এবারের সহিংসতায় সেটাকে কাজে লাগিয়েছে মায়ানমার সেনাবাহিনী। প্রতিটি গ্রামে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, গণহত্যা ও গণধর্ষণে নেতৃত্ব দিয়েছে মগ যুবকদের নিয়ে গঠন করা এ কমিউনটি পুলিশের সশস্ত্র মগ যুবকরা। মায়ানমারের একজন রাজনৈতিক নেতা জাফর আলম বলেন, দক্ষিণ রাখাইনের মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় না খেয়ে মরছে। আবার বাংলাদেশে আসার সময় তারা মরছে সাগরে ডুবে। এটাই এখন রোহিঙ্গাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।