০৫:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

মোকাবেলায় প্রস্তুত নয় বাণিজ্য বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জে বেনাপোল-পেট্রাপোল

পেট্রাপোলবাণিজ্য বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত নয় বেনাপোল-পেট্রাপোল
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার স্থলবাণিজ্যের ৮০ শতাংশই হয় বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। বাণিজ্যিক অনুপাতে এশিয়ার অন্যতম বৃহত্ স্থলবন্দর হিসেবে বিবেচিত হলেও দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থলবন্দর দুটি পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখপূর্বক এ কথা জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।
গতকাল রাজধানীর গুলশানে সানেম কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বেনাপোল ও পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ভূমিকা নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। বন্দর-সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত উভয় দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের প্রায় ১০০ জন প্রতিনিধির ওপর পরিচালিত জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
সরকারি নির্দেশে গত ১ আগস্ট বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সপ্তাহের সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার কার্যক্রম শুরু হয়। সানেমের জরিপটি পরিচালিত হয় জুলাইয়ে। সে সময় উপরোক্ত নিয়মটি চালু ছিল না। ওই সময় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি বাদ দিয়ে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা বন্দরের কার্যক্রম চালু রাখার কথা ছিল। কিন্তু সানেমের জরিপে সরকার ঘোষিত কর্মসময় ও বাস্তবে কর্মসময়ের মধ্যে পার্থক্য ধরা পড়ে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেনাপোল বন্দরে গড়ে ৪ ঘণ্টা করে কাজ হয়েছে। মূলত সকাল ১০টায় কার্যক্রম শুরু হয় ও বেলা ২টার পর আর কোনো ট্রাকের মালামাল খালাস করা হয় না।
পেট্রাপোল স্থলবন্দরের এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার মোট ৪০০ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেকই হয় এ বন্দর দিয়ে, যা পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের প্রায় দ্বিগুণ। সানেমের প্রতিবেদনে বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রমের কিছু সীমাবদ্ধতা উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ভারত থেকে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৩২৫-৩৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে এসেছে, সেখানে বাংলাদেশ থেকে গেছে গড়ে ৭০-৮০টি ট্রাক। বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্য মজুদ ক্ষমতা ৪০ হাজার টন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া বন্দরটিতে বর্তমানে পণ্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মোট ৪৩টি ছাউনি রয়েছে, যার মধ্যে সাতটি বন্ধ এবং বাকিগুলোও পুরনো ও জরাজীর্ণ।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, বর্তমানে বেনাপোল স্থলবন্দর নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ গবেষণায় আমদানি-রফতানিতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ৮০-৯০ শতাংশই বন্দরের অবকাঠামো, কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপ্তি ও উন্নত প্রযুক্তির অপর্যাপ্ততা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনাপোলে প্রবেশের জন্য ওপারের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে প্রায় দেড় হাজার ট্রাক ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে (আইসিপি) অপেক্ষায় থাকে। বেনাপোলে যানজটের প্রধান কারণ সরু রাস্তা ও এর দুই পাশের ছাউনি, যেখান দিয়ে ট্রাক প্রবেশ করে এবং বেরিয়ে যায়। এদিকে পেট্রাপোল স্থলবন্দরে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালু রাখার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ভারতের বনগাঁ থেকে বেনাপোল পর্যন্ত রাস্তা মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার। এটুকু পথ আসতে প্রতিটি ট্রাকের সময় লাগছে গড়ে ১৭ দিন।
সানেম জানিয়েছে, সাধারণত কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ট্রাক ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য লাইনে থাকে। এর মধ্যে দেড় হাজার পেট্রাপোলে এবং বাকি দুই হাজার ট্রাক বনগাঁ ও এর আশপাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন গুদামঘরগুলোয় অপেক্ষমাণ থাকে।
বেনাপোল ও পেট্রাপোল স্থলবন্দরের অবস্থার উন্নয়নের জন্য বেশকিছু সুপারিশও করেছে সানেম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— রাস্তা প্রশস্তকরণ, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন, গুদামঘরের সংখ্যা বাড়ানো, আধুনিক প্রযুক্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা, জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি, আইসিপিতে উন্নয়ন ও চাঁদা আদায়কারীদের নিয়ন্ত্রণ।
সরকারি নির্দেশে ১ আগস্ট থেকে বেনাপোল স্থলবন্দরে সপ্তাহের সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালু রাখার কর্মসূচি শুরু হলেও পরবর্তীতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্তের কারণে কার্যত তা বন্ধ হয়ে যায়। সানেম বলছে, বেনাপোল স্থলবন্দরকে কার্যত সাতদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পেট্রাপোল বন্দরের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করতে হবে এবং কার্গো খালাসে বিলম্বের ঘটনা কমিয়ে আনতে হবে।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী নাজমুল অভি হাসান, গবেষণা সহযোগী জাহিদ ইবনে জালাল ও সাদাত আনোয়ার।

ট্যাগ :

মোকাবেলায় প্রস্তুত নয় বাণিজ্য বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জে বেনাপোল-পেট্রাপোল

প্রকাশিত : ০২:৪৬:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

পেট্রাপোলবাণিজ্য বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত নয় বেনাপোল-পেট্রাপোল
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার স্থলবাণিজ্যের ৮০ শতাংশই হয় বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। বাণিজ্যিক অনুপাতে এশিয়ার অন্যতম বৃহত্ স্থলবন্দর হিসেবে বিবেচিত হলেও দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থলবন্দর দুটি পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখপূর্বক এ কথা জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।
গতকাল রাজধানীর গুলশানে সানেম কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বেনাপোল ও পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ভূমিকা নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। বন্দর-সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত উভয় দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের প্রায় ১০০ জন প্রতিনিধির ওপর পরিচালিত জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
সরকারি নির্দেশে গত ১ আগস্ট বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সপ্তাহের সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার কার্যক্রম শুরু হয়। সানেমের জরিপটি পরিচালিত হয় জুলাইয়ে। সে সময় উপরোক্ত নিয়মটি চালু ছিল না। ওই সময় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি বাদ দিয়ে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা বন্দরের কার্যক্রম চালু রাখার কথা ছিল। কিন্তু সানেমের জরিপে সরকার ঘোষিত কর্মসময় ও বাস্তবে কর্মসময়ের মধ্যে পার্থক্য ধরা পড়ে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেনাপোল বন্দরে গড়ে ৪ ঘণ্টা করে কাজ হয়েছে। মূলত সকাল ১০টায় কার্যক্রম শুরু হয় ও বেলা ২টার পর আর কোনো ট্রাকের মালামাল খালাস করা হয় না।
পেট্রাপোল স্থলবন্দরের এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার মোট ৪০০ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেকই হয় এ বন্দর দিয়ে, যা পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের প্রায় দ্বিগুণ। সানেমের প্রতিবেদনে বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রমের কিছু সীমাবদ্ধতা উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ভারত থেকে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৩২৫-৩৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে এসেছে, সেখানে বাংলাদেশ থেকে গেছে গড়ে ৭০-৮০টি ট্রাক। বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্য মজুদ ক্ষমতা ৪০ হাজার টন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া বন্দরটিতে বর্তমানে পণ্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মোট ৪৩টি ছাউনি রয়েছে, যার মধ্যে সাতটি বন্ধ এবং বাকিগুলোও পুরনো ও জরাজীর্ণ।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, বর্তমানে বেনাপোল স্থলবন্দর নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ গবেষণায় আমদানি-রফতানিতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ৮০-৯০ শতাংশই বন্দরের অবকাঠামো, কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপ্তি ও উন্নত প্রযুক্তির অপর্যাপ্ততা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনাপোলে প্রবেশের জন্য ওপারের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে প্রায় দেড় হাজার ট্রাক ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে (আইসিপি) অপেক্ষায় থাকে। বেনাপোলে যানজটের প্রধান কারণ সরু রাস্তা ও এর দুই পাশের ছাউনি, যেখান দিয়ে ট্রাক প্রবেশ করে এবং বেরিয়ে যায়। এদিকে পেট্রাপোল স্থলবন্দরে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালু রাখার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ভারতের বনগাঁ থেকে বেনাপোল পর্যন্ত রাস্তা মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার। এটুকু পথ আসতে প্রতিটি ট্রাকের সময় লাগছে গড়ে ১৭ দিন।
সানেম জানিয়েছে, সাধারণত কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ট্রাক ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য লাইনে থাকে। এর মধ্যে দেড় হাজার পেট্রাপোলে এবং বাকি দুই হাজার ট্রাক বনগাঁ ও এর আশপাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন গুদামঘরগুলোয় অপেক্ষমাণ থাকে।
বেনাপোল ও পেট্রাপোল স্থলবন্দরের অবস্থার উন্নয়নের জন্য বেশকিছু সুপারিশও করেছে সানেম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— রাস্তা প্রশস্তকরণ, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন, গুদামঘরের সংখ্যা বাড়ানো, আধুনিক প্রযুক্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা, জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি, আইসিপিতে উন্নয়ন ও চাঁদা আদায়কারীদের নিয়ন্ত্রণ।
সরকারি নির্দেশে ১ আগস্ট থেকে বেনাপোল স্থলবন্দরে সপ্তাহের সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালু রাখার কর্মসূচি শুরু হলেও পরবর্তীতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্তের কারণে কার্যত তা বন্ধ হয়ে যায়। সানেম বলছে, বেনাপোল স্থলবন্দরকে কার্যত সাতদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পেট্রাপোল বন্দরের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করতে হবে এবং কার্গো খালাসে বিলম্বের ঘটনা কমিয়ে আনতে হবে।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী নাজমুল অভি হাসান, গবেষণা সহযোগী জাহিদ ইবনে জালাল ও সাদাত আনোয়ার।