০৬:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

সুষ্ঠু নির্বাচনের বড় বাধা ‘বিশৃঙ্খলা’

দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ‘বিশৃঙ্খলা’ সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। বড় একটি দল বা জোট বিগত বর্জন করার কারণে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ হলেও সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অর্জিত আস্থা ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি আব্দুর রউফের মতে, বিশৃঙ্খলা দূর করতে না পারলে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু করা যাবে না। আবার সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে আরেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের দায়িত্ব শুধু নির্বাচন কমিশনের এবার নয়। রাজনৈতিক দলেরও বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত সংলাপে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব মন্তব্য করেন সাবেক দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে মঙ্গলবার শেষ হলো একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত ইসি সংলাপ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে প্রায় তিন মাসব্যাপী চলা ধারাবাহিক সংলাপে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক দল, পর্যবেক্ষক সংস্থা, নারী নেত্রীদের কাছ থেকে আসা প্রস্তাবগুলো নিয়েই বিশেষজ্ঞদের মত নেয়া হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সকাল ১১টায় এ সংলাপ শুরু হয়। প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টাব্যাপী সংলাপে সাবেক ‍দুই সিইসি, ৬ জন কমিশনারসহ ১৫জন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। এসময়ে চারজন নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই লিখিত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত শর্ত বাতিল, সেনা মোতায়নের পক্ষে-বিপক্ষে মত, বিদ্যমান সীমানা ভোট, ভোটের সময় ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত করা, ভোটে গোলযোগ হলে ভোটকেন্দ্র বাতিল ছাড়াও প্রিজাইডিং অফিসারদের অন্যান্য নির্দেশনা স্পষ্টকরণসহ বেশকিছু প্রস্তাব দেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কিছুধারা সংশোধনের জন্য পৃথকভাবে উপস্থাপন করেছেন সাবেক তিনজন নির্বাচন কমিশনার।

সংলাপ শেষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেছেন, আমাদের দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। এটা ঠিক করতে না পারলে পারমাণবিক শক্তি দিয়েও নির্বাচন সুষ্ঠু করা যাবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটারকেই দায়িত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, কথা হচ্ছে ভোটাররা ভোট দেবেন, ক্ষমতায় যে খুশি যে যাবে। জনগণ হচ্ছে ভোটের মালিক তারাই ভোট চালাবে। ফাইভ স্টার, থ্রি স্টার নিয়ে ভোটের দিন ঘোরার দরকার নেই। এসপি, ডিসি’র দরকার নেই। তৃণমূল পর্যায়ে যদি ভোটাররা ভোট পরিচালনা করেন, তারাই যদি আইনশৃঙ্খলার ভার নেন তাহলে কোনও সমস্যা থাকবে না। এজন্য ৫শ’ জন ভোটারের একটি স্থায়ী ভোটকেন্দ্র গড়ে দিতে হবে। সরকারি কর্মচারী দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

সাবেক সিইসি এটিএম হুদা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের একার বিষয় নয়। এখানে অনেক প্লেয়ার আছে। এখানে রাজনৈতিক দলেরও বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। গত নির্বাচনে বয়কটের কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য এবার রাজনৈতিক দলের সজাগ থাকতে হবে। সবাই যেন নির্বাচন করেন। সেই মনবৃত্তি সকলের মধ্যে থাকতে হবে। নির্বাচনে সব পার্টির আসার জন্য ইসির চ্যালেঞ্জ হচ্ছে-তাদের কাজকর্মে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। এমন কিছু করবেন না যেন আস্থা ক্ষুণ্ন হয়। কিছুটা আস্থা তৈরি হয়েছে এটাকে ধারণ করতে হবে।

ট্যাগ :

সুষ্ঠু নির্বাচনের বড় বাধা ‘বিশৃঙ্খলা’

প্রকাশিত : ০১:০৭:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ‘বিশৃঙ্খলা’ সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। বড় একটি দল বা জোট বিগত বর্জন করার কারণে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ হলেও সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অর্জিত আস্থা ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি আব্দুর রউফের মতে, বিশৃঙ্খলা দূর করতে না পারলে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু করা যাবে না। আবার সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে আরেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের দায়িত্ব শুধু নির্বাচন কমিশনের এবার নয়। রাজনৈতিক দলেরও বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত সংলাপে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব মন্তব্য করেন সাবেক দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে মঙ্গলবার শেষ হলো একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত ইসি সংলাপ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে প্রায় তিন মাসব্যাপী চলা ধারাবাহিক সংলাপে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক দল, পর্যবেক্ষক সংস্থা, নারী নেত্রীদের কাছ থেকে আসা প্রস্তাবগুলো নিয়েই বিশেষজ্ঞদের মত নেয়া হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সকাল ১১টায় এ সংলাপ শুরু হয়। প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টাব্যাপী সংলাপে সাবেক ‍দুই সিইসি, ৬ জন কমিশনারসহ ১৫জন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। এসময়ে চারজন নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই লিখিত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত শর্ত বাতিল, সেনা মোতায়নের পক্ষে-বিপক্ষে মত, বিদ্যমান সীমানা ভোট, ভোটের সময় ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত করা, ভোটে গোলযোগ হলে ভোটকেন্দ্র বাতিল ছাড়াও প্রিজাইডিং অফিসারদের অন্যান্য নির্দেশনা স্পষ্টকরণসহ বেশকিছু প্রস্তাব দেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কিছুধারা সংশোধনের জন্য পৃথকভাবে উপস্থাপন করেছেন সাবেক তিনজন নির্বাচন কমিশনার।

সংলাপ শেষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেছেন, আমাদের দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। এটা ঠিক করতে না পারলে পারমাণবিক শক্তি দিয়েও নির্বাচন সুষ্ঠু করা যাবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটারকেই দায়িত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, কথা হচ্ছে ভোটাররা ভোট দেবেন, ক্ষমতায় যে খুশি যে যাবে। জনগণ হচ্ছে ভোটের মালিক তারাই ভোট চালাবে। ফাইভ স্টার, থ্রি স্টার নিয়ে ভোটের দিন ঘোরার দরকার নেই। এসপি, ডিসি’র দরকার নেই। তৃণমূল পর্যায়ে যদি ভোটাররা ভোট পরিচালনা করেন, তারাই যদি আইনশৃঙ্খলার ভার নেন তাহলে কোনও সমস্যা থাকবে না। এজন্য ৫শ’ জন ভোটারের একটি স্থায়ী ভোটকেন্দ্র গড়ে দিতে হবে। সরকারি কর্মচারী দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

সাবেক সিইসি এটিএম হুদা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের একার বিষয় নয়। এখানে অনেক প্লেয়ার আছে। এখানে রাজনৈতিক দলেরও বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। গত নির্বাচনে বয়কটের কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য এবার রাজনৈতিক দলের সজাগ থাকতে হবে। সবাই যেন নির্বাচন করেন। সেই মনবৃত্তি সকলের মধ্যে থাকতে হবে। নির্বাচনে সব পার্টির আসার জন্য ইসির চ্যালেঞ্জ হচ্ছে-তাদের কাজকর্মে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। এমন কিছু করবেন না যেন আস্থা ক্ষুণ্ন হয়। কিছুটা আস্থা তৈরি হয়েছে এটাকে ধারণ করতে হবে।