০৭:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত : সিইসি

নির্বাচনের সময় পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো. নূরুল হুদা এ কথা বলেন।

বর্তমান আইনী কাঠামোতে সেনা মোতায়েন কোন প্রক্রিয়ায় হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘সেনা নিয়োগ কীভাবে হবে, তাদের দায়িত্ব কী হবে তা নির্ধারণ করবে ইসি। এ বিষয়ে বলার সময় এখনও আসেনি। নির্বাচন আসুক তখন পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যাবে। তবে বিদ্যমান কাঠামোতেই সেনা মোতায়েন করা যাবে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে অংশীজনদের সাথে সংলাপের উদ্যোগ নেয় ইসি। এরই অংশ হিসেবে ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, ২৪ আগস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০টি রাজনৈতিক দল, ২২ অক্টোবর নির্বাচন পর্যবেক্ষক, ২৩ অক্টোবর নারীনেত্রী এবং ২৪ অক্টোবর নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় তিনমাস ব্যাপী সংলাপ গত মঙ্গলবার শেষ হয়। সংলাপের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজ কমিশনের সম্মেলন কক্ষে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংলাপের শুরুতে সিইসি বলেন, সংলাপের মধ্য দিয়ে মূল্যবান ও দিকনির্দেশনামূলক ৪ শতাধিক সুপারিশ ও পরামর্শ পাওয়া গেছে। আগামী নভেম্বরে এসব সুপারিশ ও পরামর্শ সংকলন করে ডিসেম্বরে বই আকারে প্রকাশ করা হবে।

তিনি বলেন, গত তিন মাস ব্যাপি রাজনৈতিক দলসহ ৪৫টি সংগঠনের সঙ্গে কমিশন সংলাপ করেছে। সংলাপে যেসব সুপারিশ এসেছে এগুলো তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- সাংবিধানিক সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ও নির্বাচনকালে সংসদ ভেঙ্গে দেয়া। আইন বিষয়ক যেমন আরপিও সংশোধন, সীমানা নির্ধারণ আইন তৈরি করা। তৃতীয়ত নির্বাচন কমিশনের করণীয় বিষয় যেমন নির্বাচনে সেনা নিয়োগ, আইনের সঠিক প্রয়োগ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। কমিশন বসে এগুলো এসেসমেন্ট করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সংলাপে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব এসেছে, ইসি এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেবে কী না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, কমিশন এমন উদ্যোগ নেবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ উদ্যোগ নেয়ার কোনো ইচ্ছা ইসির নেই। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান হওয়া উচিত। এ উদ্যোগে আমরা যেতে চাই না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে কোন কর্মকর্তা আইন অমান্য করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। অর্থাৎ কারো অপরাধ প্রমাণ হলে তাদের শাস্তি পেতে হবে।

নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, ‘এটা সাংবিধানিক বিষয়। সংবিধান পরিবর্তন করা কমিশনের পক্ষে সম্ভব না। এটা রাজনৈতিক বিষয়। এদেশেতো বহুমুখী নির্বাচন হয়েছে। যখন যে সরকার এসে যে নির্বাচন করার দায়িত্ব কমিশনকে দিয়েছে, সেভাবে নির্বাচন করেছে। অর্থাৎ সংবিধানের আলোকে সরকার যে আইন তৈরি করে দেয়, ইসি সেভাবে নির্বাচন করে। সেই আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সাংবিধান মেনে ইসিকে চলতে হয়। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সংবিধানে যেভাবে আছে, সেভাবে নির্বাচন হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আশা করি বিএনপিসহ সকল দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কমিশন আন্তরিকভাবে চায় বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে আসুক। কারণ বিএনপি একটি বড় দল। আমরা বিশ্বাস করি, আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের কর্মকর্তারাও নির্বাচনে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য এবং তারা তা করে আসছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের সহযোগিতা নেয় ইসি। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন পর্যন্ত ২-৩ মাস সময় লাগে। ওই সময়ে ১২ থেকে ১৩ লাখ জনবল দরকার হয়। এত জনবল স্থায়িভাবে ইসির নেই। নির্বাচন কমিশনের এত জনবল সারাবছর পোষা সম্ভব নয়, দরকারও নেই। তাই নির্বাচনের সময়ে রিকইুজিশন দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারি, সেনা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ দেয়া হয়। তারা নির্বাচনে ইসিকে সহায়তা করে। তাদের উপর ইসির নিয়ন্ত্রণ থাকে ও থাকবে। তিনি আরও বলেন, আরপিওতে একটি অধ্যায় রয়েছে, যেখানে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে শাস্তি দেয়ার বিধান রয়েছে। এই কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে আইনের ব্যতয় হবে সেখানে আইন অনুযায়ি শাস্তির বিধান কার্যকর করা হবে।

ট্যাগ :

পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত : সিইসি

প্রকাশিত : ০৯:০৩:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

নির্বাচনের সময় পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো. নূরুল হুদা এ কথা বলেন।

বর্তমান আইনী কাঠামোতে সেনা মোতায়েন কোন প্রক্রিয়ায় হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘সেনা নিয়োগ কীভাবে হবে, তাদের দায়িত্ব কী হবে তা নির্ধারণ করবে ইসি। এ বিষয়ে বলার সময় এখনও আসেনি। নির্বাচন আসুক তখন পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যাবে। তবে বিদ্যমান কাঠামোতেই সেনা মোতায়েন করা যাবে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে অংশীজনদের সাথে সংলাপের উদ্যোগ নেয় ইসি। এরই অংশ হিসেবে ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, ২৪ আগস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০টি রাজনৈতিক দল, ২২ অক্টোবর নির্বাচন পর্যবেক্ষক, ২৩ অক্টোবর নারীনেত্রী এবং ২৪ অক্টোবর নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় তিনমাস ব্যাপী সংলাপ গত মঙ্গলবার শেষ হয়। সংলাপের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজ কমিশনের সম্মেলন কক্ষে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংলাপের শুরুতে সিইসি বলেন, সংলাপের মধ্য দিয়ে মূল্যবান ও দিকনির্দেশনামূলক ৪ শতাধিক সুপারিশ ও পরামর্শ পাওয়া গেছে। আগামী নভেম্বরে এসব সুপারিশ ও পরামর্শ সংকলন করে ডিসেম্বরে বই আকারে প্রকাশ করা হবে।

তিনি বলেন, গত তিন মাস ব্যাপি রাজনৈতিক দলসহ ৪৫টি সংগঠনের সঙ্গে কমিশন সংলাপ করেছে। সংলাপে যেসব সুপারিশ এসেছে এগুলো তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- সাংবিধানিক সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ও নির্বাচনকালে সংসদ ভেঙ্গে দেয়া। আইন বিষয়ক যেমন আরপিও সংশোধন, সীমানা নির্ধারণ আইন তৈরি করা। তৃতীয়ত নির্বাচন কমিশনের করণীয় বিষয় যেমন নির্বাচনে সেনা নিয়োগ, আইনের সঠিক প্রয়োগ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। কমিশন বসে এগুলো এসেসমেন্ট করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সংলাপে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব এসেছে, ইসি এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেবে কী না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, কমিশন এমন উদ্যোগ নেবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ উদ্যোগ নেয়ার কোনো ইচ্ছা ইসির নেই। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান হওয়া উচিত। এ উদ্যোগে আমরা যেতে চাই না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে কোন কর্মকর্তা আইন অমান্য করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। অর্থাৎ কারো অপরাধ প্রমাণ হলে তাদের শাস্তি পেতে হবে।

নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, ‘এটা সাংবিধানিক বিষয়। সংবিধান পরিবর্তন করা কমিশনের পক্ষে সম্ভব না। এটা রাজনৈতিক বিষয়। এদেশেতো বহুমুখী নির্বাচন হয়েছে। যখন যে সরকার এসে যে নির্বাচন করার দায়িত্ব কমিশনকে দিয়েছে, সেভাবে নির্বাচন করেছে। অর্থাৎ সংবিধানের আলোকে সরকার যে আইন তৈরি করে দেয়, ইসি সেভাবে নির্বাচন করে। সেই আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সাংবিধান মেনে ইসিকে চলতে হয়। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সংবিধানে যেভাবে আছে, সেভাবে নির্বাচন হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আশা করি বিএনপিসহ সকল দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কমিশন আন্তরিকভাবে চায় বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে আসুক। কারণ বিএনপি একটি বড় দল। আমরা বিশ্বাস করি, আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের কর্মকর্তারাও নির্বাচনে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য এবং তারা তা করে আসছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের সহযোগিতা নেয় ইসি। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন পর্যন্ত ২-৩ মাস সময় লাগে। ওই সময়ে ১২ থেকে ১৩ লাখ জনবল দরকার হয়। এত জনবল স্থায়িভাবে ইসির নেই। নির্বাচন কমিশনের এত জনবল সারাবছর পোষা সম্ভব নয়, দরকারও নেই। তাই নির্বাচনের সময়ে রিকইুজিশন দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারি, সেনা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ দেয়া হয়। তারা নির্বাচনে ইসিকে সহায়তা করে। তাদের উপর ইসির নিয়ন্ত্রণ থাকে ও থাকবে। তিনি আরও বলেন, আরপিওতে একটি অধ্যায় রয়েছে, যেখানে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে শাস্তি দেয়ার বিধান রয়েছে। এই কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে আইনের ব্যতয় হবে সেখানে আইন অনুযায়ি শাস্তির বিধান কার্যকর করা হবে।