০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

মেধার সাথে কোটার কোনো বিরোধ নেই

মো. সাজ্জাদ হোসেন

ইদানিং সরকারি চাকুরিতে কোটা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম, প্রচার মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি ও প্রচারণা বেশ জোরেসুরে চলছে। আর সবারই আঁড়চোখা দৃষ্টি একটা বিষয়ের দিকেই, সেটা হলো ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা’। এ ব্যাপারে তাদের খুঁড়া যুক্তি হলো-‘এটা বাতিল করতে হবে, না হয় মেধাবীরা পেছনে পড়ে যাচ্ছে, গোবর-গবেটরা চাকুরিতে নিয়োগ পাচ্ছে, প্রশাসন মেধাশুন্য হয়ে পড়ছে’। ইনিয়ে-বিনিয়ে এসব কথা বলতেই যেন তারা ব্যতিব্যস্ত। কিংবা এমনও হতে পারে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বিতর্কিত কথা বলতে পারলে হয়তো তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর তালিকায় নাম লেখানো সহজ হবে, তাই তারা কোটা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রথমে

মুক্তিযোদ্ধা কোটার উপর সওয়ার হচ্ছেন। আবার অনেক ‘চেতনা ব্যবসায়ী’ তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাকেও ইদানিং এই কোটার বিরুদ্ধে বলে প্রতিপক্ষের কাছে উদারতা দেখিয়ে ওই পক্ষের বাহবা কুঁড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামতে দেখছি। সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ব্যাপারে অত্যন্ত সংবেদনশীল, সেখানে সরকার দলীয় কিছু সংসদ সদস্যের ইদানিং সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই কোটার বিরুদ্ধে বক্তৃতা করতে দেখছি।

তারা আবার মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব বর্তমান সরকারকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন, কোটা নয়, মেধাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’, মেধার বিকল্প কখনো কোটা হতে পারে না’। এ প্রসঙ্গে কিছু জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন দেখেও আমি বিষ্মিত হয়েছি। একজন সচেতন সাংবাদিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যখন এসব কথা লেখেন, তখন হতাশ হওয়া ছাড়া কিইবা করার আছে। তিনি বা তারা কি মেধা-কোটা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেন না? না, আমি অন্তত এটা বিশ্বাস করতে চাই না। তাদের জ্ঞানের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। তাহলে কি বলবো-তারা জেনে বুঝে মানুষের মগজ ধোলাইয়ের কাজে নেমেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে বিসিএস-এর মুখোমুখি হতে হয় না। কিন্তু সম্মানিত শিক্ষক মন্ডলীতো এটা নিশ্চয়ই জানেন যে, বিসিএস’র কোন পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কার্যকর হয়। সাধারণ অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের সাথে প্রথমে প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় পাশ করে তারপর লিখিত পরীক্ষায় অন্যান্য মেধাবীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার পর মৌখিক পরীক্ষার সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এরপরও কি সম্মানিতরা বলবেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মেধাবী নয়, এরা সবাই ‘গোবর-গবেট’, নিশ্চয়ই না। সম্প্রতি অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন যে, ‘ইতোমধ্যে বহু ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুযোগ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকেই কলঙ্কিত করায় এটার যৌক্তিকতা হারিয়েছে। তাই মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবাবের স্বচ্ছলতার জন্য তাদের ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার উদ্যোগী হতে পারে। কিন্তু কোটার নামে অযোগ্য, কম মেধাসম্পন্নদের সরকারি চাকরিতে অধিক সুযোগবৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর এই ধরনের পদক্ষেপে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে অন্তরায়ও বটে।’

লেখক : সভাপতি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান

ট্যাগ :

মেধার সাথে কোটার কোনো বিরোধ নেই

প্রকাশিত : ০৯:৩২:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

মো. সাজ্জাদ হোসেন

ইদানিং সরকারি চাকুরিতে কোটা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম, প্রচার মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি ও প্রচারণা বেশ জোরেসুরে চলছে। আর সবারই আঁড়চোখা দৃষ্টি একটা বিষয়ের দিকেই, সেটা হলো ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা’। এ ব্যাপারে তাদের খুঁড়া যুক্তি হলো-‘এটা বাতিল করতে হবে, না হয় মেধাবীরা পেছনে পড়ে যাচ্ছে, গোবর-গবেটরা চাকুরিতে নিয়োগ পাচ্ছে, প্রশাসন মেধাশুন্য হয়ে পড়ছে’। ইনিয়ে-বিনিয়ে এসব কথা বলতেই যেন তারা ব্যতিব্যস্ত। কিংবা এমনও হতে পারে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বিতর্কিত কথা বলতে পারলে হয়তো তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর তালিকায় নাম লেখানো সহজ হবে, তাই তারা কোটা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রথমে

মুক্তিযোদ্ধা কোটার উপর সওয়ার হচ্ছেন। আবার অনেক ‘চেতনা ব্যবসায়ী’ তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাকেও ইদানিং এই কোটার বিরুদ্ধে বলে প্রতিপক্ষের কাছে উদারতা দেখিয়ে ওই পক্ষের বাহবা কুঁড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামতে দেখছি। সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ব্যাপারে অত্যন্ত সংবেদনশীল, সেখানে সরকার দলীয় কিছু সংসদ সদস্যের ইদানিং সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই কোটার বিরুদ্ধে বক্তৃতা করতে দেখছি।

তারা আবার মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব বর্তমান সরকারকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন, কোটা নয়, মেধাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’, মেধার বিকল্প কখনো কোটা হতে পারে না’। এ প্রসঙ্গে কিছু জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন দেখেও আমি বিষ্মিত হয়েছি। একজন সচেতন সাংবাদিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যখন এসব কথা লেখেন, তখন হতাশ হওয়া ছাড়া কিইবা করার আছে। তিনি বা তারা কি মেধা-কোটা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেন না? না, আমি অন্তত এটা বিশ্বাস করতে চাই না। তাদের জ্ঞানের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। তাহলে কি বলবো-তারা জেনে বুঝে মানুষের মগজ ধোলাইয়ের কাজে নেমেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে বিসিএস-এর মুখোমুখি হতে হয় না। কিন্তু সম্মানিত শিক্ষক মন্ডলীতো এটা নিশ্চয়ই জানেন যে, বিসিএস’র কোন পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কার্যকর হয়। সাধারণ অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের সাথে প্রথমে প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় পাশ করে তারপর লিখিত পরীক্ষায় অন্যান্য মেধাবীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার পর মৌখিক পরীক্ষার সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এরপরও কি সম্মানিতরা বলবেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মেধাবী নয়, এরা সবাই ‘গোবর-গবেট’, নিশ্চয়ই না। সম্প্রতি অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন যে, ‘ইতোমধ্যে বহু ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুযোগ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকেই কলঙ্কিত করায় এটার যৌক্তিকতা হারিয়েছে। তাই মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবাবের স্বচ্ছলতার জন্য তাদের ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার উদ্যোগী হতে পারে। কিন্তু কোটার নামে অযোগ্য, কম মেধাসম্পন্নদের সরকারি চাকরিতে অধিক সুযোগবৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর এই ধরনের পদক্ষেপে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে অন্তরায়ও বটে।’

লেখক : সভাপতি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান