০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

ব্যবসায়ীকে এক্রিডিটেশন কার্ড, ফেসবুকে তোলপাড়

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর হেলেনাকে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে তথ্য অধিদফতরের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেয়ায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। সাংবাদিক না হয়েও তার অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড প্রাপ্তি অনেককেই অবাক করেছে। কার্ড পাওয়ার পর ফেসবুকে হেলেনা নিজেই জানান, এই কার্ডের কার্যকারিতা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। এরপরই সমালোচনার ঝড় ওঠে ফেসবুকে।

এই কার্ডের কার্যকারিতা সম্পর্কে না জেনে এবং সাংবাদিক না হয়েও এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্ড তিনি কিভাবে পেলেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ৮ নভেম্বর বুধবার পোস্ট করা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ছিল এমনÑ ‘সময়ের ও ব্যস্ততার কারণে দীর্ঘ আট মাস পর এসে কার্ড নিজ হাতে তুলে নিলাম। নিজে না এলে আসলে কোনও কাজ হয় না, সেটাই আজ প্রমাণিত হলো। তবে এখনও এই কার্ডের কার্যকারিতা সম্পর্কে আমি অবগত নই। কোনও এক শুভাকাক্সক্ষী করতে বললো, তাই করলাম। পত্রিকায় প্রতিনিয়ত লেখালেখি করি, বই লিখি। কখনও জানি না কোথায় কী লাগে। কোনটার কী কাজ। আমি ব্যবসায়ী, ব্যবসার কাজ ছাড়া কিছুই বুঝি না।’ এরপর সমালোচনার মুখে পড়ে ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার পরে হেলেনা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে পাওয়া অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডের ছবিসহ পোস্টটি সরিয়ে ফেলেন। কিন্তু তার আগে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন থ্রেডে এখনও চলছে সমলোচনার ঝড়।

‘আলোচনায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড’ এ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে একটি অনলাইন গণমাধ্যম। শুক্রবার ওই সংবাদের লিংক ফেসবুকে শেয়ার করেন হেলেনা। তার ওই পোষ্টে শহিদুল ইসলাম শ্যামল নামের এক সাংবাদিক মন্তব্য করেন, ‘এই কার্ডের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা না জেনে আবেদন করা আপনার ঠিক হয়নি। অনেক পেশাদার সাংবাদিক আবেদন করেও এই কার্ড পাচ্ছেন না। আপনি যেভাবেই এটা ব্যবস্থা করেন না কেন একজন ব্যবসায়ীর হাতে এই কার্ড থাকা মানে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাপার। আপনি সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে। পরিচয় বা টাকার জোরে অনেকেই এই কার্ড নিয়ে থাকে। তবে এটা নিঃসন্দেহে একটা দুর্নীতি।’

বশির আহমেদ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, ‘টাকা দিলে যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনদ পাওয়া যায়। তেমনি হেলেনা জাহাঙ্গীর ও সব পদ পদবী পেয়ে যাচ্ছেন এই আর কি।’

এদিকে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়ার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে বলে জানালেন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফএউজে) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। একসময় তিনি এই কার্ড দেওয়ার কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সারদের এই কার্ড দিতে কী মানতে হবে নীতিমালায় তাও আছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত তথ্য অধিদফতরের পিআইও’র সভাপতিত্বে যে কমিটি হয় তাতে একজন সাংবাদিক প্রতিনিধিও থাকেন। সেখানে ক্যাটাগরিক্যালি বলা আছে কোন প্রতিষ্ঠান কিসের ভিত্তিতে কয়টি কার্ড পাবে। প্রশ্ন হলো, সেই কমিটি এই ব্যবসায়ীকে কার্ড দেওয়ার যোগ্য মনে করলেন কেন? তিনি তো ব্যবসায়ী। হয়তো এখানে তথ্য বিভ্রান্তি আছে।’

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল আরও বলেন, ‘দেখা যায় গণমাধ্যমের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজনও এই কার্ড নেন। পেশাগত কাজে যারা সরকারি প্রতিষ্ঠানে যাবেন এটি তাদের জন্য। ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিইও কিংবা সার্কুলেশন ম্যানেজার সাংবাদিক নন, কিন্তু এটি তাদেরও দেওয়া হচ্ছে। কার্ড দেওয়ার সময় এ দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত ছিল কমিটির।’ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ফেসবুক কমেন্টে লিখেছেন, ‘অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পাওয়ার জন্য ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকের নমুনা যদি এমন হয়, সত্যি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি হিসেবে আমি লজ্জিত।’

হেলেনা জাহাঙ্গীরের কার্ড প্রাপ্তিতে মিডিয়া পাড়ায়ও চলছে ব্যাপক সমালোচনা। অনেকেই বলছেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের মতো ঘরোয়া অনলাইন খুলে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে একটি কার্ড জোগাড় করে সচিবালয়ে ঢোকার একটা লাইসেন্স পেয়ে যায়। আর এই লাইসেন্সের জোরে সচিবালয়ে গিয়ে মন্ত্রী-সচিবদের সাথে হাসিমাখা সেলফি তুলে ফেইসবুকে পোষ্ট করে সস্তা বাহাবা নেয়। তারা সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করে ব্যবসাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও ফায়দা লুটে নেয়। আর কয়েক দশক সাংবাদিকতা করেও অনেক সিনিয়র সাংবাদিক এক্রিডিটেশন কার্ড পেতে গেলে নানামুখী হয়রানী ও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। এ ধরনের হাসিখুশি ডটকম মার্কা অনলাইন মাংবাদিকরা সাংবাদিকতাকে পণ্য হিসেবে হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা অচিরেই বন্ধ করা না গেলে সাংবাদিকতার মান-মর্যাদা আরো তলানীতে গিয়ে ঠেকবে। শুধু এক হেলেনা নয় এ ধরনের শত হেলনা যারা সাংবাদিকতাকে স্বার্থের জন্য ব্যবহার করছে তাদের হাত থেকে অবিলম্বে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সরবরাহ করা এক্রিডিটেশন কার্ড কেড়ে নেয়োর দাবি পেশাদার সাংবাদিকদের। পাশাপাশি এদের জন্য সচিবালয়ের প্রবেশ দ্বারও বন্ধের দাবি উঠেছে সাংবাদিক মহলে।

ট্যাগ :

ব্যবসায়ীকে এক্রিডিটেশন কার্ড, ফেসবুকে তোলপাড়

প্রকাশিত : ০৮:২৯:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর হেলেনাকে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে তথ্য অধিদফতরের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেয়ায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। সাংবাদিক না হয়েও তার অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড প্রাপ্তি অনেককেই অবাক করেছে। কার্ড পাওয়ার পর ফেসবুকে হেলেনা নিজেই জানান, এই কার্ডের কার্যকারিতা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। এরপরই সমালোচনার ঝড় ওঠে ফেসবুকে।

এই কার্ডের কার্যকারিতা সম্পর্কে না জেনে এবং সাংবাদিক না হয়েও এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্ড তিনি কিভাবে পেলেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ৮ নভেম্বর বুধবার পোস্ট করা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ছিল এমনÑ ‘সময়ের ও ব্যস্ততার কারণে দীর্ঘ আট মাস পর এসে কার্ড নিজ হাতে তুলে নিলাম। নিজে না এলে আসলে কোনও কাজ হয় না, সেটাই আজ প্রমাণিত হলো। তবে এখনও এই কার্ডের কার্যকারিতা সম্পর্কে আমি অবগত নই। কোনও এক শুভাকাক্সক্ষী করতে বললো, তাই করলাম। পত্রিকায় প্রতিনিয়ত লেখালেখি করি, বই লিখি। কখনও জানি না কোথায় কী লাগে। কোনটার কী কাজ। আমি ব্যবসায়ী, ব্যবসার কাজ ছাড়া কিছুই বুঝি না।’ এরপর সমালোচনার মুখে পড়ে ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার পরে হেলেনা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে পাওয়া অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডের ছবিসহ পোস্টটি সরিয়ে ফেলেন। কিন্তু তার আগে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন থ্রেডে এখনও চলছে সমলোচনার ঝড়।

‘আলোচনায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড’ এ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে একটি অনলাইন গণমাধ্যম। শুক্রবার ওই সংবাদের লিংক ফেসবুকে শেয়ার করেন হেলেনা। তার ওই পোষ্টে শহিদুল ইসলাম শ্যামল নামের এক সাংবাদিক মন্তব্য করেন, ‘এই কার্ডের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা না জেনে আবেদন করা আপনার ঠিক হয়নি। অনেক পেশাদার সাংবাদিক আবেদন করেও এই কার্ড পাচ্ছেন না। আপনি যেভাবেই এটা ব্যবস্থা করেন না কেন একজন ব্যবসায়ীর হাতে এই কার্ড থাকা মানে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাপার। আপনি সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে। পরিচয় বা টাকার জোরে অনেকেই এই কার্ড নিয়ে থাকে। তবে এটা নিঃসন্দেহে একটা দুর্নীতি।’

বশির আহমেদ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, ‘টাকা দিলে যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনদ পাওয়া যায়। তেমনি হেলেনা জাহাঙ্গীর ও সব পদ পদবী পেয়ে যাচ্ছেন এই আর কি।’

এদিকে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়ার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে বলে জানালেন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফএউজে) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। একসময় তিনি এই কার্ড দেওয়ার কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সারদের এই কার্ড দিতে কী মানতে হবে নীতিমালায় তাও আছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত তথ্য অধিদফতরের পিআইও’র সভাপতিত্বে যে কমিটি হয় তাতে একজন সাংবাদিক প্রতিনিধিও থাকেন। সেখানে ক্যাটাগরিক্যালি বলা আছে কোন প্রতিষ্ঠান কিসের ভিত্তিতে কয়টি কার্ড পাবে। প্রশ্ন হলো, সেই কমিটি এই ব্যবসায়ীকে কার্ড দেওয়ার যোগ্য মনে করলেন কেন? তিনি তো ব্যবসায়ী। হয়তো এখানে তথ্য বিভ্রান্তি আছে।’

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল আরও বলেন, ‘দেখা যায় গণমাধ্যমের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজনও এই কার্ড নেন। পেশাগত কাজে যারা সরকারি প্রতিষ্ঠানে যাবেন এটি তাদের জন্য। ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিইও কিংবা সার্কুলেশন ম্যানেজার সাংবাদিক নন, কিন্তু এটি তাদেরও দেওয়া হচ্ছে। কার্ড দেওয়ার সময় এ দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত ছিল কমিটির।’ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ফেসবুক কমেন্টে লিখেছেন, ‘অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পাওয়ার জন্য ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকের নমুনা যদি এমন হয়, সত্যি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি হিসেবে আমি লজ্জিত।’

হেলেনা জাহাঙ্গীরের কার্ড প্রাপ্তিতে মিডিয়া পাড়ায়ও চলছে ব্যাপক সমালোচনা। অনেকেই বলছেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের মতো ঘরোয়া অনলাইন খুলে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে একটি কার্ড জোগাড় করে সচিবালয়ে ঢোকার একটা লাইসেন্স পেয়ে যায়। আর এই লাইসেন্সের জোরে সচিবালয়ে গিয়ে মন্ত্রী-সচিবদের সাথে হাসিমাখা সেলফি তুলে ফেইসবুকে পোষ্ট করে সস্তা বাহাবা নেয়। তারা সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করে ব্যবসাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও ফায়দা লুটে নেয়। আর কয়েক দশক সাংবাদিকতা করেও অনেক সিনিয়র সাংবাদিক এক্রিডিটেশন কার্ড পেতে গেলে নানামুখী হয়রানী ও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। এ ধরনের হাসিখুশি ডটকম মার্কা অনলাইন মাংবাদিকরা সাংবাদিকতাকে পণ্য হিসেবে হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা অচিরেই বন্ধ করা না গেলে সাংবাদিকতার মান-মর্যাদা আরো তলানীতে গিয়ে ঠেকবে। শুধু এক হেলেনা নয় এ ধরনের শত হেলনা যারা সাংবাদিকতাকে স্বার্থের জন্য ব্যবহার করছে তাদের হাত থেকে অবিলম্বে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সরবরাহ করা এক্রিডিটেশন কার্ড কেড়ে নেয়োর দাবি পেশাদার সাংবাদিকদের। পাশাপাশি এদের জন্য সচিবালয়ের প্রবেশ দ্বারও বন্ধের দাবি উঠেছে সাংবাদিক মহলে।