০৬:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু

সংঘাতের শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পর্যটকদের সুবিধার্থে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পর্যটকবাহী জাহাজটি আজ আবার চালু করা হয়েছে। সকল প্রক্রিয়া শেষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

প্রায় চার শতাধিক পর্যটক নিয়ে সোমবার সকাল ১০টায় দমদমিয়া জেটি ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারী সিন্দাবাদ রওয়ানা করেছে। পরে তারা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পৌঁছায় বলে জানায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী।

তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে চলতি পর্যটন মৌসুমে এই প্রথম কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনে যাত্রা করে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সকালে যখন সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়ে তখন ওই জাহাজে করে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সেন্টমার্টিন যায়। পরে জাহাজ যখন টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দিবে তখনও ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবে। ট্যুরিস্ট পুলিশের এই দায়িত্ব পর্যটন মৌসুম পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

অন্যান্য বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস বাংলাদেশে পর্যটন মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত। অন্যান্য বছর পহেলা অক্টোবর থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ছয় মাস জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয় প্রশাসন। এবারও ১ অক্টোবর থেকে জাহাজ চলাচলের সার্টিফিকেট আনা হলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে জাহাজ চালাতে পারেনি ট্যুর অপারেটরগুলো।

কিন্তু গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের জঙ্গি সেনাদের অব্যাহত গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এখন সেই নিষেধাজ্ঞা তোলে নিয়ে এই পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে অনুমতি দিয়েছে নৌ-মন্ত্রণালয়। নৌ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, সম্প্রতি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে একটি পত্র এসেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে। মিয়ানমার নাইক্ষ্যংদিয়া দিয়ে জাহাজ অতিক্রমের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পয়লা অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসের এ পর্যটন মৌসুমের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল কয়েক লাখ মানুষ। এ ছাড়া পর্যটকদের ওপর ভরসা করেই সেন্টমার্টিনে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল মোটেল এবং রিসোর্ট।

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে টেকনাফ থেকে অন্তত পাঁচ হাজার পর্যটক নিয়ে ছেড়ে যায় ছয়টি জাহাজ। আবার জাহাজগুলো পর্যটকদের নিয়ে বিকেল ৩টার মধ্যে টেকনাফের উদ্দেশে সেন্টমার্টিন ছেড়ে আসে।

সর্বশেষ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক জাহাজ চলাচলে অনুমতি দিয়েছেন। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের অভিজাত জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ টেকনাফের ব্যবস্থাপক মো. শাহ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বৈরী আবহাওয়া ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন অজুহাতে প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় পর্যটক মৌসুম শুরু হলেও জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় এই রুটে পর্যটকবাহী চলাচলে অনুমতি দিয়েছে নৌ-মন্ত্রণালয়। নৌ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসনও অনুমতি দিয়েছে। এতে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচলে আর কোনো বাধা রইল না।

ট্যাগ :

টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু

প্রকাশিত : ০৩:০৪:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

সংঘাতের শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পর্যটকদের সুবিধার্থে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পর্যটকবাহী জাহাজটি আজ আবার চালু করা হয়েছে। সকল প্রক্রিয়া শেষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

প্রায় চার শতাধিক পর্যটক নিয়ে সোমবার সকাল ১০টায় দমদমিয়া জেটি ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারী সিন্দাবাদ রওয়ানা করেছে। পরে তারা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পৌঁছায় বলে জানায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী।

তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে চলতি পর্যটন মৌসুমে এই প্রথম কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনে যাত্রা করে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সকালে যখন সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়ে তখন ওই জাহাজে করে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সেন্টমার্টিন যায়। পরে জাহাজ যখন টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দিবে তখনও ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবে। ট্যুরিস্ট পুলিশের এই দায়িত্ব পর্যটন মৌসুম পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

অন্যান্য বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস বাংলাদেশে পর্যটন মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত। অন্যান্য বছর পহেলা অক্টোবর থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ছয় মাস জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয় প্রশাসন। এবারও ১ অক্টোবর থেকে জাহাজ চলাচলের সার্টিফিকেট আনা হলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে জাহাজ চালাতে পারেনি ট্যুর অপারেটরগুলো।

কিন্তু গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের জঙ্গি সেনাদের অব্যাহত গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এখন সেই নিষেধাজ্ঞা তোলে নিয়ে এই পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে অনুমতি দিয়েছে নৌ-মন্ত্রণালয়। নৌ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, সম্প্রতি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে একটি পত্র এসেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে। মিয়ানমার নাইক্ষ্যংদিয়া দিয়ে জাহাজ অতিক্রমের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পয়লা অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসের এ পর্যটন মৌসুমের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল কয়েক লাখ মানুষ। এ ছাড়া পর্যটকদের ওপর ভরসা করেই সেন্টমার্টিনে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল মোটেল এবং রিসোর্ট।

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে টেকনাফ থেকে অন্তত পাঁচ হাজার পর্যটক নিয়ে ছেড়ে যায় ছয়টি জাহাজ। আবার জাহাজগুলো পর্যটকদের নিয়ে বিকেল ৩টার মধ্যে টেকনাফের উদ্দেশে সেন্টমার্টিন ছেড়ে আসে।

সর্বশেষ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক জাহাজ চলাচলে অনুমতি দিয়েছেন। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের অভিজাত জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ টেকনাফের ব্যবস্থাপক মো. শাহ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বৈরী আবহাওয়া ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন অজুহাতে প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় পর্যটক মৌসুম শুরু হলেও জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় এই রুটে পর্যটকবাহী চলাচলে অনুমতি দিয়েছে নৌ-মন্ত্রণালয়। নৌ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসনও অনুমতি দিয়েছে। এতে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচলে আর কোনো বাধা রইল না।