০১:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

কে হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বহুল আলোচিত এস কে সিনহা অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। এখন ২২তম প্রধান বিচারপতি কে হচ্ছেন, সেটা নিয়েই এখন সবার আগ্রহ। আপাতত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাই দায়িত্বে থাকছেন। পূর্ণাঙ্গ প্রধান বিচারপতি নিয়োগে কিছুটা সময় লাগতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আরেকজন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমানে যিনি দায়িত্বে আছেন, তিনিই থাকবেন। সেটা এক বছর হলেও উনিই দায়িত্বে থাকবেন। আইনমন্ত্রীর এক বছর-সংক্রান্ত ব্যাখ্যার সঙ্গে ভিন্নমত দিয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ। তিনি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদে যে ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির’ কথা বলা আছে, তার অভাব প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হওয়ার পরে সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালনরত জ্যেষ্ঠতম বিচারক দীর্ঘমেয়াদে পূরণ করতে পারেন না। প্রধান বিচারপতির যেখানে নিজের শপথ নেই, তিনি কী করে অন্য বিচারকদের শপথ দেবেন? তাঁর কথায়, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন এবং সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথবাক্যও পাঠ করান। এরপর সেই প্রধান বিচারপতির পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ দেন। প্রধান বিচারপতি তাঁদের শপথও পড়ান। কবে নিয়োগ পাবেন প্রধান বিচারপতি, সে বিষয়ে নিশ্চিত আভাস দিতে পারেননি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও। তিনি বলেছেন, এটা একান্তভাবেই রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভরশীল। কত দিনের মধ্যে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হবে এ বিষয়ে সংবিধানে নির্দিষ্ট করা কিছু নেই। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর এক মাসের বেশি ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর বিদেশে যান বিচারপতি এস কে সিনহা। ছুটি শেষে ৯ নভেম্বর কানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্রটি জমা দেন তিনি। পরের দিন ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্রটি বঙ্গভবনে এসে পৌঁছায়। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন। সকালে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন। তখন তিনি বলেন, পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পরে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক সেটি মন্ত্রণালয়ে পৌঁছান। গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পরও যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নতুন একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দিচ্ছেন, সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদবলে ততক্ষণ পর্যন্ত অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি থাকবেন মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। তখন তিনি আরও বলেছিলেন, পদ যদি শূন্যও হয়ে থাকে, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রয়োগ করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাজ হবে। আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি রয়েছেন। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রথমে রয়েছেন। অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মো. ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। রাষ্ট্রপতি চাইলে তাঁদের মধ্য থেকে যে কাউকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারেন। দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতির চাকরির বয়স আছে ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। এর আগে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্?হাব মিয়ার আপিল বিভাগে আসা বিলম্বিত হয়েছিল বলে আলোচনা রয়েছে। তাঁর পরে থাকা বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের মেয়াদ আছে ২০২১ সাল পর্যন্ত। তিনি এবার প্রধান বিচারপতি না হলেও জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী তাঁর সুযোগ থাকবে। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এর আগে দুবার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর পরে আছেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। তিনি অবসরে যাবেন ২০২৩ সালে। এরপরে আছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তাঁরও অবসরের তারিখ ২০২৩ সাল। আর বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার অবসরে যাবেন ২০২১ সালে।  একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনে আপিল বিভাগে বিচারক সংখ্যা ১১ নির্দিষ্ট করা আছে। বর্তমানে আছেন ৫ জন। জরুরি নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখন মামলার চাপ আগের থেকে কম। আর বিচারকসংখ্যা কমবেশি হয়। আর ১১ জন হলো সর্বোচ্চ সীমা। সংবিধান কী বলে? সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাঁর দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে ক্ষেত্রমতো অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত বা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করবেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ-সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারক নিয়োগ দেবেন। সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদ বলেছে, প্রধান বিচারপতি যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হবেন, তাঁকে ও অন্যান্য বিচারককে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হবে। আপিল বিভাগ থেকে প্রধান বিচারপতিকে আলাদা করেছে ওই অনুচ্ছেদের ৩ উপদফা। সুতরাং দেশে প্রধান বিচারপতি না থাকলে একটি সাংবিধানিক শূন্যতা চলবে, এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, শুধু একজন প্রধান বিচারপতিকে নিয়েই নয়, সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারক তো সবাই আছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু অবশ্য মনে করেন, ৯৭ অনুচ্ছেদে যে শূন্যতার কারণে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি আছেন, সেটা সাময়িক। তাই প্রধান বিচারপতির নিয়োগ যথাশিগগির হওয়াই প্রত্যাশিত।  এ পর্যন্ত দেশে ২১ জন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে ছয়বার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এক যুগে (২০০৩-২০১৫) এসব ঘটনার মধ্যে বিএনপি সরকারের সময়ে দুটি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনবার ঘটেছে। যদিও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘিত হয়নি। ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এর শুরু। এ পর্যন্ত জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হওয়াদের অন্তত দুজন পরে প্রধান বিচারপতি হন। বাকি দুজনের একজন আপিল বিভাগে আর না বসে অবসরে যান। আরেকজন নীরবে পদত্যাগ করেন। একজন বিচারপতি ফজলুল করিম চারবার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের শিকার হলেও পঞ্চমবারে প্রধান বিচারপতি হন। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা এ বিষয়ে গতকাল যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে মতামত রেখেছেন। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম কোনো মন্তব্যই করতে চাননি। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুও জ্যেষ্ঠতার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এটা রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভর করছে। কোনো জ্যেষ্ঠতার নীতি নেই। বিদায়ী বিচারপতি এস কে সিনহা ছিলেন দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি। ২০০৩ সালে বিএনপি প্রথম জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে। তারা দুজন বিচারপতিকে (এম এম রুহুল আমিন ও ফজলুল করিম) ডিঙিয়ে বিচারপতি কে এম হাসানকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়। পরে অবশ্য ওই দুজন প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ  বলেন, এ বিষয়ে নীতিমালা নেই। তবে জ্যেষ্ঠতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তা বলতে পারব না। কারণ, এর আগেও জ্যেষ্ঠতার ব্যত্যয় ঘটেছে।’ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘অতীতেও জ্যেষ্ঠতার ব্যত্যয় ঘটেছে। সাধারণ আইনজীবীরা মনে করেন, জ্যেষ্ঠতার ব্যত্যয় হওয়া উচিত নয়। একই সঙ্গে এ কথাও বলব যে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সরকারের যদি কোনো নীতি থাকে, তাহলে সরকার সে অনুযায়ী চলবে।’

ট্যাগ :

কে হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত : ১২:৪৮:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বহুল আলোচিত এস কে সিনহা অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। এখন ২২তম প্রধান বিচারপতি কে হচ্ছেন, সেটা নিয়েই এখন সবার আগ্রহ। আপাতত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাই দায়িত্বে থাকছেন। পূর্ণাঙ্গ প্রধান বিচারপতি নিয়োগে কিছুটা সময় লাগতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আরেকজন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমানে যিনি দায়িত্বে আছেন, তিনিই থাকবেন। সেটা এক বছর হলেও উনিই দায়িত্বে থাকবেন। আইনমন্ত্রীর এক বছর-সংক্রান্ত ব্যাখ্যার সঙ্গে ভিন্নমত দিয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ। তিনি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদে যে ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির’ কথা বলা আছে, তার অভাব প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হওয়ার পরে সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালনরত জ্যেষ্ঠতম বিচারক দীর্ঘমেয়াদে পূরণ করতে পারেন না। প্রধান বিচারপতির যেখানে নিজের শপথ নেই, তিনি কী করে অন্য বিচারকদের শপথ দেবেন? তাঁর কথায়, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন এবং সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথবাক্যও পাঠ করান। এরপর সেই প্রধান বিচারপতির পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ দেন। প্রধান বিচারপতি তাঁদের শপথও পড়ান। কবে নিয়োগ পাবেন প্রধান বিচারপতি, সে বিষয়ে নিশ্চিত আভাস দিতে পারেননি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও। তিনি বলেছেন, এটা একান্তভাবেই রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভরশীল। কত দিনের মধ্যে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হবে এ বিষয়ে সংবিধানে নির্দিষ্ট করা কিছু নেই। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর এক মাসের বেশি ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর বিদেশে যান বিচারপতি এস কে সিনহা। ছুটি শেষে ৯ নভেম্বর কানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্রটি জমা দেন তিনি। পরের দিন ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্রটি বঙ্গভবনে এসে পৌঁছায়। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন। সকালে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন। তখন তিনি বলেন, পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পরে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক সেটি মন্ত্রণালয়ে পৌঁছান। গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পরও যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নতুন একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দিচ্ছেন, সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদবলে ততক্ষণ পর্যন্ত অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি থাকবেন মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। তখন তিনি আরও বলেছিলেন, পদ যদি শূন্যও হয়ে থাকে, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রয়োগ করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাজ হবে। আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি রয়েছেন। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রথমে রয়েছেন। অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মো. ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। রাষ্ট্রপতি চাইলে তাঁদের মধ্য থেকে যে কাউকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারেন। দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতির চাকরির বয়স আছে ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। এর আগে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্?হাব মিয়ার আপিল বিভাগে আসা বিলম্বিত হয়েছিল বলে আলোচনা রয়েছে। তাঁর পরে থাকা বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের মেয়াদ আছে ২০২১ সাল পর্যন্ত। তিনি এবার প্রধান বিচারপতি না হলেও জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী তাঁর সুযোগ থাকবে। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এর আগে দুবার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর পরে আছেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। তিনি অবসরে যাবেন ২০২৩ সালে। এরপরে আছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তাঁরও অবসরের তারিখ ২০২৩ সাল। আর বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার অবসরে যাবেন ২০২১ সালে।  একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনে আপিল বিভাগে বিচারক সংখ্যা ১১ নির্দিষ্ট করা আছে। বর্তমানে আছেন ৫ জন। জরুরি নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখন মামলার চাপ আগের থেকে কম। আর বিচারকসংখ্যা কমবেশি হয়। আর ১১ জন হলো সর্বোচ্চ সীমা। সংবিধান কী বলে? সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাঁর দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে ক্ষেত্রমতো অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত বা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করবেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ-সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারক নিয়োগ দেবেন। সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদ বলেছে, প্রধান বিচারপতি যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হবেন, তাঁকে ও অন্যান্য বিচারককে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হবে। আপিল বিভাগ থেকে প্রধান বিচারপতিকে আলাদা করেছে ওই অনুচ্ছেদের ৩ উপদফা। সুতরাং দেশে প্রধান বিচারপতি না থাকলে একটি সাংবিধানিক শূন্যতা চলবে, এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, শুধু একজন প্রধান বিচারপতিকে নিয়েই নয়, সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারক তো সবাই আছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু অবশ্য মনে করেন, ৯৭ অনুচ্ছেদে যে শূন্যতার কারণে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি আছেন, সেটা সাময়িক। তাই প্রধান বিচারপতির নিয়োগ যথাশিগগির হওয়াই প্রত্যাশিত।  এ পর্যন্ত দেশে ২১ জন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে ছয়বার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এক যুগে (২০০৩-২০১৫) এসব ঘটনার মধ্যে বিএনপি সরকারের সময়ে দুটি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনবার ঘটেছে। যদিও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘিত হয়নি। ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এর শুরু। এ পর্যন্ত জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হওয়াদের অন্তত দুজন পরে প্রধান বিচারপতি হন। বাকি দুজনের একজন আপিল বিভাগে আর না বসে অবসরে যান। আরেকজন নীরবে পদত্যাগ করেন। একজন বিচারপতি ফজলুল করিম চারবার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের শিকার হলেও পঞ্চমবারে প্রধান বিচারপতি হন। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা এ বিষয়ে গতকাল যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে মতামত রেখেছেন। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম কোনো মন্তব্যই করতে চাননি। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুও জ্যেষ্ঠতার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এটা রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভর করছে। কোনো জ্যেষ্ঠতার নীতি নেই। বিদায়ী বিচারপতি এস কে সিনহা ছিলেন দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি। ২০০৩ সালে বিএনপি প্রথম জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে। তারা দুজন বিচারপতিকে (এম এম রুহুল আমিন ও ফজলুল করিম) ডিঙিয়ে বিচারপতি কে এম হাসানকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়। পরে অবশ্য ওই দুজন প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ  বলেন, এ বিষয়ে নীতিমালা নেই। তবে জ্যেষ্ঠতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তা বলতে পারব না। কারণ, এর আগেও জ্যেষ্ঠতার ব্যত্যয় ঘটেছে।’ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘অতীতেও জ্যেষ্ঠতার ব্যত্যয় ঘটেছে। সাধারণ আইনজীবীরা মনে করেন, জ্যেষ্ঠতার ব্যত্যয় হওয়া উচিত নয়। একই সঙ্গে এ কথাও বলব যে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সরকারের যদি কোনো নীতি থাকে, তাহলে সরকার সে অনুযায়ী চলবে।’