০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

বিশ্বখ্যাত তারকা শিল্পী রুনা লায়লার জন্মদিন আজ

গত শতাব্দীর ষাটের দশকে যাত্রা শুরুর পর থেকে  ‘নন্দিত’, ‘খ্যাতিমান’, ‘দেশবরণ্যে’, ‘বিশ্বখ্যাত তারকা’  শিল্পী রুনা লায়লার জন্মদিন আজ শুক্রবার। ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এমদাদ আলী ও আমিনা লায়লা দম্পতির আদরের কন্যা রুনা লায়লার ছোটবেলার প্রতিটি জন্মদিনই ছিল স্মরণীয়। ছোটবেলায় মা ও বড় বোন দীনা লায়লার দেওয়া নতুন জামা পরে জন্মদিন কাটত তার। জন্মদিন এলেই এখনও শৈশবের সেই স্মৃতির কথা মনে পড়ে তার।

বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, বালুচি, অ্যারাবিক, ফারসি, মালয়, নেপালিজ, জাপানিজ, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, ফ্রেন্স ও ইংরেজি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। শুধু গান নয়; তার সাজসজ্জা, পোশাক, গায়কী ঢং থেকে শুরু করে সবকিছুকে অনুসরণীয় মনে করেন নানা প্রজন্মের অনুসারীরা।

রুনা লায়লা শৈশবে নাচের তালিম নিলেও পরে সঙ্গীতে স্থায়ী হন। গজলে দীক্ষা নেন বিখ্যাত গায়ক মেহেদী হাসানের ভাই গোলাম কাদিরের কাছে। তার অন্য ওস্তাদের মধ্যে রয়েছেন হাবিবুদ্দিন খান। বোন দীনা লায়লার অসুস্থতাজনিত কারণে একটি কনসার্টে বাধ্য হয়ে মাত্র ৬ বছর বয়সে গান গেয়েছিলেন। সাড়ে ১১ বছর বয়সে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ ছবির মাধ্যমে প্লেব্যাক শিল্পীদের খাতায় নাম লেখান তিনি। এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৫৪ বছরের সঙ্গীত জীবনে ১০ সহস্রাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সব ধরনের গানে তিনি সাবলীল।

আজকের এ অবস্থানের পেছনে বড় ভূমিকা হিসেবে মা-বাবা এবং বোন দীনা লায়লার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন রুনা লায়লা। চলচ্চিত্রের গান গেয়ে তিনি এখন পর্যন্ত ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭৭ সালে আবদুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত ‘যাদুর বাঁশী’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন।

দেবু ভট্টাচার্য্যের সুরে করাচি রেডিওতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রথম রুনা লায়লার কণ্ঠে বাংলা গান শোনা যায়- ‘নোটন নোটন পায়রাগুলো’, ‘আমি নদীর মতো কতো পথ পেরিয়ে’ ইত্যাদি। তবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রুনা লায়লা প্রথম প্লেব্যাক করেন ১৯৭০ সালে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে সুবল দাসের সুর-সঙ্গীতে ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে বলো কী হবে’ গানের মাধ্যমে।

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসার পর ১৯৭৬-এ প্রথম প্লেব্যাক করেন নূরুল হক বাচ্চুর ‘জীবন সাথী’ চলচ্চিত্রে। এর সুর-সঙ্গীত করেছিলেন সত্য সাহা। রুনা লায়লার সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে গেয়েছিলেন খন্দকার ফারুক আহমেদ। এখন পর্যন্ত ১০ সহস্রাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ১৮টি ভাষায় গান গাইতে পারেন রুনা লায়লা, যা বিশ্বসঙ্গীতে বিরল।

রুনা লায়লা বলেন, ‘ছোটবেলার সব জন্মদিন ছিল আমার কাছে স্মরণীয়। জন্মদিনে বাড়িতে বন্ধুবান্ধব আসত, কেক কাটা হতো। সব মিলিয়ে দারুণ আনন্দ হতো। এখন আর ঠিক সেভাবে করা হয় না। তার পরও আলমগীর প্রতি বছর জন্মদিনে আমাকে চমকে দিতে নানা ধরনের আয়োজন করে।’

শিল্পী জীবনের এই দীর্ঘ পথপরিক্রমা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সঙ্গীত জীবনে আন্তরিকতা, সততা, রেওয়াজ, ত্যাগ ও পরিশ্রমের কমতি রাখা যাবে না। এক কথায়, সঙ্গীত হতে হবে সাধনার বিষয়। টাকা আয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে গাইতে আসিনি। ভালোবাসার টানে আজও গাইছি। তার পরও আমি পেশাদারিত্বে বিশ্বাস করি।’ আগামী দিনের পরিকল্পনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া এখনও সুস্থ আছি, ভালো আছি, গান গাইতে পারছি বলে। যাদের জন্য এই শিল্পী জীবন, সেই সব ভক্ত-শ্রোতার জন্য নতুন নতুন গান করতে চাই। এর বাইরে আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই।’

জন্মদিনে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে সুরকার-সঙ্গীত পরিচালক আলম খান বলেন, ‘একজন শিল্পী যেমন হওয়া উচিত, রুনা লায়লা ঠিক তেমন। একজন শিল্পীর যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, তার সবই আছে রুনার মধ্যে। রুনা লায়লা এমন একজন কণ্ঠশিল্পী, যার সম্পর্কে অল্প কথায় বলে শেষ করা যাবে না।’

গানের পাখি রুনা লায়লার জন্মদিন উপলক্ষে আজ সকাল ৮টা ২০ মিনিটে বিটিভির ‘সুপ্রভাত বাংলাদেশ’-এ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী। এ ছাড়াও চ্যানেল আইয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় ‘গানে গানে সকাল শুরু’ অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন কোনাল।

ট্যাগ :

বিশ্বখ্যাত তারকা শিল্পী রুনা লায়লার জন্মদিন আজ

প্রকাশিত : ১১:৫৩:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

গত শতাব্দীর ষাটের দশকে যাত্রা শুরুর পর থেকে  ‘নন্দিত’, ‘খ্যাতিমান’, ‘দেশবরণ্যে’, ‘বিশ্বখ্যাত তারকা’  শিল্পী রুনা লায়লার জন্মদিন আজ শুক্রবার। ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এমদাদ আলী ও আমিনা লায়লা দম্পতির আদরের কন্যা রুনা লায়লার ছোটবেলার প্রতিটি জন্মদিনই ছিল স্মরণীয়। ছোটবেলায় মা ও বড় বোন দীনা লায়লার দেওয়া নতুন জামা পরে জন্মদিন কাটত তার। জন্মদিন এলেই এখনও শৈশবের সেই স্মৃতির কথা মনে পড়ে তার।

বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, বালুচি, অ্যারাবিক, ফারসি, মালয়, নেপালিজ, জাপানিজ, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, ফ্রেন্স ও ইংরেজি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। শুধু গান নয়; তার সাজসজ্জা, পোশাক, গায়কী ঢং থেকে শুরু করে সবকিছুকে অনুসরণীয় মনে করেন নানা প্রজন্মের অনুসারীরা।

রুনা লায়লা শৈশবে নাচের তালিম নিলেও পরে সঙ্গীতে স্থায়ী হন। গজলে দীক্ষা নেন বিখ্যাত গায়ক মেহেদী হাসানের ভাই গোলাম কাদিরের কাছে। তার অন্য ওস্তাদের মধ্যে রয়েছেন হাবিবুদ্দিন খান। বোন দীনা লায়লার অসুস্থতাজনিত কারণে একটি কনসার্টে বাধ্য হয়ে মাত্র ৬ বছর বয়সে গান গেয়েছিলেন। সাড়ে ১১ বছর বয়সে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ ছবির মাধ্যমে প্লেব্যাক শিল্পীদের খাতায় নাম লেখান তিনি। এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৫৪ বছরের সঙ্গীত জীবনে ১০ সহস্রাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সব ধরনের গানে তিনি সাবলীল।

আজকের এ অবস্থানের পেছনে বড় ভূমিকা হিসেবে মা-বাবা এবং বোন দীনা লায়লার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন রুনা লায়লা। চলচ্চিত্রের গান গেয়ে তিনি এখন পর্যন্ত ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭৭ সালে আবদুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত ‘যাদুর বাঁশী’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন।

দেবু ভট্টাচার্য্যের সুরে করাচি রেডিওতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রথম রুনা লায়লার কণ্ঠে বাংলা গান শোনা যায়- ‘নোটন নোটন পায়রাগুলো’, ‘আমি নদীর মতো কতো পথ পেরিয়ে’ ইত্যাদি। তবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রুনা লায়লা প্রথম প্লেব্যাক করেন ১৯৭০ সালে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে সুবল দাসের সুর-সঙ্গীতে ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে বলো কী হবে’ গানের মাধ্যমে।

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসার পর ১৯৭৬-এ প্রথম প্লেব্যাক করেন নূরুল হক বাচ্চুর ‘জীবন সাথী’ চলচ্চিত্রে। এর সুর-সঙ্গীত করেছিলেন সত্য সাহা। রুনা লায়লার সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে গেয়েছিলেন খন্দকার ফারুক আহমেদ। এখন পর্যন্ত ১০ সহস্রাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ১৮টি ভাষায় গান গাইতে পারেন রুনা লায়লা, যা বিশ্বসঙ্গীতে বিরল।

রুনা লায়লা বলেন, ‘ছোটবেলার সব জন্মদিন ছিল আমার কাছে স্মরণীয়। জন্মদিনে বাড়িতে বন্ধুবান্ধব আসত, কেক কাটা হতো। সব মিলিয়ে দারুণ আনন্দ হতো। এখন আর ঠিক সেভাবে করা হয় না। তার পরও আলমগীর প্রতি বছর জন্মদিনে আমাকে চমকে দিতে নানা ধরনের আয়োজন করে।’

শিল্পী জীবনের এই দীর্ঘ পথপরিক্রমা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সঙ্গীত জীবনে আন্তরিকতা, সততা, রেওয়াজ, ত্যাগ ও পরিশ্রমের কমতি রাখা যাবে না। এক কথায়, সঙ্গীত হতে হবে সাধনার বিষয়। টাকা আয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে গাইতে আসিনি। ভালোবাসার টানে আজও গাইছি। তার পরও আমি পেশাদারিত্বে বিশ্বাস করি।’ আগামী দিনের পরিকল্পনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া এখনও সুস্থ আছি, ভালো আছি, গান গাইতে পারছি বলে। যাদের জন্য এই শিল্পী জীবন, সেই সব ভক্ত-শ্রোতার জন্য নতুন নতুন গান করতে চাই। এর বাইরে আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই।’

জন্মদিনে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে সুরকার-সঙ্গীত পরিচালক আলম খান বলেন, ‘একজন শিল্পী যেমন হওয়া উচিত, রুনা লায়লা ঠিক তেমন। একজন শিল্পীর যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, তার সবই আছে রুনার মধ্যে। রুনা লায়লা এমন একজন কণ্ঠশিল্পী, যার সম্পর্কে অল্প কথায় বলে শেষ করা যাবে না।’

গানের পাখি রুনা লায়লার জন্মদিন উপলক্ষে আজ সকাল ৮টা ২০ মিনিটে বিটিভির ‘সুপ্রভাত বাংলাদেশ’-এ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী। এ ছাড়াও চ্যানেল আইয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় ‘গানে গানে সকাল শুরু’ অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন কোনাল।