০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

বড় সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতি

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে থমকে গিয়েছে পুরো পৃথিবী। স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। মন্দার ঘোর অমানিশার আশঙ্কায় বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। করোনাপরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় বেশকিছু দেশ এরই মধ্যে প্রণোদনা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো সংকটকালে বাড়তি অর্থ সরবরাহের মাধ্যমে অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করা। বাংলাদেশেও সাড়ে ৯৫ হাজার কোটি টাকার নানা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এর পাশাপাশি দেশে অপ্রদর্শিত হিসেবে থেকে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থকেও যদি অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসা যায়, সেক্ষেত্রে তা আসন্ন অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত অর্থকে মূলধারায় ফেরাতে বড় ধরনের ছাড় ঘোষণার প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টদের অনেকেই।
আয়কর আইন অনুযায়ী, আয়ের যে অংশ আয়কর বিবরণীতে দেখানো হয় না, সেটিই অপ্রদর্শিত অর্থ। এক্ষেত্রে ঘুষ, দুর্নীতি, কালোবাজারি, চোরাকারবার, মাদক ও অস্ত্রসহ নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যবসা থেকে উপার্জিত আয়কে বিবেচনা করা হয় অপ্রদর্শিত অর্থ হিসেবে। আবার কেউ যদি তার বৈধ উৎস থেকে আয়ের বিপরীতে কর পরিশোধ না করে, তাহলে সেটিও অপ্রদর্শিত অর্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।
দেশে অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে বিশ্বব্যাংকের ২০০৫ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০২-০৩ সালেও বাংলাদেশে অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ ছিল মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে গত বছরের ২৮ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এক আলোচনায় সরকারি একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত জানিয়েছিলেন, দেশে অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ জিডিপির ৪২ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে। টাকার অংকে এর পরিমাণ কমপক্ষে সাড়ে ১৭ লাখ কোটি টাকা, যা তিনটি বাজেটের সমান। আর পুঞ্জীভূত অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ ৩০ থেকে ৪০ লাখ কোটি টাকার মতো, যা বর্তমান জিডিপির দ্বিগুণ। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো কাণ্ডেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ জব্দের ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট শামস মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে কী পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে, সেটির কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। ফলে সুযোগ দেয়া হলে কী পরিমাণ অর্থ অর্থনীতির মূলধারায় আসবে, সেটিও আগে থেকেই বলা যাচ্ছে না। তাছাড়া দেশের ভেতরে যে পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে, সেটি কিন্তু এরই মধ্যে জমি, ফ্ল্যাট, প্লট ও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করা আছে। ফলে এখান থেকে নতুন করে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে এ সংকটের সময় যাদের কাছেই অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে, তারা সেটি ধরে রাখতে চাইবে। তবে অপ্রদর্শিত অর্থকে মূলধারায় আনার সুযোগ দেয়া হলে সেটি যদি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে আমি এটিকে স্বাগত জানাই। কারণ এ সময়ে অর্থনীতিতে যেকোনো ধরনের অবদান যোগ হলে সেটি আমাদের জন্য ভালো।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) দেশের প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ২-৩ শতাংশে, যে চিত্রটি ৩০ বছর আগে দেখেছিল বাংলাদেশ। সম্প্রতি সংস্থাটির ওয়াশিংটন সদর দপ্তর থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলনসংক্রান্ত ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস, স্প্রিং ২০২০: কার্সড ব্লেজিং অব পাবলিক ব্যাংক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়।
প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ২-৩ শতাংশ। এরপর আগামী অর্থবছরে তা আরো কমে দাঁড়াতে পারে ১ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৯ শতাংশে। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্থনীতি একটু ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সে সময়ও প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ৮ থেকে ৩ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে।
এদিকে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের এপ্রিল সংখ্যায় উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বেড়ে সাড়ে ৯ শতাংশে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপ্রদর্শিত অর্থকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসা গেলে তার প্রভাব ইতিবাচক হবে বলে মনে করছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মুনতাকিম আশরাফ। তিনি বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এ সংকটকালে যদি অপ্রদর্শিত অর্থকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়, তাহলে সেটি অবশ্যই অত্যন্ত ইতিবাচক হবে। পাশাপাশি এ সময়ে যাতে দেশে খাদ্য সংকট না হয়, সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে আমরা সংকট মোকাবেলা করতে পারব।
আয়কর অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে যেকোনো খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া প্লট-ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রেও প্রতি বর্গমিটারের জন্য নির্দিষ্ট হারে কর দিয়েও এ সুযোগ পাওয়া যাবে।
সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের বাজেটেও কয়েকটি নির্দিষ্ট খাতে নির্দিষ্ট হারে কর প্রদানসাপেক্ষে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শিল্প ও সেবা খাতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করা হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবে না। এ সুবিধা পাওয়ার জন্য হাইটেক পার্ক বা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে হবে। এ সুযোগ অব্যাহত থাকছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। একই সঙ্গে জমি কেনার কাজেও অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যবহার করা যাবে।
এনবিআরের তথ্যানুসারে, ১৯৭২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জরিমানা দিয়ে মোট ১৮ হাজার ৩৭২ কোটি টাকার অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থনীতির মূলধারায় ফিরে এসেছে। এর অর্ধেকই এসেছে ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়।
দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে শর্তসাপেক্ষে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার দাবি তুলে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায়ও চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির মূলধারার বাইরে থাকা অপ্রদর্শিত অর্থ কমপক্ষে তিন বছর বিনিয়োগের শর্তে এবং সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর প্রদান সাপেক্ষে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। এর মাধ্যমে জনজীবন তথা সার্বিক অর্থনীতি গতিশীল হবে বলে মনে করছে সংগঠনটি।
এ বিষয়ে বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনা গেলে সেটি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা হলে এনবিআরসহ সরকারের কোনো সংস্থাই এ অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না, এমন বিধান করতে হবে। তাহলে যাদের কাছে অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে, তারা সেটিকে বৈধ করার ক্ষেত্রে আগ্রহী হবেন বলে আমি মনে করি।

জনপ্রিয়

রংপুরে রেল স্টেশনে বৈষম্য উন্নয়ন হয়নি,প্রতিবাদে অবরোধ

বড় সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতি

প্রকাশিত : ১২:০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ এপ্রিল ২০২০

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে থমকে গিয়েছে পুরো পৃথিবী। স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। মন্দার ঘোর অমানিশার আশঙ্কায় বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। করোনাপরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় বেশকিছু দেশ এরই মধ্যে প্রণোদনা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো সংকটকালে বাড়তি অর্থ সরবরাহের মাধ্যমে অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করা। বাংলাদেশেও সাড়ে ৯৫ হাজার কোটি টাকার নানা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এর পাশাপাশি দেশে অপ্রদর্শিত হিসেবে থেকে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থকেও যদি অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসা যায়, সেক্ষেত্রে তা আসন্ন অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত অর্থকে মূলধারায় ফেরাতে বড় ধরনের ছাড় ঘোষণার প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টদের অনেকেই।
আয়কর আইন অনুযায়ী, আয়ের যে অংশ আয়কর বিবরণীতে দেখানো হয় না, সেটিই অপ্রদর্শিত অর্থ। এক্ষেত্রে ঘুষ, দুর্নীতি, কালোবাজারি, চোরাকারবার, মাদক ও অস্ত্রসহ নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যবসা থেকে উপার্জিত আয়কে বিবেচনা করা হয় অপ্রদর্শিত অর্থ হিসেবে। আবার কেউ যদি তার বৈধ উৎস থেকে আয়ের বিপরীতে কর পরিশোধ না করে, তাহলে সেটিও অপ্রদর্শিত অর্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।
দেশে অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে বিশ্বব্যাংকের ২০০৫ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০২-০৩ সালেও বাংলাদেশে অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ ছিল মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে গত বছরের ২৮ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এক আলোচনায় সরকারি একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত জানিয়েছিলেন, দেশে অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ জিডিপির ৪২ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে। টাকার অংকে এর পরিমাণ কমপক্ষে সাড়ে ১৭ লাখ কোটি টাকা, যা তিনটি বাজেটের সমান। আর পুঞ্জীভূত অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ ৩০ থেকে ৪০ লাখ কোটি টাকার মতো, যা বর্তমান জিডিপির দ্বিগুণ। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো কাণ্ডেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ জব্দের ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট শামস মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে কী পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে, সেটির কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। ফলে সুযোগ দেয়া হলে কী পরিমাণ অর্থ অর্থনীতির মূলধারায় আসবে, সেটিও আগে থেকেই বলা যাচ্ছে না। তাছাড়া দেশের ভেতরে যে পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে, সেটি কিন্তু এরই মধ্যে জমি, ফ্ল্যাট, প্লট ও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করা আছে। ফলে এখান থেকে নতুন করে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে এ সংকটের সময় যাদের কাছেই অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে, তারা সেটি ধরে রাখতে চাইবে। তবে অপ্রদর্শিত অর্থকে মূলধারায় আনার সুযোগ দেয়া হলে সেটি যদি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে আমি এটিকে স্বাগত জানাই। কারণ এ সময়ে অর্থনীতিতে যেকোনো ধরনের অবদান যোগ হলে সেটি আমাদের জন্য ভালো।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) দেশের প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ২-৩ শতাংশে, যে চিত্রটি ৩০ বছর আগে দেখেছিল বাংলাদেশ। সম্প্রতি সংস্থাটির ওয়াশিংটন সদর দপ্তর থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলনসংক্রান্ত ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস, স্প্রিং ২০২০: কার্সড ব্লেজিং অব পাবলিক ব্যাংক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়।
প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ২-৩ শতাংশ। এরপর আগামী অর্থবছরে তা আরো কমে দাঁড়াতে পারে ১ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৯ শতাংশে। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্থনীতি একটু ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সে সময়ও প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ৮ থেকে ৩ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে।
এদিকে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের এপ্রিল সংখ্যায় উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বেড়ে সাড়ে ৯ শতাংশে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপ্রদর্শিত অর্থকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসা গেলে তার প্রভাব ইতিবাচক হবে বলে মনে করছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মুনতাকিম আশরাফ। তিনি বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এ সংকটকালে যদি অপ্রদর্শিত অর্থকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়, তাহলে সেটি অবশ্যই অত্যন্ত ইতিবাচক হবে। পাশাপাশি এ সময়ে যাতে দেশে খাদ্য সংকট না হয়, সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে আমরা সংকট মোকাবেলা করতে পারব।
আয়কর অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে যেকোনো খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া প্লট-ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রেও প্রতি বর্গমিটারের জন্য নির্দিষ্ট হারে কর দিয়েও এ সুযোগ পাওয়া যাবে।
সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের বাজেটেও কয়েকটি নির্দিষ্ট খাতে নির্দিষ্ট হারে কর প্রদানসাপেক্ষে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শিল্প ও সেবা খাতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করা হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবে না। এ সুবিধা পাওয়ার জন্য হাইটেক পার্ক বা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে হবে। এ সুযোগ অব্যাহত থাকছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। একই সঙ্গে জমি কেনার কাজেও অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যবহার করা যাবে।
এনবিআরের তথ্যানুসারে, ১৯৭২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জরিমানা দিয়ে মোট ১৮ হাজার ৩৭২ কোটি টাকার অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থনীতির মূলধারায় ফিরে এসেছে। এর অর্ধেকই এসেছে ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়।
দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে শর্তসাপেক্ষে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার দাবি তুলে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায়ও চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির মূলধারার বাইরে থাকা অপ্রদর্শিত অর্থ কমপক্ষে তিন বছর বিনিয়োগের শর্তে এবং সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর প্রদান সাপেক্ষে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। এর মাধ্যমে জনজীবন তথা সার্বিক অর্থনীতি গতিশীল হবে বলে মনে করছে সংগঠনটি।
এ বিষয়ে বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনা গেলে সেটি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা হলে এনবিআরসহ সরকারের কোনো সংস্থাই এ অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না, এমন বিধান করতে হবে। তাহলে যাদের কাছে অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে, তারা সেটিকে বৈধ করার ক্ষেত্রে আগ্রহী হবেন বলে আমি মনে করি।