০৭:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

রহস্যময় পিরি রইসের ম্যাপ

  • রণক ইকরাম
  • প্রকাশিত : ০৮:৫৬:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৮
  • 5849

কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার ছবির সঙ্গে অদ্ভুত মিল আছে পিরি রইসের ম্যাপের। অথচ ম্যাপটি আঁকা হয়েছিল হাজার হাজার বছর আগে। তবে কী এটা ভিনগ্রহী বুদ্ধিমানদের কোন সৃষ্টি?

পিরি রইসের ম্যাপ হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ব মানচিত্র। আর ১৫১৩ সালে তুর্কি নৌবাহিনীর অধিকর্তা অ্যাডমিরাল পিরি রইস এই অতি প্রাচীন ম্যাপ খুঁজে পান। টোপকাপি প্রাসাদে প্রাপ্ত এই ম্যাপ সবার কাছে বিস্ময় সৃষ্টি করে। দিন যতো গড়িয়েছে এই ম্যাপের রহস্য আরো বেশি ঘনীভূত হয়েছে। কেননা এই ম্যাপের নকশায় এমন অনেক অংশই আঁকা ছিল যা সেই সময় পৃথিবীর মানুষের কাছে অনাবিষ্কৃত ছিল। তাই অধিকাংশ বিজ্ঞানীর ধারনা এমন ত্রুটিহীন ম্যাপ কিছুতেই পৃথিবীর মানুষের তৈরি নয়। এটি অবশ্যই উন্নত মস্তিষ্কের কোন ভিনগ্রহী প্রাণীর তৈরি।
বর্তমানে বার্লিন স্টেট লাইব্রেরিতে এর দুটো ম্যাপ আছে। ভূমধ্যসাগর আর মরুসাগর নিখুঁতভাবে আঁকা আছে এতে। ম্যাপ দুটো পাওয়ার পরপর পরীক্ষা করতে নেওয়া হয় বিখ্যাত মার্কিন মানচিত্রকর আর্লিংটন এইচ, ম্যালারির কাছে। গভীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মানচিত্রকর জানালেন, সমস্ত ভৌগোলিক তথ্যই ম্যাপগুলোতে বর্তমান। ম্যাপগুলো নিয়ে এরপর ওয়াল্টার্সের সঙ্গে পরামর্শ করেন তিনি। দুজনে মিলে ম্যাপ দুটোকে আধুনিক ভূগোলকের ওপর ফেলে পরীক্ষা করে। এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর তথ্য আবিষ্কার করেন। শুধু ভূমধ্যসাগর আর মরুসাগরের চিত্রই ত্রুটিহীন নিখুঁতভাবে আঁকা হয়নি, উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলভূমি, এমনকি দক্ষিণ মেরুর সীমারেখা পর্যন্ত দেয়া আছে তাতে। দেশগুলোর অভ্যন্তরভাগের স্থান বিবরণও দেয়া আছে। নিখুুঁত নৈপুণ্যে আঁকা হয়েছে পাহাড়, পর্বত, দ্বীপ, নদী, মালভূমি ইত্যাদি।
১৯৫৭ সাল পৃথিবীর ইতিহাসে ভূ-প্রাকৃতিক বছর নামে খ্যাত। ম্যালারি আর ওয়াল্টার্সের দেখার পর ওই বছরই ম্যাপ দুটো পরীক্ষার জন্য তুলে দেওয়া হয় জেসুইট ফাদার লাইনহ্যামের হাতে। ওয়েস্টন মানমন্দিরের অধ্যক্ষ এবং মার্কিন নৌবাহিনীর মানচিত্রকর তিনি। চুলচেরা পরীক্ষার পর ঘোষণা করেন ম্যালারি আর ওয়াল্টার্সের কথা ঠিক, ম্যাপ দুটো অসম্ভব রকম ত্রুটিহীন। ম্যাপে অঙ্কিত দক্ষিণ মেরুর কিছু কিছু পর্বতমালা মাত্র কিছুদিন আগে আবিষ্কৃত হয়েছে। একটাতো হয়েছে এই সেদিন, ১৯৫২ সালে, এর নকশা আঁকা হয়েছে প্রতিধ্বনি পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে। কিন্তু হাজার হাজার বছর আগে ওই ম্যাপে ওগুলো আঁকা হলো কি করে? প্রতিধ্বনি পরিমাপক যন্ত্রের নামও শোনার কথা নয় তখনকার মানুষের ?

pp
অদ্ভুত একটা কথা বলেছেন অধ্যাপক চার্লস এইচ হ্যাপগুড এবং অঙ্কশাস্ত্রবিদ ডাবলিউ স্ট্রেচান। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার ছবির সঙ্গে নাকি অদ্ভুত মিল আছে পিরি রইসের ম্যাপের। কায়রোর উপরের আকাশ থেকে পৃথিবীর ছবি তুলেছিল একটা উপগ্রহ। ফিল্মটা ধোয়ার পর যে ছবি এলো তাতে কায়রো থেকে ৫ হাজার মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে যা কিছু ছিল সবই পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। এর কারণ, এই জায়গাটুকু ছিল সরাসরি ক্যামেরার লেন্সের নিচে। কিন্তু এর বাইরের মহাদেশগুলোর ছবি বেঁকে গেছে। লেন্সের কাছ থেকে দূরত্ব যার যত বেশি সেটা তত বাঁকা। আমাদের পৃথিবী গোলাকার, তাই যে মহাদেশগুলো লেন্সের কেন্দ্র থেকে তফাতে ছিল, ওগুলো বেঁকে গিয়েছিল। এতে দক্ষিণ আমেরিকাকে লম্বালম্বিভাবে অদ্ভুত বাঁকা দেখা যায়। পিরি রইসের ম্যাপেও কিন্তু ঠিক তাই আছে। কি করে ঘটল এমনটা?
বলা কি যায় না, আকাশ থেকেই তোলা হয়েছিল পিরি রইসের ম্যাপের ছবি? যদি তাই হয়, নিশ্চয়ই আমাদের পূর্বপুরুষরা তোলেনি সেই ছবি? কারণ আকাশযান ছিল না তাদের, ছিল না ওরকম ছবি তোলার অতি উন্নতমানের যন্ত্রপাতি। তা হলে কে তুলল? পিরি রইসের ম্যাপগুলো কিন্তু আসল ছবি নয়, নকল। আসল ছবি দেখে আঁকা হয়েছিল। আসল ছবি যে তুলেছিল সে উড়তেও জানত, ছবি তোলার যন্ত্রপাতিও ছিল তার কাছে। কে সেই ব্যক্তি? কারা এরা? এই রহস্যের আজো কোন কূল কিনারা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ট্যাগ :

রহস্যময় পিরি রইসের ম্যাপ

প্রকাশিত : ০৮:৫৬:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৮

কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার ছবির সঙ্গে অদ্ভুত মিল আছে পিরি রইসের ম্যাপের। অথচ ম্যাপটি আঁকা হয়েছিল হাজার হাজার বছর আগে। তবে কী এটা ভিনগ্রহী বুদ্ধিমানদের কোন সৃষ্টি?

পিরি রইসের ম্যাপ হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ব মানচিত্র। আর ১৫১৩ সালে তুর্কি নৌবাহিনীর অধিকর্তা অ্যাডমিরাল পিরি রইস এই অতি প্রাচীন ম্যাপ খুঁজে পান। টোপকাপি প্রাসাদে প্রাপ্ত এই ম্যাপ সবার কাছে বিস্ময় সৃষ্টি করে। দিন যতো গড়িয়েছে এই ম্যাপের রহস্য আরো বেশি ঘনীভূত হয়েছে। কেননা এই ম্যাপের নকশায় এমন অনেক অংশই আঁকা ছিল যা সেই সময় পৃথিবীর মানুষের কাছে অনাবিষ্কৃত ছিল। তাই অধিকাংশ বিজ্ঞানীর ধারনা এমন ত্রুটিহীন ম্যাপ কিছুতেই পৃথিবীর মানুষের তৈরি নয়। এটি অবশ্যই উন্নত মস্তিষ্কের কোন ভিনগ্রহী প্রাণীর তৈরি।
বর্তমানে বার্লিন স্টেট লাইব্রেরিতে এর দুটো ম্যাপ আছে। ভূমধ্যসাগর আর মরুসাগর নিখুঁতভাবে আঁকা আছে এতে। ম্যাপ দুটো পাওয়ার পরপর পরীক্ষা করতে নেওয়া হয় বিখ্যাত মার্কিন মানচিত্রকর আর্লিংটন এইচ, ম্যালারির কাছে। গভীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মানচিত্রকর জানালেন, সমস্ত ভৌগোলিক তথ্যই ম্যাপগুলোতে বর্তমান। ম্যাপগুলো নিয়ে এরপর ওয়াল্টার্সের সঙ্গে পরামর্শ করেন তিনি। দুজনে মিলে ম্যাপ দুটোকে আধুনিক ভূগোলকের ওপর ফেলে পরীক্ষা করে। এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর তথ্য আবিষ্কার করেন। শুধু ভূমধ্যসাগর আর মরুসাগরের চিত্রই ত্রুটিহীন নিখুঁতভাবে আঁকা হয়নি, উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলভূমি, এমনকি দক্ষিণ মেরুর সীমারেখা পর্যন্ত দেয়া আছে তাতে। দেশগুলোর অভ্যন্তরভাগের স্থান বিবরণও দেয়া আছে। নিখুুঁত নৈপুণ্যে আঁকা হয়েছে পাহাড়, পর্বত, দ্বীপ, নদী, মালভূমি ইত্যাদি।
১৯৫৭ সাল পৃথিবীর ইতিহাসে ভূ-প্রাকৃতিক বছর নামে খ্যাত। ম্যালারি আর ওয়াল্টার্সের দেখার পর ওই বছরই ম্যাপ দুটো পরীক্ষার জন্য তুলে দেওয়া হয় জেসুইট ফাদার লাইনহ্যামের হাতে। ওয়েস্টন মানমন্দিরের অধ্যক্ষ এবং মার্কিন নৌবাহিনীর মানচিত্রকর তিনি। চুলচেরা পরীক্ষার পর ঘোষণা করেন ম্যালারি আর ওয়াল্টার্সের কথা ঠিক, ম্যাপ দুটো অসম্ভব রকম ত্রুটিহীন। ম্যাপে অঙ্কিত দক্ষিণ মেরুর কিছু কিছু পর্বতমালা মাত্র কিছুদিন আগে আবিষ্কৃত হয়েছে। একটাতো হয়েছে এই সেদিন, ১৯৫২ সালে, এর নকশা আঁকা হয়েছে প্রতিধ্বনি পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে। কিন্তু হাজার হাজার বছর আগে ওই ম্যাপে ওগুলো আঁকা হলো কি করে? প্রতিধ্বনি পরিমাপক যন্ত্রের নামও শোনার কথা নয় তখনকার মানুষের ?

pp
অদ্ভুত একটা কথা বলেছেন অধ্যাপক চার্লস এইচ হ্যাপগুড এবং অঙ্কশাস্ত্রবিদ ডাবলিউ স্ট্রেচান। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার ছবির সঙ্গে নাকি অদ্ভুত মিল আছে পিরি রইসের ম্যাপের। কায়রোর উপরের আকাশ থেকে পৃথিবীর ছবি তুলেছিল একটা উপগ্রহ। ফিল্মটা ধোয়ার পর যে ছবি এলো তাতে কায়রো থেকে ৫ হাজার মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে যা কিছু ছিল সবই পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। এর কারণ, এই জায়গাটুকু ছিল সরাসরি ক্যামেরার লেন্সের নিচে। কিন্তু এর বাইরের মহাদেশগুলোর ছবি বেঁকে গেছে। লেন্সের কাছ থেকে দূরত্ব যার যত বেশি সেটা তত বাঁকা। আমাদের পৃথিবী গোলাকার, তাই যে মহাদেশগুলো লেন্সের কেন্দ্র থেকে তফাতে ছিল, ওগুলো বেঁকে গিয়েছিল। এতে দক্ষিণ আমেরিকাকে লম্বালম্বিভাবে অদ্ভুত বাঁকা দেখা যায়। পিরি রইসের ম্যাপেও কিন্তু ঠিক তাই আছে। কি করে ঘটল এমনটা?
বলা কি যায় না, আকাশ থেকেই তোলা হয়েছিল পিরি রইসের ম্যাপের ছবি? যদি তাই হয়, নিশ্চয়ই আমাদের পূর্বপুরুষরা তোলেনি সেই ছবি? কারণ আকাশযান ছিল না তাদের, ছিল না ওরকম ছবি তোলার অতি উন্নতমানের যন্ত্রপাতি। তা হলে কে তুলল? পিরি রইসের ম্যাপগুলো কিন্তু আসল ছবি নয়, নকল। আসল ছবি দেখে আঁকা হয়েছিল। আসল ছবি যে তুলেছিল সে উড়তেও জানত, ছবি তোলার যন্ত্রপাতিও ছিল তার কাছে। কে সেই ব্যক্তি? কারা এরা? এই রহস্যের আজো কোন কূল কিনারা খুঁজে পাওয়া যায়নি।