০৯:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

সফল ৯ শীর্ষ নির্বাহী

  • তাকী জোবায়ের
  • প্রকাশিত : ১১:৩২:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২১
  • 91

২০২০ সালের ২৪ ফেব্রয়ারি যখন বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সকল ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ এবং সকল আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৬ শতাংশ বেধে দিয়ে সার্কুলার জারি করে তার আগেই করোনা মহামারির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল সকল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। সার্কুলারে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর আগেই বাংলাদেশে করোন ছড়িয়ে পড়লে ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন জারি করে সরকার। সকল স্তরের ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকের ঋণের কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ১ এপ্রিল থেকেই নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়ন করে ব্যাংকগুলো।

একদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতা, অন্যদিকে সুদহার হ্রাস ও ঋণের কিস্তি আদায়ের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া সব মিলিয়ে ২০২০ সাল জুড়েই ত্রিমুখী সংকট পার করে দেশের ব্যাংক খাত। এমন সংকট মোকাবেলার কোনও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের কখনোই ছিল না।

এই সংকটে ধরাশায়ী হয়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কর্মকৌশল। কিন্তু এর মধ্যেও সাফল্য দেখিয়েছেন নয়জন প্রধান নির্বাহী যারা তাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, তারুণ্য ও সাহসের মিশেলে এই কঠিন সংকটজনক মুহর্তেও তাদের ব্যাংকগুলোর মুনাফা বাড়াতে পেরেছেন। ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে তারা দিয়েছেন সাফল্যের পরিচয়।

এই নয়জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন: সোনালী ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাবিব হাসনাত, মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিউল আজম, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুখতার হোসাইন, ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী, মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন, ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোসতাক আহমেদ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিম। ২০২০ সালে এদের নেতৃত্বাধীন ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়েছে। বাকি ব্যাংকগুলোতে রয়েছে বিপরীত চিত্র। অন্য ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা ২০১৯ সালের তুলনায় সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।

সংকটকালেও ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান। তার ব্যাংকে ২০২০ সালে পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। এর পূর্বের বছরে সোনালীর পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। সংকটময় মুহর্তেও ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৪২৫ কোটি টাকা। শতাংশের হিসেবে প্রবৃদ্ধির হার ২৪ শতাংশ।

২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন মো. আতাউর রহমান প্রধান। এর পূর্বে তিনি রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। ওই তিন বছরে গত কয়েক দশক ধরে লোকসানে থাকা রূপালী ব্যাংক লাভের মুখ দেখেছিল। অব্যাহত লোকসানের কারণে যে রূপালী ব্যাংককে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল সরকার সেই রূপালী ব্যাংক আতাউর রহমান প্রধানের নেতৃত্বে ৫শ কোটি টাকা পর্যন্ত মুনাফা করেছিল। এই ধারা তিনি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন সোনালী ব্যাংকেও। চরম সংকটময় মুহর্তেও নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত সোনালী ব্যাংকে রেকর্ড পরিমাণ পরিচালন মুনাফা অর্জিত হয়েছে।

পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি অর্জনে সবচেয়ে বড় সাফল্য দেখিয়েছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ হাবিব হাসনাত। তার নেতৃত্বে ২০২০ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৪১ শতাংশ। ২০১৯ সালে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছিল ১৩৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালে এসে চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ১৯০ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ১ আগস্ট এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সৈয়দ হাবিব হাসনাত। এরপর তার নেতৃত্বে টানা দুই বছরই পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ব্যাংকটির।
পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি অর্জনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাফল্য দেখিয়েছেন মধুমতি ব্যাংকর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. শফিউল আজম। মধুমতি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৩২ শতাংশ। ২০১৯ সালে যেখানে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা অর্জিত হয়েছিল ২১০ কোটি টাকা সেখানে ২০২০ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৭৮ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট থেকেই চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংকটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন শফিউল আজম যিনি ব্যাংক খাতের শীর্ষ নির্বাহীদের মধ্যে বয়স এবং অভিজ্ঞতায় কনিষ্টদের মধ্যে একজন। ১৯৯১ সালে এবি ব্যাংকের মাধ্যমে এই খাতে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শফিউল।

পরিচালন মুনাফা অর্জনে ভাল সাফল্য দেখাতে পেরেছেন এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুখতার হোসেন। ২০২০ সাল চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ শতাংশ। ২০১৯ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২৬৫ কোটি টাকা। গত বছর ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয় ৩২৩ কোটি টাকা।

২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি নানা সংকট পেড়িয়ে আসা এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের হাল ধরেন মুখতার হোসেন। তিনি যখন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে গিয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই এর প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশে।

এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ২৭০ কোটি টাকা। আর ২০২০ সালে ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকা।

২০২০ সালের ২০ এপ্রিল চতুর্থ প্রজন্মের ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোকাম্মেল হক। তিনি যখন ব্যাংকটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তখন সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির ছিল। এই পরিস্থিতিতেও ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন ব্যাংক খাতে মাত্র ২০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই ব্যাংকার। ব্যাংক খাতের শীর্ষ নির্বাহীদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ২০০১ সালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।

করোনা মহামারিতে সারাদেশে যখন অঘোষিত লকডাউন ছিল সেই মুহর্তে মেঘনা ব্যাংকের হাল ধরেন সিটি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন। ২১ এপ্রিল মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদে যোগ দেন তিনি। এখান থেকেও ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ৪ শতাংশ বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১৯ সালে মেঘনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা এসেছিল ৮২ কোটি টাকা। আর গত বছরে ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ৮৫ কোটি টাকা।

সারাবছর আলোচনায় থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকও করোনার মাঝে চমক দেখিয়েছে চৌধুরী মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে। ২০১৯ সালে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেখানে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৯৫০ কোটি টাকা সেখানে ২০২০ সালে করোনা সংকটের মাঝেও পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৯৮০ কোটি টাকা। ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও চৌধুরী মোশতাক আহমেদ সংকটময় পরিস্থিতির মাঝেও ৩০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি ও সিইও পদে নিয়োগ পান চৌধুরী মোশতাক।

২০২০ সালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১০ কোটি টাকা। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী। ২০১৯ সালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৫৯০ কোটি টাকা, যেটা ২০২০ সালে হয়েছে ৬শ কোটি টাকা।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফাও বেড়েছে ১০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছিল ৬শ কোটি টাকা। করোনা মহামারির মধ্যেও ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এম রিয়াজুল করিমের নেতৃত্বে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬১০ কোটি টাকা।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এস শিকদার

জনপ্রিয়

রংপুরে রেল স্টেশনে বৈষম্য উন্নয়ন হয়নি,প্রতিবাদে অবরোধ

সফল ৯ শীর্ষ নির্বাহী

প্রকাশিত : ১১:৩২:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২১

২০২০ সালের ২৪ ফেব্রয়ারি যখন বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সকল ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ এবং সকল আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৬ শতাংশ বেধে দিয়ে সার্কুলার জারি করে তার আগেই করোনা মহামারির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল সকল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। সার্কুলারে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর আগেই বাংলাদেশে করোন ছড়িয়ে পড়লে ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন জারি করে সরকার। সকল স্তরের ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকের ঋণের কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ১ এপ্রিল থেকেই নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়ন করে ব্যাংকগুলো।

একদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতা, অন্যদিকে সুদহার হ্রাস ও ঋণের কিস্তি আদায়ের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া সব মিলিয়ে ২০২০ সাল জুড়েই ত্রিমুখী সংকট পার করে দেশের ব্যাংক খাত। এমন সংকট মোকাবেলার কোনও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের কখনোই ছিল না।

এই সংকটে ধরাশায়ী হয়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কর্মকৌশল। কিন্তু এর মধ্যেও সাফল্য দেখিয়েছেন নয়জন প্রধান নির্বাহী যারা তাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, তারুণ্য ও সাহসের মিশেলে এই কঠিন সংকটজনক মুহর্তেও তাদের ব্যাংকগুলোর মুনাফা বাড়াতে পেরেছেন। ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে তারা দিয়েছেন সাফল্যের পরিচয়।

এই নয়জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন: সোনালী ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাবিব হাসনাত, মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিউল আজম, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুখতার হোসাইন, ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী, মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন, ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোসতাক আহমেদ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিম। ২০২০ সালে এদের নেতৃত্বাধীন ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়েছে। বাকি ব্যাংকগুলোতে রয়েছে বিপরীত চিত্র। অন্য ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা ২০১৯ সালের তুলনায় সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।

সংকটকালেও ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান। তার ব্যাংকে ২০২০ সালে পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। এর পূর্বের বছরে সোনালীর পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। সংকটময় মুহর্তেও ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৪২৫ কোটি টাকা। শতাংশের হিসেবে প্রবৃদ্ধির হার ২৪ শতাংশ।

২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন মো. আতাউর রহমান প্রধান। এর পূর্বে তিনি রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। ওই তিন বছরে গত কয়েক দশক ধরে লোকসানে থাকা রূপালী ব্যাংক লাভের মুখ দেখেছিল। অব্যাহত লোকসানের কারণে যে রূপালী ব্যাংককে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল সরকার সেই রূপালী ব্যাংক আতাউর রহমান প্রধানের নেতৃত্বে ৫শ কোটি টাকা পর্যন্ত মুনাফা করেছিল। এই ধারা তিনি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন সোনালী ব্যাংকেও। চরম সংকটময় মুহর্তেও নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত সোনালী ব্যাংকে রেকর্ড পরিমাণ পরিচালন মুনাফা অর্জিত হয়েছে।

পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি অর্জনে সবচেয়ে বড় সাফল্য দেখিয়েছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ হাবিব হাসনাত। তার নেতৃত্বে ২০২০ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৪১ শতাংশ। ২০১৯ সালে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছিল ১৩৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালে এসে চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ১৯০ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ১ আগস্ট এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সৈয়দ হাবিব হাসনাত। এরপর তার নেতৃত্বে টানা দুই বছরই পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ব্যাংকটির।
পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি অর্জনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাফল্য দেখিয়েছেন মধুমতি ব্যাংকর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. শফিউল আজম। মধুমতি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৩২ শতাংশ। ২০১৯ সালে যেখানে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা অর্জিত হয়েছিল ২১০ কোটি টাকা সেখানে ২০২০ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৭৮ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট থেকেই চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংকটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন শফিউল আজম যিনি ব্যাংক খাতের শীর্ষ নির্বাহীদের মধ্যে বয়স এবং অভিজ্ঞতায় কনিষ্টদের মধ্যে একজন। ১৯৯১ সালে এবি ব্যাংকের মাধ্যমে এই খাতে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শফিউল।

পরিচালন মুনাফা অর্জনে ভাল সাফল্য দেখাতে পেরেছেন এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুখতার হোসেন। ২০২০ সাল চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ শতাংশ। ২০১৯ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২৬৫ কোটি টাকা। গত বছর ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয় ৩২৩ কোটি টাকা।

২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি নানা সংকট পেড়িয়ে আসা এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের হাল ধরেন মুখতার হোসেন। তিনি যখন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে গিয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই এর প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশে।

এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ২৭০ কোটি টাকা। আর ২০২০ সালে ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকা।

২০২০ সালের ২০ এপ্রিল চতুর্থ প্রজন্মের ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোকাম্মেল হক। তিনি যখন ব্যাংকটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তখন সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির ছিল। এই পরিস্থিতিতেও ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন ব্যাংক খাতে মাত্র ২০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই ব্যাংকার। ব্যাংক খাতের শীর্ষ নির্বাহীদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ২০০১ সালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।

করোনা মহামারিতে সারাদেশে যখন অঘোষিত লকডাউন ছিল সেই মুহর্তে মেঘনা ব্যাংকের হাল ধরেন সিটি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন। ২১ এপ্রিল মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদে যোগ দেন তিনি। এখান থেকেও ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ৪ শতাংশ বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১৯ সালে মেঘনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা এসেছিল ৮২ কোটি টাকা। আর গত বছরে ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ৮৫ কোটি টাকা।

সারাবছর আলোচনায় থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকও করোনার মাঝে চমক দেখিয়েছে চৌধুরী মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে। ২০১৯ সালে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেখানে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৯৫০ কোটি টাকা সেখানে ২০২০ সালে করোনা সংকটের মাঝেও পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৯৮০ কোটি টাকা। ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও চৌধুরী মোশতাক আহমেদ সংকটময় পরিস্থিতির মাঝেও ৩০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি ও সিইও পদে নিয়োগ পান চৌধুরী মোশতাক।

২০২০ সালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১০ কোটি টাকা। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী। ২০১৯ সালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৫৯০ কোটি টাকা, যেটা ২০২০ সালে হয়েছে ৬শ কোটি টাকা।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফাও বেড়েছে ১০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছিল ৬শ কোটি টাকা। করোনা মহামারির মধ্যেও ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এম রিয়াজুল করিমের নেতৃত্বে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬১০ কোটি টাকা।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এস শিকদার