০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অসহায় মা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকসেবীদের দাবিকৃত একমাত্র সম্বল অটোরিকশাটি দিতে রাজি না হওয়ায় সাজ্জাত হোসেন (২২) নামের এক অটোরিকশা চালককে শাসরোধ ও ইট-হাতুড়ি পেটা করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারই মা। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মা রানি বেগম প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরে বেড়ালেও ভয় ও আতঙ্কে মুখ খুলতে পারছেননা রানি বেগম।
গত ৩ এপ্রিল (শনিবার) রাতে সাজ্জাদ হোসেনকে হত্যা করে গুম করে ফেলা হয়। গত ৭ এপ্রিল বুধবার এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের টেংরারটেক এলাকা থেকে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ সাজ্জাদের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে। নিহত সাজ্জাত হোসেন রূপগঞ্জ উপজেলার মাছুমাবাদ গ্রামের তোতা মিয়া হাউলাদারের ছেলে।
মা রানী বেগম জানান, তার স্বামী তোতা মিয়া হাউলাদার দুই বিয়ে করেছেন। তিনি প্রথম স্ত্রী। তার কালাম মিয়া ও সাজ্জাদ হোসেন নামের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে কালাম বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করে। সাজ্জাদ হোসেনকে নিয়েই মা রানী বেগম মিয়াবাড়ী নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। রানি বেগম স্থানীয় একটি বে-সরকারী হাসপাতালে আয়ার কাজ করেন। গত এক বছর আগে রানী বেগম ছেলে সাজ্জাদ হোসেনকে জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি ব্যাটারিত চালিত অটোরিকশা কিনে দেন। আর ওই অটোরিকশা চালিয়ে সংসারে অর্থ যোগান দিতেন ছেলে সাজ্জাদ হোসেন।
পাঁচাইখা গ্রামের মৃত আলমাছের ছেলে রাসেল ও খালপাড় এলাকার কামরুল ইসলাম ওরফে চোটেপাটে নামের দুই জনসহ তাদের সহযোগী এলাকায় মাদকসেবন করে বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ড করে আসছেন। আর মাদকসেবীরা প্রায় সময়ই সাজ্জাদের অটোরিকশা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতো। না যেতে চাইলে প্রাননাশের হুমকি দিতো। সাজ্জাদ মারা যাওয়ার বেশ কিছু দিন আগে উল্লেখিত মাদকসেবীরা ওই অটোরিকশা দাবি করে সাজ্জাদের কাছে। আর এ বিষয়টি সাজ্জাদ তার মাকে জানান।
গত ৩ এপ্রিল (শনিবার) রাতে ওই মাদকসেবীরা সাজ্জাদকে নিয়ে অটোরিকশা যোগে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরেনি। আর ওই রাতেই অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নিতে সাজ্জাদকে শ^াসরোধে ও ইট-হাতুড়ি পেটা করে হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের টেংরারটেক এলাকায় হাত-পা বেধে লেপ-তোষক দিয়ে ঢেকে রাখে। এরপর গত ৭ এপ্রিল বুধবার রূপগঞ্জ থানা পুলিশ সাজ্জাদের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে মা রানী বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে পড়নে থাকা প্যান্ট, গামছা, গেঞ্জি, বেল্ট, জুতা ও দেহ দেখে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। এখন পুলিশ কি ব্যবস্থা করলো তা তিনি জানেননা। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন রানী বেগম।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, মাদকসেবীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। এরা এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। উল্লেখিত মাদকসেবীসহ মাদকসেবীদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটিত হবে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচএম জসিম উদ্দিন জানান, লাশ উদ্ধারের পর মামলা করার জন্য কাউকে না পেয়ে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে একটি গুম ও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হন রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শন হুমায়ুন। এখন সাজ্জাদের মা রানী বেগমের সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ রয়েছে। ওসি আরো জানান, হত্যার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

পিরোজপুরে ছাত্রলীগ কর্মীকে পিটিতে হত্যা মামলায় ২ আসামী গ্রেপ্তার

ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অসহায় মা

প্রকাশিত : ০৭:২৪:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ এপ্রিল ২০২১

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকসেবীদের দাবিকৃত একমাত্র সম্বল অটোরিকশাটি দিতে রাজি না হওয়ায় সাজ্জাত হোসেন (২২) নামের এক অটোরিকশা চালককে শাসরোধ ও ইট-হাতুড়ি পেটা করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারই মা। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মা রানি বেগম প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরে বেড়ালেও ভয় ও আতঙ্কে মুখ খুলতে পারছেননা রানি বেগম।
গত ৩ এপ্রিল (শনিবার) রাতে সাজ্জাদ হোসেনকে হত্যা করে গুম করে ফেলা হয়। গত ৭ এপ্রিল বুধবার এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের টেংরারটেক এলাকা থেকে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ সাজ্জাদের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে। নিহত সাজ্জাত হোসেন রূপগঞ্জ উপজেলার মাছুমাবাদ গ্রামের তোতা মিয়া হাউলাদারের ছেলে।
মা রানী বেগম জানান, তার স্বামী তোতা মিয়া হাউলাদার দুই বিয়ে করেছেন। তিনি প্রথম স্ত্রী। তার কালাম মিয়া ও সাজ্জাদ হোসেন নামের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে কালাম বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করে। সাজ্জাদ হোসেনকে নিয়েই মা রানী বেগম মিয়াবাড়ী নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। রানি বেগম স্থানীয় একটি বে-সরকারী হাসপাতালে আয়ার কাজ করেন। গত এক বছর আগে রানী বেগম ছেলে সাজ্জাদ হোসেনকে জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি ব্যাটারিত চালিত অটোরিকশা কিনে দেন। আর ওই অটোরিকশা চালিয়ে সংসারে অর্থ যোগান দিতেন ছেলে সাজ্জাদ হোসেন।
পাঁচাইখা গ্রামের মৃত আলমাছের ছেলে রাসেল ও খালপাড় এলাকার কামরুল ইসলাম ওরফে চোটেপাটে নামের দুই জনসহ তাদের সহযোগী এলাকায় মাদকসেবন করে বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ড করে আসছেন। আর মাদকসেবীরা প্রায় সময়ই সাজ্জাদের অটোরিকশা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতো। না যেতে চাইলে প্রাননাশের হুমকি দিতো। সাজ্জাদ মারা যাওয়ার বেশ কিছু দিন আগে উল্লেখিত মাদকসেবীরা ওই অটোরিকশা দাবি করে সাজ্জাদের কাছে। আর এ বিষয়টি সাজ্জাদ তার মাকে জানান।
গত ৩ এপ্রিল (শনিবার) রাতে ওই মাদকসেবীরা সাজ্জাদকে নিয়ে অটোরিকশা যোগে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরেনি। আর ওই রাতেই অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নিতে সাজ্জাদকে শ^াসরোধে ও ইট-হাতুড়ি পেটা করে হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের টেংরারটেক এলাকায় হাত-পা বেধে লেপ-তোষক দিয়ে ঢেকে রাখে। এরপর গত ৭ এপ্রিল বুধবার রূপগঞ্জ থানা পুলিশ সাজ্জাদের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে মা রানী বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে পড়নে থাকা প্যান্ট, গামছা, গেঞ্জি, বেল্ট, জুতা ও দেহ দেখে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। এখন পুলিশ কি ব্যবস্থা করলো তা তিনি জানেননা। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন রানী বেগম।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, মাদকসেবীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। এরা এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। উল্লেখিত মাদকসেবীসহ মাদকসেবীদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটিত হবে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচএম জসিম উদ্দিন জানান, লাশ উদ্ধারের পর মামলা করার জন্য কাউকে না পেয়ে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে একটি গুম ও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হন রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শন হুমায়ুন। এখন সাজ্জাদের মা রানী বেগমের সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ রয়েছে। ওসি আরো জানান, হত্যার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ