০৮:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সৌন্দর্য্য ছড়াচ্ছে পথের ধারে অযত্নে জন্মানো লান্টানা

লান্টানা বা পুটুস বা ছত্রা হল ভারবেনা বা ভারবেনাস পরিবারভূক্ত একটি ফুলের প্রজাতি, এর উদ্ভিদতাত্তিক নাম হল খধহঃধহধ পধসধৎধ এবং এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা। বর্র্তমানে এশিয়ার বাংলাদেশ ও ভারতসহ সর্বত্রই পাওয়া যায়। যতœ নিবে পরের কথা, অনেকে হয়তো এই ভেষজ গাছটির নামই জানে না। পথের ধারে আগাছা হিসেবে জন্মানো এই লান্টানা সৌন্দর্য্য ছাড়ায়। অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে উঠা এই গাছটি ভেষজ উদ্ভিদ ও শোভাবর্ধকারী হিসেবেই প্রধান ব্যবহার হয়।

বর্তমানে লান্টানা বাগানের সাজানোর জন্য রোপণ করা হয়। এটি ক্রান্তীয় মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ পৃথিবীর ৫০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপে ওলন্দাজদের কর্তৃক লান্টানা চাষ করা হয়। এশিয়া ও ওশেনিয়ায় এটি অতি দ্রæত ছড়িয়ে পড়েছে এবং এখানে এখনো একটি আগাছা হিসাবে বেশি পরিচিত। গোয়ায় এই ফুলটি পর্তুগিজেরা প্রথম নিয়ে আসে। এই ফুলের ছত্রমঞ্জরী দেখতে খুব সুন্দর। এর ফুলে নানারকম প্রজাপতি দেখা যায়। প্রথমে ফুল হাল্কা হলুদ রঙের হয়, ‘ক্যারোটিন’ থাকার কারণে। এ সময় ফুলে পরাগায়ন হয় এবং পরাগায়নের পরেই মধুভান্ড শেষ হয়ে যায় এবং ফুলের রং বদলাতে থাকে।

ভারতে পরিচালিত গবেষণায় জানা গেছে, ল্যান্টানার পাতায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, ছত্রাকনাশক এবং কীটনাশক গুনাগুন বিদ্যমান। লান্টেনা ক্যান্সার, ত্বকের চুলকানি, কুষ্ঠরোগ, চিকেন পক্স, হাম, হাঁপানি, আলসারসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ঐতিহ্যগতভাবে ভেষজ ওষুধে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও লান্টেনা উদ্ভিদের নির্যাস ইঁদুরের গ্যাস্ট্রিক আলসার বৃদ্ধি কমাতে সহায়তা করে। উদ্ভিদের নির্যাস ব্রাজিলে শ্বাসতন্ত্র সংক্রমণের চিকিৎসার জন্যও ব্যবহার করা হয়।

ল্যান্টানা খুব সহজেই জন্মায় এবং অল্প পরিচর্যায় বেঁচে থাকতে পারে বলে ডাচ অভিযাত্রীরা নতুন বিশ্ব থেকে একে প্রথম ইউরোপে নিয়ে এসেছিল শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসাবে। পরবর্তীতে এই ল্যান্টানা ব্যবহারের কারণে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত লাভ করে। লান্টানা প্রজাপতি এবং পাখিদেরও আকর্ষণ করে এবং প্রায়শই প্রজাপতি বাগানে ব্যবহৃত হয়। শোভাবর্ধক হিসাবে, লান্টানা প্রায়শই ঠান্ডা জলবায়ুুতে বাড়িন ভিতরে বা সংরক্ষণাগারে রোপন করা হয়, তবে পর্যাপ্ত আশ্রয় পেলে এটি বাগানও গড়ে তুলতে পারে।

অনেক প্রজাপতির প্রজাতি লান্টেনা উদ্ভিদের ফুলের মধু খায়। প্রজাতিটি পশ্চিম গোলার্ধের বৃহত্তম প্রজাপতি, খাদ্য হিসাবে ফুলের মধু খাওয়ার জন্য পরিচিত। এক ধরনের জাম্পিং স্পাইডারে সাথে লান্টেনার একটি বিশেষ সম্পর্ক আছে। এই জাম্পিং স্পাইডারগুলো খাবারের জন্য ফুলের অশৃত গ্রহণ করে এবং বিয়ের জন্য লান্টেনাকে পছন্দের একটি স্থান হিসাবে বিবেচনা করে।

আগাছা এই লান্টানা নামের উদ্ভিদটির দেখা মিললো গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার হা-মীম গ্রæপের ইন্ড্রাস্টিয়াল পার্কের (সাবেক মসলিন কটন মিলস) শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ে এবং কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়ক, বোয়ালী-বর্তুল সড়ক, কালীগঞ্জ-পানজোরা সড়ক ও কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন শাখা রাস্তাগুলোর পাশে দেখা যায়। অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে উঠা উদ্ভিদটি সবার সৃষ্টিতে পড়েনা। যারা আসলে প্রকৃতি প্রেমি তারা এই অবহেলিত জিনিসের সৌন্দর্য্যে খুঁজে বেড়ায়।

লান্টানা নিয়ে কথা হয় স্থানীয় একটি ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে কর্মরত ত্রিশোর্ধ ফোরকানুজ্জামানের সাথে। তিনি জানান, আমরা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে গেলে রাস্তার ধারে প্রায়শই এই ফুল দেথতে পাই। তবে সাধারণত এর সৌন্দর্য্যটাই আমরা উপভোগ করি। তবে এর ঔষধি গুণাগুন সম্পর্কে জানি না। একই কথা বলে একই ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে কর্মরত ২৫ বছর বয়সী তরুণ এনামুল হক ছাম্মি।

ব্যাটারী চালিত অটোরিকসা চালক মো. আরিফ মিয়া জানান, ইজিবাইক চালানোর সুবাদে স্থানীয়ভাবে বিভিন্নস্থানে ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়। তখন রাস্তার ধারে এই ফুল ফুটে থাকতে দেখি। নাম জানা না থাকলেও এই ফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করি। তবে এলাকার বা স্থানীয় মুরব্বিদের কাছে জানতে পারি এটা লান্টানা ফুল। শুনেছি এর ঔষধি গুণাগুণও আছে বেশ।

কালীগঞ্জ বাজারের জুতা ব্যবসা ত্রিশোর্ধ সুজন মিয়া জানান, আসলে এই ফুল রাস্তার ধারে ফুটে আছে দেখি। কেউ কোন যতœ নেয়না। অবহেলা আর অনাদরে বেড়ে উঠা এই ঔষধি গাছ এটি। তবে লান্টার রুপ সৌন্দর্য্য যে কাউকে মুগ্ধ করে।

লান্টানা সম্পর্কে শখের ফটোগ্রাফার নুরুল ইসলামের বলেন, রাস্তার ধারে অনেকের অজান্তেই এই উদ্ভিদটি সৌন্দর্য্যে ছাড়ায়। গাছাটির খুব কাছে না গেলে আসলে এর সৌন্দর্য্যে উপভোগ করা যায় না। আমি মাঝে মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে কালীগঞ্জের বিভিন্নস্থানে শখের বসে ছবি তুলতে ঘুরে বেড়াই। আর তখন এই লান্টানাসহ অনেক নাম না জানা উদ্ভিদ দেখতে পাই। ভাল লাগলে ছবিও তুলে ফেলি। তবে লান্টানার অন্যরকম একটা সৌন্দর্য্য লক্ষ্য করা যায়। শুরুতে ফুলটি হাল্কা হলুদ রঙের হলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লান্টানার রং বদলাতে থাকে। তবে বেশ কিছু রঙ্গের সমন্বয়ে পথের ধারে অবহেলা অনাধরে পড়ে থাকা ফুলটি দেখতে বেশ চমৎকার।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

ট্যাগ :

সৌন্দর্য্য ছড়াচ্ছে পথের ধারে অযত্নে জন্মানো লান্টানা

প্রকাশিত : ০৬:০০:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুন ২০২২

লান্টানা বা পুটুস বা ছত্রা হল ভারবেনা বা ভারবেনাস পরিবারভূক্ত একটি ফুলের প্রজাতি, এর উদ্ভিদতাত্তিক নাম হল খধহঃধহধ পধসধৎধ এবং এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা। বর্র্তমানে এশিয়ার বাংলাদেশ ও ভারতসহ সর্বত্রই পাওয়া যায়। যতœ নিবে পরের কথা, অনেকে হয়তো এই ভেষজ গাছটির নামই জানে না। পথের ধারে আগাছা হিসেবে জন্মানো এই লান্টানা সৌন্দর্য্য ছাড়ায়। অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে উঠা এই গাছটি ভেষজ উদ্ভিদ ও শোভাবর্ধকারী হিসেবেই প্রধান ব্যবহার হয়।

বর্তমানে লান্টানা বাগানের সাজানোর জন্য রোপণ করা হয়। এটি ক্রান্তীয় মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ পৃথিবীর ৫০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপে ওলন্দাজদের কর্তৃক লান্টানা চাষ করা হয়। এশিয়া ও ওশেনিয়ায় এটি অতি দ্রæত ছড়িয়ে পড়েছে এবং এখানে এখনো একটি আগাছা হিসাবে বেশি পরিচিত। গোয়ায় এই ফুলটি পর্তুগিজেরা প্রথম নিয়ে আসে। এই ফুলের ছত্রমঞ্জরী দেখতে খুব সুন্দর। এর ফুলে নানারকম প্রজাপতি দেখা যায়। প্রথমে ফুল হাল্কা হলুদ রঙের হয়, ‘ক্যারোটিন’ থাকার কারণে। এ সময় ফুলে পরাগায়ন হয় এবং পরাগায়নের পরেই মধুভান্ড শেষ হয়ে যায় এবং ফুলের রং বদলাতে থাকে।

ভারতে পরিচালিত গবেষণায় জানা গেছে, ল্যান্টানার পাতায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, ছত্রাকনাশক এবং কীটনাশক গুনাগুন বিদ্যমান। লান্টেনা ক্যান্সার, ত্বকের চুলকানি, কুষ্ঠরোগ, চিকেন পক্স, হাম, হাঁপানি, আলসারসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ঐতিহ্যগতভাবে ভেষজ ওষুধে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও লান্টেনা উদ্ভিদের নির্যাস ইঁদুরের গ্যাস্ট্রিক আলসার বৃদ্ধি কমাতে সহায়তা করে। উদ্ভিদের নির্যাস ব্রাজিলে শ্বাসতন্ত্র সংক্রমণের চিকিৎসার জন্যও ব্যবহার করা হয়।

ল্যান্টানা খুব সহজেই জন্মায় এবং অল্প পরিচর্যায় বেঁচে থাকতে পারে বলে ডাচ অভিযাত্রীরা নতুন বিশ্ব থেকে একে প্রথম ইউরোপে নিয়ে এসেছিল শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসাবে। পরবর্তীতে এই ল্যান্টানা ব্যবহারের কারণে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত লাভ করে। লান্টানা প্রজাপতি এবং পাখিদেরও আকর্ষণ করে এবং প্রায়শই প্রজাপতি বাগানে ব্যবহৃত হয়। শোভাবর্ধক হিসাবে, লান্টানা প্রায়শই ঠান্ডা জলবায়ুুতে বাড়িন ভিতরে বা সংরক্ষণাগারে রোপন করা হয়, তবে পর্যাপ্ত আশ্রয় পেলে এটি বাগানও গড়ে তুলতে পারে।

অনেক প্রজাপতির প্রজাতি লান্টেনা উদ্ভিদের ফুলের মধু খায়। প্রজাতিটি পশ্চিম গোলার্ধের বৃহত্তম প্রজাপতি, খাদ্য হিসাবে ফুলের মধু খাওয়ার জন্য পরিচিত। এক ধরনের জাম্পিং স্পাইডারে সাথে লান্টেনার একটি বিশেষ সম্পর্ক আছে। এই জাম্পিং স্পাইডারগুলো খাবারের জন্য ফুলের অশৃত গ্রহণ করে এবং বিয়ের জন্য লান্টেনাকে পছন্দের একটি স্থান হিসাবে বিবেচনা করে।

আগাছা এই লান্টানা নামের উদ্ভিদটির দেখা মিললো গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার হা-মীম গ্রæপের ইন্ড্রাস্টিয়াল পার্কের (সাবেক মসলিন কটন মিলস) শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ে এবং কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়ক, বোয়ালী-বর্তুল সড়ক, কালীগঞ্জ-পানজোরা সড়ক ও কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন শাখা রাস্তাগুলোর পাশে দেখা যায়। অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে উঠা উদ্ভিদটি সবার সৃষ্টিতে পড়েনা। যারা আসলে প্রকৃতি প্রেমি তারা এই অবহেলিত জিনিসের সৌন্দর্য্যে খুঁজে বেড়ায়।

লান্টানা নিয়ে কথা হয় স্থানীয় একটি ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে কর্মরত ত্রিশোর্ধ ফোরকানুজ্জামানের সাথে। তিনি জানান, আমরা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে গেলে রাস্তার ধারে প্রায়শই এই ফুল দেথতে পাই। তবে সাধারণত এর সৌন্দর্য্যটাই আমরা উপভোগ করি। তবে এর ঔষধি গুণাগুন সম্পর্কে জানি না। একই কথা বলে একই ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে কর্মরত ২৫ বছর বয়সী তরুণ এনামুল হক ছাম্মি।

ব্যাটারী চালিত অটোরিকসা চালক মো. আরিফ মিয়া জানান, ইজিবাইক চালানোর সুবাদে স্থানীয়ভাবে বিভিন্নস্থানে ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়। তখন রাস্তার ধারে এই ফুল ফুটে থাকতে দেখি। নাম জানা না থাকলেও এই ফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করি। তবে এলাকার বা স্থানীয় মুরব্বিদের কাছে জানতে পারি এটা লান্টানা ফুল। শুনেছি এর ঔষধি গুণাগুণও আছে বেশ।

কালীগঞ্জ বাজারের জুতা ব্যবসা ত্রিশোর্ধ সুজন মিয়া জানান, আসলে এই ফুল রাস্তার ধারে ফুটে আছে দেখি। কেউ কোন যতœ নেয়না। অবহেলা আর অনাদরে বেড়ে উঠা এই ঔষধি গাছ এটি। তবে লান্টার রুপ সৌন্দর্য্য যে কাউকে মুগ্ধ করে।

লান্টানা সম্পর্কে শখের ফটোগ্রাফার নুরুল ইসলামের বলেন, রাস্তার ধারে অনেকের অজান্তেই এই উদ্ভিদটি সৌন্দর্য্যে ছাড়ায়। গাছাটির খুব কাছে না গেলে আসলে এর সৌন্দর্য্যে উপভোগ করা যায় না। আমি মাঝে মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে কালীগঞ্জের বিভিন্নস্থানে শখের বসে ছবি তুলতে ঘুরে বেড়াই। আর তখন এই লান্টানাসহ অনেক নাম না জানা উদ্ভিদ দেখতে পাই। ভাল লাগলে ছবিও তুলে ফেলি। তবে লান্টানার অন্যরকম একটা সৌন্দর্য্য লক্ষ্য করা যায়। শুরুতে ফুলটি হাল্কা হলুদ রঙের হলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লান্টানার রং বদলাতে থাকে। তবে বেশ কিছু রঙ্গের সমন্বয়ে পথের ধারে অবহেলা অনাধরে পড়ে থাকা ফুলটি দেখতে বেশ চমৎকার।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর