০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ডলি জহুরের জন্মদিনে শুভেচ্ছা

গুণী অভিনেত্রী ডলি জহুরের আজ জন্মদিন। ১৯৫৫ সালের ১৭ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এই গুণী অভিনেত্রীর জন্মদিনে ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চয়নিকা চৌধুরী, শতাব্দী ওয়াদুদ, প্রাণ রায়, ঊর্মিলা করসহ একাধিক অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা। শতাব্দী ওয়াদুদ জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, ‘অভিনয়ের সবগুলো মাধ্যমে আপনার মতো এত সাবলীল ও দুর্দান্ত বিচরণ আমাদের দেশের খুব কম শিল্পীই করতে পেরেছেন। গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে আপনার করা অভিনয় আমাদের থিয়েটার, রেডিও, টিভি নাটক এবং সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছে। ডলি জহুরের জন্মদিনে বিজনেস বাংলাদেশ পরিবারের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।’

ধানমন্ডি ভূতের গলি এলাকায় বেড়ে উঠেছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর। কিশোরী ডলি তখন বড় বোন ও ভাইদের নাট্য চর্চা করতে দেখতেন। সেই সময়েই গড়ে উঠতে দেখেছেন উদীচীসহ অনেক নাট্যসংগঠন। সেসব সংগঠন ও স্কুলের আয়োজনে বিচিত্রা অনুষ্ঠান হতো। থাকত নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, নাটিকাসহ নানা আয়োজন। নাটিকাতে অভিনয় করতেন ডলি জহুর। তখন স্কুলে পড়তেন। সেসব স্বাধীনতার আগে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দেশাত্মবোধক গল্প নিয়ে অনেক নাটক হতো। চেষ্টা করতেন সেগুলোতে নিয়মিত অভিনয় করার। এভাবেই একসময় অভিনয় দিয়ে স্কুল ও মঞ্চে প্রশংসা কুড়ান। পরে জড়িয়ে যান অভিনয়ের ভালোবাসায়।

ডলি জহুর বলেন, ‘শৈশব থেকেই প্রচুর নাটকে অভিনয় করেছি। তবে সেভাবে রিহার্সাল করা হতো না। স্কুলে অভিনয়ের সময় একটি চিত্রনাট্য হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতো।’

যেকোনো চরিত্রের কথা বললে মুহূর্তেই তিনি সেভাবে অভিনয় করে দেখিয়ে দিতেন। অভিনেত্রী মনে করেন, শৈশব থেকে আশপাশের বিভিন্ন পেশার মানুষদের জীবনযাপন কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করতেন বলেই এই দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছিলেন।’

সে সময়ে মেয়েদের জন্য অভিনয়ে আসা কঠিন ছিল। ডলি জহুর কীভাবে পেরেছিলেন? এ প্রসঙ্গে এই গুণী অভিনেত্রী বলেন, ‘পরিবার থেকে মা চাইতেন না অভিনয় করি। অভিনয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। কারণ, তিনি লেখাপড়াকেই বেশি গুরুত্ব দিতেন। বেশির ভাগ সময়ই মা বলতেন, “এত বড় মেয়ে পড়াশোনা নেই, অভিনয় করতে যায়। এগুলো ঠিক না। পড়াশোনায় মনোযোগী হও।” কিন্তু অন্যান্যরা বেশ সহযোগিতা করতেন। এখনো প্রায়ই মনে পড়ে, মা রাগ করতেন অন্যদিকে বাবা ইশারা দিয়ে সাহস দিতেন। ইশারায় বাবা বোঝানোর চেষ্টা করতেন, কথা বলো না, চুপ থাকো।’ একসময় অভিনয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেন। অভিনয়ে তাঁর ডাক পড়তে থাকে।

বাবা চাইতেন মেয়ে মঞ্চ নাটক, নাচ, গান করুক। এ জন্য মায়ের সব রাগ ছিল বাবার ওপর। মায়ের কথা ছিল বাবা তাঁকে প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলছেন। ডলি জহুর সেই সময়গুলো খুব উপভোগ করতেন। ‘পড়াশোনায় কেমন ছিলেন?’ এমন প্রশ্নে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি স্কুল থেকেই খুব ভালো রেজাল্ট করেছি। এই জন্য সবাই জানতেন আমি নাটক করলেও পড়াশোনায় মনোযোগী। বাবা আমার ভালো লাগাকে গুরত্ব দিতেন।’

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সিনেমা ও নাটকে সমান তালে অভিনয় করেছেন ডলি জহুর। দুই মাধ্যমেই তিনি জনপ্রিয়। এখনো চরিত্রের নাম ধরে ডাকেন দর্শক। কখনো তিনি ‘শঙ্খনীল কারাগার’–এর রাবেয়া, কখনো তিনি ‘এই সব দিনরাত্রি’র নিলু ভাবি, কখনো ঝগড়াওয়ালি। সব ছাপিয়ে বর্তমান সময়ে ভক্ত ও তারকাদের কাছে তিনি ‘মা’ হয়ে রয়েছেন। এখন অভিনয় একটু কমিয়ে দিয়েছেন। পরিবারকেই বেশি সময় দিচ্ছেন। তবে এবার ঈদে সাত পর্বের ‘ড্রিম ট্যারেস’, ‘আমার আপনজন’সহ বেশ কিছু নাটকে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গেছে।

যে অভিনয় ও শিল্পের টানে তিনি হয়ে উঠেছেন সবার কাছে প্রিয়, ‘সেই অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা কীভাবে জন্ম?’ এমন প্রশ্নে ডলি জহুর বলেন, ‘আমি শখে নাচ–গান করেছি। ভালো লাগত। অনেকেই পছন্দ করত, উৎসাহ দিত। এভাবেই একসময় মঞ্চে উঠি। স্বাধীনতার পরে দেশের অনেক জনপ্রিয় গান গাইতে হতো। কোরাস গান করতাম। রেডিওতেও গান করেছি। সেসব রেকর্ডিং করা আছে। ভালো লাগা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান পড়ার সময়ও থিয়েটার করতাম। কিন্তু অভিনয় করব কখনোই ভাবিনি। আমার স্বামী চাকুরি করতেন। তিনি আমার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতেন। আমাকে চাকুরি করতে দিতেন না। তখন আমি মঞ্চে, বেতারে অভিনয় করি। এক সময় টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করি। এভাবেই একসময় মনে হয় অভিনয় আমার জায়গা।’

ক্যারিয়ারে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দুইবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৯২ সালে হুমায়ূন আহমেদের কাহিনি, সংলাপ ও চিত্রনাট্য নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শঙ্খনীল কারাগার’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। পরে ২০০৬ সালে কাজী মোরশেদ পরিচালিত ‘ঘানি’ সিনেমায় অভিনয় করে পার্শ্বচরিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার জয় করেন। এ ছাড়া একাধিকবার বাচসাসসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই অভিনয়শিল্পী।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

ডলি জহুরের জন্মদিনে শুভেচ্ছা

প্রকাশিত : ০৬:৪১:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২

গুণী অভিনেত্রী ডলি জহুরের আজ জন্মদিন। ১৯৫৫ সালের ১৭ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এই গুণী অভিনেত্রীর জন্মদিনে ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চয়নিকা চৌধুরী, শতাব্দী ওয়াদুদ, প্রাণ রায়, ঊর্মিলা করসহ একাধিক অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা। শতাব্দী ওয়াদুদ জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, ‘অভিনয়ের সবগুলো মাধ্যমে আপনার মতো এত সাবলীল ও দুর্দান্ত বিচরণ আমাদের দেশের খুব কম শিল্পীই করতে পেরেছেন। গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে আপনার করা অভিনয় আমাদের থিয়েটার, রেডিও, টিভি নাটক এবং সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছে। ডলি জহুরের জন্মদিনে বিজনেস বাংলাদেশ পরিবারের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।’

ধানমন্ডি ভূতের গলি এলাকায় বেড়ে উঠেছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর। কিশোরী ডলি তখন বড় বোন ও ভাইদের নাট্য চর্চা করতে দেখতেন। সেই সময়েই গড়ে উঠতে দেখেছেন উদীচীসহ অনেক নাট্যসংগঠন। সেসব সংগঠন ও স্কুলের আয়োজনে বিচিত্রা অনুষ্ঠান হতো। থাকত নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, নাটিকাসহ নানা আয়োজন। নাটিকাতে অভিনয় করতেন ডলি জহুর। তখন স্কুলে পড়তেন। সেসব স্বাধীনতার আগে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দেশাত্মবোধক গল্প নিয়ে অনেক নাটক হতো। চেষ্টা করতেন সেগুলোতে নিয়মিত অভিনয় করার। এভাবেই একসময় অভিনয় দিয়ে স্কুল ও মঞ্চে প্রশংসা কুড়ান। পরে জড়িয়ে যান অভিনয়ের ভালোবাসায়।

ডলি জহুর বলেন, ‘শৈশব থেকেই প্রচুর নাটকে অভিনয় করেছি। তবে সেভাবে রিহার্সাল করা হতো না। স্কুলে অভিনয়ের সময় একটি চিত্রনাট্য হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতো।’

যেকোনো চরিত্রের কথা বললে মুহূর্তেই তিনি সেভাবে অভিনয় করে দেখিয়ে দিতেন। অভিনেত্রী মনে করেন, শৈশব থেকে আশপাশের বিভিন্ন পেশার মানুষদের জীবনযাপন কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করতেন বলেই এই দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছিলেন।’

সে সময়ে মেয়েদের জন্য অভিনয়ে আসা কঠিন ছিল। ডলি জহুর কীভাবে পেরেছিলেন? এ প্রসঙ্গে এই গুণী অভিনেত্রী বলেন, ‘পরিবার থেকে মা চাইতেন না অভিনয় করি। অভিনয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। কারণ, তিনি লেখাপড়াকেই বেশি গুরুত্ব দিতেন। বেশির ভাগ সময়ই মা বলতেন, “এত বড় মেয়ে পড়াশোনা নেই, অভিনয় করতে যায়। এগুলো ঠিক না। পড়াশোনায় মনোযোগী হও।” কিন্তু অন্যান্যরা বেশ সহযোগিতা করতেন। এখনো প্রায়ই মনে পড়ে, মা রাগ করতেন অন্যদিকে বাবা ইশারা দিয়ে সাহস দিতেন। ইশারায় বাবা বোঝানোর চেষ্টা করতেন, কথা বলো না, চুপ থাকো।’ একসময় অভিনয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেন। অভিনয়ে তাঁর ডাক পড়তে থাকে।

বাবা চাইতেন মেয়ে মঞ্চ নাটক, নাচ, গান করুক। এ জন্য মায়ের সব রাগ ছিল বাবার ওপর। মায়ের কথা ছিল বাবা তাঁকে প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলছেন। ডলি জহুর সেই সময়গুলো খুব উপভোগ করতেন। ‘পড়াশোনায় কেমন ছিলেন?’ এমন প্রশ্নে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি স্কুল থেকেই খুব ভালো রেজাল্ট করেছি। এই জন্য সবাই জানতেন আমি নাটক করলেও পড়াশোনায় মনোযোগী। বাবা আমার ভালো লাগাকে গুরত্ব দিতেন।’

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সিনেমা ও নাটকে সমান তালে অভিনয় করেছেন ডলি জহুর। দুই মাধ্যমেই তিনি জনপ্রিয়। এখনো চরিত্রের নাম ধরে ডাকেন দর্শক। কখনো তিনি ‘শঙ্খনীল কারাগার’–এর রাবেয়া, কখনো তিনি ‘এই সব দিনরাত্রি’র নিলু ভাবি, কখনো ঝগড়াওয়ালি। সব ছাপিয়ে বর্তমান সময়ে ভক্ত ও তারকাদের কাছে তিনি ‘মা’ হয়ে রয়েছেন। এখন অভিনয় একটু কমিয়ে দিয়েছেন। পরিবারকেই বেশি সময় দিচ্ছেন। তবে এবার ঈদে সাত পর্বের ‘ড্রিম ট্যারেস’, ‘আমার আপনজন’সহ বেশ কিছু নাটকে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গেছে।

যে অভিনয় ও শিল্পের টানে তিনি হয়ে উঠেছেন সবার কাছে প্রিয়, ‘সেই অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা কীভাবে জন্ম?’ এমন প্রশ্নে ডলি জহুর বলেন, ‘আমি শখে নাচ–গান করেছি। ভালো লাগত। অনেকেই পছন্দ করত, উৎসাহ দিত। এভাবেই একসময় মঞ্চে উঠি। স্বাধীনতার পরে দেশের অনেক জনপ্রিয় গান গাইতে হতো। কোরাস গান করতাম। রেডিওতেও গান করেছি। সেসব রেকর্ডিং করা আছে। ভালো লাগা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান পড়ার সময়ও থিয়েটার করতাম। কিন্তু অভিনয় করব কখনোই ভাবিনি। আমার স্বামী চাকুরি করতেন। তিনি আমার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতেন। আমাকে চাকুরি করতে দিতেন না। তখন আমি মঞ্চে, বেতারে অভিনয় করি। এক সময় টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করি। এভাবেই একসময় মনে হয় অভিনয় আমার জায়গা।’

ক্যারিয়ারে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দুইবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৯২ সালে হুমায়ূন আহমেদের কাহিনি, সংলাপ ও চিত্রনাট্য নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শঙ্খনীল কারাগার’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। পরে ২০০৬ সালে কাজী মোরশেদ পরিচালিত ‘ঘানি’ সিনেমায় অভিনয় করে পার্শ্বচরিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার জয় করেন। এ ছাড়া একাধিকবার বাচসাসসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই অভিনয়শিল্পী।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ