১২:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

ড্রেজিং প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হলে মোংলা বন্দর অচল হয়ে পড়ার আশংকা!

পদ্মা সেতু, খানজাহান আলী বিমান বন্দর, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, খুলনা-মোংলা রেললাইন, পদ্মাসেতু সংলগ্ন ভাঙ্গা-মোংলা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ, রিকন্ডিশন গাড়ী আমদানী, দেশের চলমান মেগা প্রকল্পের মালামাল আমদানী, ঢাকার গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিসহ নানাবিধ সুফলে যখন মোংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্যতা বেড়েছে। ঠিক তখনই মোংলা বন্দরের এ উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের আকাশে ষড়যন্ত্রের মেঘ জমেছে। একটি কুচক্রী মহল বন্দরের এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থমকে দিতে চলমান ইনারবার ড্রেজিং পকল্প বাঁধাগ্রস্থ করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।

এ ড্রেজিং প্রকল্প বাঁধাগ্রস্ত হলে মোংলা বন্দরে আবারো অচলাবস্থ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা করছেন বন্দর সংশিস্নষ্টরা। তারা মনে করছেন, একটি বন্দরের প্রধান চালিকা শক্তি হলো তার চ্যানেল/নৌপথ। সেই চ্যানেলটি যদি সুরক্ষিত না থাকে তাহলে বন্দরের পণ্যবাহী বড় বড় বিদেশী জাহাজের আগমন মারাত্মকভাবে বাঁধাগ্রস্থ হবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বন্দরের আমদানী-রফতানীসহ জাতীয় অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্বের অন্যতম প্রাধান প্রাকৃতিক সুরক্ষিত (সুন্দরবন বেষ্টিত) সমুদ্র বন্দর মোংলা। দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ এদেশের সার্বিক উন্নয়নে এ বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম হওয়াতেই অপার সম্ভাবনার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে মোংলা। কিন্তু অতীত ইতিহাসে দেখা যায় ২০০২-০৩ইং অর্থ বছর থেকে ২০০৬-০৭ইং অর্থ বছর পর্যন্ত এটি লোকসানী বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিলো। ওই সময় এ বন্দরকে মৃতপ্রায় অর্থাৎ ডেডহর্স বলেও ঘোষণা করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোংলা বন্দরের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেন। সেই সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে ও বাস্তবায়নধীন অবস্থাতেই মোংলা বন্দর লোকসানী বন্দরের নাম মুছে আজ একটি অর্থনৈতিকভাবে সুদৃঢ় বন্দর হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছে। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১৩১ কিলোমিটার উজানে পশুর নদীর পূব তীরে মোংলা বন্দর অবস্থিত। বঙ্গোপসাগর হতে বন্দর চ্যানেলের প্রবেশ মুখ যা আউটাবার নাম হিসেবে পরিচিত। বন্দরের প্রবেশ মুখ থেকে চ্যানেলের হাড়বাড়ীয়া পর্যন্ত্ম হলো আউটারবার। সম্প্রতি এই আউটাবার ড্রেজিং করায় মোংলা বন্দরের হাড়বাড়ীয় পর্যন্ত সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ অনায়াসে ভিড়তে পারছে। আর হাড়বাড়ীয় থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার নৌপথে গভীরতা ৫/৬ মিটার। ইনারবারে সাড়ে ৮ মিটার গভীরতার ড্রেজিং সম্পন্ন হলে বন্দর জেটিতে সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। পশুর চ্যানেলের ইনারবার ড্রেজিং সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দরকে চট্টগ্রাম বন্দরের সমান সক্ষমতার বন্দরে পরিণত হবে। ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্প’র প্রকল্প পরিচালক ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক্স বিভাগ) শেখ শওকত আলী জানান, ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পটি হাতে নেয়ার আগে ২০১৮ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযু্িক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। এতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও জমির মালিকদের সাথে আলোচনা করে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জন্য জমি নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত জমিতে ড্রেজিংয়ের পলি মাটি ফেললে তাতে ফসলের জন্য উপকারী হবে। এছাড়া ওই নিচু জমিতে জোয়ারের সময় প্লাবিত হয়ে স্থানীয় জনসাধারণের ক্ষতি হয়ে আসছে। তাই ড্রেজিংয়ের মাটি ফেললে স্থানীয় জনবসতি প্লাবিত হবেনা এবং নদী ভাঙ্গনের আশংকা মুক্ত হবে এবং জমির মানও বাড়বে। কিন্তু ওই জমিতে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলায় বাঁধার সৃষ্টি করে আন্দোলনের নামে একটি কুচক্রী মহল সরকারের উন্নয়নকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে ৩০০ একর জমির মধ্যে ১৮৫ একর জমি দুই ফসলি ও ১১৫ একর জমি এক ফসলি। সেখানে তিন ফসলি কোন জমি নেই। জমি চিহ্নিতকরণ ও হুকুম দখলের ক্ষেত্রে খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়। এরপর মোংলা বন্দরের সম্মেলন কক্ষে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে বাগেরহাটের মোংলা ও খুলনার দাকোপ উপজেলার প্রসাশন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর খুলনা জেলা প্রশাসক ও হুকুম দখল কর্তা দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিন ওই জমি পরিদর্শন শেষে সম্ভাব্যতা যাচাই করে হুকুম দখলের সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে সেই সুপারিশ ভূমি মন্ত্রনালয় অনুমোদন দিয়ে ওই জমির ক্ষতিপূরণ বুঝে নিয়ে ২ বছরের জন্য মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ জমি বুঝিয়ে দেয়। ওই জমিতে দুই বছরের জন্য ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার পর জমির মূল মালিকেরা তাদের মালিকানা আবারো ফিরে পাবেন।

মোংলা বন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। খুলনা-মোংলা রেললাইন খুব দ্রæতই চালু হতে যাচ্ছে। খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ, মোংলা বন্দরের সন্নিকটে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াটের রামপাল কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ইপিজেড সম্প্রসারণসহ নানা প্রকল্পের কাজ চলছে। এ সব ঘিরে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে মোংলা বন্দরে ১০ মিটারের অধিক গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ে পশুর চ্যানেলের ইনারবার ড্রেজিং বাস্তবায়ন জরুরী হয়ে পড়েছে।

ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পটি ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারী অনুমোদিত হয়। ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে মোংলা বন্দর জেটি ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সাড়ে ৯ থেকে ১০মিটার গভীরতার জাহাজ হ্যান্ডেলিং করা সম্ভব হবে। মোংলা বন্দর বার্থ এন্ড শিপ অপারেটর এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, মোংলা বন্দর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি অন্যতম চাবিকাঠী। ইনারবার ড্রেজিং কার্যক্রম যদি কেউ ব্যাহত করে কিংবা করতে চায় তা বন্দরের জন্য ভীষণ ক্ষতির কারণ হবে। এতে আমদানী-রপ্তানী ও অর্থনীর উপর প্রভাব পড়বে। তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতু করা হয়েছে মোংলা বন্দরের গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য। যার সুবিধা আমরা বর্তমানে ভোগ করছি। কিন্তু ড্রেজিং বাঁধাগ্রস্থ হলে সেটি হবে আমাদের জন্য একটি খারাপ সংবাদ। একটি দুষ্টু চক্র এটি করছে, কিন্তু কোনভাবেই চলমান উন্নয়ন ব্যাহত করতে দেয়া যাবেনা। কেউ বন্দরকে ক্ষতি করতে চাইলে আমরা সেটি মেনে নিবোনা, আমাদের ব্যবসা ও দেশের স্বার্থে আমরা বন্দরের সাথে এক হয়ে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবো।

এনসিয়েন্ট ষ্টিমশিপ কোম্পানী লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওহিদুজ্জামান বলেন, বন্দরে জাহাজ আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরী প্রয়োজন নদীর নাব্যতা। আর নাব্যতা ঠিক রাখতে ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। ড্রেজিং সম্পন্ন করতেই হবে, নতুবা বড় বড় জাহাজ আসতে পারবেনা। ড্রেজিং জটিলতায় নাব্যতা কমে গেলে জাহাজ আসতে না পারলে মেট্টোরেলের মালামালও আসবে কি করে। তাই বন্দরের উন্নয়নের ড্রেজিংকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সকল প্রতিবন্ধকতা প্রতিহত করতে হবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মুসা বলেন, মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনারবারে চলমান ড্রেজিং প্রকল্প বাঁধাগ্রস্থ হলে জাতীয় অর্থনীতিতে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিস্বার্থভাবে ও দুরদর্শিতার সাথে বন্দর পরিচালনা করে আসছে। চলমান এ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বন্দর সংশিস্নষ্ট সকলের সহযোগীতার দরকার।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মোংলা বন্দর দিয়ে প্রথম গার্মেন্টস পণ্য রফতানি শুরু হয়েছে। দেশের আমদানিকৃত রিকন্ডিশন গাড়ির বেশির ভাগই মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি হচ্ছে। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর মালামাল আসছে। এদিকে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি কয়লাও আসতে শুরু করেছে। সুতরাং ড্রেজিং বাধাগ্রস্ত হলে শুধু মোংলা বন্দরই নয় দেশের এ সকল মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন তিনি।

বিজনেস বাংলাদেশ/হাবিব

জনপ্রিয়

রংপুরে রেল স্টেশনে বৈষম্য উন্নয়ন হয়নি,প্রতিবাদে অবরোধ

ড্রেজিং প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হলে মোংলা বন্দর অচল হয়ে পড়ার আশংকা!

প্রকাশিত : ০৩:৫২:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ অগাস্ট ২০২২

পদ্মা সেতু, খানজাহান আলী বিমান বন্দর, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, খুলনা-মোংলা রেললাইন, পদ্মাসেতু সংলগ্ন ভাঙ্গা-মোংলা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ, রিকন্ডিশন গাড়ী আমদানী, দেশের চলমান মেগা প্রকল্পের মালামাল আমদানী, ঢাকার গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিসহ নানাবিধ সুফলে যখন মোংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্যতা বেড়েছে। ঠিক তখনই মোংলা বন্দরের এ উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের আকাশে ষড়যন্ত্রের মেঘ জমেছে। একটি কুচক্রী মহল বন্দরের এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থমকে দিতে চলমান ইনারবার ড্রেজিং পকল্প বাঁধাগ্রস্থ করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।

এ ড্রেজিং প্রকল্প বাঁধাগ্রস্ত হলে মোংলা বন্দরে আবারো অচলাবস্থ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা করছেন বন্দর সংশিস্নষ্টরা। তারা মনে করছেন, একটি বন্দরের প্রধান চালিকা শক্তি হলো তার চ্যানেল/নৌপথ। সেই চ্যানেলটি যদি সুরক্ষিত না থাকে তাহলে বন্দরের পণ্যবাহী বড় বড় বিদেশী জাহাজের আগমন মারাত্মকভাবে বাঁধাগ্রস্থ হবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বন্দরের আমদানী-রফতানীসহ জাতীয় অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্বের অন্যতম প্রাধান প্রাকৃতিক সুরক্ষিত (সুন্দরবন বেষ্টিত) সমুদ্র বন্দর মোংলা। দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ এদেশের সার্বিক উন্নয়নে এ বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম হওয়াতেই অপার সম্ভাবনার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে মোংলা। কিন্তু অতীত ইতিহাসে দেখা যায় ২০০২-০৩ইং অর্থ বছর থেকে ২০০৬-০৭ইং অর্থ বছর পর্যন্ত এটি লোকসানী বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিলো। ওই সময় এ বন্দরকে মৃতপ্রায় অর্থাৎ ডেডহর্স বলেও ঘোষণা করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোংলা বন্দরের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেন। সেই সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে ও বাস্তবায়নধীন অবস্থাতেই মোংলা বন্দর লোকসানী বন্দরের নাম মুছে আজ একটি অর্থনৈতিকভাবে সুদৃঢ় বন্দর হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছে। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১৩১ কিলোমিটার উজানে পশুর নদীর পূব তীরে মোংলা বন্দর অবস্থিত। বঙ্গোপসাগর হতে বন্দর চ্যানেলের প্রবেশ মুখ যা আউটাবার নাম হিসেবে পরিচিত। বন্দরের প্রবেশ মুখ থেকে চ্যানেলের হাড়বাড়ীয়া পর্যন্ত্ম হলো আউটারবার। সম্প্রতি এই আউটাবার ড্রেজিং করায় মোংলা বন্দরের হাড়বাড়ীয় পর্যন্ত সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ অনায়াসে ভিড়তে পারছে। আর হাড়বাড়ীয় থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার নৌপথে গভীরতা ৫/৬ মিটার। ইনারবারে সাড়ে ৮ মিটার গভীরতার ড্রেজিং সম্পন্ন হলে বন্দর জেটিতে সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। পশুর চ্যানেলের ইনারবার ড্রেজিং সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দরকে চট্টগ্রাম বন্দরের সমান সক্ষমতার বন্দরে পরিণত হবে। ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্প’র প্রকল্প পরিচালক ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক্স বিভাগ) শেখ শওকত আলী জানান, ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পটি হাতে নেয়ার আগে ২০১৮ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযু্িক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। এতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও জমির মালিকদের সাথে আলোচনা করে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জন্য জমি নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত জমিতে ড্রেজিংয়ের পলি মাটি ফেললে তাতে ফসলের জন্য উপকারী হবে। এছাড়া ওই নিচু জমিতে জোয়ারের সময় প্লাবিত হয়ে স্থানীয় জনসাধারণের ক্ষতি হয়ে আসছে। তাই ড্রেজিংয়ের মাটি ফেললে স্থানীয় জনবসতি প্লাবিত হবেনা এবং নদী ভাঙ্গনের আশংকা মুক্ত হবে এবং জমির মানও বাড়বে। কিন্তু ওই জমিতে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলায় বাঁধার সৃষ্টি করে আন্দোলনের নামে একটি কুচক্রী মহল সরকারের উন্নয়নকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে ৩০০ একর জমির মধ্যে ১৮৫ একর জমি দুই ফসলি ও ১১৫ একর জমি এক ফসলি। সেখানে তিন ফসলি কোন জমি নেই। জমি চিহ্নিতকরণ ও হুকুম দখলের ক্ষেত্রে খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়। এরপর মোংলা বন্দরের সম্মেলন কক্ষে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে বাগেরহাটের মোংলা ও খুলনার দাকোপ উপজেলার প্রসাশন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর খুলনা জেলা প্রশাসক ও হুকুম দখল কর্তা দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিন ওই জমি পরিদর্শন শেষে সম্ভাব্যতা যাচাই করে হুকুম দখলের সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে সেই সুপারিশ ভূমি মন্ত্রনালয় অনুমোদন দিয়ে ওই জমির ক্ষতিপূরণ বুঝে নিয়ে ২ বছরের জন্য মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ জমি বুঝিয়ে দেয়। ওই জমিতে দুই বছরের জন্য ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার পর জমির মূল মালিকেরা তাদের মালিকানা আবারো ফিরে পাবেন।

মোংলা বন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। খুলনা-মোংলা রেললাইন খুব দ্রæতই চালু হতে যাচ্ছে। খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ, মোংলা বন্দরের সন্নিকটে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াটের রামপাল কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ইপিজেড সম্প্রসারণসহ নানা প্রকল্পের কাজ চলছে। এ সব ঘিরে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে মোংলা বন্দরে ১০ মিটারের অধিক গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ে পশুর চ্যানেলের ইনারবার ড্রেজিং বাস্তবায়ন জরুরী হয়ে পড়েছে।

ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পটি ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারী অনুমোদিত হয়। ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে মোংলা বন্দর জেটি ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সাড়ে ৯ থেকে ১০মিটার গভীরতার জাহাজ হ্যান্ডেলিং করা সম্ভব হবে। মোংলা বন্দর বার্থ এন্ড শিপ অপারেটর এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, মোংলা বন্দর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি অন্যতম চাবিকাঠী। ইনারবার ড্রেজিং কার্যক্রম যদি কেউ ব্যাহত করে কিংবা করতে চায় তা বন্দরের জন্য ভীষণ ক্ষতির কারণ হবে। এতে আমদানী-রপ্তানী ও অর্থনীর উপর প্রভাব পড়বে। তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতু করা হয়েছে মোংলা বন্দরের গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য। যার সুবিধা আমরা বর্তমানে ভোগ করছি। কিন্তু ড্রেজিং বাঁধাগ্রস্থ হলে সেটি হবে আমাদের জন্য একটি খারাপ সংবাদ। একটি দুষ্টু চক্র এটি করছে, কিন্তু কোনভাবেই চলমান উন্নয়ন ব্যাহত করতে দেয়া যাবেনা। কেউ বন্দরকে ক্ষতি করতে চাইলে আমরা সেটি মেনে নিবোনা, আমাদের ব্যবসা ও দেশের স্বার্থে আমরা বন্দরের সাথে এক হয়ে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবো।

এনসিয়েন্ট ষ্টিমশিপ কোম্পানী লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওহিদুজ্জামান বলেন, বন্দরে জাহাজ আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরী প্রয়োজন নদীর নাব্যতা। আর নাব্যতা ঠিক রাখতে ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। ড্রেজিং সম্পন্ন করতেই হবে, নতুবা বড় বড় জাহাজ আসতে পারবেনা। ড্রেজিং জটিলতায় নাব্যতা কমে গেলে জাহাজ আসতে না পারলে মেট্টোরেলের মালামালও আসবে কি করে। তাই বন্দরের উন্নয়নের ড্রেজিংকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সকল প্রতিবন্ধকতা প্রতিহত করতে হবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মুসা বলেন, মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনারবারে চলমান ড্রেজিং প্রকল্প বাঁধাগ্রস্থ হলে জাতীয় অর্থনীতিতে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিস্বার্থভাবে ও দুরদর্শিতার সাথে বন্দর পরিচালনা করে আসছে। চলমান এ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বন্দর সংশিস্নষ্ট সকলের সহযোগীতার দরকার।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মোংলা বন্দর দিয়ে প্রথম গার্মেন্টস পণ্য রফতানি শুরু হয়েছে। দেশের আমদানিকৃত রিকন্ডিশন গাড়ির বেশির ভাগই মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি হচ্ছে। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর মালামাল আসছে। এদিকে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি কয়লাও আসতে শুরু করেছে। সুতরাং ড্রেজিং বাধাগ্রস্ত হলে শুধু মোংলা বন্দরই নয় দেশের এ সকল মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন তিনি।

বিজনেস বাংলাদেশ/হাবিব