০৪:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

মেয়াদোত্তীর্ণ তিস্তা রেলসেতু-প্রতিদিন পারাপার ১৪টি ট্রেন, দূর্ঘটনার আশংকা!

লালমনিরহাটের রেলওয়ে বিভাগের অতি পুরাতন একটি সেতু যার নাম তিস্তাসেতু। নাট-বল্টু দিয়ে নির্মিত তিস্তা রেল সেতুটির মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় ৭৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজবদি হয়নি ব্রডগেজ তিস্তা রেলসেতু নির্মাণ।

১৮৩৪ সালে বৃটিশ সরকারের আমলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা মৌজায় তিস্তা নদীর উপর নির্মিত তিস্তা রেলসেতু। যার ২ হাজার ১১০ ফুট (৬৪৩ মিটার) দীর্ঘ তৎকালীন বৃটিশ সরকারের প্রতিষ্ঠান নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে তিস্তা রেল সেতুটির নির্মাণ কাজ করে।

লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম-রংপুরসহ সারাদেশের রেল যোগাযোগ অক্ষুন্ন রেখেছে এই তিস্তা সেতুটি। ফিসপ্লেট- নাট-বল্টু দিয়ে নির্মিত তিস্তা রেল সেতুটির স্থায়ীত্বকাল সেই সময় ধরা হয়েছিল ১০০ বছর। বর্তমান তিস্তা রেল সেতুর বয়স প্রায় ১৭৮ বছর।
রেলওয়ে অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সৈন্যরা তিস্তা রেলসেতুতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে এর একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে তা মেরামত করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়। ১৯৭৮ সালে রেলসেতুর ওপর কাঠের পাটাতন বসিয়ে বাস চলাচলের উপযোগী করা হয়।

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার প্রবেশদ্বার তিস্তা রেলসেতুটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে ২০১২ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তিস্তা রেলসেতুর পাশে তিস্তা সড়কসেতু নির্মাণ করে। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ রেলসেতু দিয়ে এখনো প্রতিদিন ১৪টি ট্রেন চলাচল করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, রেলমন্ত্রী ও রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কয়েকবার তিস্তা রেলসেতু পরিদর্শনে এসেছিলেন। সেসময় তারা খুব শিগগির নতুন তিস্তা রেলসেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। নতুন সেতু নির্মাণের নমুনা দেখা যাচ্ছে না উল্লেখ করে স্থানীয়রা জানান, তিস্তা রেলসেতুর স্প্যানগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের সময় কাঁপে। তখন ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়।

ওই এলাকার কলেজ ছাত্রী নুর নিশাত জাহান বলেন, ট্রেনে যোগাযোগের উত্তর অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা তিস্তা রেলসেতু। সেটিও বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে। তিস্তা রেল সেতুটি যেকোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। তারপরও আমরা ঝুকি জেনেও ট্রেনে পারাপার হয়ে কলেজে যাতায়াত করি।

তিস্তা পাড়ের আলিমুদ্দিন বলেন, প্রতিদিন অনেক ট্রেন চলাচল করে এই সেতু দিয়ে। অথচ এটির কোন গুরুত্ব নেই রেল কতৃপক্ষের। রেল কতৃপক্ষের উদাসীনতার কারনে হচ্ছেনা নতুন সেতু নির্মাণ। রেল গাড়ি ব্রিজের ওপর উঠার সাথে সাথে সমস্ত ব্রিজ ঝাঁকুনি দিতে থাকে। মনে ভয় নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হতে হয়। আমরা চাই অতি দ্রুত নতুন একটি তিস্তাসেতু নির্মাণ হউক।

ট্রেনচালক খলিলুর রহমান ও আলমগীর হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তিস্তা রেলসেতুর ওপর গাড়ির গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ তাই এটি ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে।

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক ডিআরএম আব্দুস সালাম বলেন, তিস্তার ওপর ব্রডগেজ ডিজাইনে নতুন রেলসেতু নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে রেলওয়ে কতৃপক্ষ। এ নিয়ে কাজও চলছে। আপাতত এ প্রকল্প নিয়ে আশার বাণী না থাকলেও প্রকল্পটি আশা করি বাস্তবায়ন হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

হজাদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি জাফর,সাধারণ সম্পাদক আল আমিন

মেয়াদোত্তীর্ণ তিস্তা রেলসেতু-প্রতিদিন পারাপার ১৪টি ট্রেন, দূর্ঘটনার আশংকা!

প্রকাশিত : ০৩:২৬:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২২

লালমনিরহাটের রেলওয়ে বিভাগের অতি পুরাতন একটি সেতু যার নাম তিস্তাসেতু। নাট-বল্টু দিয়ে নির্মিত তিস্তা রেল সেতুটির মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় ৭৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজবদি হয়নি ব্রডগেজ তিস্তা রেলসেতু নির্মাণ।

১৮৩৪ সালে বৃটিশ সরকারের আমলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা মৌজায় তিস্তা নদীর উপর নির্মিত তিস্তা রেলসেতু। যার ২ হাজার ১১০ ফুট (৬৪৩ মিটার) দীর্ঘ তৎকালীন বৃটিশ সরকারের প্রতিষ্ঠান নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে তিস্তা রেল সেতুটির নির্মাণ কাজ করে।

লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম-রংপুরসহ সারাদেশের রেল যোগাযোগ অক্ষুন্ন রেখেছে এই তিস্তা সেতুটি। ফিসপ্লেট- নাট-বল্টু দিয়ে নির্মিত তিস্তা রেল সেতুটির স্থায়ীত্বকাল সেই সময় ধরা হয়েছিল ১০০ বছর। বর্তমান তিস্তা রেল সেতুর বয়স প্রায় ১৭৮ বছর।
রেলওয়ে অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সৈন্যরা তিস্তা রেলসেতুতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে এর একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে তা মেরামত করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়। ১৯৭৮ সালে রেলসেতুর ওপর কাঠের পাটাতন বসিয়ে বাস চলাচলের উপযোগী করা হয়।

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার প্রবেশদ্বার তিস্তা রেলসেতুটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে ২০১২ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তিস্তা রেলসেতুর পাশে তিস্তা সড়কসেতু নির্মাণ করে। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ রেলসেতু দিয়ে এখনো প্রতিদিন ১৪টি ট্রেন চলাচল করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, রেলমন্ত্রী ও রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কয়েকবার তিস্তা রেলসেতু পরিদর্শনে এসেছিলেন। সেসময় তারা খুব শিগগির নতুন তিস্তা রেলসেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। নতুন সেতু নির্মাণের নমুনা দেখা যাচ্ছে না উল্লেখ করে স্থানীয়রা জানান, তিস্তা রেলসেতুর স্প্যানগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের সময় কাঁপে। তখন ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়।

ওই এলাকার কলেজ ছাত্রী নুর নিশাত জাহান বলেন, ট্রেনে যোগাযোগের উত্তর অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা তিস্তা রেলসেতু। সেটিও বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে। তিস্তা রেল সেতুটি যেকোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। তারপরও আমরা ঝুকি জেনেও ট্রেনে পারাপার হয়ে কলেজে যাতায়াত করি।

তিস্তা পাড়ের আলিমুদ্দিন বলেন, প্রতিদিন অনেক ট্রেন চলাচল করে এই সেতু দিয়ে। অথচ এটির কোন গুরুত্ব নেই রেল কতৃপক্ষের। রেল কতৃপক্ষের উদাসীনতার কারনে হচ্ছেনা নতুন সেতু নির্মাণ। রেল গাড়ি ব্রিজের ওপর উঠার সাথে সাথে সমস্ত ব্রিজ ঝাঁকুনি দিতে থাকে। মনে ভয় নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হতে হয়। আমরা চাই অতি দ্রুত নতুন একটি তিস্তাসেতু নির্মাণ হউক।

ট্রেনচালক খলিলুর রহমান ও আলমগীর হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তিস্তা রেলসেতুর ওপর গাড়ির গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ তাই এটি ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে।

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক ডিআরএম আব্দুস সালাম বলেন, তিস্তার ওপর ব্রডগেজ ডিজাইনে নতুন রেলসেতু নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে রেলওয়ে কতৃপক্ষ। এ নিয়ে কাজও চলছে। আপাতত এ প্রকল্প নিয়ে আশার বাণী না থাকলেও প্রকল্পটি আশা করি বাস্তবায়ন হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব