১২:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

বাচ্চু পরিবারের ২৪৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনে দুদকের ৪ মামলা

সাম্প্রতিক সময়ে ২৪৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৪ মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি ৫৮ কোটি টাকা কানাডায় পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। চার মামলার মধ্যে তিনটি মামলাতেই বাচ্চুকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রথম মামলায় আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ ৪৬ হাজার ১৫ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন এবং ৫৬ কোটি ৫৭ লাখ ১০ হাজার ২০৭ টাকা কানাডায় পাচারসহ মোট ১২৪ কোটি ৯৩ লাখ ৬ হাজার ২৭৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ কানাডায় পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রী মিসেস শিরিন আকতার ও শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তৃতীয় মামলায় ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও বাবা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ৪৩ কোটি ৬২ লাখ ৬০৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া তার বাবার কাছ থেকে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ২ কাঠা জমি হেবা দলিল মূলে প্রাপ্ত হয়েও দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেছেন। এছাড়া অবৈধভাবে উপার্জিত ৮৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৮ টাকা কানাডায় পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

চতুর্থ মামলায় তার মেয়ে শেখ রাফা হাই ও তার বাবা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় শেখ রাফা হাইয়ের বিরুদ্ধে ৪০ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার ১৬৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে উপার্জিত ৭৪ লাখ ৮১ হাজার ৪৬৩ টাকা কানাডায় পাচার ও সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে বাবার কাছ থেকে ৮৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার ৬ কাঠা জমি হেবা দলিল মূলে প্রাপ্ত হয়েও গোপন করেছেন তিনি।
আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা; মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাগুলো রুজু করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক। সংস্থাটির দায়ের করা মোট ৫৯ মামলার চার্জশিটের মধ্যে ৫৮টি মামলার তদন্তে নতুন আসামি হিসাবে আবদুল হাই বাচ্চু ও কোম্পানি সচিব শাহ আলম ভূঁইয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সালে দায়ের করা কোনো মামলাতেই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। যে কারণে দুদককে বারবার বিভিন্ন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে। মামলার দীর্ঘ ৮ বছর পর চার্জশিটে আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়।

এছাড়া গত বছরের এপ্রিলে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০.২৫ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে লুটপাট করা প্রায় ৯৫ কোটি টাকা গোপন করার চেষ্টা ও সাড়ে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী-সন্তান ও ভাই এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

ডিএস..

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

কুমিল্লা (উঃ) জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বাচ্চু পরিবারের ২৪৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনে দুদকের ৪ মামলা

প্রকাশিত : ০২:৫৩:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সাম্প্রতিক সময়ে ২৪৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৪ মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি ৫৮ কোটি টাকা কানাডায় পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। চার মামলার মধ্যে তিনটি মামলাতেই বাচ্চুকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রথম মামলায় আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ ৪৬ হাজার ১৫ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন এবং ৫৬ কোটি ৫৭ লাখ ১০ হাজার ২০৭ টাকা কানাডায় পাচারসহ মোট ১২৪ কোটি ৯৩ লাখ ৬ হাজার ২৭৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ কানাডায় পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রী মিসেস শিরিন আকতার ও শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তৃতীয় মামলায় ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও বাবা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ৪৩ কোটি ৬২ লাখ ৬০৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া তার বাবার কাছ থেকে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ২ কাঠা জমি হেবা দলিল মূলে প্রাপ্ত হয়েও দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেছেন। এছাড়া অবৈধভাবে উপার্জিত ৮৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৮ টাকা কানাডায় পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

চতুর্থ মামলায় তার মেয়ে শেখ রাফা হাই ও তার বাবা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় শেখ রাফা হাইয়ের বিরুদ্ধে ৪০ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার ১৬৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে উপার্জিত ৭৪ লাখ ৮১ হাজার ৪৬৩ টাকা কানাডায় পাচার ও সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে বাবার কাছ থেকে ৮৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার ৬ কাঠা জমি হেবা দলিল মূলে প্রাপ্ত হয়েও গোপন করেছেন তিনি।
আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা; মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাগুলো রুজু করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক। সংস্থাটির দায়ের করা মোট ৫৯ মামলার চার্জশিটের মধ্যে ৫৮টি মামলার তদন্তে নতুন আসামি হিসাবে আবদুল হাই বাচ্চু ও কোম্পানি সচিব শাহ আলম ভূঁইয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সালে দায়ের করা কোনো মামলাতেই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। যে কারণে দুদককে বারবার বিভিন্ন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে। মামলার দীর্ঘ ৮ বছর পর চার্জশিটে আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়।

এছাড়া গত বছরের এপ্রিলে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০.২৫ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে লুটপাট করা প্রায় ৯৫ কোটি টাকা গোপন করার চেষ্টা ও সাড়ে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী-সন্তান ও ভাই এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

ডিএস..