চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়া উদ্দীন বলেছেন, আজকের এই দিনে, ছাত্রজীবনের মিশন ও ভিশন নতুন করে পুনর্গঠন করতে হবে। পৃথিবী বদলাচ্ছে, সময় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, আর আমাদেরও সেই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে এগোতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা সভ্যতার উচ্ছিষ্ট ভোগী, সভ্যতাকে আমরা গড়িনি। যেখানে জ্ঞান, সেখানেই সভ্যতা। জ্ঞানই শক্তি, জ্ঞানই স্বাধীনতা, আর জ্ঞানই আমাদের সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়। এই সময়ে কেউ কাউকে জায়গা ছেড়ে দেয় না বরং নিজেকে জায়গা ছিনিয়ে নিতে হয়। তবে সেটা শক্তি বা জোর করে নয়, দক্ষতা, যোগ্যতা ও জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়েই।
গতকাল বুধবার সকালে কুমিরাস্থ স্থায়ী ক্যাম্পাসে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) আয়োজিত শরৎকালীন সেমিস্টার-২০২৫-এর অনার্স প্রোগ্রামের নবাগত ছাত্রীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়া উদ্দীন এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিয়া উদ্দীন বলেন, লেখাপড়ার জন্য ধর্মীয় যে নির্দেশনা সেই বোধ ও তাগিদ থেকে কেউ লেখাপড়া করে না। করলে ভাল হতো। জ্ঞান অর্জন একটি প্যাশনের বিষয়। জ্ঞান অর্জন মানুষকে আমূলভাবে পরিবর্তন করে যে, দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয়, যদি সেটিকে একবার আয়ত্ত করা যায়। আমরা হয়তো অনেকেই প্রথাগত সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছি, কিন্তু পড়ালেখার মূল স্রোত থেকে আমরা ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। এই বিচ্ছিন্নতাই আমাদের প্রকৃত উন্নতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা। বিশ্ববিদ্যালয় নিছক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি হলো স্বপ্ন বুননের কেন্দ্র, ভাবনার কারখানা এবং নতুন চিন্তার জন্মভূমি। এখানে বসবাস করে দেশের ভবিষ্যৎ, এখানে তৈরী হয় নতুন সম্ভাবনার রূপরেখা।
তিনি বলেন, জ্ঞান শুধুমাত্র পরীক্ষার খাতায় নম্বর তোলার বিষয় নয়; এটি সেই আলো, যা আমাদের চিন্তা, দর্শন, দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনবোধকে আমূল বলে দেয়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় তারুণ্যের জন্য। নতুন নতুন ফুলের মতো সতেজ ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ, উদ্যম, উদ্ভাবনী চিন্তা আর স্বপ্ন দিয়েই এটি জীবন্ত থাকে।
বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়া উদ্দীন বলেন, যে দেশের বিশ্বব্যিালয়ের তরুণেরা প্রশ্ন করতে শেখে, শিখতে শেখে, নতুন চিন্তার সাহস করে, সেই দেশ কখনও পিছিয়ে থাকে না। একটি জাতি কোন দিকে এগোবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কী ভাবছে, কী স্বপ্ন দেখছে এবং কী শিখছে তার ওপর। তিনি আরও বলেন, জ্ঞানের কোয়ালিটি ধরে রাখার জন্য এবং জ্ঞানের চাষাবাদের জন্য অনেক বিনিয়োগ দরকার। এই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আইআইইউসি‘র ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন আইআইইউসি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহজাহান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, জ্ঞানভিত্তিক নৈতিকতাপূর্ণ সমাজের আজ বড় চাহিদা। এই চাহিদা পূরণে সমাজ গড়ার কারিগর শিক্ষার্থীদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি নবাগত ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ইসলাম নারীকে অনেক বেশী মর্যাদা দিয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ নারীকে গৌরবান্বিত করতে এত দামী কথা, এত গুরুত্বপূর্ণ কথা কেউ বলেননি। নারীকে আত্মমর্যদাপূর্ণ হিসাবে গড়ে তুলতে ওহীভিত্তিক জ্ঞানার্জন জরুরী। কোরআনের জ্ঞান ছাড়া কোন জ্ঞান পূর্ণাঙ্গ নয়। কোরআনের জ্ঞান ছাড়া জ্ঞান বিশ্ব সভ্যতাকে ধ্বংস করার কাজে লাগে, মানবসভ্যতাকে গড়ার কাজে লাগে না।
সভাপতির বক্তব্যে আইআইইউসি‘র ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী বলেন, সময় হচ্ছে বরফের মত। অন্যমনস্ক হলে বরফ গলার মত সময় ফুরিয়ে যাবে। জীবনকে তুলনা করা যায় এক টুকরো বরফের সঙ্গে। বরফ যেমন সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে গলে যায়, তেমনি আমাদের জীবনও সময়ের স্রোতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। বরফের যেমন উপযুক্ত সময়ে ব্যবহার না করলে তা নষ্ট হয়ে যায়, তেমনি জীবনকেও যদি আমরা সচেতমনভাবে কাজে না লাগাই, তাহলে সে জীবনও একসময় বৃথা হয়ে যাবে। তাই সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে, যেখানে সৃষ্টিকর্তার স্মরণ থাকবে হৃদয়ে, এবং কাজের মধ্যে থাকবে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইআইইউসি‘র ট্রেজারার ও ওরিয়েন্টেশেন প্রোগ্রাম অর্গনাইজিং কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডীন প্রফেসর মোহাম্মদ শামসুল আলম, আইআইইউসি‘র রেজিস্ট্রার কর্নেল মোহাম্মদ কাশেম পিএসসি (অবঃ), ইকনোমিক্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ শরীফুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা মনির চৌধুরী এবং ফিমেল একাডেমিক জোন চীফ মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা।
ডিএস./