০২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জনবল ও অবকাঠামোর অভাবে উপেক্ষিত হাইকোর্টের নির্দেশনা

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা টাইপ আকারে পাঠানোর। এমনকি অস্পষ্ট হাতের লেখাও টাইপ করে হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে। গত ১৯ বছরে তিন বার এই নির্দেশনা দেওয়া হলো। ইতিপূর্বে দুই বার এই নির্দেশনা দেওয়া হলেও সেভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় তৃতীয় বারের মতো নির্দেশনা দিল হাইকোর্ট। ঐ নির্দেশনায় বলা হয়েছে—সাক্ষ্য ও অস্পষ্ট হাতের লেখা টাইপ করে না পাঠানোয় সঠিকভাবে পেপারবুক তৈরিতে বিলম্বসহ আদালতে মামলার শুনানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। চলতি মাসে ঐ নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে সব জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, বিশেষ জজ আদালত, ট্রাইব্যুনাল, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব পর্যায়ের বিচারকদের বলা হয়েছে।

বিচারাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধস্তন আদালতের সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজদের স্টেনোগ্রাফার বা স্টেনোটাইপিস্ট নেই। তবে যুগ্ম জেলা জজ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পর্যায়ের বিচারকদের স্টেনোগ্রাফার বা স্টেনোটাইপিস্ট রয়েছে। যেসব আদালতের বিচারকদের স্টেনোগ্রাফার বা স্টেনোটাইপিস্ট রয়েছে, তাদের দিনের কর্মঘণ্টা পার করতে হয় বিভিন্ন মামলার রায় ও আদেশ লিখে। বিভিন্ন মামলায় বিচারকদের ডিকটেশন শুনে এই রায় বা আদেশ লেখাই তাদের কাজ। এছাড়া আদালতের আরো কিছু প্রশাসনিক আদেশও টাইপ করতে হয় এদের।

তবে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় সাক্ষীর সাক্ষ্য বিচারকরা হাতে লিখে থাকেন। সাক্ষীদের এই জবানবন্দি ও জেরা রেকর্ড করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বছরের পর বছর ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতে লিখে এই জবানবন্দি ও জেরা রেকর্ড করে থাকেন বিচারকরা। প্রতিটি আদালতে অতিরিক্ত এক জন স্টেনোগ্রাফার/স্টেনোটাইপিস্ট এবং একটি কম্পিউটার থাকত, তাহলে খুব সহজেই রেকর্ড করা যেত সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা। সাশ্রয় হতো আদালতের গুরুত্বপূর্ণ সময় ও কর্মঘণ্টা। ফলে হাইকোর্ট থেকে দেওয়া নির্দেশনা খুব সহজেই প্রতিপালনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত অধস্তন আদালতের বিচারক ও কর্মচারীরা। কিন্তু জনবল ও অবকাঠামোর অভাবে সেই কাজটি করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, অধস্তন আদালত থেকে পাঠানো নথির সঙ্গে সাক্ষীর সাক্ষ্য (জবানবন্দি/জেরা) ও অস্পষ্ট হাতের লেখাসংবলিত সংশ্লিষ্ট কাগজাদির টাইপ কপি সত্যায়িত করে উচ্চ আদালতে পাঠাতে ২০০৩ সালে নির্দেশনা দিয়েছিল হাইকোর্টের বিচার শাখা। এই নির্দেশনা সেভাবে প্রতিপালন না করায় ১৭ বছর পর একই নির্দেশনা দিয়ে ২০২০ সালে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ঐ নির্দেশনায় বলা হয়, সাক্ষীর সাক্ষ্য ও অস্পষ্ট হাতের লেখাসংবলিত কাগজাদির টাইপ কপি যথাযথভাবে পাঠানোর নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা প্রদান করা হলো। কিন্তু ঐ নির্দেশনা সেভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আবারও একই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

সর্বশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে—সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে, ইতিপূর্বে দুই দফায় দেওয়া নির্দেশনাটি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে না। ফলে অধস্তন আদালত থেকে হাইকোর্টে পাঠানো নথিতে সাক্ষীর সাক্ষ্য (জবানবন্দি ও জেরা) ও অপর হাতের লেখাসংবলিত সংশ্লিষ্ট কাগজাদি অনেক সময় পাঠ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সঠিকভাবে পেপারবুক তৈরিতে বিলম্বসহ আদালতে মামলা শুনানিকালে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় হাইকোর্টের বিগত ২০০৩ ও ২০২০ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অধস্তন আদালত থেকে পাঠানো নথিতে সাক্ষীর সাক্ষ্য (জবানবন্দি ও জেরা) ও অস্পষ্ট হাতের লেখাসংবলিত সংশ্লিষ্ট কাগজাদির টাইপ কপি সত্যায়িত করে পাঠানোর নির্দেশনা আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে পুনরায় নির্দেশ দেওয়া হলো।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

একজন ব্যবসায়ী বান্ধব নেতা ওয়াহিদুল হাসান দিপু

জনবল ও অবকাঠামোর অভাবে উপেক্ষিত হাইকোর্টের নির্দেশনা

প্রকাশিত : ১০:৩৩:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ অক্টোবর ২০২২

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা টাইপ আকারে পাঠানোর। এমনকি অস্পষ্ট হাতের লেখাও টাইপ করে হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে। গত ১৯ বছরে তিন বার এই নির্দেশনা দেওয়া হলো। ইতিপূর্বে দুই বার এই নির্দেশনা দেওয়া হলেও সেভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় তৃতীয় বারের মতো নির্দেশনা দিল হাইকোর্ট। ঐ নির্দেশনায় বলা হয়েছে—সাক্ষ্য ও অস্পষ্ট হাতের লেখা টাইপ করে না পাঠানোয় সঠিকভাবে পেপারবুক তৈরিতে বিলম্বসহ আদালতে মামলার শুনানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। চলতি মাসে ঐ নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে সব জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, বিশেষ জজ আদালত, ট্রাইব্যুনাল, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব পর্যায়ের বিচারকদের বলা হয়েছে।

বিচারাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধস্তন আদালতের সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজদের স্টেনোগ্রাফার বা স্টেনোটাইপিস্ট নেই। তবে যুগ্ম জেলা জজ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পর্যায়ের বিচারকদের স্টেনোগ্রাফার বা স্টেনোটাইপিস্ট রয়েছে। যেসব আদালতের বিচারকদের স্টেনোগ্রাফার বা স্টেনোটাইপিস্ট রয়েছে, তাদের দিনের কর্মঘণ্টা পার করতে হয় বিভিন্ন মামলার রায় ও আদেশ লিখে। বিভিন্ন মামলায় বিচারকদের ডিকটেশন শুনে এই রায় বা আদেশ লেখাই তাদের কাজ। এছাড়া আদালতের আরো কিছু প্রশাসনিক আদেশও টাইপ করতে হয় এদের।

তবে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় সাক্ষীর সাক্ষ্য বিচারকরা হাতে লিখে থাকেন। সাক্ষীদের এই জবানবন্দি ও জেরা রেকর্ড করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বছরের পর বছর ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতে লিখে এই জবানবন্দি ও জেরা রেকর্ড করে থাকেন বিচারকরা। প্রতিটি আদালতে অতিরিক্ত এক জন স্টেনোগ্রাফার/স্টেনোটাইপিস্ট এবং একটি কম্পিউটার থাকত, তাহলে খুব সহজেই রেকর্ড করা যেত সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা। সাশ্রয় হতো আদালতের গুরুত্বপূর্ণ সময় ও কর্মঘণ্টা। ফলে হাইকোর্ট থেকে দেওয়া নির্দেশনা খুব সহজেই প্রতিপালনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত অধস্তন আদালতের বিচারক ও কর্মচারীরা। কিন্তু জনবল ও অবকাঠামোর অভাবে সেই কাজটি করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, অধস্তন আদালত থেকে পাঠানো নথির সঙ্গে সাক্ষীর সাক্ষ্য (জবানবন্দি/জেরা) ও অস্পষ্ট হাতের লেখাসংবলিত সংশ্লিষ্ট কাগজাদির টাইপ কপি সত্যায়িত করে উচ্চ আদালতে পাঠাতে ২০০৩ সালে নির্দেশনা দিয়েছিল হাইকোর্টের বিচার শাখা। এই নির্দেশনা সেভাবে প্রতিপালন না করায় ১৭ বছর পর একই নির্দেশনা দিয়ে ২০২০ সালে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ঐ নির্দেশনায় বলা হয়, সাক্ষীর সাক্ষ্য ও অস্পষ্ট হাতের লেখাসংবলিত কাগজাদির টাইপ কপি যথাযথভাবে পাঠানোর নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা প্রদান করা হলো। কিন্তু ঐ নির্দেশনা সেভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আবারও একই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

সর্বশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে—সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে, ইতিপূর্বে দুই দফায় দেওয়া নির্দেশনাটি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে না। ফলে অধস্তন আদালত থেকে হাইকোর্টে পাঠানো নথিতে সাক্ষীর সাক্ষ্য (জবানবন্দি ও জেরা) ও অপর হাতের লেখাসংবলিত সংশ্লিষ্ট কাগজাদি অনেক সময় পাঠ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সঠিকভাবে পেপারবুক তৈরিতে বিলম্বসহ আদালতে মামলা শুনানিকালে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় হাইকোর্টের বিগত ২০০৩ ও ২০২০ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অধস্তন আদালত থেকে পাঠানো নথিতে সাক্ষীর সাক্ষ্য (জবানবন্দি ও জেরা) ও অস্পষ্ট হাতের লেখাসংবলিত সংশ্লিষ্ট কাগজাদির টাইপ কপি সত্যায়িত করে পাঠানোর নির্দেশনা আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে পুনরায় নির্দেশ দেওয়া হলো।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব