০২:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল নিয়ে নতুন উদ্বেগ

প্রতীকী ছবি

তেল উৎপাদনকারী সংগঠন ওপেকের দৈনিক দুই ব্যারেল তেল উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা শুধু যুক্তরাষ্ট্রকেই বিস্মিত করেনি; অবাক করেছে রাশিয়াকেও। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে তেলেরর দাম আবার হুহু করে বাড়তে পারে এবং এর প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও।

রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা বর্তমান এই জটিল পরিস্থিতিতে এক কথায় বিশ্ব অর্থনীতির হালহকিকত জানতে চাইলে অর্থনৈতিক বোদ্ধাদের উত্তরটা হতে পারে এ রকম—বিশ্ব আজ ক্রমবর্ধমানভাবে দ্বিধাবিভক্ত এবং পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করলে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং চীনের কোভিড সম্পর্কিত কঠোর লকডাউন বিশ্বের সরবরাহ শৃঙ্খলকে প্রায় ছিন্নভিন্ন করে কুঠারাঘাত হেনেছে প্রবৃদ্ধিতে আর মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়ে তাকে নিয়ে গেছে গত ৪০ বছরের ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরে।

মূলত এসব কারণেই থিংকট্যাংক ব্লুমবার্গ ইকোনমিকস তার চলতি বছরের প্রাক্কলন থেকে কর্তন ঘটিয়েছে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেসব যোগসূত্র বিশ্ব অর্থনীতিকে পরস্পর সংযুক্ত করে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহ করছিল প্রাচুর্যের সঙ্গে, সেই সব বন্ধন একের পর এক খুলে যাচ্ছে আতঙ্কিত করার মতো গতিতে। তবে এখন পর্যন্ত যেসব ঘটেছে, সেগুলোকে যদি বলা হয় সূচনামাত্র, তবে আমাদের এই ধরিত্রীর সামনে কতটা কঠিন সময় যে অপেক্ষা করছে, তা কল্পনারও বাইরে।

ব্লুমবার্গ যেসব তথ্য তুলে ধরেছে, সেগুলো শুধু ভয়ংকরই নয়, মহাবিপর্যয়করও। তাদের উপস্থাপিত ফলাফল জানান দিচ্ছে, আগামী পৃথিবী উল্লেখযোগ্যভাবে অধিকতর দরিদ্র এবং কম উৎপাদনশীল। বৈশ্বিক বাণিজ্য ফিরে গেছে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেওয়ার আগের স্তরে। অবশ্যম্ভাবীরূপে মূল্যস্ফীতি হয়ে পড়েছে এখনকার চেয়ে ঢের বেশি অস্থিতিশীল, যেটিকে দাবিয়ে রাখার কোনো পন্থাই আর কেউ জানে না। মোদ্দাকথা, কিংকর্তব্যবিমূঢ় বিশ্ব। অর্থনীতিবিদদের রথী-মহারথীদের কোনো তত্ত্ব বা ফর্মুলাই আর কাজে লাগে না।

তিন দশক ধরে বিশ্ব অর্থনীতির অর্থ নিরূপণ করার মতো একটি বৈশিষ্ট্য ছিল যে, যত কম মূল্যে যত বেশি পণ্য উৎপাদন করা যায়। চীন ও সাবেক সোভিয়েত ব্লক থেকে ১০০ কোটিরও বেশি শ্রমিক আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রবেশ করার পাশাপাশি বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতাগুলো উঠে যাওয়া এবং অতি দক্ষ লজিস্টিকস অনেকের জন্য প্রাচুর্যের যুগ তৈরি করেছিল। কিন্তু গত চারটি বছরে একের পর এক ব্যাঘাত ঘটতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ চলাকালীন শুল্ক বেড়ে গিয়েছিল কয়েক গুণ। উপরন্তু করোনা অতিমারিতে পৃথিবীর বহু দেশে চলে কঠোর লকডাউন। অতঃপর শুরু হলো একের পর এক অবরোধ আর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের খেলা। এর ফলে শুরু হলো বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য সরবরাহের সংকট।

এর ফাঁদে বিশেষত ভুগছে ইউরোপ। ক্রিমিয়া দখলের পর রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ আর ন্যাটো জোটের হুমকি-ধমকিতে ভূরাজনীতির পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতেও হ-য-ব-র-ল অবস্থা। বিশেষত তেল ও গ্যাসের ব্যাপারে ইউরোপের অধিকাংশ দেশ রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এই সুযোগে রুবলে তেল কেনার জন্য সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে রাশিয়া হয়ে উঠেছে বিশ্বের এক নম্বর তেল রপ্তানিকারক দেশ। অবশ্য এই অবস্থান ধরে রাখা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যুদ্ধ থেমে গেলে রাশিয়াই হয়তো এত তেল রপ্তানি করতে রাজি হবে না। কেননা, বেশি দামে তেল বেচার সুবিধাটা তো তাদেরও চাই। যত ইচ্ছা তত তেল ও গ্যাস রপ্তানি তো সারাজীবন করতে পারবে না। এগুলো অফুরন্ত নয় বলেই ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র যেটি করে থাকে। প্রচুর মজুত থাকা সত্ত্বেও আপত্কালীন কথা ভেবে তেল ও গ্যাস আমদানি করে মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে।
-দ্যা ইকোনমিকস টাইমস অনুসরণে

বিজনেস বাংলাদেশ / হাবিব

জনপ্রিয়

একজন ব্যবসায়ী বান্ধব নেতা ওয়াহিদুল হাসান দিপু

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল নিয়ে নতুন উদ্বেগ

প্রকাশিত : ১২:৩০:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ নভেম্বর ২০২২

তেল উৎপাদনকারী সংগঠন ওপেকের দৈনিক দুই ব্যারেল তেল উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা শুধু যুক্তরাষ্ট্রকেই বিস্মিত করেনি; অবাক করেছে রাশিয়াকেও। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে তেলেরর দাম আবার হুহু করে বাড়তে পারে এবং এর প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও।

রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা বর্তমান এই জটিল পরিস্থিতিতে এক কথায় বিশ্ব অর্থনীতির হালহকিকত জানতে চাইলে অর্থনৈতিক বোদ্ধাদের উত্তরটা হতে পারে এ রকম—বিশ্ব আজ ক্রমবর্ধমানভাবে দ্বিধাবিভক্ত এবং পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করলে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং চীনের কোভিড সম্পর্কিত কঠোর লকডাউন বিশ্বের সরবরাহ শৃঙ্খলকে প্রায় ছিন্নভিন্ন করে কুঠারাঘাত হেনেছে প্রবৃদ্ধিতে আর মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়ে তাকে নিয়ে গেছে গত ৪০ বছরের ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরে।

মূলত এসব কারণেই থিংকট্যাংক ব্লুমবার্গ ইকোনমিকস তার চলতি বছরের প্রাক্কলন থেকে কর্তন ঘটিয়েছে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেসব যোগসূত্র বিশ্ব অর্থনীতিকে পরস্পর সংযুক্ত করে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহ করছিল প্রাচুর্যের সঙ্গে, সেই সব বন্ধন একের পর এক খুলে যাচ্ছে আতঙ্কিত করার মতো গতিতে। তবে এখন পর্যন্ত যেসব ঘটেছে, সেগুলোকে যদি বলা হয় সূচনামাত্র, তবে আমাদের এই ধরিত্রীর সামনে কতটা কঠিন সময় যে অপেক্ষা করছে, তা কল্পনারও বাইরে।

ব্লুমবার্গ যেসব তথ্য তুলে ধরেছে, সেগুলো শুধু ভয়ংকরই নয়, মহাবিপর্যয়করও। তাদের উপস্থাপিত ফলাফল জানান দিচ্ছে, আগামী পৃথিবী উল্লেখযোগ্যভাবে অধিকতর দরিদ্র এবং কম উৎপাদনশীল। বৈশ্বিক বাণিজ্য ফিরে গেছে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেওয়ার আগের স্তরে। অবশ্যম্ভাবীরূপে মূল্যস্ফীতি হয়ে পড়েছে এখনকার চেয়ে ঢের বেশি অস্থিতিশীল, যেটিকে দাবিয়ে রাখার কোনো পন্থাই আর কেউ জানে না। মোদ্দাকথা, কিংকর্তব্যবিমূঢ় বিশ্ব। অর্থনীতিবিদদের রথী-মহারথীদের কোনো তত্ত্ব বা ফর্মুলাই আর কাজে লাগে না।

তিন দশক ধরে বিশ্ব অর্থনীতির অর্থ নিরূপণ করার মতো একটি বৈশিষ্ট্য ছিল যে, যত কম মূল্যে যত বেশি পণ্য উৎপাদন করা যায়। চীন ও সাবেক সোভিয়েত ব্লক থেকে ১০০ কোটিরও বেশি শ্রমিক আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রবেশ করার পাশাপাশি বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতাগুলো উঠে যাওয়া এবং অতি দক্ষ লজিস্টিকস অনেকের জন্য প্রাচুর্যের যুগ তৈরি করেছিল। কিন্তু গত চারটি বছরে একের পর এক ব্যাঘাত ঘটতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ চলাকালীন শুল্ক বেড়ে গিয়েছিল কয়েক গুণ। উপরন্তু করোনা অতিমারিতে পৃথিবীর বহু দেশে চলে কঠোর লকডাউন। অতঃপর শুরু হলো একের পর এক অবরোধ আর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের খেলা। এর ফলে শুরু হলো বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য সরবরাহের সংকট।

এর ফাঁদে বিশেষত ভুগছে ইউরোপ। ক্রিমিয়া দখলের পর রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ আর ন্যাটো জোটের হুমকি-ধমকিতে ভূরাজনীতির পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতেও হ-য-ব-র-ল অবস্থা। বিশেষত তেল ও গ্যাসের ব্যাপারে ইউরোপের অধিকাংশ দেশ রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এই সুযোগে রুবলে তেল কেনার জন্য সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে রাশিয়া হয়ে উঠেছে বিশ্বের এক নম্বর তেল রপ্তানিকারক দেশ। অবশ্য এই অবস্থান ধরে রাখা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যুদ্ধ থেমে গেলে রাশিয়াই হয়তো এত তেল রপ্তানি করতে রাজি হবে না। কেননা, বেশি দামে তেল বেচার সুবিধাটা তো তাদেরও চাই। যত ইচ্ছা তত তেল ও গ্যাস রপ্তানি তো সারাজীবন করতে পারবে না। এগুলো অফুরন্ত নয় বলেই ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র যেটি করে থাকে। প্রচুর মজুত থাকা সত্ত্বেও আপত্কালীন কথা ভেবে তেল ও গ্যাস আমদানি করে মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে।
-দ্যা ইকোনমিকস টাইমস অনুসরণে

বিজনেস বাংলাদেশ / হাবিব