১০:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বন্ড সুবিধার অপব্যবহারেই নষ্ট হচ্ছে স্থানীয় পোশাক শিল্পের বাজার,

রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে বন্ড সুবিধায় বিনা শুল্কে আমদানি করা কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য বেআইনিভাবে খোলাবাজারে বিক্রির কারণে দেশীয় শিল্প খাত হুমকির মুখে পড়ছে। দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের তৈরি মানসম্মত পণ্যও বিনা শুল্কের কম দামি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে পারছে না। ফলে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং বিপুলসংখ্যক শ্রমিক বেকারত্বের ঝুঁকিতে পড়ছেন। বর্তমানে এই সমস্যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বস্ত্রশিল্প।

রপ্তানি খাতকে উৎসাহিত করতে সরকারের দেওয়া বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পন্য মিলছে চট্টগ্রামের বাজারে। এসব দেখবালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অবহেলা বা যোগসাজসে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। কিন্তু এসব অপকর্মের মাধ্যমে সরকারকে ফাঁকি দিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র আর রসাতলে যাচ্ছে আমাদের সোনার বাংলা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা রয়েছে এই চক্রের অগ্রভাগে। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু পণ্য আটক হলেও বেশিরভাগই কথিত সমন্বয়ের মাধ্যমে রয়ে যায় অধরা। আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মামলা দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন বাদী ও আইন শৃঙ্খলাবাহীনির সদস্যরা।

আসামী আটকে তাদের কোন আগ্রহ নেই। জানা যায় সরকার রপ্তানি খাতকে উৎসাহিত করতে রপ্তানিমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড সুবিধা দিয়েছে। এছাড়া এক্সেসরিজ বন্ডের আওতায় আনা এসব পণ্য রপ্তানিমুখী শিল্পে ব্যাবহার করে পুনরায় রপ্তানির বিধান থাকলেও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সরকারকে প্রতিনিয়ত ঠকাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাকখাত শিল্পের জন্য কাস্টম বন্ড কমিশনারেট বিভিন্ন খাতে বন্ড লাইসেন্স প্রদান করে। এর মধ্যে এক্সেসরিজ ও ফেব্রিক্স আইটেম আনা হয় বন্ড সুবিধায়। এর আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করে সেগুলো গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে।

পোশাক তৈরির পর সেগুলো রপ্তানি করার কথা। কিন্তু চট্টগ্রামে প্রায় অর্ধশত গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে যারা বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে নগরীর বৃহত্তম পাইকারী কাপরের মার্কেট টেরিবাজার ও রেয়াজউদ্দিন বাজারে দোকানদারের কাছে বিক্রি করে থাকেন। পরে দোকানদারেরা সেগুলো চড়া দামে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেরি বাজারের একধিক স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান দেশের স্বার্থে সরকার বন্ড সবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ দিয়েছে কিন্তু আমাদের কিছু অসৎ ব্যবসায়ী একটি অসাধু চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে দেদারছে দেশ ও সরকারের ক্ষতি করে যাচ্ছে।

তারা যদি এসব পণ্য মার্কেটে বিক্রির উদ্দেশ্য থাকে তাহলো তো গ্রাহক থেকে লাভ করছে কিন্তু সরকারের রাজস্ব দিতে তাদের সমস্যা কোথায় ?অবৈধভাবে বিভিন্ন সংস্থার লোককে খাওয়াবে কিন্তু সরকারকে দিতেই তাদের সমস্যা, কারন তারা এদেশের উন্নয়ন চায়না বলেই এমনটি করছে বলে আমরা মনে করি। গত ১৩ অক্টোবর ২ কোটি ২২ লাখ ২৪ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পালানোর সময় বন্ড সুবিধায় আনা প্রায় ৭ কোটি ৪৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মুল্যের ৬৩ হাজার ৯৪২ কেজি পণ্য পাচারের সময় হাতেনাতে আটক করে কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ।

পরে এসব বিষয় উল্লেখ করে সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়াজ আহম্মদ বাদী হয়ে ৩ প্রতিষ্ঠানের ৯ ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্থানীয় হালিশহর থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামী করা হয়েছে হালিশহর এলাকার স্পীডওয়ে লজিস্টিকস এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. খসরুল আলম আকন, সিনিয়র ম্যানেজার বশির আহমেদ, গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক Ngan ka Hang Calvin, চেয়ারম্যান Ngan Hung Tak , ৫.পরিচালক খবব Lee Ming Kwat এবং Ngan Hiu Yi Sally, এ.এফ.টি লজিস্টিক এর ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজার আমজাদ খান ফরহাদ, স্পীডওয়ে লজিস্টিকস এর কাস্টম সরকার মো: রাজু কাজী ও জেটি সরকার মো. দেলোয়ার হোসেনকে।

গত ১৩ অক্টোবর মালামাল আটক করা হলেও হালিশহর থানায় মামলা করা হয়েছে এক সপ্তাহ পরে অর্থাৎ গত মাসের ২০ তারিখ। আর মামলা করার ২ সপ্তাহ পার হলেও এখনো কোন আসামী আটক করতে পারেনি পুলিশ। আসামী আটকের ব্যপারে জানতে চাইলে সিএমপির হালিশহর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জহির উদ্দিন সঠিক কোন জবাব দিতে না পেরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার (আইও) সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। এব্যপারে কথা বলতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার (আইও) মো. ইমদাদ হোসেন চৌধুরীকে ফোনে কল ও বার্তা দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

এব্যপারে মামলার বাদী কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) নিয়াজ আহম্মদ প্রথমে মামলার বিষয়ে কথা বলতে সাক্ষাত করার কথা বললেও পরে বহুবার মোবাইলে কল দিয়েও আর সংযোগ স্থাপন করা যায়নি। এব্যপারে কথা বলতে কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের যুগ্ন কমিশনার মো. সাইফুর রহমানের অফিসে গেলেও তিনি কথা বলেননি।

বিজনেস বাংলাদেশ / হাবিব

জনপ্রিয়

যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে ভেস্তে গেল গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব

বন্ড সুবিধার অপব্যবহারেই নষ্ট হচ্ছে স্থানীয় পোশাক শিল্পের বাজার,

প্রকাশিত : ১২:৩৪:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ নভেম্বর ২০২২

রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে বন্ড সুবিধায় বিনা শুল্কে আমদানি করা কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য বেআইনিভাবে খোলাবাজারে বিক্রির কারণে দেশীয় শিল্প খাত হুমকির মুখে পড়ছে। দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের তৈরি মানসম্মত পণ্যও বিনা শুল্কের কম দামি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে পারছে না। ফলে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং বিপুলসংখ্যক শ্রমিক বেকারত্বের ঝুঁকিতে পড়ছেন। বর্তমানে এই সমস্যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বস্ত্রশিল্প।

রপ্তানি খাতকে উৎসাহিত করতে সরকারের দেওয়া বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পন্য মিলছে চট্টগ্রামের বাজারে। এসব দেখবালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অবহেলা বা যোগসাজসে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। কিন্তু এসব অপকর্মের মাধ্যমে সরকারকে ফাঁকি দিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র আর রসাতলে যাচ্ছে আমাদের সোনার বাংলা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা রয়েছে এই চক্রের অগ্রভাগে। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু পণ্য আটক হলেও বেশিরভাগই কথিত সমন্বয়ের মাধ্যমে রয়ে যায় অধরা। আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মামলা দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন বাদী ও আইন শৃঙ্খলাবাহীনির সদস্যরা।

আসামী আটকে তাদের কোন আগ্রহ নেই। জানা যায় সরকার রপ্তানি খাতকে উৎসাহিত করতে রপ্তানিমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড সুবিধা দিয়েছে। এছাড়া এক্সেসরিজ বন্ডের আওতায় আনা এসব পণ্য রপ্তানিমুখী শিল্পে ব্যাবহার করে পুনরায় রপ্তানির বিধান থাকলেও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সরকারকে প্রতিনিয়ত ঠকাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাকখাত শিল্পের জন্য কাস্টম বন্ড কমিশনারেট বিভিন্ন খাতে বন্ড লাইসেন্স প্রদান করে। এর মধ্যে এক্সেসরিজ ও ফেব্রিক্স আইটেম আনা হয় বন্ড সুবিধায়। এর আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করে সেগুলো গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে।

পোশাক তৈরির পর সেগুলো রপ্তানি করার কথা। কিন্তু চট্টগ্রামে প্রায় অর্ধশত গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে যারা বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে নগরীর বৃহত্তম পাইকারী কাপরের মার্কেট টেরিবাজার ও রেয়াজউদ্দিন বাজারে দোকানদারের কাছে বিক্রি করে থাকেন। পরে দোকানদারেরা সেগুলো চড়া দামে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেরি বাজারের একধিক স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান দেশের স্বার্থে সরকার বন্ড সবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ দিয়েছে কিন্তু আমাদের কিছু অসৎ ব্যবসায়ী একটি অসাধু চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে দেদারছে দেশ ও সরকারের ক্ষতি করে যাচ্ছে।

তারা যদি এসব পণ্য মার্কেটে বিক্রির উদ্দেশ্য থাকে তাহলো তো গ্রাহক থেকে লাভ করছে কিন্তু সরকারের রাজস্ব দিতে তাদের সমস্যা কোথায় ?অবৈধভাবে বিভিন্ন সংস্থার লোককে খাওয়াবে কিন্তু সরকারকে দিতেই তাদের সমস্যা, কারন তারা এদেশের উন্নয়ন চায়না বলেই এমনটি করছে বলে আমরা মনে করি। গত ১৩ অক্টোবর ২ কোটি ২২ লাখ ২৪ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পালানোর সময় বন্ড সুবিধায় আনা প্রায় ৭ কোটি ৪৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মুল্যের ৬৩ হাজার ৯৪২ কেজি পণ্য পাচারের সময় হাতেনাতে আটক করে কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ।

পরে এসব বিষয় উল্লেখ করে সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়াজ আহম্মদ বাদী হয়ে ৩ প্রতিষ্ঠানের ৯ ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্থানীয় হালিশহর থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামী করা হয়েছে হালিশহর এলাকার স্পীডওয়ে লজিস্টিকস এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. খসরুল আলম আকন, সিনিয়র ম্যানেজার বশির আহমেদ, গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক Ngan ka Hang Calvin, চেয়ারম্যান Ngan Hung Tak , ৫.পরিচালক খবব Lee Ming Kwat এবং Ngan Hiu Yi Sally, এ.এফ.টি লজিস্টিক এর ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজার আমজাদ খান ফরহাদ, স্পীডওয়ে লজিস্টিকস এর কাস্টম সরকার মো: রাজু কাজী ও জেটি সরকার মো. দেলোয়ার হোসেনকে।

গত ১৩ অক্টোবর মালামাল আটক করা হলেও হালিশহর থানায় মামলা করা হয়েছে এক সপ্তাহ পরে অর্থাৎ গত মাসের ২০ তারিখ। আর মামলা করার ২ সপ্তাহ পার হলেও এখনো কোন আসামী আটক করতে পারেনি পুলিশ। আসামী আটকের ব্যপারে জানতে চাইলে সিএমপির হালিশহর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জহির উদ্দিন সঠিক কোন জবাব দিতে না পেরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার (আইও) সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। এব্যপারে কথা বলতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার (আইও) মো. ইমদাদ হোসেন চৌধুরীকে ফোনে কল ও বার্তা দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

এব্যপারে মামলার বাদী কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) নিয়াজ আহম্মদ প্রথমে মামলার বিষয়ে কথা বলতে সাক্ষাত করার কথা বললেও পরে বহুবার মোবাইলে কল দিয়েও আর সংযোগ স্থাপন করা যায়নি। এব্যপারে কথা বলতে কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের যুগ্ন কমিশনার মো. সাইফুর রহমানের অফিসে গেলেও তিনি কথা বলেননি।

বিজনেস বাংলাদেশ / হাবিব