০৯:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য নির্মাণ ও অবকাঠামো খাতে সুবর্ণ সম্ভাবনা

– মোহাম্মদ আনোয়ার আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক

মধ্যপ্রাচ্যের নির্মাণ ও অবকাঠামো খাত বর্তমানে এক অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতের বাজার আকার দাঁড়াতে পারে প্রায় ৪১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্মার্ট সিটি, আধুনিক পরিবহন নেটওয়ার্ক ও টেকসই অবকাঠামো প্রকল্পের কারণে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো দেশগুলোতে বিনিয়োগ প্রবাহ দ্রুত বাড়ছে। সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ কিংবা আমিরাতের সেন্টেনিয়াল ২০৭১ পরিকল্পনা ইঙ্গিত দেয়—আধুনিক নগরায়ণ ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে তারা নির্মাণ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

 

এই বিপুল সম্ভাবনার বাজারে বাংলাদেশের ছোট ও মাঝারি আকারের (এসএমই) নির্মাণ ও অবকাঠামো প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তৈরি হয়েছে এক নতুন দিগন্ত। দক্ষ জনবল, প্রতিযোগিতামূলক ব্যয় এবং মানসম্পন্ন কাজের কারণে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক দরপত্রে ক্রমশ সফল হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রিয়াদ হোসেন ও রিজওয়ান মুস্তাফিজের প্রতিষ্ঠিত এনডিই ইফ্রাটেক সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি মহাসড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু দেশেই নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও দক্ষতা দেখাতে সক্ষম।

 

তবে সুযোগের পাশাপাশি বাস্তব কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভিন্ন দেশের আইন ও নীতিমালা সম্পর্কে অজ্ঞতা, ভাষাগত সীমাবদ্ধতা এবং আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহারে অনীহা অনেক প্রতিষ্ঠানকে পিছিয়ে দিতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশি পেশাজীবীদের মতে, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।

 

আশার কথা হলো, এসব চ্যালেঞ্জ সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি খাত একসঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নিয়মিত সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করছে, যাতে উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক বাজারের আইন, বিধি এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অবহিত হন। পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও বিদেশি বিনিয়োগ এবং নির্মাণ প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের দ্রুতবর্ধনশীল নির্মাণ বাজারে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রয়েছে অবারিত সুযোগ। সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষ মানবসম্পদ, প্রযুক্তি-নির্ভর উদ্ভাবন এবং সরকারি সহায়তার সমন্বয়ে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনতে পারবেন না, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করে তুলতে সক্ষম হবেন।

 

তাই প্রশ্ন নয়—বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে প্রবেশ করবেন কি না। আসল প্রশ্ন হলো—তারা কত দ্রুত, কতটা প্রস্তুত এবং কতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের নাম বৈশ্বিক মঞ্চে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

 

লেখক 

– মোহাম্মদ আনোয়ার
আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

বইমেলা-২০২৬ শুরু হবে চলতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য নির্মাণ ও অবকাঠামো খাতে সুবর্ণ সম্ভাবনা

প্রকাশিত : ০৮:২৪:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যের নির্মাণ ও অবকাঠামো খাত বর্তমানে এক অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতের বাজার আকার দাঁড়াতে পারে প্রায় ৪১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্মার্ট সিটি, আধুনিক পরিবহন নেটওয়ার্ক ও টেকসই অবকাঠামো প্রকল্পের কারণে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো দেশগুলোতে বিনিয়োগ প্রবাহ দ্রুত বাড়ছে। সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ কিংবা আমিরাতের সেন্টেনিয়াল ২০৭১ পরিকল্পনা ইঙ্গিত দেয়—আধুনিক নগরায়ণ ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে তারা নির্মাণ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

 

এই বিপুল সম্ভাবনার বাজারে বাংলাদেশের ছোট ও মাঝারি আকারের (এসএমই) নির্মাণ ও অবকাঠামো প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তৈরি হয়েছে এক নতুন দিগন্ত। দক্ষ জনবল, প্রতিযোগিতামূলক ব্যয় এবং মানসম্পন্ন কাজের কারণে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক দরপত্রে ক্রমশ সফল হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রিয়াদ হোসেন ও রিজওয়ান মুস্তাফিজের প্রতিষ্ঠিত এনডিই ইফ্রাটেক সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি মহাসড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু দেশেই নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও দক্ষতা দেখাতে সক্ষম।

 

তবে সুযোগের পাশাপাশি বাস্তব কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভিন্ন দেশের আইন ও নীতিমালা সম্পর্কে অজ্ঞতা, ভাষাগত সীমাবদ্ধতা এবং আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহারে অনীহা অনেক প্রতিষ্ঠানকে পিছিয়ে দিতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশি পেশাজীবীদের মতে, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।

 

আশার কথা হলো, এসব চ্যালেঞ্জ সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি খাত একসঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নিয়মিত সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করছে, যাতে উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক বাজারের আইন, বিধি এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অবহিত হন। পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও বিদেশি বিনিয়োগ এবং নির্মাণ প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের দ্রুতবর্ধনশীল নির্মাণ বাজারে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রয়েছে অবারিত সুযোগ। সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষ মানবসম্পদ, প্রযুক্তি-নির্ভর উদ্ভাবন এবং সরকারি সহায়তার সমন্বয়ে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনতে পারবেন না, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করে তুলতে সক্ষম হবেন।

 

তাই প্রশ্ন নয়—বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে প্রবেশ করবেন কি না। আসল প্রশ্ন হলো—তারা কত দ্রুত, কতটা প্রস্তুত এবং কতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের নাম বৈশ্বিক মঞ্চে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

 

লেখক 

– মোহাম্মদ আনোয়ার
আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক