০৭:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বেশি দুর্ভোগে-কষ্টে-শীতে শিশুসহ বৃদ্ধরা

কুয়াকাটায় দুর্ভোগে-শীতে কষ্ট করে দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে সাগরপারের উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৬ শতাধিক পরিবার। কনকনে ঠান্ডা বাতাসে এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শিশুসহ বৃদ্ধরা। মাত্র কয়েকদিন আগে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে দুই কিলোমিটার পুর্বদিকে বেরিবাঁধের বাহিরে এসব পরিবারের বসত ভিটা উচ্ছেদ করেন জেলা প্রশাসন। এর ফলে তাদের মাথা গোজার ঠাইটুকু হারিয়ে তারা অসহয় দূর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। এসব ক্ষতিগ্রস্থরা দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানান।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা যায়, কারো ভিটের উপর শুধু একটি চকি পাতা রয়েছে। এর উপর একটুকরো পলিথিন দিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই তৈরী করেছে অনেকে। আবার কেউ পুরানো ছিরা কাঁথা টাঁঙিয়ে ছাপরা দিয়েছেন। এমন দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে কুয়াকাটার পাঞ্জুপাড়া গ্রামে বড় কোন দূর্যোগে এদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষায় , উত্তাল ঢেউ আর ঝড় জলেচ্ছ¡াসে ভাঙ্গে সৈকত ও ঝাউ বন। এ ভাঙ্গন থেকে কুয়াকাটাকে রক্ষা করতে নির্মান হচ্ছে উপকূলীয় বাঁধ। তাই সৈকত ও বাঁধ মূল অংশে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন প্রশাসন। এদিকে গেছে, অবৈধ নির্মান দোকানপাটসহ স্থাপনা সরিয়ে নিতে আগে-ভাগেই নোটিশ দেয়া হয়েছে।

৭৫ বছর বয়সি আনোয়ারা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাবারে রাইতে নিশিরে ভিজি আর দিনে রৌদে পুড়ি। এই পোড়া কপাল, মোগো জাগা জমি নাই, এইয়ার মধ্যেই থাহি। কয়দিন আগে ঘর দুয়ার ভাইঙ্গা দেছে। একই এলাকার জেলে বধু তিন সন্তানের জননী সালমা বেগম বলেন, তার স্বামী বাচ্চু কাজী। সাগরে অন্য জেলেদের সাথে জাল বায়। উচ্ছেদের কবলে তার স্বপ্নের সাজানো ঘরটি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এরপর থেকেই সন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। ওগো ঠান্ডা লাইগ্যা গ্যাছে।
সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর মো. আর্শাব শিকদার বলেন, উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্থরা খুবই কষ্টে রয়েছে। এদের দিকে সরকারের জরুরীভাবে নজর দেয়া উচিত।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, যাদের উচ্ছেদ করেছে তারা বেশীরভাগই ভূমিহীন। এরা জেলে, দিনমজুর। কারো ঘর নেই, রান্না করার জায়গা নেই। তারা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। এ উচ্ছেদে সবচেয়ে বড় বিপদে রয়েছে নারী ও শিশুরা। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সহায়তা করেছেন এবং তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানান।

পটুয়াখালী-৪(কলাপাড়া-মহিপুর-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মহিবুর রহমন মহিব এমপি জানান, এসব মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে ভূমিহীনদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রকৃত ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। তিনি নিজে ও এক ব্যবসায়ি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মঝে কম্বল বিতরন ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে এবং উচ্ছেদে এসব ক্ষতিগ্রস্থদের আরো সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

সীতাকুণ্ডে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৭

বেশি দুর্ভোগে-কষ্টে-শীতে শিশুসহ বৃদ্ধরা

প্রকাশিত : ০২:৪৩:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

কুয়াকাটায় দুর্ভোগে-শীতে কষ্ট করে দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে সাগরপারের উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৬ শতাধিক পরিবার। কনকনে ঠান্ডা বাতাসে এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শিশুসহ বৃদ্ধরা। মাত্র কয়েকদিন আগে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে দুই কিলোমিটার পুর্বদিকে বেরিবাঁধের বাহিরে এসব পরিবারের বসত ভিটা উচ্ছেদ করেন জেলা প্রশাসন। এর ফলে তাদের মাথা গোজার ঠাইটুকু হারিয়ে তারা অসহয় দূর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। এসব ক্ষতিগ্রস্থরা দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানান।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা যায়, কারো ভিটের উপর শুধু একটি চকি পাতা রয়েছে। এর উপর একটুকরো পলিথিন দিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই তৈরী করেছে অনেকে। আবার কেউ পুরানো ছিরা কাঁথা টাঁঙিয়ে ছাপরা দিয়েছেন। এমন দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে কুয়াকাটার পাঞ্জুপাড়া গ্রামে বড় কোন দূর্যোগে এদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষায় , উত্তাল ঢেউ আর ঝড় জলেচ্ছ¡াসে ভাঙ্গে সৈকত ও ঝাউ বন। এ ভাঙ্গন থেকে কুয়াকাটাকে রক্ষা করতে নির্মান হচ্ছে উপকূলীয় বাঁধ। তাই সৈকত ও বাঁধ মূল অংশে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন প্রশাসন। এদিকে গেছে, অবৈধ নির্মান দোকানপাটসহ স্থাপনা সরিয়ে নিতে আগে-ভাগেই নোটিশ দেয়া হয়েছে।

৭৫ বছর বয়সি আনোয়ারা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাবারে রাইতে নিশিরে ভিজি আর দিনে রৌদে পুড়ি। এই পোড়া কপাল, মোগো জাগা জমি নাই, এইয়ার মধ্যেই থাহি। কয়দিন আগে ঘর দুয়ার ভাইঙ্গা দেছে। একই এলাকার জেলে বধু তিন সন্তানের জননী সালমা বেগম বলেন, তার স্বামী বাচ্চু কাজী। সাগরে অন্য জেলেদের সাথে জাল বায়। উচ্ছেদের কবলে তার স্বপ্নের সাজানো ঘরটি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এরপর থেকেই সন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। ওগো ঠান্ডা লাইগ্যা গ্যাছে।
সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর মো. আর্শাব শিকদার বলেন, উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্থরা খুবই কষ্টে রয়েছে। এদের দিকে সরকারের জরুরীভাবে নজর দেয়া উচিত।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, যাদের উচ্ছেদ করেছে তারা বেশীরভাগই ভূমিহীন। এরা জেলে, দিনমজুর। কারো ঘর নেই, রান্না করার জায়গা নেই। তারা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। এ উচ্ছেদে সবচেয়ে বড় বিপদে রয়েছে নারী ও শিশুরা। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সহায়তা করেছেন এবং তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানান।

পটুয়াখালী-৪(কলাপাড়া-মহিপুর-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মহিবুর রহমন মহিব এমপি জানান, এসব মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে ভূমিহীনদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রকৃত ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। তিনি নিজে ও এক ব্যবসায়ি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মঝে কম্বল বিতরন ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে এবং উচ্ছেদে এসব ক্ষতিগ্রস্থদের আরো সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব