০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ফসলি জমি ও ”টি” বাঁধ

নীলফামারী ডিমলা উপজেলা প্রশাসনের অবহেলায় বালু দস্যুরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বোমা মেশিনের থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা আবাদি জমি, পুকুর জলাশয়, খাল-বিল, নদী-নালা।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উপজেলার টেপাখরিবাড়ী ইউনিয়নের তেলির বাজার এলাকায় (”টি” বাঁধ)’র নিকট তিস্তা নদীতে ৫ টি বোমা মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু দিয়ে সেখানকার নদী তীরবর্তী একাধিক বাড়ীর জন্য বাড়ী ভিটা উঁচু করনের নামে বসতভিটায় বালু ফেলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে একাধিক বসত ভিটায় বালু ফেলা হয়েছে। কার নির্দেশে উত্তোলন হচ্ছে বালু? এমন প্রশ্নের জবাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন শ্রমিক জানান, গ্রাম বিকাশ (স্ব-সহায়তা এবং পুনর্বাসন কর্মসূচী) এনজিওর ইঞ্জিনিয়ার সাজাহান বলেছেন, উত্তোলন করতে, তাই করছেন! দীর্ঘদিন ধরে ৫ টি বোমা মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন করায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ”টি বাঁধ” (গ্রোয়িং বাঁধ), শতাধিক বসতভিটা, ফসলি জমি, পুকুর ও জলাশয় হুমকির মুখে পড়েছে।

সরজমিনে জানা গেছে, অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, রফিক,এর নেএিত্বে তিস্তা নদী থেকে বোমা মেশিন বসিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করছে। প্রতিদিন তারা কয়েক হাজার ঘনফুট বালু এবং শতাধিক সিএফটি পাথর উত্তোলন ও বিক্রি করে লাভবান হলেও হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। এতে নদীর তীর ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বোমা মেশিন নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত। আইনে বলা হয়েছে, বালু মহাল এবং মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী পাম্প বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না। ওই আইনের (৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লেখ রয়েছে ড্রেজিং কার্যক্রম বাল্কহেড বা প্রচলিত বলগেট ড্রেজার ব্যবহার করা যাইবে না। এবং সর্বোপরি এভাবে বালু উত্তোলন আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচ্য হবে। এছাড়াও ২০১৯ সালের ১৭ই জুন (সোমবার) মহামান্য হাইকোর্ট বলেছেন ”নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে না পারলে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চাকরি ছেড়ে দিতে”। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ে গঙ্গা ও যমুনা নদীসহ বাস্তুতন্ত্রকে জীবন্ত মানুষের মর্যাদা দিয়েছে। ফলে মানুষের যে সমস্ত আইনি অধিকার রয়েছে, এসব নদীরও তেমনি আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলনসহ অন্যান্য দূষণ থেকে নদীকে বাঁচাতে যুগান্তকারী এ রায় দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সেতু, কালভার্ট, রেললাইনসহ মূল্যবান স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা বেআইনি। অথচ বালু দস্যুরা সরকারি ওই আইন অমান্য করে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েক কোটি টাকায় নির্মিত ”টি” বাঁধের” কয়েক শত গজ দূরে থেকে বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।

এলাকার অনেকেই বলেন, বালু দস্যুরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বাধা দেয়ার সাহস করে না। এই বালু দস্যুরা সিক্স সেলেন্ডার মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করছে। এতে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় ”টি” বাঁধ, নদীর তীরবর্তী একাধিক গ্রাম সহ শত শত বিঘা আবাদি জমি ভাঙ্গনের মুখে পড়বে এবং পরিবর্তন হতে পারে নদীর গতিপথ। ভুক্তভোগীরা জানান, বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হলে ভরা বর্ষায় তাদের বসত ভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে।

বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে এস্থানিয় জনগণ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে নদী তীরবর্তী বাড়িঘর, ফসলি জমি ভাঙন ও পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মানুষের দু:খ-দুর্দশার কথা চিন্তা না করে ব্যক্তি মুনাফার জন্য পরিবেশ নষ্ট করে জনগণের মুখের গ্রাস ও বসতবাড়ী ধ্বংসের লীলায় মেতে উঠেছেন গ্রাম বিকাশ এনজিওর যোগসাজশে একটি প্রভাবশালী মহল।

এ ব্যাপারে গ্রাম বিকাশ এনজিওর টেপাখরিবাড়ী শাখার ম্যনেজার জয়েন্ত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের আওতায় বসতভিটা উঁচু করনের কাজের স্বার্থে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে আমরা ৪টি মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছি। অবশিষ্ট মেশিনের দায়ভার আমাদের নয়।বিষয়টি প্রশাসন ও স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ সবাইকে অবগত করা হয়েছে। মুটো ফোনে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে লিখিত অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানি না বলে ফোন কেটে দ্যায় । ডালিয়া পানি উন্ননয় বোর্ডের নির্বাহী আসফা-উদ-দৌল্লা বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা তবে অাপনার কাছে প্রথম জানতে পারলাম। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি দেখতেছি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

একজন ব্যবসায়ী বান্ধব নেতা ওয়াহিদুল হাসান দিপু

বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ফসলি জমি ও ”টি” বাঁধ

প্রকাশিত : ১২:৪২:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২

নীলফামারী ডিমলা উপজেলা প্রশাসনের অবহেলায় বালু দস্যুরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বোমা মেশিনের থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা আবাদি জমি, পুকুর জলাশয়, খাল-বিল, নদী-নালা।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উপজেলার টেপাখরিবাড়ী ইউনিয়নের তেলির বাজার এলাকায় (”টি” বাঁধ)’র নিকট তিস্তা নদীতে ৫ টি বোমা মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু দিয়ে সেখানকার নদী তীরবর্তী একাধিক বাড়ীর জন্য বাড়ী ভিটা উঁচু করনের নামে বসতভিটায় বালু ফেলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে একাধিক বসত ভিটায় বালু ফেলা হয়েছে। কার নির্দেশে উত্তোলন হচ্ছে বালু? এমন প্রশ্নের জবাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন শ্রমিক জানান, গ্রাম বিকাশ (স্ব-সহায়তা এবং পুনর্বাসন কর্মসূচী) এনজিওর ইঞ্জিনিয়ার সাজাহান বলেছেন, উত্তোলন করতে, তাই করছেন! দীর্ঘদিন ধরে ৫ টি বোমা মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন করায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ”টি বাঁধ” (গ্রোয়িং বাঁধ), শতাধিক বসতভিটা, ফসলি জমি, পুকুর ও জলাশয় হুমকির মুখে পড়েছে।

সরজমিনে জানা গেছে, অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, রফিক,এর নেএিত্বে তিস্তা নদী থেকে বোমা মেশিন বসিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করছে। প্রতিদিন তারা কয়েক হাজার ঘনফুট বালু এবং শতাধিক সিএফটি পাথর উত্তোলন ও বিক্রি করে লাভবান হলেও হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। এতে নদীর তীর ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বোমা মেশিন নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত। আইনে বলা হয়েছে, বালু মহাল এবং মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী পাম্প বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না। ওই আইনের (৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লেখ রয়েছে ড্রেজিং কার্যক্রম বাল্কহেড বা প্রচলিত বলগেট ড্রেজার ব্যবহার করা যাইবে না। এবং সর্বোপরি এভাবে বালু উত্তোলন আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচ্য হবে। এছাড়াও ২০১৯ সালের ১৭ই জুন (সোমবার) মহামান্য হাইকোর্ট বলেছেন ”নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে না পারলে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চাকরি ছেড়ে দিতে”। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ে গঙ্গা ও যমুনা নদীসহ বাস্তুতন্ত্রকে জীবন্ত মানুষের মর্যাদা দিয়েছে। ফলে মানুষের যে সমস্ত আইনি অধিকার রয়েছে, এসব নদীরও তেমনি আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলনসহ অন্যান্য দূষণ থেকে নদীকে বাঁচাতে যুগান্তকারী এ রায় দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সেতু, কালভার্ট, রেললাইনসহ মূল্যবান স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা বেআইনি। অথচ বালু দস্যুরা সরকারি ওই আইন অমান্য করে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েক কোটি টাকায় নির্মিত ”টি” বাঁধের” কয়েক শত গজ দূরে থেকে বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।

এলাকার অনেকেই বলেন, বালু দস্যুরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বাধা দেয়ার সাহস করে না। এই বালু দস্যুরা সিক্স সেলেন্ডার মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করছে। এতে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় ”টি” বাঁধ, নদীর তীরবর্তী একাধিক গ্রাম সহ শত শত বিঘা আবাদি জমি ভাঙ্গনের মুখে পড়বে এবং পরিবর্তন হতে পারে নদীর গতিপথ। ভুক্তভোগীরা জানান, বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হলে ভরা বর্ষায় তাদের বসত ভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে।

বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে এস্থানিয় জনগণ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে নদী তীরবর্তী বাড়িঘর, ফসলি জমি ভাঙন ও পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মানুষের দু:খ-দুর্দশার কথা চিন্তা না করে ব্যক্তি মুনাফার জন্য পরিবেশ নষ্ট করে জনগণের মুখের গ্রাস ও বসতবাড়ী ধ্বংসের লীলায় মেতে উঠেছেন গ্রাম বিকাশ এনজিওর যোগসাজশে একটি প্রভাবশালী মহল।

এ ব্যাপারে গ্রাম বিকাশ এনজিওর টেপাখরিবাড়ী শাখার ম্যনেজার জয়েন্ত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের আওতায় বসতভিটা উঁচু করনের কাজের স্বার্থে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে আমরা ৪টি মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছি। অবশিষ্ট মেশিনের দায়ভার আমাদের নয়।বিষয়টি প্রশাসন ও স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ সবাইকে অবগত করা হয়েছে। মুটো ফোনে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে লিখিত অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানি না বলে ফোন কেটে দ্যায় । ডালিয়া পানি উন্ননয় বোর্ডের নির্বাহী আসফা-উদ-দৌল্লা বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা তবে অাপনার কাছে প্রথম জানতে পারলাম। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি দেখতেছি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব