০৩:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইউএনও’র আন্তরিকতায় খুশি ভূমি সেবা প্রত্যাশিরা

নামজারি সমাধানের জন্য অনেক ভূমি সেবা প্রত্যাশিরা ভূমি অফিসে মিস কেস করেন। কিন্তু এসিল্যান্ডদের সরকারি নানা কাজের চাপে বা অনেক সময় অধিক আইনি জটিলতার কারণে তা দ্রæত নিস্পত্তি করা সম্ভব হয় না। যে কারণে বছরের পর বছর গেলেও ভূমি অফিসে সেবা প্রত্যাশিদের করা ওইসব মিস কেসের পাহাড় জমতে থাকে। এ জন্য ভূমি অফিসে দিনের পর দিন সেবা প্রত্যাশিদের ঘুরতে হয়। আর সেই সুবাদে অনেকে দালাল কর্তৃক ধরাসায়ি হন। অনেকে আবার তারা তাদের জীবদ্দশায় সেই মিস কেসের নিম্পত্তি দেখেও যেতে পারেন না। তবে সেই ক্ষেত্রে কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও মো. আসসাদিকজামানের আন্তরিকতায় খুশি ভূমি সেবা প্রত্যাশিরা।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসে সহকারী কমিশনার ((ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন উন্মে হাফছা নাদিয়া। তিনি যোগদানের ২ মাস পরেই মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যান। তাঁর এই ছুটিতে যাওয়ার পর এসিল্যান্ডের অতিরিক্ত দায়িত্ব পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসসাদিকজামান।

সূত্র আরো জানান, ইউএনও মো. আসসাদিকজামান কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের চলতি দায়িত্ব বুঝে নেন গত বছরের ২৪ অক্টোবর। দায়িত্ব পাওয়ার ৪ মাস ৬ দিনে (২ মার্চ পর্যন্ত) তিনি ৩১ দিন শুনানি করেন। আর এই ৩১ দিনের শুনানীতে উপজেলার কালীগঞ্জ পৌরসভা, তুমলিয়া, নাগরী, বক্তারপুর, জাঙ্গালীয়া, জামালপুর, মোক্তারপুর ও বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের মোট ২০১টি মিস কেস নিস্পত্তি করেন।

কালীগঞ্জ পৌর এলাকা ভাদার্ত্তী গ্রামের বাসিন্দা ভূক্তভোগী মো. আলামিন বলেন, আমি তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাদার্ত্তী মৌজায় ছোট দুই ভাই নজরুল ও এমররনকে সাথে নিয়ে তিন ভাইয়ে মিলে সাড়ে ১৪ শতাংশ জমি ক্রয় করি। কিন্তু জমি ক্রয় করার সময় একটি দাগ নম্বর ভুল হয়। পরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সময় ভুলটি ধরা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে ভূমি অফিসে আবেদন করি। আবেদনের এক সপ্তাহের মধ্যে ইউএনও স্যার সেটি নিস্পত্তি করেন।

প্রায় দুই যুগ আগে আমার স্ত্রীর নামের জমি আরেক জনের নামে অবৈধভাবে নামজারি করে নিয়ে যায় অন্য লোক। ওই বিষয়টি নিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসে মিস কেইস করে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথম শুনানী হয়। আর সেই শুনানীতে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও স্যার প্রথম তারিখেই দুই যুগ আগে নিয়ে যাওয়া নামজারি বাতিল করে দেন। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যেই আমার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগমের নামে নামজারি করে দেন ইউএনও স্যার। এভাবেই প্রতিবেদককে বললেন কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ৬নং ওয়ার্ড খঞ্জনা গ্রামের বাসিন্দা ভূক্তভোগী হোসনেয়ারা বেগমের স্বামী শাহজাহান শেখ।

এ বিষয়ে বিচারক মো. আসসাদিকজামান জানান, সময় মতো অফিস করলে এবং সময়ের কাজ সময়ে করলে মিস কেস দ্রæত নিষ্পত্তি করা সম্ভব।

ইউএনও মো. আসসাদিকজামান বলেন, একজন ভূক্তভোগী যখন ভূমি অফিসে একটি মিস কেস করেন তখন সেটা নিয়ে তাদের অনেক স্বপ্ন থাকে। ভূমি বিষয়ে অনেকের পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় অন্যান্যদের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। নির্ধারিত তারিখে শুনানীর জন্য ভূমি বিষয়ে কথিত পারদর্শী সে ব্যক্তিকে নিয়ে আসার জন্য তাকে আলাদা সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। মামলা নিষ্পত্তি করতে সময়ক্ষেপন হলে বা বার বার তারিখ পড়লে সেই ব্যয়ের পুনরাবৃত্তি হয়।

তিনি আরো বলেন, শুনানীর সময় চেষ্টা করি ভূক্তভোগীদের করা প্রত্যেকটি আবেদন ভাল করে গুরুত্ব দিয়ে সময় নিয়ে দেখে দ্রæত নিস্পত্তি করে দেওয়ার। এতে করে জনগণের সময়, খরচ ও যাতায়াত সাশ্রয় হয়। এ ব্যাপারে ভূমি অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

 

জনপ্রিয়

ইউএনও’র আন্তরিকতায় খুশি ভূমি সেবা প্রত্যাশিরা

প্রকাশিত : ১২:৩৯:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০২৩

নামজারি সমাধানের জন্য অনেক ভূমি সেবা প্রত্যাশিরা ভূমি অফিসে মিস কেস করেন। কিন্তু এসিল্যান্ডদের সরকারি নানা কাজের চাপে বা অনেক সময় অধিক আইনি জটিলতার কারণে তা দ্রæত নিস্পত্তি করা সম্ভব হয় না। যে কারণে বছরের পর বছর গেলেও ভূমি অফিসে সেবা প্রত্যাশিদের করা ওইসব মিস কেসের পাহাড় জমতে থাকে। এ জন্য ভূমি অফিসে দিনের পর দিন সেবা প্রত্যাশিদের ঘুরতে হয়। আর সেই সুবাদে অনেকে দালাল কর্তৃক ধরাসায়ি হন। অনেকে আবার তারা তাদের জীবদ্দশায় সেই মিস কেসের নিম্পত্তি দেখেও যেতে পারেন না। তবে সেই ক্ষেত্রে কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও মো. আসসাদিকজামানের আন্তরিকতায় খুশি ভূমি সেবা প্রত্যাশিরা।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসে সহকারী কমিশনার ((ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন উন্মে হাফছা নাদিয়া। তিনি যোগদানের ২ মাস পরেই মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যান। তাঁর এই ছুটিতে যাওয়ার পর এসিল্যান্ডের অতিরিক্ত দায়িত্ব পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসসাদিকজামান।

সূত্র আরো জানান, ইউএনও মো. আসসাদিকজামান কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের চলতি দায়িত্ব বুঝে নেন গত বছরের ২৪ অক্টোবর। দায়িত্ব পাওয়ার ৪ মাস ৬ দিনে (২ মার্চ পর্যন্ত) তিনি ৩১ দিন শুনানি করেন। আর এই ৩১ দিনের শুনানীতে উপজেলার কালীগঞ্জ পৌরসভা, তুমলিয়া, নাগরী, বক্তারপুর, জাঙ্গালীয়া, জামালপুর, মোক্তারপুর ও বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের মোট ২০১টি মিস কেস নিস্পত্তি করেন।

কালীগঞ্জ পৌর এলাকা ভাদার্ত্তী গ্রামের বাসিন্দা ভূক্তভোগী মো. আলামিন বলেন, আমি তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাদার্ত্তী মৌজায় ছোট দুই ভাই নজরুল ও এমররনকে সাথে নিয়ে তিন ভাইয়ে মিলে সাড়ে ১৪ শতাংশ জমি ক্রয় করি। কিন্তু জমি ক্রয় করার সময় একটি দাগ নম্বর ভুল হয়। পরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সময় ভুলটি ধরা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে ভূমি অফিসে আবেদন করি। আবেদনের এক সপ্তাহের মধ্যে ইউএনও স্যার সেটি নিস্পত্তি করেন।

প্রায় দুই যুগ আগে আমার স্ত্রীর নামের জমি আরেক জনের নামে অবৈধভাবে নামজারি করে নিয়ে যায় অন্য লোক। ওই বিষয়টি নিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসে মিস কেইস করে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথম শুনানী হয়। আর সেই শুনানীতে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও স্যার প্রথম তারিখেই দুই যুগ আগে নিয়ে যাওয়া নামজারি বাতিল করে দেন। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যেই আমার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগমের নামে নামজারি করে দেন ইউএনও স্যার। এভাবেই প্রতিবেদককে বললেন কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ৬নং ওয়ার্ড খঞ্জনা গ্রামের বাসিন্দা ভূক্তভোগী হোসনেয়ারা বেগমের স্বামী শাহজাহান শেখ।

এ বিষয়ে বিচারক মো. আসসাদিকজামান জানান, সময় মতো অফিস করলে এবং সময়ের কাজ সময়ে করলে মিস কেস দ্রæত নিষ্পত্তি করা সম্ভব।

ইউএনও মো. আসসাদিকজামান বলেন, একজন ভূক্তভোগী যখন ভূমি অফিসে একটি মিস কেস করেন তখন সেটা নিয়ে তাদের অনেক স্বপ্ন থাকে। ভূমি বিষয়ে অনেকের পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় অন্যান্যদের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। নির্ধারিত তারিখে শুনানীর জন্য ভূমি বিষয়ে কথিত পারদর্শী সে ব্যক্তিকে নিয়ে আসার জন্য তাকে আলাদা সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। মামলা নিষ্পত্তি করতে সময়ক্ষেপন হলে বা বার বার তারিখ পড়লে সেই ব্যয়ের পুনরাবৃত্তি হয়।

তিনি আরো বলেন, শুনানীর সময় চেষ্টা করি ভূক্তভোগীদের করা প্রত্যেকটি আবেদন ভাল করে গুরুত্ব দিয়ে সময় নিয়ে দেখে দ্রæত নিস্পত্তি করে দেওয়ার। এতে করে জনগণের সময়, খরচ ও যাতায়াত সাশ্রয় হয়। এ ব্যাপারে ভূমি অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব