১২:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনের মুখে মিরপুরের চার গ্রাম

কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমিসহ বসত ভিটা হারিয়ে দিশেহারা এলাকাবাসী

প্রমত্তা পদ্মা নদীর ভয়াবহ অব্যাহত ভাঙ্গনের কবলে পড়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চার গ্রামের মানুষ আতংকের মধ্যে পড়েছে। গ্রাম চার টির মধ্যে রয়েছে তালবাড়ীয়া, বহলবাড়ীয়া ও সাহেবনগর ও মির্জানগরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বসত ঘরবাড়ী, মাঠের ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ গুলো। ঝুকির মধ্যে রয়েছে হাই ভোলটেজ ৫টা বিদুতের টাওয়ার। নদী ভাঙ্গন রোধে বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হলেও এখনো কোন বাঁধ নির্মানের ব্যবস্থা নেয়নি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ। সর্বগ্রাসী পদ্মার অব্যাহত ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে এলাকার মানুষ মানব বন্ধনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়াকে ঘেড়াও কর্মসুচীও পালন করেছে। এতে কোন কাজ হচ্ছেনা।

কুষ্টিয়া-২ ( মিরপুর ভেড়ামারা) সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম পদ্মার ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ডিজিকে জানাতে। শহীদুল ইসলাম ডিজিকে ঘটনা বিস্তারিতভাবে জানানোর পর তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানকে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। তার পরেও কোন কাজ হচ্ছে না। নির্বাহী প্রকৌশলী গোপনে আওয়ামীলীগের ঠিকাদারের সাথে আতাত করে নয় ছয় শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এলাকাবাসী জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইতোমধ্যে এসব এলাকার কয়েক ‘শ’ ঘরবাড়ী নদীতে তলিয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক। দেশের উত্তর – দক্ষিণ অঞ্চলের একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থায় কুষ্টিয়া- ঈশ^রদী মহাসড়কটি যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে নদীগর্ভে এমন আশঙ্খা করছে সাধারণ মানুষ।

সাহেবনগর নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অপু বলেন, পদ্মার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে বহলবাড়ীয়া, বারুইপাড়া, তালবাড়ীয়া, খাদিমপুর, সাহেবনগর, মির্জানগর ও ঘোড়ামারাসহ বেশকিছু এলাকা। বিগত তিন বছর যাবত নদীগর্ভে শত শত একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডের ছয়টি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের টাওয়ারসহ বসতবাডী, শতবর্ষী স্কুল-কলেজ ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। কুষ্টিয়া ঈশ্বরদী-মহাসড়ক থেকে নদী মাত্র ৫০ মিটার দূরে আছে। সড়কটি যেকোনো সময় ভাঙনের কবলে পড়বে। মহেদী হাসানের অভিযোগ, এসব এলাকার ভাঙন রোধে সরকারিভাবে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হলেও চলতি মৌসুমে কোনো জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করেনি পাউবো। যত টুকু জিও ব্যাগ ফেলেছিল তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না। দ্রæত এই প্রকল্পের টাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি। এলাকাবাসী আরো বলেন, পদ্মার তীর ঘেঁষে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ নির্মাণের কারণে ভাঙন তীব্র হয়েছে। এটি নির্মাণের পর থেকেই তাদের বসতবাড়ি ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানের বলেন, সাহেবনগর বেড়ীবাঁধসহ ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ও টিউব ব্যাগ ফেলার কাজ খুব দ্রæতই চলছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে শুরু হবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান আরো বলেন, টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি ২-৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ওই এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। আমরা ব্যাপারটি অবজারভেশনের মধ্যে রেখেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ার ও বেড়িবাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় সেখানে দ্রæত জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। আপদকালীন পরিস্থিতি পার করে দ্রæত ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য নেওয়া প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

একজন ব্যবসায়ী বান্ধব নেতা ওয়াহিদুল হাসান দিপু

কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনের মুখে মিরপুরের চার গ্রাম

কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমিসহ বসত ভিটা হারিয়ে দিশেহারা এলাকাবাসী

প্রকাশিত : ০৩:১৩:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রমত্তা পদ্মা নদীর ভয়াবহ অব্যাহত ভাঙ্গনের কবলে পড়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চার গ্রামের মানুষ আতংকের মধ্যে পড়েছে। গ্রাম চার টির মধ্যে রয়েছে তালবাড়ীয়া, বহলবাড়ীয়া ও সাহেবনগর ও মির্জানগরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বসত ঘরবাড়ী, মাঠের ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ গুলো। ঝুকির মধ্যে রয়েছে হাই ভোলটেজ ৫টা বিদুতের টাওয়ার। নদী ভাঙ্গন রোধে বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হলেও এখনো কোন বাঁধ নির্মানের ব্যবস্থা নেয়নি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ। সর্বগ্রাসী পদ্মার অব্যাহত ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে এলাকার মানুষ মানব বন্ধনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়াকে ঘেড়াও কর্মসুচীও পালন করেছে। এতে কোন কাজ হচ্ছেনা।

কুষ্টিয়া-২ ( মিরপুর ভেড়ামারা) সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম পদ্মার ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ডিজিকে জানাতে। শহীদুল ইসলাম ডিজিকে ঘটনা বিস্তারিতভাবে জানানোর পর তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানকে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। তার পরেও কোন কাজ হচ্ছে না। নির্বাহী প্রকৌশলী গোপনে আওয়ামীলীগের ঠিকাদারের সাথে আতাত করে নয় ছয় শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এলাকাবাসী জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইতোমধ্যে এসব এলাকার কয়েক ‘শ’ ঘরবাড়ী নদীতে তলিয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক। দেশের উত্তর – দক্ষিণ অঞ্চলের একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থায় কুষ্টিয়া- ঈশ^রদী মহাসড়কটি যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে নদীগর্ভে এমন আশঙ্খা করছে সাধারণ মানুষ।

সাহেবনগর নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অপু বলেন, পদ্মার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে বহলবাড়ীয়া, বারুইপাড়া, তালবাড়ীয়া, খাদিমপুর, সাহেবনগর, মির্জানগর ও ঘোড়ামারাসহ বেশকিছু এলাকা। বিগত তিন বছর যাবত নদীগর্ভে শত শত একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডের ছয়টি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের টাওয়ারসহ বসতবাডী, শতবর্ষী স্কুল-কলেজ ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। কুষ্টিয়া ঈশ্বরদী-মহাসড়ক থেকে নদী মাত্র ৫০ মিটার দূরে আছে। সড়কটি যেকোনো সময় ভাঙনের কবলে পড়বে। মহেদী হাসানের অভিযোগ, এসব এলাকার ভাঙন রোধে সরকারিভাবে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হলেও চলতি মৌসুমে কোনো জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করেনি পাউবো। যত টুকু জিও ব্যাগ ফেলেছিল তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না। দ্রæত এই প্রকল্পের টাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি। এলাকাবাসী আরো বলেন, পদ্মার তীর ঘেঁষে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ নির্মাণের কারণে ভাঙন তীব্র হয়েছে। এটি নির্মাণের পর থেকেই তাদের বসতবাড়ি ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানের বলেন, সাহেবনগর বেড়ীবাঁধসহ ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ও টিউব ব্যাগ ফেলার কাজ খুব দ্রæতই চলছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে শুরু হবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান আরো বলেন, টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি ২-৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ওই এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। আমরা ব্যাপারটি অবজারভেশনের মধ্যে রেখেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ার ও বেড়িবাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় সেখানে দ্রæত জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। আপদকালীন পরিস্থিতি পার করে দ্রæত ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য নেওয়া প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস