০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

কেঁচো সার তৈরী, স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কামরুন নাহার

গত ৫ বছর ধরে ডাবরে কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন নওগাঁর মান্দায় কামরুন নাহার। সফল কেঁচো চাষি হিসেবে অনেককে পথ দেখাচ্ছেন এই নারী। সংসারের সব ধরনের কাজের পাশাপাশি কেঁচো সার বিক্রি করে তিনি এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

টেলিভিশনে একদিন কেঁচো চাষের অনুষ্ঠান দেখে এর প্রতি আগ্রহ জন্মে তার। মনে মনে ইচ্ছা পূষণ করেন, কেঁচো চাষের পদ্ধতি হাতে কলমে শেখার। সেই আগ্রহ থেকেই কেঁচো চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের মৃধাপাড়ার কামরুন নাহার বলেন, মাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা করতে পারলাম না। কিন্তু কিছু একটা করার ইচ্ছা সব সময় আমাকে তাড়িয়ে বেড়াত। তা থেকে বাড়িতেই কেঁচো খামার গড়ে তুলি। এখন কেঁচো চাষ করছি।

২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে বিজয়পুর গ্রামে কেঁচো চাষের ওপর একদিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এই প্রশিক্ষণে ৩৫ জন নারী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে কামরুন নাহারও ছিলেন। ওই সংস্থা থেকে একটি করে ডাবর (মাটির বড় পাত্র) ও কিছু কেঁচো ও উপকরণ দেয়া হয়। এইটুকু সহযোগিতা কামরুন নাহারকে স্বপ্ন পূরণে পৌঁছে দেয়।

এরপর কেঁচো সার তৈরি করতে কামরুন নাহারকে আর বেগ পেতে হয়নি। কারণ কেঁচো সার তৈরির প্রধান উপকরণ গোবর। তার দুটি গরু রয়েছে। আছে দুটি বাছুরও। খামারে গরুগুলো সব সময় বাঁধা থাকে। সেখানে গরুগুলোকে পরিচর্যা করা হয়। কেঁচো সার তৈরিতে প্রথমে গোবরকে বালু ও আবর্জনা মুক্ত করেন। এরপর একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে মুখ বেঁধে ১০-১২ দিন ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দেন। যাতে এ সময়ের মধ্যে গোবর থেকে গ্যাস বেরিয়ে যায় এবং কালচে রং ধারণ করে। এরপর সেগুলো পলিথিনের বস্তার ওপর ঢেলে রিফাইন করে বা পানি দিয়ে হালকা নরম করে ডাবরে রাখা হয়। সেখানে কেঁচো ছেড়ে দিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা হয়। এভাবেই শুরু হয় সার তৈরির প্রক্রিয়া।

কেঁচোর পরিমাণ বেশি হলে ১২-১৫ দিন, আর যদি পরিমাণ কম হয় তাহলে ১৮-২০ দিনের মতো সময় লাগে সার তৈরি করতে। বর্তমানে দুটি বড় এবং তিনটি মাঝারি আকারের ডাবরে কেঁচো সার তৈরি করেন তিনি। আলাদা করে তাকে আর কেঁচো কিনতে হয় না। গোবরের মধ্যে কেঁচো ডিম দেয় এবং সেখান থেকেই কেঁচো জন্মে।

উৎপাদিসকৃত সারগুলো তিনি নিজ বাড়ির বাগানের সবজি বেগুন, লাউ, আদা, হলুদ, সিম, মরিচ চাষে এবং নারিকেল গাছের গোড়ায় ব্যবহার করেন। এতে সারা বছর বাজার থেকে কোন রাসায়নিক সার কিনতে হয়না। বাড়িতে ব্যবহার করে বাড়তি টুকু বিক্রি করেন। প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকার কেঁচোর সার বিক্রি করেন। চলতি বছরে ১০ হাজার টাকার সার বিক্রি করেছেন। আরো প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মতো বিক্রি করবেন। প্রতি কেজি কেঁচো সারের দাম নেন ১০ টাকা। প্রতিবেশীরাই তার ক্রেতা।
তার এ পদ্ধতি দেখে এখন অনেকেই কেঁচো সার তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। জমিতে ফসলের ভালো ফলনের জন্য এটি খুবই উপকারী। কেঁচো চাষ করে এখন তিনি বেশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

এ কাজে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এ প্রসঙ্গে কামরুন নাহার বলেন, ৫ বছর আগে যখন কেঁচো চাষ শুরু করি তখন বাড়ির অনেকেই বাধা দিয়েছেন। কিন্তু আমি দমে যাইনি। নিজের চেষ্টায় কেঁচো চাষে এগিয়ে চলেছি। সবজির ফলন ভালো হওয়ায় এখন আর কেহ বাধা দেয় না। আমার বাবা আনিছার রহমান মৃধাও এখন কেঁচো চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

কেঁচো চাষ নিয়ে ভবিষৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কামরুন নাহার জানান, আরো বড় পরিসরে কেঁচো চাষ করার ইচ্ছা আছে তার। সেক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতাও দরকার।

মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, এ উপজেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অনেকেই কেঁচো চাষ করছেন। বড় পরিষরে বাণিজ্যিকভাবে এখনও চাষ শুরু হয়নি। তবে আগামীতে কেঁচো চাষির সংখ্যা বাড়াতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

কেঁচো সার তৈরী, স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কামরুন নাহার

প্রকাশিত : ০৫:৫৫:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২০

গত ৫ বছর ধরে ডাবরে কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন নওগাঁর মান্দায় কামরুন নাহার। সফল কেঁচো চাষি হিসেবে অনেককে পথ দেখাচ্ছেন এই নারী। সংসারের সব ধরনের কাজের পাশাপাশি কেঁচো সার বিক্রি করে তিনি এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

টেলিভিশনে একদিন কেঁচো চাষের অনুষ্ঠান দেখে এর প্রতি আগ্রহ জন্মে তার। মনে মনে ইচ্ছা পূষণ করেন, কেঁচো চাষের পদ্ধতি হাতে কলমে শেখার। সেই আগ্রহ থেকেই কেঁচো চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের মৃধাপাড়ার কামরুন নাহার বলেন, মাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা করতে পারলাম না। কিন্তু কিছু একটা করার ইচ্ছা সব সময় আমাকে তাড়িয়ে বেড়াত। তা থেকে বাড়িতেই কেঁচো খামার গড়ে তুলি। এখন কেঁচো চাষ করছি।

২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে বিজয়পুর গ্রামে কেঁচো চাষের ওপর একদিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এই প্রশিক্ষণে ৩৫ জন নারী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে কামরুন নাহারও ছিলেন। ওই সংস্থা থেকে একটি করে ডাবর (মাটির বড় পাত্র) ও কিছু কেঁচো ও উপকরণ দেয়া হয়। এইটুকু সহযোগিতা কামরুন নাহারকে স্বপ্ন পূরণে পৌঁছে দেয়।

এরপর কেঁচো সার তৈরি করতে কামরুন নাহারকে আর বেগ পেতে হয়নি। কারণ কেঁচো সার তৈরির প্রধান উপকরণ গোবর। তার দুটি গরু রয়েছে। আছে দুটি বাছুরও। খামারে গরুগুলো সব সময় বাঁধা থাকে। সেখানে গরুগুলোকে পরিচর্যা করা হয়। কেঁচো সার তৈরিতে প্রথমে গোবরকে বালু ও আবর্জনা মুক্ত করেন। এরপর একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে মুখ বেঁধে ১০-১২ দিন ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দেন। যাতে এ সময়ের মধ্যে গোবর থেকে গ্যাস বেরিয়ে যায় এবং কালচে রং ধারণ করে। এরপর সেগুলো পলিথিনের বস্তার ওপর ঢেলে রিফাইন করে বা পানি দিয়ে হালকা নরম করে ডাবরে রাখা হয়। সেখানে কেঁচো ছেড়ে দিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা হয়। এভাবেই শুরু হয় সার তৈরির প্রক্রিয়া।

কেঁচোর পরিমাণ বেশি হলে ১২-১৫ দিন, আর যদি পরিমাণ কম হয় তাহলে ১৮-২০ দিনের মতো সময় লাগে সার তৈরি করতে। বর্তমানে দুটি বড় এবং তিনটি মাঝারি আকারের ডাবরে কেঁচো সার তৈরি করেন তিনি। আলাদা করে তাকে আর কেঁচো কিনতে হয় না। গোবরের মধ্যে কেঁচো ডিম দেয় এবং সেখান থেকেই কেঁচো জন্মে।

উৎপাদিসকৃত সারগুলো তিনি নিজ বাড়ির বাগানের সবজি বেগুন, লাউ, আদা, হলুদ, সিম, মরিচ চাষে এবং নারিকেল গাছের গোড়ায় ব্যবহার করেন। এতে সারা বছর বাজার থেকে কোন রাসায়নিক সার কিনতে হয়না। বাড়িতে ব্যবহার করে বাড়তি টুকু বিক্রি করেন। প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকার কেঁচোর সার বিক্রি করেন। চলতি বছরে ১০ হাজার টাকার সার বিক্রি করেছেন। আরো প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মতো বিক্রি করবেন। প্রতি কেজি কেঁচো সারের দাম নেন ১০ টাকা। প্রতিবেশীরাই তার ক্রেতা।
তার এ পদ্ধতি দেখে এখন অনেকেই কেঁচো সার তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। জমিতে ফসলের ভালো ফলনের জন্য এটি খুবই উপকারী। কেঁচো চাষ করে এখন তিনি বেশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

এ কাজে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এ প্রসঙ্গে কামরুন নাহার বলেন, ৫ বছর আগে যখন কেঁচো চাষ শুরু করি তখন বাড়ির অনেকেই বাধা দিয়েছেন। কিন্তু আমি দমে যাইনি। নিজের চেষ্টায় কেঁচো চাষে এগিয়ে চলেছি। সবজির ফলন ভালো হওয়ায় এখন আর কেহ বাধা দেয় না। আমার বাবা আনিছার রহমান মৃধাও এখন কেঁচো চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

কেঁচো চাষ নিয়ে ভবিষৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কামরুন নাহার জানান, আরো বড় পরিসরে কেঁচো চাষ করার ইচ্ছা আছে তার। সেক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতাও দরকার।

মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, এ উপজেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অনেকেই কেঁচো চাষ করছেন। বড় পরিষরে বাণিজ্যিকভাবে এখনও চাষ শুরু হয়নি। তবে আগামীতে কেঁচো চাষির সংখ্যা বাড়াতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর