০৭:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিলীনের পথে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মাদুর শিল্প

শুরু হয়েছে দিন বদলের পালা, পাল্টে যাচ্ছে জীবন-জীবিকা, হারিয়ে যাচ্ছে পুরনো অতীত ঐতিহ্য। একসময় এ গ্রামীণ জনপদের অজপাড়াগাঁয়ে শীতলতার পরশ মাদুর (শপ) বুননের কারিগররা বছর জুড়ে সুখ- স্বাচ্ছন্দে মেতে উঠত কর্মযজ্ঞের মহোৎসবে। ওই কর্মযজ্ঞে শুধু পুরুষই নয় শ শ নারীও সম্পৃক্ত ছিলেন। জমিতে চাষ করা মোথা ঘাস রোদে শুঁকিয়ে তা দিয়ে মাদুর তৈরি করা হয়। সেই শীতল পরশ মধুর শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে যেন একটা হিম হিম আবহাওয়া খেলা করে যে কারো মনোভূমিতে। সেই সময়ে চিরায়িত গ্রাম বাংলার অন্যতম সংস্কৃতি ছিল ভোজন শালায় সপ অর্থাৎ মাদুর বিছিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রীতিনীতি। গ্রাম গঞ্জের মানুষও বারান্দা উঠোনে,মাটিতে পরিবেশ বান্ধব মাদুর বিছিয়ে তাতে শুয়ে-বসে ক্লান্তির অবসানের পাশাপাশি বিনা এসি ও ফ্যানে শান্তির ঘুম দিতেন। সনাতন ধর্মালম্বীদের পূজা পার্বণ, শ্রাদ্ধ, বিয়ের পিঁড়ীতেসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে মাদুর (শপ) আজও ব্যবহার হয়ে থাকে। শীতল পাটির আদলে গড়ে ওঠা মাদুর শিল্পের উপর নির্ভর করে চলত অনেক পরিবারের জীবন জীবিকা। মাদুরের কদর কালিন সময়ে পরিবার গুলোতে ছিল সুখ শান্তি, ছিল গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর গলায় গলায় গান। আর এ আয়ের উৎস দিয়ে চলত ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া। কিন্তু আজ কালের বিবর্তনে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে নীলফামারী কিশোরগঞ্জে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী শীতলতার পরশ মাদুর (শপ) শিল্প। পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, বাজারব্যবস্থার রুগ্নতা, আধুনিকতার পদধূলিতে প্লাস্টিক পণ্যের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছে এই শিল্পটি। এই পেশায় যারা জড়িত এবং তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন কুটিরশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও কিশোরগঞ্জে মাদুর শিল্প এখনো স্বপ্ন দেখেন। কোন একদিন আবারও কদর বাড়বে মোথার তৈরি শপের। সেদিন হয়তো আবারও তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। সেই প্রতীক্ষার প্রহরগুনে পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এখনও ধরে রেখেছেন অনেকেই। দেশ-বিদেশে রপ্তানি করে গড়ে ওঠা এই শিল্পের আদি নিবাস কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সিট রাজিব, বাংলাবাজার, দুন্দীপাড়া, রণচন্ডী, মুসা সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে। বর্তমান ডিজিটাল যুগের পালের হাওয়ায় প্রযুক্তির উন্নয়নে হাতের তৈরি মাদুর (শপ)এর বদলে , বাহারি রঙের প্লাস্টিকের মাদুর ( শপ) আর শহরে সুদৃশ্য গালিচা ছেয়ে যাওয়ায় বিপন্নের পথে এই কুটির শিল্পটি। আগের মতো আর গ্রামগঞ্জে মাদুর (শপ)তেমন আর চোখে পড়ে না। নতুন প্রজন্মের মাঝে হারিয়ে গেলেও প্রবীণরা আজও খুঁজে ফেরে উষ্ণতার পরশ

মাদুর (শপ)। সম্প্রতি সময়ে সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম মহল্লার আঁকা বাঁকা মেঠো পথ ঘুরে এই কুটির শিল্পটি দুর্দিন দেখা গেছে। কিন্তু উপজেলার সিট রাজীব দুন্দীপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা আজও পূবর্পুরুষের পেশার শেষ প্রান্ত কুটির শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।ওই গ্রামের মাদুর তৈরীর কারিগর গোলেজা বেগম জানান, আগোত শপের খুব চাহিদা ছিল, এলা কমি গেইছে, মানুস এখোন হামার হাতে বানা (তৈরি) সপ কম নেয়ছে। হামরাও আর আগের মতন শপ বানাইনা। খাঁটি খুটি যেকনা লাব (লাভ) হয় সেকনা দিয়া সংসার চলে না। পারাটাত সবার বাড়িতে বাড়িতে শপ বানাইছিল এলা ছাড়ি দিছে। একই গ্রামের কারিগর দই মুদ্দিন, তইমুদ্দিন, খাদিমুল (আক্ষেপ করে) জানান, মেলা দিন ধরিয়া এ শপ বানেয়া আসিছি, এখোন আর এইলা মানুস নেয়ছেনা, হাটে বাজারে প্লাস্টিকের শপ ব্যারেয়া হামার হাতে বানা (তৈরি) শপ হ্যারে যায়ছে। তার পরও হামরা আশপাশের কয়জন নারী পুরুষ মিলিয়া অল্প করে বানে হাটোত ব্যাচেঁ ধরি থুইছি। এ দিকে উপজেলার সচেতন মহল ও বিশিষ্টজনরা মনে করছেন ঐতিহ্য লালন করে হাতে তৈরি মাদুরের(শপের) এখনো কদর রয়েছে, আধুনিক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে শিল্পকর্মে প্রশিক্ষিত করে মাদুর শিল্পের সময়োপযোগী জিনিসপত্র তৈরি এবং বিদেশে পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন পাশাপাশি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পৃষ্ঠপোষকতা খুবই জরুরী।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

বিলীনের পথে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মাদুর শিল্প

প্রকাশিত : ০৮:১৮:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অগাস্ট ২০২০

শুরু হয়েছে দিন বদলের পালা, পাল্টে যাচ্ছে জীবন-জীবিকা, হারিয়ে যাচ্ছে পুরনো অতীত ঐতিহ্য। একসময় এ গ্রামীণ জনপদের অজপাড়াগাঁয়ে শীতলতার পরশ মাদুর (শপ) বুননের কারিগররা বছর জুড়ে সুখ- স্বাচ্ছন্দে মেতে উঠত কর্মযজ্ঞের মহোৎসবে। ওই কর্মযজ্ঞে শুধু পুরুষই নয় শ শ নারীও সম্পৃক্ত ছিলেন। জমিতে চাষ করা মোথা ঘাস রোদে শুঁকিয়ে তা দিয়ে মাদুর তৈরি করা হয়। সেই শীতল পরশ মধুর শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে যেন একটা হিম হিম আবহাওয়া খেলা করে যে কারো মনোভূমিতে। সেই সময়ে চিরায়িত গ্রাম বাংলার অন্যতম সংস্কৃতি ছিল ভোজন শালায় সপ অর্থাৎ মাদুর বিছিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রীতিনীতি। গ্রাম গঞ্জের মানুষও বারান্দা উঠোনে,মাটিতে পরিবেশ বান্ধব মাদুর বিছিয়ে তাতে শুয়ে-বসে ক্লান্তির অবসানের পাশাপাশি বিনা এসি ও ফ্যানে শান্তির ঘুম দিতেন। সনাতন ধর্মালম্বীদের পূজা পার্বণ, শ্রাদ্ধ, বিয়ের পিঁড়ীতেসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে মাদুর (শপ) আজও ব্যবহার হয়ে থাকে। শীতল পাটির আদলে গড়ে ওঠা মাদুর শিল্পের উপর নির্ভর করে চলত অনেক পরিবারের জীবন জীবিকা। মাদুরের কদর কালিন সময়ে পরিবার গুলোতে ছিল সুখ শান্তি, ছিল গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর গলায় গলায় গান। আর এ আয়ের উৎস দিয়ে চলত ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া। কিন্তু আজ কালের বিবর্তনে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে নীলফামারী কিশোরগঞ্জে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী শীতলতার পরশ মাদুর (শপ) শিল্প। পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, বাজারব্যবস্থার রুগ্নতা, আধুনিকতার পদধূলিতে প্লাস্টিক পণ্যের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছে এই শিল্পটি। এই পেশায় যারা জড়িত এবং তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন কুটিরশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও কিশোরগঞ্জে মাদুর শিল্প এখনো স্বপ্ন দেখেন। কোন একদিন আবারও কদর বাড়বে মোথার তৈরি শপের। সেদিন হয়তো আবারও তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। সেই প্রতীক্ষার প্রহরগুনে পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এখনও ধরে রেখেছেন অনেকেই। দেশ-বিদেশে রপ্তানি করে গড়ে ওঠা এই শিল্পের আদি নিবাস কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সিট রাজিব, বাংলাবাজার, দুন্দীপাড়া, রণচন্ডী, মুসা সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে। বর্তমান ডিজিটাল যুগের পালের হাওয়ায় প্রযুক্তির উন্নয়নে হাতের তৈরি মাদুর (শপ)এর বদলে , বাহারি রঙের প্লাস্টিকের মাদুর ( শপ) আর শহরে সুদৃশ্য গালিচা ছেয়ে যাওয়ায় বিপন্নের পথে এই কুটির শিল্পটি। আগের মতো আর গ্রামগঞ্জে মাদুর (শপ)তেমন আর চোখে পড়ে না। নতুন প্রজন্মের মাঝে হারিয়ে গেলেও প্রবীণরা আজও খুঁজে ফেরে উষ্ণতার পরশ

মাদুর (শপ)। সম্প্রতি সময়ে সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম মহল্লার আঁকা বাঁকা মেঠো পথ ঘুরে এই কুটির শিল্পটি দুর্দিন দেখা গেছে। কিন্তু উপজেলার সিট রাজীব দুন্দীপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা আজও পূবর্পুরুষের পেশার শেষ প্রান্ত কুটির শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।ওই গ্রামের মাদুর তৈরীর কারিগর গোলেজা বেগম জানান, আগোত শপের খুব চাহিদা ছিল, এলা কমি গেইছে, মানুস এখোন হামার হাতে বানা (তৈরি) সপ কম নেয়ছে। হামরাও আর আগের মতন শপ বানাইনা। খাঁটি খুটি যেকনা লাব (লাভ) হয় সেকনা দিয়া সংসার চলে না। পারাটাত সবার বাড়িতে বাড়িতে শপ বানাইছিল এলা ছাড়ি দিছে। একই গ্রামের কারিগর দই মুদ্দিন, তইমুদ্দিন, খাদিমুল (আক্ষেপ করে) জানান, মেলা দিন ধরিয়া এ শপ বানেয়া আসিছি, এখোন আর এইলা মানুস নেয়ছেনা, হাটে বাজারে প্লাস্টিকের শপ ব্যারেয়া হামার হাতে বানা (তৈরি) শপ হ্যারে যায়ছে। তার পরও হামরা আশপাশের কয়জন নারী পুরুষ মিলিয়া অল্প করে বানে হাটোত ব্যাচেঁ ধরি থুইছি। এ দিকে উপজেলার সচেতন মহল ও বিশিষ্টজনরা মনে করছেন ঐতিহ্য লালন করে হাতে তৈরি মাদুরের(শপের) এখনো কদর রয়েছে, আধুনিক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে শিল্পকর্মে প্রশিক্ষিত করে মাদুর শিল্পের সময়োপযোগী জিনিসপত্র তৈরি এবং বিদেশে পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন পাশাপাশি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পৃষ্ঠপোষকতা খুবই জরুরী।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর