০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪

আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করছে শেষ স্প্যানের ভাগ্য

আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করছে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানের ভাগ্য। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সেতু নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বুধবার (৯ ডিসেম্বর) রাত থেকেই স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হবে। আবহাওয়া পরিস্থিতি বুধবারের তুলনায় খারাপ না হলে সেতুর ৪১ নম্বর স্প্যানটি বৃহস্পতিবারই (১০ ডিসেম্বর) বসানো হবে।

জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টিল ট্রাস জেটি থেকে ১৫০ মিটার দীর্ঘ ধূসর রঙের স্প্যানটি বুধবার রাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই-তে করে কাঙ্ক্ষিত ১২ এবং ১৩ নম্বর পিয়ারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বুধবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া আজকের (বুধবার) মতো থাকলেও বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) স্প্যানটি বসানো সম্ভব হবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ৪০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। বাকি আছে আর মাত্র একটি এবং সেটিই সর্বশেষ স্প্যান। ৪১তম এই স্প্যানটি (২-এফ) বসবে সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারের ওপর। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) স্প্যানটি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে সেতুর ৪২-পি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানোর মহাযজ্ঞ। একইসঙ্গে দৃশ্যমান হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

এদিকে এই আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দেশে ঘন কুয়াশা থাকবে আরও কয়েক দিন। বাতাসের গতি না থাকা, শুষ্ক আবহাওয়া এবং পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তেছে, যা আরও কয়েকদিন থাকবে।

অব্যাহত ঘন কুয়াশার কারণ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘শীতকালে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে এই অঞ্চলে বিশেষ করে দিল্লি হয়ে বাংলাদেশের আকাশে মেঘ আসছে। এই মেঘ যখন বাংলাদেশে আসে, তখন আর্দ্রতা কমে গিয়ে কুয়াশায় রূপ নেয়। শীতকালে যেহেতু রাতের বেলা সারফেস ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন জলীয় বাষ্প নিচে নেমে এসে কুয়াশায় রূপ নেয়। এই কুয়াশা অনেক সময় তিন-চার দিন পর্যন্ত থাকে। দিনের বেলা সূর্য ওঠার পর একটু কমে গেলেও বিকালের দিকে কুয়াশাভাব আবারও বেড়ে যায়। রাত যত বাড়বে কুয়াশা তত বাড়বে। সকালের দিকে এটি আরও বেশি বাড়বে। এই কুয়াশা কমবেশি আরও দুই-তিন দিন থাকবে।’

সূত্র জানায়, প্রমত্তা পদ্মার প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশের মানুষ, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর স্বপ্ন পূরণে বাকি আছে মাত্র আর কয়েক ঘণ্টা। ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি আরও খারাপ না হলে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে কাল বৃহস্পতিবারই বসছে নির্মাণাধীন দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ৪১ নম্বর স্প্যান।

সূত্র জানায়, মূল নদীর মধ্যে ১৫০ মিটার পর পর মোট ৪২টি পিয়ারের (পিলার) ওপর বসানো শেষ হবে মোট ৪১টি স্প্যান। প্রতিটি পিয়ারে ৬টি করে মোট ২৫২টি পাইল রয়েছে। তবে নদীর তলদেশে মাটির গঠন ও স্রোতের তীব্রতার কারণে নকশা বদল করে সেতুর মাওয়া প্রান্তে কয়েকটি পিয়ার স্থাপন করা হয়েছে ৭টি করে পাইলের ওপর। সব জটিলতা, আলোচনা, সমালোচনা, সমস্যা, অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কঠিন, কিন্তু সুখকর বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে গেছে পদ্মা সেতু। আগামী ১০ থেকে ১২ মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর সব কাজ শেষ হলে ২০২২ সালের মার্চেই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে স্বপ্নের এই সেতু।

উইকিপিডিয়া সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হচ্ছে ইতিহাসের একটি বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে রয়েছে একটি একক রেলপথ।

পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর আববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু। এই সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করা মোট জমির পরিমাণ ৯১৮ হেক্টর।

লে.কর্নেল মুনীম ফেরদৌস হলেন র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র

আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করছে শেষ স্প্যানের ভাগ্য

প্রকাশিত : ০৮:২২:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২০

আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করছে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানের ভাগ্য। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সেতু নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বুধবার (৯ ডিসেম্বর) রাত থেকেই স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হবে। আবহাওয়া পরিস্থিতি বুধবারের তুলনায় খারাপ না হলে সেতুর ৪১ নম্বর স্প্যানটি বৃহস্পতিবারই (১০ ডিসেম্বর) বসানো হবে।

জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টিল ট্রাস জেটি থেকে ১৫০ মিটার দীর্ঘ ধূসর রঙের স্প্যানটি বুধবার রাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই-তে করে কাঙ্ক্ষিত ১২ এবং ১৩ নম্বর পিয়ারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বুধবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া আজকের (বুধবার) মতো থাকলেও বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) স্প্যানটি বসানো সম্ভব হবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ৪০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। বাকি আছে আর মাত্র একটি এবং সেটিই সর্বশেষ স্প্যান। ৪১তম এই স্প্যানটি (২-এফ) বসবে সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারের ওপর। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) স্প্যানটি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে সেতুর ৪২-পি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানোর মহাযজ্ঞ। একইসঙ্গে দৃশ্যমান হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

এদিকে এই আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দেশে ঘন কুয়াশা থাকবে আরও কয়েক দিন। বাতাসের গতি না থাকা, শুষ্ক আবহাওয়া এবং পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তেছে, যা আরও কয়েকদিন থাকবে।

অব্যাহত ঘন কুয়াশার কারণ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘শীতকালে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে এই অঞ্চলে বিশেষ করে দিল্লি হয়ে বাংলাদেশের আকাশে মেঘ আসছে। এই মেঘ যখন বাংলাদেশে আসে, তখন আর্দ্রতা কমে গিয়ে কুয়াশায় রূপ নেয়। শীতকালে যেহেতু রাতের বেলা সারফেস ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন জলীয় বাষ্প নিচে নেমে এসে কুয়াশায় রূপ নেয়। এই কুয়াশা অনেক সময় তিন-চার দিন পর্যন্ত থাকে। দিনের বেলা সূর্য ওঠার পর একটু কমে গেলেও বিকালের দিকে কুয়াশাভাব আবারও বেড়ে যায়। রাত যত বাড়বে কুয়াশা তত বাড়বে। সকালের দিকে এটি আরও বেশি বাড়বে। এই কুয়াশা কমবেশি আরও দুই-তিন দিন থাকবে।’

সূত্র জানায়, প্রমত্তা পদ্মার প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশের মানুষ, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর স্বপ্ন পূরণে বাকি আছে মাত্র আর কয়েক ঘণ্টা। ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি আরও খারাপ না হলে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে কাল বৃহস্পতিবারই বসছে নির্মাণাধীন দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ৪১ নম্বর স্প্যান।

সূত্র জানায়, মূল নদীর মধ্যে ১৫০ মিটার পর পর মোট ৪২টি পিয়ারের (পিলার) ওপর বসানো শেষ হবে মোট ৪১টি স্প্যান। প্রতিটি পিয়ারে ৬টি করে মোট ২৫২টি পাইল রয়েছে। তবে নদীর তলদেশে মাটির গঠন ও স্রোতের তীব্রতার কারণে নকশা বদল করে সেতুর মাওয়া প্রান্তে কয়েকটি পিয়ার স্থাপন করা হয়েছে ৭টি করে পাইলের ওপর। সব জটিলতা, আলোচনা, সমালোচনা, সমস্যা, অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কঠিন, কিন্তু সুখকর বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে গেছে পদ্মা সেতু। আগামী ১০ থেকে ১২ মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর সব কাজ শেষ হলে ২০২২ সালের মার্চেই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে স্বপ্নের এই সেতু।

উইকিপিডিয়া সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হচ্ছে ইতিহাসের একটি বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে রয়েছে একটি একক রেলপথ।

পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর আববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু। এই সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করা মোট জমির পরিমাণ ৯১৮ হেক্টর।