১০:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

দায়িত্বশীলতা ও নিষ্ঠায় অগ্রণী

ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম

টানা দুই মেয়াদে অগ্রণী ব্যাংকের অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম দেখিয়েছেন অসামান্য সাফল্য। তার যোগ্য নেতৃত্বে রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক এখন স্বমহিমায় ভাস্বর। নিজের জীবন দর্শন, কর্মস্থল ও প্রতিষ্ঠানের অর্জন নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ‘আজকের বিজনেস বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আজকের বিজনেস বাংলাদেশের প্রধান প্রতিবেদক তাকী জোবায়ের

বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতের কর্মীদের মাঝে আপনি একজন রোল মডেল। আপনার সাফল্যের সূত্রগুলো কি?

আমি অগ্রণী ব্যাংকে জয়েন করি ১৯৮৪। আমি প্রথম হয়েছিলাম নিয়োগ পরীক্ষা এবং ট্রেনিংয়ে। কিন্তু আমি ঢাকা শহরে কোনদিন চাকরি করতে পারিনি। আমাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করতে হয়েছে। ১৬ বছর আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করাটা আমার জন্য আশির্বাদ ছিল। আমি প্রথম হয়েছিলাম; তাই একজনও যদি শহরে চাকরি করে তাহলে আমার করার কথা। কিন্তু হয়তো আমার খুঁটি ছিল না, কিংবা আমি তদবির করিনি; এবং আমি তদবির করার পক্ষপাতিও নই। আমার ভাগ্য যেখানে ছিল আমি সেখানে চলে গেছি। আমি বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। সারাদেশে আমার যে নেটওয়ার্কিংটা হয়েছে, দায়িত্ব নিয়েছি, চ্যালেঞ্জ নিয়েছি এটা আমার বড় একটা সাহস। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আপনাকে সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ডিভোশন থাকতে হবে, কমিটমেন্ট থাকতে হবে। আপনাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যেভাবে হোক সেই দায়িত্ব আপনাকে পালন করার মানসিকতা থাকতে হবে। রাঙ্গামাটিতে আমাকে যখন দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তখন সেখানে শান্তি বাহিনীর উপদ্রপ ছিল। আমার জীবনের ঝুঁকি ছিল। এই ঝুঁকির মাঝেও আমি জুম চাষীদের কৃষি ঋণ দিয়েছি। সিঙ্গাপুরে আমাকে কোন প্রস্তুতি ছাড়াই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সিঙ্গাপুরে কাজ করাটা আমার একটা সাকসেস স্টোরি। আমি ওখানে কোন টাকা নিয়ে যাইনি। কিন্তু আমি সিঙ্গাপুর থেকে যখন দেশে আসি তখন ১০ লাখ ডলার এফডিআর রেখে আসি অগ্রণী এক্সচেঞ্চে। ওই টাকা দিয়ে সিঙ্গাপুরে অগ্রণী ব্যাংকের ভবন কেনা হবে। আমি মনে করি, আপনাকে সফল হতে হলে সততা থাকতে হবে, কমিটমেন্ট থাকতে হবে। কি পেয়েছি কি পাইনি সেটা চিন্তা না করে কি দিতে পেরেছি সেটা যদি চিন্তা করতে পারি তাহলে আমি মনে করি যে কেউই তার জীবনে সফল হতে পারে। আমরা যদি মনোযোগ সহকারে আমাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করি তাহলে এ দেশটা খুব তারাতারিই একটি উন্নত দেশ হয়ে যাবে।

রেমিট্যান্স আহরণে অগ্রণী ব্যাংক শীর্ষস্থানে রয়েছে। ২০২০ সালের শেষ ছয় মাসে দেশের মোট রেমিট্যান্সের সাড়ে ১২ শতাংশ এসেছে শুধু অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে। আপনাদের সেবার ওপর প্রবাসীদের আস্থা রাখার কারণ কী?

প্রবাসে থাকাকালে দেখেছি, প্রবাসীরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠান। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান হয়ে ঢাকায় আসার পর তখনই আমি রেমিট্যান্সের বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিই। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মধ্যে আমরা রেমিট্যান্স আয়ে জনতা ব্যাংককে অতিক্রম করি। আর ২০১২ সালে সোনালী ব্যাংককে ছাড়িয়ে যাই। এরপর থেকেই সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে নম্বর ওয়ান। এখন দেশের সখল ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে। আমি জিএম হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রবাসীদের অর্থ সহজে দেশে আনতে বিভিন্ন মানি ট্রান্সফার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছিলাম, যার ফল এখন আমরা পাচ্ছি। এ ছাড়া প্রবাসীদের জন্য আলাদা প্রণোদনা দিচ্ছি। প্রবাসীদের জন্য সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনার সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক আরও ১ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ প্রবাসীরা আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রতি ১০০ টাকায় ৩ টাকা নগদ প্রণোদনা পাচ্ছেন।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে গত মার্চে সিঙ্গাপুরের প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য একটি অ্যাপ চালু করেছিলাম। এটা তাদের টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে ভীষণভাবে সহযোগিতা করেছে। করোনার সময়ে তারা ঘরে বসেই টাকা পাঠাতে পারছেন। এই অ্যাপ প্রচলনের টাইমিংটা এতটাই চমৎকার ছিল যে অনেকেই জাহাজে আইসোলেশনে থেকেই টাকা পাঠাতে পেরেছেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা আমাদের অবকাঠামো, লজিস্টিক ইত্যাদির উন্নয়ন করছি। এসব কারণেই আমাদের ব্যাংকের প্রতি আস্থা বেড়েছে প্রবাসীদের।

পদ্মা সেতু সহ দেশের অবকাঠামো ও বিদ্যুতের উন্নয়নে আপনারা কীভাবে অবদান রাখছেন?

বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন তাতে অগ্রণী ব্যাংক সহযোগিতা করেছে। আমরা সে সময় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, সেতু তৈরিতে যত বিদেশি মুদ্রা প্রয়োজন হবে, অগ্রণী ব্যাংক একাই তা সরবরাহ করতে পারবে। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে ডলারের চাহিদা মেটাতে আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমঝোতা চুক্তি হয়। এর অধীনে পদ্মা সেতুতে যত ডলার প্রয়োজন হবে তা বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সরবরাহ করবে। কিন্তু আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে এক ডলারও নিইনি। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় থেকে এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছি। সরকারের প্রথম পিপিই প্রজেক্ট মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও অর্থায়ন করেছি। ফলে ওই রাস্তায় জনদুর্ভোগ কমেছে। এর বাইরে ১৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে আমাদের অর্থায়ন রয়েছে, যেখান থেকে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে সরকারি ব্যাংক হিসেবে অবদান রেখে জাতির পিতার রেখে যাওয়া নামের গুরুত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করছি।

আপনার চালু করা ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ এখন জাতীয়ভাবে করপোরেট অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হতে দেখা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কর্নার প্রচলনের অনুপ্রেরণাটা কোথায় পেলেন?

২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি আমি জিএম হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে প্রধান কার্যালয়ে আসি। সে সময় আমাকে ব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান করা হয়। একই সঙ্গে সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিলেট যাওয়ার পর মনে হলো, দেশ স্বাধীন না হলে আমি জিএম হতে পারতাম না। হয়তো হাবিব ব্যাংকের এসপিও পদ পর্যন্ত যেতে পারতাম। দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমি জিএম হতে পারলাম, তাই বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কিছু করতে ইচ্ছে হলো। তখন করপোরেট আবহের কোনো একটি জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ওপর কর্নার করার কথা ভাবলাম, যেখানে শুধু বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বই থাকবে। এই কর্নার করার পর অনেক সমালোচনা শুনেছি। পরে যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ত্রাণ দিতে গেলাম, তখন আনসার-ভিডিপি ব্যাংক এবং অগ্রণী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধুর কর্নারের দুটি ছবি নিয়ে গিয়েছিলাম। সেই ছবি দেখে তিনি খুশি হলেন। পরে সরকারি নির্দেশনা এলো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধুর কর্নার করতে হবে। এখন তো বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশনেও বঙ্গবন্ধু কর্নার হচ্ছে। পরে অগ্রণী পরিবার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নামে ৯শ পৃষ্ঠার একটি বই বের করেছি। এটাও একটি উদ্ভাবনী কাজ, যা অন্য কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানে নেই।

করোনা সংকটের মধ্যে যেখানে প্রায় সব ব্যাংক মুনাফা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে পড়েছে, সেখানে অগ্রণী ব্যাংকের সাফল্যের কারণ কী? কী কৌশল কাজ করেছে?

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিছু কৌশল আমাদের নিতে হয়েছে। কারণ এখন খুবই প্রতিযোগিতার বাজার, টিকে থাকতে হলে নতুন নতুন পলিসি নিতে হবে। ঋণের সুদ আয় কমে যাওয়ায় ব্যাংক খাত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ সময় সুদহার কমে যাওয়ায় চেষ্টা করেছি ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে। আয়ের সব খাতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এ সময় সুদবহির্ভূত খাত যেমন ফরেন এক্সচেঞ্জ, এলসি, ট্রেজারি, সিন্ডিকেশন, তহবিল ব্যবস্থাপনা, রেমিট্যান্স, আমদানি-রপ্তানি ইত্যাদি ব্যবসায় জোর দিয়েছি। এই কঠিন সময়ে এসব ক্ষেত্র আমাদের সাফল্য এনে দিয়েছে। এ ছাড়া আমরা ব্যয় কমিয়েছি, লিকেজগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করেছি। ফলে ব্যয় কমিয়েও আয় বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। গত বছর করোনা পরিস্থিতি ও নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়ন করেও আমরা ভাল মুনাফা করতে পেরেছি। ২০২০ সালে আমরা ৮৯০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

দায়িত্বশীলতা ও নিষ্ঠায় অগ্রণী

প্রকাশিত : ১০:২৬:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১

টানা দুই মেয়াদে অগ্রণী ব্যাংকের অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম দেখিয়েছেন অসামান্য সাফল্য। তার যোগ্য নেতৃত্বে রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক এখন স্বমহিমায় ভাস্বর। নিজের জীবন দর্শন, কর্মস্থল ও প্রতিষ্ঠানের অর্জন নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ‘আজকের বিজনেস বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আজকের বিজনেস বাংলাদেশের প্রধান প্রতিবেদক তাকী জোবায়ের

বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতের কর্মীদের মাঝে আপনি একজন রোল মডেল। আপনার সাফল্যের সূত্রগুলো কি?

আমি অগ্রণী ব্যাংকে জয়েন করি ১৯৮৪। আমি প্রথম হয়েছিলাম নিয়োগ পরীক্ষা এবং ট্রেনিংয়ে। কিন্তু আমি ঢাকা শহরে কোনদিন চাকরি করতে পারিনি। আমাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করতে হয়েছে। ১৬ বছর আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করাটা আমার জন্য আশির্বাদ ছিল। আমি প্রথম হয়েছিলাম; তাই একজনও যদি শহরে চাকরি করে তাহলে আমার করার কথা। কিন্তু হয়তো আমার খুঁটি ছিল না, কিংবা আমি তদবির করিনি; এবং আমি তদবির করার পক্ষপাতিও নই। আমার ভাগ্য যেখানে ছিল আমি সেখানে চলে গেছি। আমি বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। সারাদেশে আমার যে নেটওয়ার্কিংটা হয়েছে, দায়িত্ব নিয়েছি, চ্যালেঞ্জ নিয়েছি এটা আমার বড় একটা সাহস। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আপনাকে সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ডিভোশন থাকতে হবে, কমিটমেন্ট থাকতে হবে। আপনাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যেভাবে হোক সেই দায়িত্ব আপনাকে পালন করার মানসিকতা থাকতে হবে। রাঙ্গামাটিতে আমাকে যখন দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তখন সেখানে শান্তি বাহিনীর উপদ্রপ ছিল। আমার জীবনের ঝুঁকি ছিল। এই ঝুঁকির মাঝেও আমি জুম চাষীদের কৃষি ঋণ দিয়েছি। সিঙ্গাপুরে আমাকে কোন প্রস্তুতি ছাড়াই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সিঙ্গাপুরে কাজ করাটা আমার একটা সাকসেস স্টোরি। আমি ওখানে কোন টাকা নিয়ে যাইনি। কিন্তু আমি সিঙ্গাপুর থেকে যখন দেশে আসি তখন ১০ লাখ ডলার এফডিআর রেখে আসি অগ্রণী এক্সচেঞ্চে। ওই টাকা দিয়ে সিঙ্গাপুরে অগ্রণী ব্যাংকের ভবন কেনা হবে। আমি মনে করি, আপনাকে সফল হতে হলে সততা থাকতে হবে, কমিটমেন্ট থাকতে হবে। কি পেয়েছি কি পাইনি সেটা চিন্তা না করে কি দিতে পেরেছি সেটা যদি চিন্তা করতে পারি তাহলে আমি মনে করি যে কেউই তার জীবনে সফল হতে পারে। আমরা যদি মনোযোগ সহকারে আমাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করি তাহলে এ দেশটা খুব তারাতারিই একটি উন্নত দেশ হয়ে যাবে।

রেমিট্যান্স আহরণে অগ্রণী ব্যাংক শীর্ষস্থানে রয়েছে। ২০২০ সালের শেষ ছয় মাসে দেশের মোট রেমিট্যান্সের সাড়ে ১২ শতাংশ এসেছে শুধু অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে। আপনাদের সেবার ওপর প্রবাসীদের আস্থা রাখার কারণ কী?

প্রবাসে থাকাকালে দেখেছি, প্রবাসীরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠান। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান হয়ে ঢাকায় আসার পর তখনই আমি রেমিট্যান্সের বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিই। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মধ্যে আমরা রেমিট্যান্স আয়ে জনতা ব্যাংককে অতিক্রম করি। আর ২০১২ সালে সোনালী ব্যাংককে ছাড়িয়ে যাই। এরপর থেকেই সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে নম্বর ওয়ান। এখন দেশের সখল ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে। আমি জিএম হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রবাসীদের অর্থ সহজে দেশে আনতে বিভিন্ন মানি ট্রান্সফার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছিলাম, যার ফল এখন আমরা পাচ্ছি। এ ছাড়া প্রবাসীদের জন্য আলাদা প্রণোদনা দিচ্ছি। প্রবাসীদের জন্য সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনার সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক আরও ১ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ প্রবাসীরা আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রতি ১০০ টাকায় ৩ টাকা নগদ প্রণোদনা পাচ্ছেন।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে গত মার্চে সিঙ্গাপুরের প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য একটি অ্যাপ চালু করেছিলাম। এটা তাদের টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে ভীষণভাবে সহযোগিতা করেছে। করোনার সময়ে তারা ঘরে বসেই টাকা পাঠাতে পারছেন। এই অ্যাপ প্রচলনের টাইমিংটা এতটাই চমৎকার ছিল যে অনেকেই জাহাজে আইসোলেশনে থেকেই টাকা পাঠাতে পেরেছেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা আমাদের অবকাঠামো, লজিস্টিক ইত্যাদির উন্নয়ন করছি। এসব কারণেই আমাদের ব্যাংকের প্রতি আস্থা বেড়েছে প্রবাসীদের।

পদ্মা সেতু সহ দেশের অবকাঠামো ও বিদ্যুতের উন্নয়নে আপনারা কীভাবে অবদান রাখছেন?

বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন তাতে অগ্রণী ব্যাংক সহযোগিতা করেছে। আমরা সে সময় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, সেতু তৈরিতে যত বিদেশি মুদ্রা প্রয়োজন হবে, অগ্রণী ব্যাংক একাই তা সরবরাহ করতে পারবে। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে ডলারের চাহিদা মেটাতে আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমঝোতা চুক্তি হয়। এর অধীনে পদ্মা সেতুতে যত ডলার প্রয়োজন হবে তা বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সরবরাহ করবে। কিন্তু আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে এক ডলারও নিইনি। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় থেকে এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছি। সরকারের প্রথম পিপিই প্রজেক্ট মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও অর্থায়ন করেছি। ফলে ওই রাস্তায় জনদুর্ভোগ কমেছে। এর বাইরে ১৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে আমাদের অর্থায়ন রয়েছে, যেখান থেকে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে সরকারি ব্যাংক হিসেবে অবদান রেখে জাতির পিতার রেখে যাওয়া নামের গুরুত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করছি।

আপনার চালু করা ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ এখন জাতীয়ভাবে করপোরেট অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হতে দেখা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কর্নার প্রচলনের অনুপ্রেরণাটা কোথায় পেলেন?

২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি আমি জিএম হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে প্রধান কার্যালয়ে আসি। সে সময় আমাকে ব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান করা হয়। একই সঙ্গে সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিলেট যাওয়ার পর মনে হলো, দেশ স্বাধীন না হলে আমি জিএম হতে পারতাম না। হয়তো হাবিব ব্যাংকের এসপিও পদ পর্যন্ত যেতে পারতাম। দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমি জিএম হতে পারলাম, তাই বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কিছু করতে ইচ্ছে হলো। তখন করপোরেট আবহের কোনো একটি জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ওপর কর্নার করার কথা ভাবলাম, যেখানে শুধু বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বই থাকবে। এই কর্নার করার পর অনেক সমালোচনা শুনেছি। পরে যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ত্রাণ দিতে গেলাম, তখন আনসার-ভিডিপি ব্যাংক এবং অগ্রণী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধুর কর্নারের দুটি ছবি নিয়ে গিয়েছিলাম। সেই ছবি দেখে তিনি খুশি হলেন। পরে সরকারি নির্দেশনা এলো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধুর কর্নার করতে হবে। এখন তো বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশনেও বঙ্গবন্ধু কর্নার হচ্ছে। পরে অগ্রণী পরিবার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নামে ৯শ পৃষ্ঠার একটি বই বের করেছি। এটাও একটি উদ্ভাবনী কাজ, যা অন্য কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানে নেই।

করোনা সংকটের মধ্যে যেখানে প্রায় সব ব্যাংক মুনাফা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে পড়েছে, সেখানে অগ্রণী ব্যাংকের সাফল্যের কারণ কী? কী কৌশল কাজ করেছে?

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিছু কৌশল আমাদের নিতে হয়েছে। কারণ এখন খুবই প্রতিযোগিতার বাজার, টিকে থাকতে হলে নতুন নতুন পলিসি নিতে হবে। ঋণের সুদ আয় কমে যাওয়ায় ব্যাংক খাত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ সময় সুদহার কমে যাওয়ায় চেষ্টা করেছি ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে। আয়ের সব খাতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এ সময় সুদবহির্ভূত খাত যেমন ফরেন এক্সচেঞ্জ, এলসি, ট্রেজারি, সিন্ডিকেশন, তহবিল ব্যবস্থাপনা, রেমিট্যান্স, আমদানি-রপ্তানি ইত্যাদি ব্যবসায় জোর দিয়েছি। এই কঠিন সময়ে এসব ক্ষেত্র আমাদের সাফল্য এনে দিয়েছে। এ ছাড়া আমরা ব্যয় কমিয়েছি, লিকেজগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করেছি। ফলে ব্যয় কমিয়েও আয় বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। গত বছর করোনা পরিস্থিতি ও নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়ন করেও আমরা ভাল মুনাফা করতে পেরেছি। ২০২০ সালে আমরা ৮৯০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর