০৭:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

রূপালী কিরণে উদ্ভাসিত ব্যাংক

একসময়ে নানা সংকটে ডুবতে থাকা রূপালী ব্যাংক আজ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটে উদ্ভাসিত। বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে ব্যাংকটি অর্জন করেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। সম্প্রতি রূপালী ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। ইনস্টিটিউট অব কষ্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) রূপালী ব্যাংককে বেস্ট কর্পোরেট অ্যাওয়ার্ড ২০১৯-এর গোল্ড অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছে।
রূপালী ব্যাংকের প্রধান প্রধান সূচকগুলোতে বড় উন্নতি হয়েছে। ২০১৯ সালের জুনে রূপালী ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। সেই আমানত এখন ফুলে ফেঁপে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড পরিমাণেÑ প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকায়। ২০১৯ সালের জুনে ব্যাংকটির ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকায়। এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকটি নতুন শাখা খুলেছে ১০টি। এছাড়া একটি উপ-শাখাও খুলেছে। শাখা বাড়ার পরও করোনা মহামারির মধ্যে লোকসানি শাখা বাড়েনি। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে একশটি উপশাখা খোলার লক্ষ্য রয়েছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের। এছাড়া করোনা মহামারির মধ্যেও রূপালী ব্যাংকের মুনাফা অব্যাহত রয়েছ।
এদিকে ২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যেও রেমিট্যান্স আহরণে বড় চমক দেখিয়েছে রূপালী। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির প্রবাসী আয় বেড়েছে তিন গুণের বেশি। এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণে ষষ্ঠ অবস্থানে চলে এসেছে রূপালী ব্যাংক। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৭ কোটি ৫১ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের একই সময়ে ব্যাংকটি দেশে রেমিট্যান্স এনেছিল ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩১৮ শতাংশ।
করোনা মহামারির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ লাখ দুগ্ধখামারির পাশে দাঁড়িয়েছিল রূপালী ব্যাংক। সারাদেশ লকডাউন থাকাকালে যখন দুগ্ধখামারিরা দুধ বিক্রি করতে পারছিলেন না তখন দুগ্ধ খামারিদের মাঝে দুধ থেকে ঘি বানানোর জন্য ঋণ বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে রূপালী ব্যাংক। এক্ষেত্রে রূপালী ব্যাংকের স্লোগান ছিল, “দুধ ফেলো না করোনাকালে/ ঘি বানাও সবাই মিলে”। শুধু ঘি নয়, দুগ্ধজাত বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে মিল্ক ভিটার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হারে খামারিদের ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকটি। এছাড়া ঠ্যাঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের মাধ্যমে পিয়াজ চাষিদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। প্রাণ গ্রুপের মাধ্যমে টমোটো চাষীদের মাঝে শূন্য সুদে ঋণ বিতরণ করছে রূপালী ব্যাংক।
রূপালী ব্যাংকের শূন্য সুদে কৃষি ঋণ কার্যক্রম ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। দেশের স্বনামধন্য কৃষি ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজসহ অনেকেই এর ভূয়সী প্রসংশা করেন। মূলত, কৃষককে মধ্যসত্বভোগীদের হাত থেকে বাঁচাতেই এই প্রকল্প গ্রহণ করে রূপালী ব্যাংক। রূপালী ব্যাংকের এই শূন্য সুদে ঋণ প্রকল্পটি ইতোমধ্যে ব্যাংক খাতে একটি মডেল হিসেবে স্থান পেয়েছে।
শূন্য সুদ প্রকল্পে কৃষক শূন্য সুদের ঋণ পেলেও ব্যাংক ঠিকই সুদ পাচ্ছে। ব্যাংক মূলত সুদ নিচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে। যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান কৃষি পণ্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে তাদের মাধ্যমে কৃষককে ঋণ দেয় রূপালী।
এক্ষেত্রে ওই শিল্প কারখানাটি সরাসরি কৃষকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় তাদের উৎপাদিত ফসল কারখানায় দেওয়ার জন্য। আর রূপালী ব্যাংক থেকে বরাদ্দকৃত অর্থের কর্পোরেট গ্যারান্টর হয় ওই শিল্প কারখানা। এতে কৃষক যেমন ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে, অন্যদিকে শিল্প প্রতিষ্ঠান কমমূল্যে ফসল পাচ্ছে।
পাশাপাশি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট গ্যারান্টি থাকায় ব্যাংক তার বিনিয়োগ সুদ সহ ফেরত পাচ্ছে। রূপালী ব্যাংকের এই মডেলটি ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। দাবি উঠেছে, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে অন্য ব্যাংকগুলোকেও এই মডেল অনুসরণ করে ঋণ বিতরণের জন্য।
রূপালী ব্যাংকের জনবান্ধব কার্যক্রম আরও বিস্তৃত পরিসরে রয়েছে। ব্যাংকটি দেশের সোয়া কোটির বেশি শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছে। এতে উপকারভোগীরা কোন ধরনের হয়রানি ও ঝামেলা ছাড়াই নির্ধারিত সময়েই তাদের টাকা পেয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি পৌঁছানোর এই প্রকল্পটি দেশের সবচেয়ে বড় পেমেন্ট ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প।
২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পেমেন্ট ডিজিটালাইজেশন এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এক বিশাল ডাটাবেইজ তৈরি হয়েছে। উপবৃত্তির টাকা দেওয়া ছাড়াও স্কুলের উন্নয়ন পরিকল্পনা করার জন্যে যেমন কোন স্কুলে কত জন শিক্ষার্থী আছে, কতজন পাশ করল, কতগুলো বই লাগবে, কোন স্কুলগুলোকে উন্নয়নের জন্যে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার এই ধরনের কাজে এই তথ্যগুলো ব্যবহার করতে পারছে সরকার।
এভাবেই নানামুখী উদ্ভাবনী কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ব্যাংক খাতের মাঝে দিন দিন আপন স্বকীয়তায় সমুজ্জ্বল হয়ে উঠছে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড।

বিজনেস বাংলাদেশ / আতিক

ট্যাগ :

বিএফআইইউ প্রধানের ‘ভিডিও ফাঁস’ বিশেষজ্ঞদের দাবি এআই দারা নির্মিত ষড়যন্ত্র

রূপালী কিরণে উদ্ভাসিত ব্যাংক

প্রকাশিত : ১০:২৫:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ মার্চ ২০২১

একসময়ে নানা সংকটে ডুবতে থাকা রূপালী ব্যাংক আজ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটে উদ্ভাসিত। বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে ব্যাংকটি অর্জন করেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। সম্প্রতি রূপালী ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। ইনস্টিটিউট অব কষ্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) রূপালী ব্যাংককে বেস্ট কর্পোরেট অ্যাওয়ার্ড ২০১৯-এর গোল্ড অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছে।
রূপালী ব্যাংকের প্রধান প্রধান সূচকগুলোতে বড় উন্নতি হয়েছে। ২০১৯ সালের জুনে রূপালী ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। সেই আমানত এখন ফুলে ফেঁপে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড পরিমাণেÑ প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকায়। ২০১৯ সালের জুনে ব্যাংকটির ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকায়। এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকটি নতুন শাখা খুলেছে ১০টি। এছাড়া একটি উপ-শাখাও খুলেছে। শাখা বাড়ার পরও করোনা মহামারির মধ্যে লোকসানি শাখা বাড়েনি। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে একশটি উপশাখা খোলার লক্ষ্য রয়েছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের। এছাড়া করোনা মহামারির মধ্যেও রূপালী ব্যাংকের মুনাফা অব্যাহত রয়েছ।
এদিকে ২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যেও রেমিট্যান্স আহরণে বড় চমক দেখিয়েছে রূপালী। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির প্রবাসী আয় বেড়েছে তিন গুণের বেশি। এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণে ষষ্ঠ অবস্থানে চলে এসেছে রূপালী ব্যাংক। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৭ কোটি ৫১ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের একই সময়ে ব্যাংকটি দেশে রেমিট্যান্স এনেছিল ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩১৮ শতাংশ।
করোনা মহামারির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ লাখ দুগ্ধখামারির পাশে দাঁড়িয়েছিল রূপালী ব্যাংক। সারাদেশ লকডাউন থাকাকালে যখন দুগ্ধখামারিরা দুধ বিক্রি করতে পারছিলেন না তখন দুগ্ধ খামারিদের মাঝে দুধ থেকে ঘি বানানোর জন্য ঋণ বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে রূপালী ব্যাংক। এক্ষেত্রে রূপালী ব্যাংকের স্লোগান ছিল, “দুধ ফেলো না করোনাকালে/ ঘি বানাও সবাই মিলে”। শুধু ঘি নয়, দুগ্ধজাত বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে মিল্ক ভিটার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হারে খামারিদের ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকটি। এছাড়া ঠ্যাঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের মাধ্যমে পিয়াজ চাষিদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। প্রাণ গ্রুপের মাধ্যমে টমোটো চাষীদের মাঝে শূন্য সুদে ঋণ বিতরণ করছে রূপালী ব্যাংক।
রূপালী ব্যাংকের শূন্য সুদে কৃষি ঋণ কার্যক্রম ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। দেশের স্বনামধন্য কৃষি ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজসহ অনেকেই এর ভূয়সী প্রসংশা করেন। মূলত, কৃষককে মধ্যসত্বভোগীদের হাত থেকে বাঁচাতেই এই প্রকল্প গ্রহণ করে রূপালী ব্যাংক। রূপালী ব্যাংকের এই শূন্য সুদে ঋণ প্রকল্পটি ইতোমধ্যে ব্যাংক খাতে একটি মডেল হিসেবে স্থান পেয়েছে।
শূন্য সুদ প্রকল্পে কৃষক শূন্য সুদের ঋণ পেলেও ব্যাংক ঠিকই সুদ পাচ্ছে। ব্যাংক মূলত সুদ নিচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে। যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান কৃষি পণ্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে তাদের মাধ্যমে কৃষককে ঋণ দেয় রূপালী।
এক্ষেত্রে ওই শিল্প কারখানাটি সরাসরি কৃষকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় তাদের উৎপাদিত ফসল কারখানায় দেওয়ার জন্য। আর রূপালী ব্যাংক থেকে বরাদ্দকৃত অর্থের কর্পোরেট গ্যারান্টর হয় ওই শিল্প কারখানা। এতে কৃষক যেমন ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে, অন্যদিকে শিল্প প্রতিষ্ঠান কমমূল্যে ফসল পাচ্ছে।
পাশাপাশি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট গ্যারান্টি থাকায় ব্যাংক তার বিনিয়োগ সুদ সহ ফেরত পাচ্ছে। রূপালী ব্যাংকের এই মডেলটি ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। দাবি উঠেছে, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে অন্য ব্যাংকগুলোকেও এই মডেল অনুসরণ করে ঋণ বিতরণের জন্য।
রূপালী ব্যাংকের জনবান্ধব কার্যক্রম আরও বিস্তৃত পরিসরে রয়েছে। ব্যাংকটি দেশের সোয়া কোটির বেশি শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছে। এতে উপকারভোগীরা কোন ধরনের হয়রানি ও ঝামেলা ছাড়াই নির্ধারিত সময়েই তাদের টাকা পেয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি পৌঁছানোর এই প্রকল্পটি দেশের সবচেয়ে বড় পেমেন্ট ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প।
২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পেমেন্ট ডিজিটালাইজেশন এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এক বিশাল ডাটাবেইজ তৈরি হয়েছে। উপবৃত্তির টাকা দেওয়া ছাড়াও স্কুলের উন্নয়ন পরিকল্পনা করার জন্যে যেমন কোন স্কুলে কত জন শিক্ষার্থী আছে, কতজন পাশ করল, কতগুলো বই লাগবে, কোন স্কুলগুলোকে উন্নয়নের জন্যে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার এই ধরনের কাজে এই তথ্যগুলো ব্যবহার করতে পারছে সরকার।
এভাবেই নানামুখী উদ্ভাবনী কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ব্যাংক খাতের মাঝে দিন দিন আপন স্বকীয়তায় সমুজ্জ্বল হয়ে উঠছে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড।

বিজনেস বাংলাদেশ / আতিক