০১:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে ৭১ শতাংশ

দেশে গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসছে। ৯০-এর দশকে প্রতি এক লাখ জীবিত শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ৫৭৪ জন সন্তানসম্ভবা নারীর মৃত্যু হতো। ২০১৯ সালে যা কমে প্রতি লাখে ১৬৫ জনে দাঁড়ায়। সে হিসেবে ৯০-এর দশকের তুলনায় গত তিন দশকে গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যু ৭০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।

বাংলাদেশ ম্যাটারনাল মর্টালিটি অ্যান্ড হেলথ কেয়ার সার্ভে (বিএমএমএস), স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (এসভিআরএস) এবং ইউএন (ইউনাইটেড নেশন) ইস্টিমেট সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

আগের তুলনায় মাতৃমৃত্যু কমলেও এখনও সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি বছর ৪ হাজার ৭২০ জন গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩ জন অর্থাৎ প্রতি দুই ঘণ্টায় একজন গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, দেশে মাতৃমৃত্যু হার লাখে ৭০ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গর্ভবতী মায়ের সেবা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যে ২৮ মে বিশ্ব ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’ পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘করোনাকালে গর্ভকালীন সেবা নিন, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু রোধ করুন’।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৮৬-৯০ সালে প্রতি লাখে ৫৭৪ জন, ১৯৯১-৯৫ সালে ৪৮৫ জন, ১১৯৬ সালে ৪৪৮ জন, ১৯৯৮-২০০০ সালে ৩২২ জন, ২০০৭ সালে ২৯৮ জন, ২০১০ সালে ১৯৪ জন, ২০১৫ সালে ১৭৬ জন, ২০১৮ সালে ১৬৯ জন এবং ২০১৯ সালে ১৬৫ জন গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ অ্যান্ড এডোলেসেন্ট হেলথ) ডা. শামসুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ মাতৃত্ব হচ্ছে এমন একটি পরিবেশ বা অবস্থার সৃষ্টি করা যাতে একজন নারী তার নিজ সিদ্ধান্তে গর্ভবতী হওয়ার পর গর্ভ ও প্রসব সংক্রান্ত জটিলতা এবং মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব সেবা নিশ্চিতভাবে পেতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য মানসম্মত গর্ভকালীন সেবা (প্রসবপূর্ব), নিরাপদ প্রসব ব্যবস্থা, প্রসব পরবর্তী সেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ও সেবা প্রয়োজন। বিগত ও বর্তমান সরকারের আমলে এসব সেবা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিম্নমুখী প্রজনন সক্ষমতা, উন্নততর যত্ন গ্রহণের চর্চা এবং উচ্চতর সেবা গ্রহণের উন্নত সুবিধার কারণে মাতৃমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ দুটি। রক্তক্ষরণ ও এক্লামশিয়া (খিঁচুনি)। এ দুটি কারণই সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধযোগ্য। উল্লেখযোগ্যভাবে গর্ভপাতের কারণে মাতৃমৃত্যুর হার আগের তুলনায় বেড়েছে। যার জন্য উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, নারীর প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি পরোক্ষ কারণগুলো দায়ী। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিভিন্ন কারণে মাতৃমৃত্যুর মধ্যে- রক্তক্ষরণে ৩১ শতাংশ, খিঁচুনি বা এক্লামশিয়ায় ২৪ শতাংশ, পরোক্ষ ২০ শতাংশ, কারণ জানা নেই ৮ শতাংশ, প্রত্যক্ষ ৭ শতাংশ,গর্ভপাত ৭ শতাংশ এবং বাধাগ্রস্ত বা অবিরাম প্রসব বেদনা ৩ শতাংশ দায়ী।

ম্যাটারনাল অ্যান্ড পেরিনেটাল ডেথ সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স (এমপিডিএসআর)-২০২০ অনুযায়ী, মোট মাতৃমৃত্যুর ঘটনাগুলোর মধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ, বাড়িতে ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ, পথে ২২ দশমিক ৮ শতাংশ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১২দশমিক ৪ শতাংশ, জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে ৬ দশমিক ২ শতাংশ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ ঘটে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রসব পরবর্তী সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সব মাতৃমৃত্যুর ৫৮ শতাংশ মৃত্যু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হয়ে থাকে। এছাড়া, প্রসবের ৬ ঘণ্টা বা তার কম সময়ে ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ, ৭ থেকে ১২ ঘণ্টায় ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ, ১৩ থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, ১ থেকে ৭ দিনে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৮ থেকে ১৪ দিনে ১২ দশমিক ২ শতাংশ মাতৃমৃত্যু হয়।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে ৭১ শতাংশ

প্রকাশিত : ০৯:৪১:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১

দেশে গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসছে। ৯০-এর দশকে প্রতি এক লাখ জীবিত শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ৫৭৪ জন সন্তানসম্ভবা নারীর মৃত্যু হতো। ২০১৯ সালে যা কমে প্রতি লাখে ১৬৫ জনে দাঁড়ায়। সে হিসেবে ৯০-এর দশকের তুলনায় গত তিন দশকে গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যু ৭০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।

বাংলাদেশ ম্যাটারনাল মর্টালিটি অ্যান্ড হেলথ কেয়ার সার্ভে (বিএমএমএস), স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (এসভিআরএস) এবং ইউএন (ইউনাইটেড নেশন) ইস্টিমেট সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

আগের তুলনায় মাতৃমৃত্যু কমলেও এখনও সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি বছর ৪ হাজার ৭২০ জন গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩ জন অর্থাৎ প্রতি দুই ঘণ্টায় একজন গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, দেশে মাতৃমৃত্যু হার লাখে ৭০ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গর্ভবতী মায়ের সেবা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যে ২৮ মে বিশ্ব ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’ পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘করোনাকালে গর্ভকালীন সেবা নিন, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু রোধ করুন’।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৮৬-৯০ সালে প্রতি লাখে ৫৭৪ জন, ১৯৯১-৯৫ সালে ৪৮৫ জন, ১১৯৬ সালে ৪৪৮ জন, ১৯৯৮-২০০০ সালে ৩২২ জন, ২০০৭ সালে ২৯৮ জন, ২০১০ সালে ১৯৪ জন, ২০১৫ সালে ১৭৬ জন, ২০১৮ সালে ১৬৯ জন এবং ২০১৯ সালে ১৬৫ জন গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ অ্যান্ড এডোলেসেন্ট হেলথ) ডা. শামসুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ মাতৃত্ব হচ্ছে এমন একটি পরিবেশ বা অবস্থার সৃষ্টি করা যাতে একজন নারী তার নিজ সিদ্ধান্তে গর্ভবতী হওয়ার পর গর্ভ ও প্রসব সংক্রান্ত জটিলতা এবং মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব সেবা নিশ্চিতভাবে পেতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য মানসম্মত গর্ভকালীন সেবা (প্রসবপূর্ব), নিরাপদ প্রসব ব্যবস্থা, প্রসব পরবর্তী সেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ও সেবা প্রয়োজন। বিগত ও বর্তমান সরকারের আমলে এসব সেবা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিম্নমুখী প্রজনন সক্ষমতা, উন্নততর যত্ন গ্রহণের চর্চা এবং উচ্চতর সেবা গ্রহণের উন্নত সুবিধার কারণে মাতৃমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ দুটি। রক্তক্ষরণ ও এক্লামশিয়া (খিঁচুনি)। এ দুটি কারণই সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধযোগ্য। উল্লেখযোগ্যভাবে গর্ভপাতের কারণে মাতৃমৃত্যুর হার আগের তুলনায় বেড়েছে। যার জন্য উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, নারীর প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি পরোক্ষ কারণগুলো দায়ী। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিভিন্ন কারণে মাতৃমৃত্যুর মধ্যে- রক্তক্ষরণে ৩১ শতাংশ, খিঁচুনি বা এক্লামশিয়ায় ২৪ শতাংশ, পরোক্ষ ২০ শতাংশ, কারণ জানা নেই ৮ শতাংশ, প্রত্যক্ষ ৭ শতাংশ,গর্ভপাত ৭ শতাংশ এবং বাধাগ্রস্ত বা অবিরাম প্রসব বেদনা ৩ শতাংশ দায়ী।

ম্যাটারনাল অ্যান্ড পেরিনেটাল ডেথ সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স (এমপিডিএসআর)-২০২০ অনুযায়ী, মোট মাতৃমৃত্যুর ঘটনাগুলোর মধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ, বাড়িতে ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ, পথে ২২ দশমিক ৮ শতাংশ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১২দশমিক ৪ শতাংশ, জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে ৬ দশমিক ২ শতাংশ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ ঘটে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রসব পরবর্তী সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সব মাতৃমৃত্যুর ৫৮ শতাংশ মৃত্যু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হয়ে থাকে। এছাড়া, প্রসবের ৬ ঘণ্টা বা তার কম সময়ে ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ, ৭ থেকে ১২ ঘণ্টায় ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ, ১৩ থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, ১ থেকে ৭ দিনে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৮ থেকে ১৪ দিনে ১২ দশমিক ২ শতাংশ মাতৃমৃত্যু হয়।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর