১২:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

সপ্তাহ পর স্টল নির্মাণ শেষে মেলায় ফিরলো পুরনো জৌলুস

অবশেষে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপ-শহরে বঙ্গবন্ধু চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টারের বসেছে বানিজ্যমেলার ২৬ তম আসর। এর আগে ১৯৯৫ সাল থেকে মেলার আসর বসতো রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে। দোকান অসূম্পূর্ণ থাকাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় কিন্তু পূর্বাচলের আসরে আগাঁরগাঁওয়ের সেই চিরচেনা জৌলুস মূখর রূপের দেখা মিলছিলো না। অবশেষে ঢাকা আন্তর্জাতিক বানিজ্যমেলা ফিরলো তার চিরচেনা রূপে। ছুটিরদিন মেলায় ব্যবসায়ীদের বেচাক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। সরেজমিনে ঘুরে মেলায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মেলায় বেশি লোকের সমাগমের কারণে মেলা থেকে তিনশ ফুট সড়ক ও গাজীপুর বাইপাস সড়কে ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে মেলায় এসে ভোগান্তিতে পড়েছে দর্শনার্থীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছুটিরদিন মেলায় বরাদ্দ দেওয়া ২২৫ টি স্টলের মাঝে সবটি নির্মাণ কাজ হতে দেখা গেছে। সবকটি দোকান নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় মেলা ফিরে পেয়েছে তার পূর্ণ রূপ। সেই পূর্ণ রূপকে পূর্ণতা দিয়ে মেলায় দর্শনার্থীদের আগমন। ছুটির দিন হওয়ার কারণে অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। ঘুরার পাশাপাশি কেনাকাটাও করছেন। ক্রেতা আকর্ষনের জন্য দোকান গুলো সাজানো হরেক রকমের রংবেংরংয়ের সাজ সজ্জায়। মেলায় ব্যবসায়ীদের দেখা গেছে ব্যস্ত সময় পার করতে। ক্রেতারাও পছন্দের জিনিসপত্র কিনছেন নিজেদের পছন্দ মতো করে। ক্রেতারা দামাদামি করে জিনিসপত্র কিনছেন। কেউ কেউ আবার জিনিসপত্র দেখে শুনে যাচ্ছেন পরে এসে কেনার আশায়। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি দর্শনার্থীদের কাউকে। বেশিরভাগ দর্শনার্থীদের মুখের মাস্ক ছিল থুতনীতে। তবে মেলা কর্তৃপক্ষকে দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পড়ার ব্যাপারে মাইকিং ও প্রচারনা চালাতে দেখা গেছে। কিন্তু তারপর ও দর্শনার্থীদের তা মানতে দেখা যায়নি। মেলায় বেশি লোকজন আসার কারনে মেলা থেকে ৩’শ ফুট সড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে মেলায় আসতে ও মেলা থেকে ফিরতে ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। মেলায় আসার বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় এক রাস্তায় ভোগান্তি পেরিয়ে সবাইকে আসতে হচ্ছে।

তবে দর্শনার্থীদের অভিযোগ, মেলায় আসতে গিয়ে প্রচন্ড ধুলাবালি, যানজট ও পরিবহন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। লোকাল সড়ক গুলোর অবস্থাও বেহাল। মেলায় আসার প্রধান সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস ও কাঞ্চন কুড়িল বিশ্বরোড প্রশস্থ্যকরণ কাজ চলায় এ ভোগান্তিতে পড়ছে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। যানজটের কারণে ১ ঘন্টার পথে সময় লাগছে ৩ ঘন্টা।

ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন এক সপ্তাহ পর মেলার সকল দোকানপাট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কারণে মেলা জমে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। আর এদিকে ছুটির দিন হওয়ার কারণে দর্শনার্থীও অনেক ভাল। গত এক সপ্তাহ দর্শনার্থী ছিল মোটামুটি কিন্তু বেচা বিক্রি ভাল ছিলনা। কিন্তু ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই বিক্রি ভাল হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। দালালদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে তিনগুন মূল্যে দোকান কিনে বিক্রি ভাল না হওয়ায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরাই হতাশায় ছিল। ছুটিরদিন বিক্রি ভাল হওয়ায় হতাশা কিছুটা হলেও নিরসন হয়েছে। তবে যানজটের ভোগান্তির কারণে দর্শনার্থীরা কিছুটা দূর্ভোগ পোহাচ্ছে।

এক ফার্নিচার ব্যবসায়ী ফকরুল ইসলাম রাজ তিনি বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় আজ দর্শনার্থীদের অনেক ভিড় হয়েছে। যা গত এক সপ্তাহের দর্শনর্থীদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। এইকদিন মেলা প্রাঙ্গণ প্রস্তুত না হওয়ার কারণে ক্রেতারা জিনিসপত্র কিনতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তবে ছুটিরদিন বিক্রি অনেক ভাল হচ্ছে। মেলা পুরো জমে উঠার কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক খুশি। দিন যতো বাড়বে মেলায় ক্রেতা দর্শনার্থী আরো বাড়বে বলে আশাবাদি ব্যবসায়ীরা।

একটি কসমেটিস দোকানের বিক্রয়কর্মী সোরাইয়া আক্তার জানান, ছুটি দিন হওয়ায় দোকানে বিক্রি হচ্ছে অনেক। নারীরা নিজেদের পছন্দ মতো কসমেটিক্স সামগ্রী কিনছেন। গত এক সপ্তাহের মাঝে দুএদিনই খুব ভিড় দেখছি। একদিকে ছুটির দিন অপরদিকে মেলার সকল স্টল নির্মাণ শেষ হয়ে গেছে। এসকল কারণেই মেলায় দর্শনার্থীর পাশাপাশি ক্রেতাও বেড়েছে অনেকে।

তনু নামে দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আজ মেলায় আসতে খুব দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিকেল ৩ টায় ধানমন্ডি থেকে মেলায় আসার জন্য রওনা দিয়েছিলাম ৩’শ ফুটে যানজটের কারণে মেলায় পৌছেছি ৫ টার দিকে। মেলায় আসার জন্য বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় তিনশ ফুট সড়ক দিয়েই মেলায় এসেছি।

মেলা কথা হয় আরমান ও তিসা নামে এক দম্পতির সঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দুজনেই একটি বেসরকারি চাকুরীজিবী। ছুটির দিন তাই মেলায় ঘুরতে এসেছি। কেনাকেটা করলাম খাওয়া দাওয়া করলাম। তবে মেলায় আসার সময় যানজটের কারণে কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে। তারপরও মেলা প্রাঙ্গণ পুরো প্রস্তুত হয়ে যাওয়ায় ভাল লাগছে।

বিজয় ৭১ রেষ্টুরেন্টের মালিক ইয়াসিন মিয়া বলেন, মেলা চালু হওয়ার পর ছুটির দিনে ছিলো সব চেয়ে বেশি দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের সমাগম। খাবার দোকান গুলোতেও হয়েছে প্রচন্ড বেচাকেনা। এভাবে দর্শনার্থী ও ক্রেতা সমাগমে খুশি এখানকার ব্যবসায়ীরা।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সপ্তাহ পর স্টল নির্মাণ শেষে মেলায় ফিরলো পুরনো জৌলুস

প্রকাশিত : ০৬:১৩:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জানুয়ারী ২০২২

অবশেষে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপ-শহরে বঙ্গবন্ধু চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টারের বসেছে বানিজ্যমেলার ২৬ তম আসর। এর আগে ১৯৯৫ সাল থেকে মেলার আসর বসতো রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে। দোকান অসূম্পূর্ণ থাকাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় কিন্তু পূর্বাচলের আসরে আগাঁরগাঁওয়ের সেই চিরচেনা জৌলুস মূখর রূপের দেখা মিলছিলো না। অবশেষে ঢাকা আন্তর্জাতিক বানিজ্যমেলা ফিরলো তার চিরচেনা রূপে। ছুটিরদিন মেলায় ব্যবসায়ীদের বেচাক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। সরেজমিনে ঘুরে মেলায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মেলায় বেশি লোকের সমাগমের কারণে মেলা থেকে তিনশ ফুট সড়ক ও গাজীপুর বাইপাস সড়কে ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে মেলায় এসে ভোগান্তিতে পড়েছে দর্শনার্থীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছুটিরদিন মেলায় বরাদ্দ দেওয়া ২২৫ টি স্টলের মাঝে সবটি নির্মাণ কাজ হতে দেখা গেছে। সবকটি দোকান নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় মেলা ফিরে পেয়েছে তার পূর্ণ রূপ। সেই পূর্ণ রূপকে পূর্ণতা দিয়ে মেলায় দর্শনার্থীদের আগমন। ছুটির দিন হওয়ার কারণে অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। ঘুরার পাশাপাশি কেনাকাটাও করছেন। ক্রেতা আকর্ষনের জন্য দোকান গুলো সাজানো হরেক রকমের রংবেংরংয়ের সাজ সজ্জায়। মেলায় ব্যবসায়ীদের দেখা গেছে ব্যস্ত সময় পার করতে। ক্রেতারাও পছন্দের জিনিসপত্র কিনছেন নিজেদের পছন্দ মতো করে। ক্রেতারা দামাদামি করে জিনিসপত্র কিনছেন। কেউ কেউ আবার জিনিসপত্র দেখে শুনে যাচ্ছেন পরে এসে কেনার আশায়। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি দর্শনার্থীদের কাউকে। বেশিরভাগ দর্শনার্থীদের মুখের মাস্ক ছিল থুতনীতে। তবে মেলা কর্তৃপক্ষকে দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পড়ার ব্যাপারে মাইকিং ও প্রচারনা চালাতে দেখা গেছে। কিন্তু তারপর ও দর্শনার্থীদের তা মানতে দেখা যায়নি। মেলায় বেশি লোকজন আসার কারনে মেলা থেকে ৩’শ ফুট সড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে মেলায় আসতে ও মেলা থেকে ফিরতে ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। মেলায় আসার বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় এক রাস্তায় ভোগান্তি পেরিয়ে সবাইকে আসতে হচ্ছে।

তবে দর্শনার্থীদের অভিযোগ, মেলায় আসতে গিয়ে প্রচন্ড ধুলাবালি, যানজট ও পরিবহন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। লোকাল সড়ক গুলোর অবস্থাও বেহাল। মেলায় আসার প্রধান সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস ও কাঞ্চন কুড়িল বিশ্বরোড প্রশস্থ্যকরণ কাজ চলায় এ ভোগান্তিতে পড়ছে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। যানজটের কারণে ১ ঘন্টার পথে সময় লাগছে ৩ ঘন্টা।

ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন এক সপ্তাহ পর মেলার সকল দোকানপাট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কারণে মেলা জমে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। আর এদিকে ছুটির দিন হওয়ার কারণে দর্শনার্থীও অনেক ভাল। গত এক সপ্তাহ দর্শনার্থী ছিল মোটামুটি কিন্তু বেচা বিক্রি ভাল ছিলনা। কিন্তু ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই বিক্রি ভাল হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। দালালদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে তিনগুন মূল্যে দোকান কিনে বিক্রি ভাল না হওয়ায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরাই হতাশায় ছিল। ছুটিরদিন বিক্রি ভাল হওয়ায় হতাশা কিছুটা হলেও নিরসন হয়েছে। তবে যানজটের ভোগান্তির কারণে দর্শনার্থীরা কিছুটা দূর্ভোগ পোহাচ্ছে।

এক ফার্নিচার ব্যবসায়ী ফকরুল ইসলাম রাজ তিনি বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় আজ দর্শনার্থীদের অনেক ভিড় হয়েছে। যা গত এক সপ্তাহের দর্শনর্থীদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। এইকদিন মেলা প্রাঙ্গণ প্রস্তুত না হওয়ার কারণে ক্রেতারা জিনিসপত্র কিনতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তবে ছুটিরদিন বিক্রি অনেক ভাল হচ্ছে। মেলা পুরো জমে উঠার কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক খুশি। দিন যতো বাড়বে মেলায় ক্রেতা দর্শনার্থী আরো বাড়বে বলে আশাবাদি ব্যবসায়ীরা।

একটি কসমেটিস দোকানের বিক্রয়কর্মী সোরাইয়া আক্তার জানান, ছুটি দিন হওয়ায় দোকানে বিক্রি হচ্ছে অনেক। নারীরা নিজেদের পছন্দ মতো কসমেটিক্স সামগ্রী কিনছেন। গত এক সপ্তাহের মাঝে দুএদিনই খুব ভিড় দেখছি। একদিকে ছুটির দিন অপরদিকে মেলার সকল স্টল নির্মাণ শেষ হয়ে গেছে। এসকল কারণেই মেলায় দর্শনার্থীর পাশাপাশি ক্রেতাও বেড়েছে অনেকে।

তনু নামে দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আজ মেলায় আসতে খুব দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিকেল ৩ টায় ধানমন্ডি থেকে মেলায় আসার জন্য রওনা দিয়েছিলাম ৩’শ ফুটে যানজটের কারণে মেলায় পৌছেছি ৫ টার দিকে। মেলায় আসার জন্য বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় তিনশ ফুট সড়ক দিয়েই মেলায় এসেছি।

মেলা কথা হয় আরমান ও তিসা নামে এক দম্পতির সঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দুজনেই একটি বেসরকারি চাকুরীজিবী। ছুটির দিন তাই মেলায় ঘুরতে এসেছি। কেনাকেটা করলাম খাওয়া দাওয়া করলাম। তবে মেলায় আসার সময় যানজটের কারণে কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে। তারপরও মেলা প্রাঙ্গণ পুরো প্রস্তুত হয়ে যাওয়ায় ভাল লাগছে।

বিজয় ৭১ রেষ্টুরেন্টের মালিক ইয়াসিন মিয়া বলেন, মেলা চালু হওয়ার পর ছুটির দিনে ছিলো সব চেয়ে বেশি দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের সমাগম। খাবার দোকান গুলোতেও হয়েছে প্রচন্ড বেচাকেনা। এভাবে দর্শনার্থী ও ক্রেতা সমাগমে খুশি এখানকার ব্যবসায়ীরা।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ